আব্বু অনেকদিন আমার সাথে কথা বলেননি: ইমি

প্রীতি ওয়ারেছা: দুনিয়া জুড়ে র্যাম্প মডেলিং ভীষণরকম গ্ল্যামারাস এবং একইসাথে কষ্টসাধ্য একটি পেশা। গ্ল্যামারাস পেশা হলেও এখানে দরকার হয় মেধা এবং ধৈর্য্যশক্তি। শাবনাজ সাদিয়া বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় র্যাম্প মডেল। সবার কাছে তিনি ইমি নামেই পরিচিত। আশেপাশের অনেকেই যখন নাচ কিংবা গান নিয়ে ব্যস্ত ঠিক তখন ইমি ভাবলেন অন্য কিছু। সিদ্ধান্ত নিলেন র্যাম্প মডেল হবেন। প্রথমে পরিবার থেকে সাড়া পাননি তবে কেবলমাত্র প্রবল ইচ্ছেশক্তির কারণেই তিনি নিজেকে দেশের অন্যতম একজন র্যাম্প মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গত একযুগ ধরে ফ্যাশন প্যারেডে ক্যাটওয়াক করছেন। র্যাম্পের পাশাপাশি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনচিত্র, বিলবোর্ড এবং বিনোদন পত্রিকার মডেল হিসেবে কাজ করছেন। কথা হল দেশের জনপ্রিয় র্যাম্প মডেল ইমির সাথে..
আনন্দ আলো: র্যাম্প মডেল হিসেবে আপনার শুরুটা কিভাবে? ইমি: আমি যখন মডেলিংয়ে আসি তখন আমাদের দেশে মডেলিং সেক্টর এতটা এস্টাবলিশড ছিলন। সেসময় নোবেল, মৌ, তুবা, বুলবুল, টুম্পা আপুরা দাপিয়ে কাজ করছিলেন। এছাড়া টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আরও অনেক নতুন মডেল কাজ করছিলেন। তবে র্যাম্প মডেলিংয়ে তাদের তেমন একটা কাজ করতে দেখা যেত না। আমার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল র্যাম্প মডেলিংয়ের প্রতি। ২০০১ সালের কথা। আমার আগ্রহের কথা জেনে মা আর আমার এক খালা দু’জনে মিলে আমাকে নিয়ে যায় বিবি আন্টি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক খ্যাত ফ্যাশন তারকা বিবি রাসেলের কাছে। তার সাথে ‘ডি এইচ এল ফ্যাশন’ শোয়ের কাজ করি। তবে মডেলিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে শুরু করি ২০০২ সাল থেকে। পেশা হেসেবে মডেলিংকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আম্মুর অভিযোগ না থাকলেও আব্বু সরাসরি আমাকে না করে দেন। তখন আমার মধ্যে হতাশা কাজ করলেও আশা ছাড়িনি। ভেবেছি এই সেক্টরে যদি আমি আমার দক্ষতা দেখাতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই আব্বুর আর আক্ষেপ থাকবে না। আমি সেসময় ডেডিকেশনের সাথে কাজ করে গেছি। আব্বু রাগ করে অনেকদিন পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলেননি। এরপর যখন আব্বু টের পেয়েছেন শুধু শখের বশে না প্রচন্ড ডেডিকেশনের সাথে, সুনামের সাথে আমি কাজটি করছি তখন বিষয়টা তার কাছে সহনীয় হয়ে ওঠে। আমার কাজটাকে তিনি ভালবাসতে থাকেন। শুধু তাই না এক্ষেত্রে আমার যত ধরণের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তখন সবার আগে আব্বুই এগিয়ে আসেন।
আনন্দ আলো: একজন র্যাম্প মডেলের মধ্যে কোন বিষয়টি অবশ্যই থাকা জরুরি? ইমি: র্যাম্পের ক্ষেত্রে উচ্চতা এবং শারীরিক গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন র্যাম্প মডেলিং এমন একটা পেশা যেখানে অন্য কারো রেফারেন্সে কাজ চলে না। মডেলের কোয়ালিটি আর ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সই তার এই পেশায় টিকে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এছাড়া এই পেশায় আরেকটি জরুরি বিষয় হল ধৈর্য্য। এখানে এতটাই শ্রম দিতে হয় যে কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়।
আনন্দ আলো: অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের র্যাম্প মডেলিংয়ের মূল পার্থক্য কোথায়? ইমি: অন্যান্য দেশ বলতে উন্নত দেশগুলোর কথা যদি বলি সেখানকার মডেলরা শুধু মডেলিংকেই পেশা হিসেবে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা অনেক সফল। আমাদের এখানে মডেলিংকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়া অনেক টাফ। বেশির ভাগ মডেল ধৈর্য্যহারা হয়ে অন্য পেশার দিকে মনোনিবেশ করে। আসলে তাদেরও দোষ দেই না। এছাড়া তারা আর কি করবে! বাঁচতে তো হবে! আমি ১৪-১৫ বছর ডেডিকেশনের সাথে কাজ করছি বলেই হয়তো এখন র্যাম্প মডেল হিসেবে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে যার কারণে পেশাদারিত্বের একটা ব্যাপারও তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুনদের পক্ষে সেটা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। নতুনরাও যদি পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে তৃপ্ত থাকতে পারতো তাহলে আর এদিক সেদিক দৌঁড়াতো না।
আনন্দ আলো: আপনাকে মাঝে মাঝে নাটক করতে দেখি। নাটকে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে? ইমি: র্যাম্পের কাজ অফ রেখে অন্য কিছু করার কথা চিন্তাও করতে পারি না। শো কম থাকলে নাটকে সময় দেই। যেমন বেশ কিছুদিন হল মাছরাঙা টিভিতে আমার একটা ধারাবাহিক যাচ্ছে। আরেকটি ধারাবাহিক ‘লাইফ ইন মেট্রো’ করছি এটিএন বাংলার জন্য। এছাড়া সময় মিলে গেলে হুটহাট করে এক ঘন্টার নাটকেও কাজ করছি। নিয়মিত বলতে এভাবেই চলছে। সামনেও র্যাম্পের পাশাপাশি এভাবেই অভিনয় করার ইচ্ছে আছে। নাটক ছাড়াও অনেক ধরণের আইডিয়া মাথায় কাজ করছে। অনেক কিছুই হয়তো করতে চাই ভবিষ্যতে, তবে ঐ যে মডেলিংকে বাদ দিয়ে নয়।
আনন্দ আলো: দেশের বাইরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে ভাবনা কী? ইমি: নাহ এব্যাপারে একদমই ইচ্ছে নাই। সুযোগ এখনো আছে তবে আমার মন কোনভাবেই সায় দেয়না। আমার বন্ধু মডেল আসিফ আজিম ভারতে এখন খুবই জনপ্রিয়। আসিফ আমাকে প্রায়ই বলত, ইমি চলে আসো। এখানে তুমি অনেক ভাল করতে পারবে। আমার শুধু মনে হয়েছে কি দরকার, ওদেরতো এমন অনেক ইমি আছে! বাংলাদেশে থাকুক না একজন ইমি। আরেকটি বিষয় হল আমি খুবই হোমসিক একজন মানুষ। চারপাশে আত্মীয় পরিজন ছাড়া ভাল থাকতে পারিনা। কাজে মন বসাতেও পারি না?
আনন্দ আলো: ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? ইমি: কাল কি হবে তা কি কখনো বলা যায়? আমি সুদুর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোন পরিকল্পনা করতে পারি না। করতে চাইও না। এখন যেমন চলছে ঠিক সেভাবেই চলুক কিংবা আরেকটু স্মুথলি চলুক, এটুকুই প্রত্যাশা। একেবারে না হলেও মাঝে মাঝে দেশের বাইরে গিয়ে র্যাম্প শো করার ইচ্ছে আছে। আপাতত এভাবেই চলতে চাই।
আনন্দ আলো: ইমি মানুষ হিসেবে কেমন? ইমি: বাইরে থেকে ইমিকে রাফ এন্ড টাফ দেখা গেলেও সে অনেক কাইন্ড এন্ড সফট হার্টেড এবং হোমসিক একজন মানুষ।

  • সাক্ষাৎকার
Comments (০)
Add Comment