আমি এখনো যুদ্ধ করছি – শাহেদ আলী

দাদীর মুখে শুনেছি আমার দাদা অভিনয় করতেন। সেসময় যাত্রাপালায় নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নারীদের পাওয়া যেত না। দাদা নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। অভিনয় ছাড়া আর অন্য কিছুই কখনো করেননি তিনি। আমার বাবাকেও দেখেছি অভিনয় করতে। তবে বাবা শুধুই অভিনয় করেছেন তা নয়। পরিবারের বড় সন্তান তিনি। পুরো পরিবারকে সামনে থেকে এগিয়ে নিতে আমার বাবাকে ব্যবসা করতে দেখেছি। আর পাশাপাশি মঞ্চে অভিনয় করতে দেখেছি। বেশ কিছু প্যাকেজ নাটকেও তাকে অভিনয় করতে দেখেছি। বাবার সাথেই স্যুটিং ফ্লোর, কিভাবে স্যুটিং হয় এসব দেখার সুযোগ হয় আমার। স্কুল জীবন থেকেই আমার মঞ্চে নাটক দেখা শুরু হয়। আব্বা আমাকে সাথে নিয়ে মঞ্চে নাটক দেখতে যেতেন। ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চে ঢাকা থিয়েটারের একশতম প্রদর্শনী কীর্তনখোলা নাটকটি আমার মনে ব্যাপক ছাপ ফেলে। অন্ধকার হলরুমে নাটকের চরিত্র গুলো যেভাবে সকলের মনযোগ ধরে রেখেছিল তা দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ। সেদিনই ঠিক করি আমি এখানেই কাজ করতে চাই। আমি নাটকে অভিনয় করতে চাই। কীর্তনখোলা নাটকে হুমায়ুন ফরীদিকে দেখলাম অভিনয় করতে। আর তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি হুমায়ুন ফরিদীর থেকেও বড় অভিনেতা হতে চাই। কীর্তনখোলার নাট্যকার ছিলেন শ্রদ্ধেয় সেলিম আল দীন। আমি তাঁর থেকেও বড় নাট্যকার হতে চাই। কীর্তনখোলার পরিচালক ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আমি তাঁর থেকেও বড় পরিচালক হতে চাই। কথা গুলো বলছিলেন সময়ের আলোচিত অভিনেতা শাহেদ আলী। অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে কেমন আছেন তিনি, তা জানতে আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম তার সাথে। আনন্দ আলোর অফিসে বসে জানালেন নিজের না বলা অনেক কথা। আলাপচারিতার চুম্বক অংশ প্রকাশিত হলো আনন্দ আলোর চলতি সংখ্যায়। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মামুনুর রহমান।
আনন্দ আলো: নাটকে এলেন কিভাবে?
শাহেদ আলী: কর্তিন খোলা নাটকটি দেখার পর মহিলা সমিতি থেকে আমি যখন বেরিয়েছি তখন শাহেদ আলী অনেকটাই নতুন শাহেদ আলী। অর্থাৎ সেইদিনের নাটক দেখতে আসার আগের শাহেদ আলী আর নাটক দেখার পরে যে শাহেদ আলী তাদের আত্মার মিল থাকলেও নতুন সত্তায় তখন শাহেদ ভাবনার ডাল পালা বাড়তে থাকে। একদিন হুট করেই চলে যাই শ্রদ্ধেয় আতিকুল হক চৌধুরীর কাছে। বলে ফেলি অভিনয় করতে চাই। শুধুই অভিনয়। আতিকুল হক চৌধুরী আমার ইচ্ছের কথা শুনে খুব খুশি হলেন। তবে সাথে সাথেই একটি প্রশ্ন করেছিলেন যে প্রশ্নের উত্তর সেদিন আমার কাছে ছিলো না। তিনি প্রশ্ন করেছিলেনÑ তুমি কোন দলে কাজ করো? আমি তো তখন পর্যন্ত কোন নাটকের দলে কাজ করি না। আতিকুল হক চৌধুরী বলেছিলেনÑ দেখো, আমি তোমাকে একটি নাটকে কাজ দিতেই পারি তবে টিকে থাকা তোমার জন্য কঠিন হবে। তাই পারলে কোন নাট্য দলের সাথে যুক্ত হও। অনেক কিছু শিখতে পারবে। তারপর পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেলেও সামলে উঠতে পারবে। সেদিন বিটিভি থেকে যখন বের হলাম সিদ্ধান্ত নিলাম আগে অভিনয় শিখবো। বাসায় ফিরে আব্বা-আম্মা সহ সবাইকে জানালাম। আব্বা পাশে থাকতে চাইলেন, তবে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেন। লেখাপড়া ঠিক রাখতে হবে। ভালো ফলাফল, ভালো জায়গায় লেখা পড়ার সুযোগ পেতে হবে। আব্বা নিজেও যেহেতু থিয়েটারের সঙ্গে ছিলেন আব্বা জানতেন থিয়েটার মানেই জীবনযুদ্ধ। তাই বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন থিয়েটারের কষ্ট গুলো। তার নিজের জীবনেও একই কষ্ট ছিলো। তাই কখনোই চাইতেন না আমি এই কষ্ট গুলো করি। তাই চেয়েছিলেন আমি লেখাপড়া শেষ করে ভালো কিছু করে জীবনকে স্বচ্ছল ভাবে চালিয়ে নেই। আমি বুঝতে পারছিলাম আব্বা চাইছিলেন না আমি এভাবে কষ্ট করি। তবে ততোদিনে আমি স্বপ্ন বুনে ফেলেছি। প্রাচ্যনাটের সাথে তখন যুক্ত হয়েছি। তবে একই সাথে আমি ঢাকা থিয়েটারে যুক্ত হবার চেষ্টা শুরু করি। ঢাকা থিয়েটারের কর্মীদের নতুনদের প্রতি যে আচরন দেখেছিলাম তারপর সেখানে যুক্ত হবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। ঢাকা থিয়েটারের রেজাউল হায়দার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আমাকে বলা হয় ঢাকা থিয়েটারে কেন আসতে চান? আমি বলেছিলাম অভিনয় করতে। পরের প্রশ্নটি ছিলো আপনার কী মনে হয় আপনি এখানে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন? আমি বলেছিলাম ভালো অভিনয় পারলে কেন সুযোগ পাবো না? রেজাউল হায়দার সেদিন বলেছিলেনÑ উত্তরে আপনার থেকেও আমাদের অনেক বড়, অনেক ভালো অভিনয় শিল্পী আছে, আমি আপনাকে কেন সুযোগ দেবো? আমাদের এখানে আফজাল হোসেন, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, জহির উদ্দিন পিয়ার, শিমুল ইউসুফ, সুবর্না মুস্তাফা, শমী কায়সার এদের ভিড়ে আপনি হারিয়ে যাবেন। তার কথায় আমি বুঝতে পারি তারা আমাকে নিতে চাইছেন না। তাই রোজউল হায়দারকে বলে আসি থাক ভাই আমার ঢাকা থিয়েটার করা লাগবে না। তবে মঞ্চে অভিনয় যেহেতু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আপনার সাথে দেখা হবেই। এ ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি কলেজের ছাত্র। এইচএসসি পাশ করেছি। তবে এরও আগের একটি ঘটনা আমাকে এগিয়ে নিতে কাজ করে সেটি বলি। খবর পেলাম আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের ব্যানারে পদ্মা নদীর মাঝি নির্মিত হতে চলেছে। যোগাযোগ করি তাদের সাথে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো তারা দেয়ইনি বরং বলেছে তুমি ছোট মানুষ তুমি কিভাবে অভিনয় করবে? এখানেও একটা জেদ চেপে যায়। এভাবে জেদ গুলো জমা হতে হতে একদিন দেখা হয় আজাদ আবুল কালাম এর সাথে। তাকে জানাই নিজের ইচ্ছের কথা। আজাদ ভাই বললেন, আমাদের নতুন দল এখনো কোন প্রযোজনা হয়নি। তুমি চাইলে আসতে পারো। যুক্ত হলাম প্রাচ্যনাট-এ। প্রাচ্যনাট-এর পরিবেশটি বেশ সাবলিল। সেখানে আমার মতোই অনেকের সাথেই দেখা হয় আমার।
আনন্দ আলো: এখন আপনি একের পর এক চরিত্রে কাজ করছেন। আগে থেকেই কি বুঝতে পেরেছিলেন আপনি এমন বহুমুখী অভিনয় শিল্পী হতে পারবেন?
