Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তারকাদের ইউটিউব চ্যানেল

সৈয়দ ইকবাল

বিশ^জুড়ে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ইউটিউব। বিনোদনে অপ্রতিদ্ব›দ্বী তার প্রভাব। সেই প্রভাব থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। দেশের বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখন তারকারাও নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। বাংলাদেশের বিনোদন জগতের অনেক তারকাই এখন ইউটিউবে নিজেদের কাজকর্মের ফিরিস্তি আপলোড করছেন। অভিনয়শিল্পী ও গানের শিল্পী- অনেকেরই রয়েছে ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল। যেখানে তাদের নানান কাজকর্মের জিনিস শেয়ার করে আয়ও করছেন। কয়েক বছর ধরেই নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটছে বিশ্বজুড়ে। সেসব প্রযুক্তি আবিষ্কারের অল্প সময়ের মধ্যেই তার ব্যবহার শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে দ্রæত এসব প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইউটিউব এর মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম। তথ্যসহ ভিডিও প্রকাশের ফলে এ অনলাইন মাধ্যমটিতে সরব হচ্ছে অনেকেই। এ ক্ষেত্রে বিনোদন জগতের অভিনয়শিল্পীরাও পিছিয়ে নেই। টেলিভিশন নাটক, সিনেমা কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমের পাশাপাশি ইউটিউবের দর্শক ভাÐারও বিশাল। বিরতিহীনভাবে দর্শক সংখ্যা বেড়ে চলছে এ মাধ্যমটিতে। আমাদের বিনোদন তারকারাও এখন এ মাধ্যমটিতে তাদের কাজগুলোর পাশাপাশি নতুন নতুন তথ্য শেয়ার করছেন। ইউটিউবের দর্শকের ওপর ভিত্তি করে আয়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় তারাও এ বিকল্প আয়ের পথটি খোলা রাখছেন বলে অভিমত দিয়েছেন অনেকেই। এতে করে একসঙ্গে দুটি কাজ হচ্ছে। নিজের প্রচারণাও হচ্ছে, আবার সম্মানজনক অর্থও উপার্জন হচ্ছে। কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই দর্শক তাদের প্রিয় তারকার কাজ কিংবা নতুন কোনো বিষয় সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন। গত বছরের শুরুর দিকে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান যুক্ত হয়েছেন ইউটিউবে। জন্মদিনে তিনি তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল অবমুক্ত করেছেন। শুরু থেকেই চ্যানেলটির দিকে ভক্তদের আগ্রহ তুঙ্গে। তাদের প্রিয় নায়কের কর্মকান্ডগুলো এ ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে। যদিও খুব বেশি ভিডিও এখনও আপলোড হয়নি। শুধু শাকিব খান অভিনীত ছবির ফুটেজ, টিজার কিংবা গান আপলোড করা হয় এ চ্যানেল থেকে। শিগগিরই এ অনলাইন মাধ্যমটি নিয়ে নতুন কিছু কনটেন্ট উপস্থাপন করবেন দেশ সেরা এ নায়ক। এ সম্পর্কে শাকিব খান বলেন, ‘আমার ভক্ত-দর্শকদের কথা চিন্তা করেই ইউটিউব চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার গান, ট্রেলার কিংবা টিজার দর্শকরা বিভিন্ন মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। তারা যাতে এক জায়গা থেকে একসঙ্গে আমার সব কাজ পেতে পারেন সেই চিন্তা থেকেই ইউটিউব চ্যানেল খোলার সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি আমার কাজ নিয়ে তাদের সরাসরি মন্তব্যও আমি এখান থেকে পেতে পারি। সবকিছু মিলিয়ে ইউটিউব খোলার সিদ্ধান্তটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।’ এ মাধ্যম থেকে কেমন আয় হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে শাকিব খান বলেন, ‘সেটা আমি নিজে তদারকি করছি না। তবে আয়ের বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবছি না। যা আসে আসবে। আমার কাজের পথ প্রশস্ত হয়েছে, এটাই ভালোলাগার।’ চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিলও পিছিয়ে নেই এ মাধ্যম থেকে। কয়েক বছর আগেই তিনি ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে তার অভিনয় জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং ব্যবসায়িক কর্মকাÐের ভিডিও আপলোড করছেন নিয়মিত। ইউটিউবের কর্মকাÐ সম্পর্কে অনন্ত জলিল বলেন, এখন মানুষ আপডেট থাকতে চান। মুহূর্তের খবর মুহূর্তেই পেতে চান। বিশেষ করে আমার ভক্তরা আমার কাজকর্ম সম্পর্কে প্রায়শই বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নেন। আমি কী করছি, কোথায় যাচ্ছি- এসব। যেহেতু আমি কম সংখ্যক সিনেমায় কাজ করি তাই সবসময় সিনেমার খবর তাদের জানাতে পারি না। সিনেমা করলেও সেটা দেখার জন্য মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। সিনেমার শুটিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয়, যেগুলো নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ আছে সেগুলো তাদের তাৎক্ষণিক জানানোর কোনো উপায় থাকে না। এমনকি ছবি মুক্তির পরও সেটা জানানো সম্ভব হয় না। এখন ইউটিউবের মধ্য দিয়ে সেটা দর্শক-ভক্তদের জানাতে পারছি।’ টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীও দর্শকের আগ্রহের কথা বিবেচনায় চালু করেছেন তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। এ চ্যানেলটি চালু হওয়ার পর থেকে নতুন কিছু বিষয় নিয়ে সক্রিয় আছেন তিনি। নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনপ্রিয় তারকাদের নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেও দেখা গেছে তাকে। অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে দর্শকেরও ব্যাপক আগ্রহ বেশ। অভিনয়ের ব্যস্ত সময়সূচির মধ্য থেকেও তিনি মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বিষয় আপলোড করছেন এ চ্যানেলে। প্রসঙ্গক্রমে মেহজাবিন বলেন, ‘সারা বিশ্বেই তারকাশিল্পীরা ইউটিউবে সক্রিয়। বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যমের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ায় ইউটিউবের দিকে অনেকেই ঢু মারেন। আমি দর্শকের এ আগ্রহের বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরে চিন্তা করে ইউটিউবে নিজের চ্যানেল চালু করেছি। আমার অনুষ্ঠানগুলোর জন্য দর্শকের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। ইচ্ছা আছে আরও নতুন কিছু কনটেন্ট আপলোড করার। সময়ের অভাবে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। শিগগিরই দর্শক নতুন কিছু দেখতে পাবেন আমার চ্যানেলটিতে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমার। দর্শকই আমার মূল শক্তি। এ চ্যানেল থেকে দর্শকের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে তাদের বিনোদনের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চালাব।’ প্রায় তিন বছর ধরে ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল খুলে সক্রিয় আছেন অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল। মূলত বিভিন্ন ধরনের খাবারের ভিডিও শেয়ার করেন তার চ্যানেলে। শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়েও তিনি তার সাবস্ক্রাইবারদের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে চ্যানেলে আপলোড করছেন। তার শেয়ার করা এসব ভিডিও প্রচুর সংখ্যক দর্শক নিয়মিত দেখছেন। ইউটিউব চ্যানেলের কনটেন্ট তৈরি করার জন্য সম্প্রতি তিনি ভারতে গেছেন। সেখানে তিনি মুম্বাই, গোয়া, হায়দারাবাদ ও কলকাতায় যান পর্যায়ক্রমে। সেসব এলাকার প্রচলিত জনপ্রিয় খাবার তৈরি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন, যা তিনি নিয়মিতভাবে তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন। এ সম্পর্কে হিল্লোল বলেন, ‘সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে আমার ইউটিউব চ্যানেলটি এখন জনপ্রিয়। বিশেষ করে ভোজন রসিকরা আমার ভিডিওগুলো নিয়মিত দেখছেন। দর্শক সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তাই আপলোড করা ভিডিওগুলোয় নতুন নতুন কনটেন্ট যুক্ত করে যাচ্ছি। দর্শকের আগ্রহ চলমান থাকলে আমার চ্যানেলে উপস্থাপিত কনটেন্টগুলোও সময়োপযোগী করে তুলব। এ ছাড়া কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে আমি বিশ্বের অন্যান্য জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোর কনটেন্ট পর্যবেক্ষণও করি। এ কাজটি করতে গিয়ে অভিনয়ে তেমন সময় দিতে পারছি না। ইউটিউব দর্শকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমার ভিডিওগুলো দেখে আমাকে উৎসাহিত করছেন।’ অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নওশীনও কয়েক মাস আগে ইউটিউবে সক্রিয় হয়েছেন। শপিং এবং ট্রাভেলিংয়ের বিষয় নিয়েই ইউটিউবে কাজ করছেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো সাড়া পেয়েছেন সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকে। অভিনয় ছেড়ে দিয়ে এখন এ কাজটিতেই মনোযোগী এ অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে নওশীন বলেন, ‘আসলে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রæত বিকাশের ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। অনলাইন অ্যক্টিভিটিসও বেড়েছে অনেক। মানুষ এখন বিনোদন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক প্রয়োজনই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করছেন। কেনাকাটা কিংবা ভ্রমণের ক্ষেত্রেও এখন মানুষ অনেক সচেতন। তাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করতেই ইউটিউবে কাজ শুরু করেছি। ইউটিউবে নিজের পরিচালনায় ও অভিনয়ে বেশ কিছু নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আপলোড করেছেন অভিনেতা নিলয় আলমগীর। ‘নিলয় আলমগীর ফিল্মস’ নামের চ্যানেলটিতে তিনি নিয়মিত আপলোড করছেন নিজের অভিনীত নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নিলয়ের এই চ্যানেলে ওয়েবসিরিজও প্রচার হচ্ছে। অনেক আগেই ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন এস আই টুটুল ও তানিয়া দম্পতি। তাদের চ্যানেলের নাম হাই ফাইভ এন্টারটেইনমেন্ট। নতুন-পুরনো শিল্পীদের নানান ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ইউটিউব চ্যানেল। অভিনয়শিল্পী মুমতাহিনা টয়া ও সাফা কবির যৌথভাবে ‘হ্যালো স্টার’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। তাঁরা এখানে নিয়মিত ভ্রমণ, আড্ডার মজার মজার ভিডিও আপলোড করেন। টয়া বললেন, ‘চ্যানেলটি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। ধীরে ধীরে সেগুলো বাস্তবায়ন করব।’ ইউটিউবের একটি জনপ্রিয় চ্যানেল ম্যাংগো স্কোয়াড। এর লিডার হলেন অভিনেতা শামীম হাসান সরকার। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভিডিও আপলোড করে থাকেন শামীম। ম্যাংগো স্কোয়াডে সামাজিক সচেতনতার ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে।