Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

একটি অনুপ্রেরনার গল্প

মোহাম্মদ তারেক

১৯৯৫ সালে মাজনুন মিজান প্রথম টিভিতে কাজ শুরু করেন শহীদুল হক খানের ‘কাশ বনের কন্যা’ নাটকে পাসিং শট দিয়ে। সেই সময় অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য তাকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল। তারপর মাঝে দীর্ঘ সময় বিরতি ছিল তার পড়াশোনার কারণে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকে থিয়েটারের সাথে জড়িত ছিলেন মাজনুন মিজান। ১৯৯৬ সালে ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এ দলের হয়ে ‘একাত্তরের পালা’, ‘যৈবতি কন্যার মন’ সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন। এরপর ২০০১ সাল থেকে টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। প্রথম নাটকেই হিরো অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন মাজনুন মিজান। সিরাজুল কবীরের গল্প অবলম্বনে পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নাটকটির নাম ছিল ‘আলতা’। নাটকে তার কো-আর্টিস্ট ছিলেন তমালিকা কর্মকার।
সেই এইডস ক্যাম্পেইনে ‘বাজি কুদ্দুস’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন মাজনুন মিজান। কনডমের বিজ্ঞাপনটি তাকে বেশি পরিচিত করে দেয় দর্শকের মাঝে। এই বিজ্ঞাপনটিতে অভিনয় করার পর অনেকেই মাজনুন মিজানকে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এই কাজটি করেছেন? আপনি কী ভেবে করেছেন? প্রশ্নের উত্তরে মিজান বলেছিলেন, এইডস ক্যাম্পেইনের বিজ্ঞাপনটি আমি পরিকল্পিত ভাবে ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় করি। প্রথমত সেটি ছিল সামাজিক সচেতনতামূলক একটি কাজ। কেন না এদেশের এক ধরনের কায়িক পরিশ্রম করা মানুষ বেশির ভাগ সময় অন্য মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় এইডস সহ নানাবিধ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তারা। সেই সব মানুষের কাছে আমি এইডস বিরোধী মেসেজ দিতে পেরেছি। আমি বলব এটা আমার সৌভাগ্য যে আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই দেশের জন্য ভালো একটা কাজ করতে পেরেছিলাম। বলা যায় অভিনয় জীবনে সেটা আমার টার্নিং পয়েন্ট। এরপর থেকে মাজনুন মিজানকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিজ্ঞাপন, নাটক, চলচ্চিত্র সব খানেই সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন এই অভিনেতা।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দাপটের সাথে অভিনয় করে চলেছেন মাজনুন মিজান। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক গুলো হলো-মাগো তোমার জন্য, ইট কাঠের খাঁচা, ভূতের গল্প, এ কুলে আমি এ কুলে তুমি, কর্পোরেট, কাছের ক্যানভাস, উজান গাঙের নাইয়া ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য একক নাটক গুলোর মধ্যে রয়েছে-টি মাস্টার, গোধুলি বেলা, রমিজের আয়না, আহ্ ফুটবল বাহ্ ফুটবল, একটি কৃতজ্ঞতাপত্র, কাননে কুসুম কলি, আনন্দ বেদনা গন্তব্য, রাজডুগি বৃষ্টিতে গল্প, ওপারে অসীম আকাশ, আংটি, কে তুমি ইত্যাদি।
নাটকের পাশাপাশি কাজ করেছেন বিজ্ঞাপনেও। আরএফএল চেয়ারম্যানের চেয়ার শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করে খুব সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। তার অভিনীত বিজ্ঞাপন গুলোর মধ্যে রয়েছে- আরএফল এর পন্য সাইন হ্যান্ড পুস শাওয়ার, আনোয়ার ওয়ান পাইপের একটি বিজ্ঞাপন সহ বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হন মাজনুন মিজান। এছাড়াও প্রাণ আরএফএল এর একাধিক পন্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি। একটি মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবে কাজ করেছেন মিজান। তার সহশিল্পী ছিলেন দীপা খন্দকার। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনাতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর এ ‘সর্তক সংকেত’ বাংলাভিশনের ‘স্ট্রিট শো রাত বিরাতে’ সঞ্চালনা করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি সমান তালে নাটক পরিচালনা করেন এমন অভিনেতা আছেন অনেকেই। সেই তালিকায় মাজনুন মিজানও আছেন। গত বছর তিনি ‘আমলকি’ নামের একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন। মাজনুন মিজান বলেন, নির্মাণে আসার ইচ্ছাটা অনেক আগের। নাটক দিয়ে অনেক কিছু বলা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমি নির্মাণে এসেছি। আমার মনের কথা গুলো আমি আমার নাটকে বলতে চাই। এই টেলিফিল্মের পাশাপাশি একটি শিক্ষাশূলক এবি নির্মাণ করেন তিনি। যেখানে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত। এরপর তিনি একটি তথ্য চিত্র নির্মাণ করেছেন মিজান। স্তন ও জরায়ু মুখ ক্যান্সনার নিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। মাজনুন মিজান জানান, স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিয়ে আমাদের দেশে মা-বোনদের মধ্যে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। মূলত এ ব্যাপারে সচেতন করতেই তথ্য চিত্রটি নির্মাণ করা হয়। একই বিষয় নিয়ে দুটি সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন তিনি। এতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু, শেলি আসহান, জ্যোতিকা জ্যোতি ও শামীমা তুষ্টি। স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের অধীনে তথ্য চিত্র ও বিজ্ঞাপন দুটি নির্মিত হয়েছে।
বড় পর্দাতেও যথেষ্ট উজ্জ্বল উপস্থিতি তার। নানা মাত্রিক চরিত্রে দর্শক মনে আলদা জায়গা করেছেন। ‘আগস্ট ১৯৭৫’ আর অন্যটি ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ এই দুটি সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন এই অভিনেতা। ‘আগস্ট ১৯৭৫’ সিনেমায় মাজনুন মিজান জননেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্র ও ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ তে মেজর ডালিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দুটি চরিত্রই ছিল তার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং।
এ ছাড়া তার অভিনীত ছবি গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূবন মাঝি, কণ্ঠ, বসগিরি, মিশন এক্সট্রিম, রাত জাগা ফুল, মিশন এক্সট্রিম-২। তিনি বলেন, আমার একটু দুঃখ বোধ আছে। প্রচন্ড ভালোবাসা নিয়ে এই সেক্টরে কাজ করতে এসেছিলাম। সেই ভালোবাসা ও চ্যালেঞ্জটা এখনও আছে। তবে এখানে অর্থের কাছে সবাই পরাজিত বিষয়টি মোটেই সুখের নয়।