শাহেদ আলী: আমি অভিনয় করতে পারবো এ বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই ছিলো। তবে বহুমুখী ভাবে কতোটুকু করতে পারছি তা দর্শকদের বিচার করার বিষয়। তবে প্রাচ্যনাট-এ যুক্ত হবার পরই যে আমার নাটকে অভিনয়ের সুযোগ হয়ে যায় তা নয়। সেখানেও আমার যুদ্ধটা কঠিন ছিলো। মন দিয়ে কাজ করছি। একটা সময় পরে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে নতুন কাজ দেয়া হয়। আবার সে কাজটি হতে না হতেই আরেকটি নতুন কাজ। মানে কোনটাই ভালো ভাবে করা হয়ে উঠতো না। দুই দিন চা বানিয়েছি, তো পরের দুই দিন ফ্লোর ঝাঁড়ু দিয়েছি। আবার পরের দুই দিন এ দুই কাজ সহ অন্য কাজও করেছি। সেখানে পরিচয় হয় শতাব্দী ওয়াদুদ, জাহাঙ্গীর আলম, শাখাওয়াত হোসেন রিজভী। তারা আমার প্রাচ্যনাট-এ থাকা অবস্থায় বন্ধু হয়ে যায়। তারা আমাকে একটা সময় যে কাজই করিনা কেন সাথে সাথে আরও অন্য কাজের কথা বলতো। বলতে পারেন ওদের কারনেই আমার বহুমুখী অভিনয় শিখতে পারা। সে সময় তৌফিকুল ইসলাম ইমনের পরিচালনায় সার্কাস, সার্কাস নাটকের রিহার্সেল চলছিল। পুরো নাটকটি তখনও শেষ হয়নি। একদিন হয় কি খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন রিহার্সেল এ আসেননি। আর সুযোগ হয়ে যায় আমার। প্রক্সি দিতে দাঁড়াই আমি। প্রাচ্যনাট-এ যুক্ত হবার পর সেদিনই প্রথম কেউ দেখে শাহেদ আলী অভিনয় পারে। এর মানে যে আমি সার্কাস, সার্কাস এ অভিনয়ের সুযোগ পেলাম তা কিন্তু নয়। আমি দীর্ঘ দিন কাজ করেছি ব্যাকষ্টেজ এ, তারপর প্রপস্ এ। এরপরে ৫/৬টি শো হয়ে গেছে। সার্কাস-সার্কাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করতেন সুমন ভাই তিনি পারিবারকি কারনে অভিনয় চালিয়ে নিতে না পারায় আমাকে সুযোগ দেন আজাদ আবুল কালাম। প্রথমবারের মতো বড় মঞ্চে আমি। যে মঞ্চে বসে একদিন ভেবেছিলাম অভিনেতা হবো। সেই মঞ্চে আমি!
আনন্দ আলো: টেলিভিশন নাটকে এলেন কিভাবে?
শাহেদ আলী: মঞ্চে ওঠার পর কেটে গেছে অনেক সময়। টেলিভিশনে কাজ পাচ্ছিলাম না। জীবিকাও পাশাপাশি দরকার। আমার বন্ধুর বাবা এটিএম শামসুজ্জামান আংকেলকে দেখেছি সহকারি পরিচালনা থেকে সিনেমায় এসেছেন। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম টেলিভিশন নাটকে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করবো।
আনন্দ আলো: সহকারি পরিচালক হিসেবে নাটকের নতুন জীবন কেমন ছিলো?
শাহেদ আলী: আমার শুরুটা হয় গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সাথে। তার সাথে কাজ করেই বুঝতে পারি কিভাবে নাটক পরিচালনা করতে হয়। কাজটি করতে করতে এক সময় দেখেছি আমি যে অভিনয় করতে চাই তা ভুলেই গেছি। ভুলে গেছিলাম কারণ সবাই আমাকে অনুপস্থিত শিল্পীর জায়গায়ই রেখেছিলো। অমুকে আসেননি তাই শাহেদ রয়েছে। ফলে আমি অভিনয় ছেড়ে শুধুই সহকারি পরিচালনায় নিমগ্ন থাকতাম। খুব কষ্ট হতো। তবে জেদ ছিলো একদিন কিছু একটা হবেই। হারানের নাত জামাই নাটকেও একই ভাবে আবির্ভাব হয় আমার। নির্ধারিত শিল্পী আসেননি। ডাক পরে আমার। নেমেও যাই। সম্ভবত খুব ভালো অভিনয় করি। সেলিম ভাই প্রশংসা করেন। এডিটর প্রশংসা করেন। আবারও মনে পড়ে আমি তো অভিনেতা হতে চাই। তবে সুযোগ আসছিলোনা। ২০১০ এর দিকে সিদ্ধান্ত নেই সহকারি পরিচালকের কাজ আর করবো না। এখন থেকে অভিনয় করবো। শুরুও হলো। এখনো চলছি। তবে সত্যি কথা বলতে কি অভিনয় নিয়ে যে যুদ্ধের গল্প আমি শোনাতে চাইছিলাম তার দেখা আমি নিজেই এখনো পাইনি। আমি এখনো যুদ্ধ করছি।
আনন্দ আলো: বাংলাদেশের শোবিজ কতোটা এগিয়েছে?
শাহেদ আলী: আসলে এগিয়ে যাওয়া বা এগিয়ে আসা বিষয়টি অনেকটা আপেক্ষিক মনে হয় আমার কাছে। গত বিশ বছরের তুলনায় নিজেকে দাঁড় করালে দেখি প্রাপ্তি অনেক। আবার সেই পেছনের বিশ বছর আগের জীবনটিও কিন্তু অনেক মধুর ছিলো। আমার কাছে তাই শোবিজের এগিয়ে চলার পথটিও একই রকম লাগে। একবার মনে হয় অনেক এগিয়েছি। আবার মনে হয় সেভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি আমাদের শোবিজ। যেমন আমি যখন কাজ শুরু করেছি গোলাম মোস্তাফা সাহেবকে, রওশন জামিল ম্যাডামকে দেখেছি। এখন কিন্তু এমন লিজেন্ডারি অভিনয় শিল্পীদের দেখা যায় না। আবার এখন যারা কাজ করছেন যে সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করছেন তেমনটি নিশ্চয়ই আগের দিনের অভিনয় শিল্পীরা ভাববেই পারতেন না। একজন আব্দুল্লাহ আল মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী যে সব প্রোডাকশন বিটিভিতে দিয়ে গেছেন এখনকার পরিচালকেরা সেই রকম প্রোডাকশন দেয়ার কথা ভাবতেই চাইবেন না। আবার এখন যেভাবে পরিচালকরা কাজ করছেন সেই যুগের লিজেন্ডারি অভিনেতা, পরিচালকরা কেউ তা চিন্তা করতে পারবেন না।
আনন্দ আলো: নাটকের ভিউ দরকার নাকি ভালো নাটক দরকার?
শাহেদ আলী: আসলে ভালো নাটক, ভালো সিনেমা এমন কনসেপ্ট এই আমি বিশ্বাস করি না। একেক সময় দর্শকের চাহিদা একেক রকম থেকেছে। আজ যে নাটকটি বা সিনেমা কেউ দেখছে না কাল যে তা দেখবে না তা কিন্তু নয়। আবার আজকের ষ্টার ভেবে যাদের নাটক দর্শক দেখছেন কাল তেমন ভাবে নাও দেখতে পারেন। করোনাকালে একরকম ভাবে মানুষ তার বিনোদন খুঁজে নিয়েছে। করোনাকাল কেটে গেলে বিনোদনের সময় পরিবর্তন হলে তখন কিন্তু আবারও দর্শকের চাহিদার পরিবর্তন আসবে। তার প্রমান মানুষ এখনো পথের পাঁচালী দেখেন, সংশপ্তক দেখেন, আবার বড় ছেলেও দেখেন। সব কিছু নির্ভর করে সময় ও চাহিদার উপর। তাই সব প্রোডাকশনই ভালো। যা এক সময় প্রমান দেয়। আজকের এই সাক্ষাৎকারটিও কোন এক সময় ব্যাপক প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। আরেকটি বিষয় এখানে যুক্ত করতে চাই। আমাদের নাটক কিন্তু আগে থেকেই অনেক প্রসিদ্ধ। আর এটি বুঝতে পারা যায় তখনই যখন দেশের বাইরে যাবেন। পশ্চিম বাংলায় এতো নাটক তারপরও তারা আমাদের নাটকের ভক্ত। তাদের দেশের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী আমাদের নাটক দেখছেন। আমাদের ফলো করেন। এরপর মাঝখানে আবার ভাঁটা পড়েছে বাংলা নাটকের। আবার তা কাটিয়ে নতুন ভাবে বাংলাদেশের নাটক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
আনন্দ আলো: অভিনয় জীবনে অবজ্ঞা পেয়েছেন কখনও?
শাহেদ আলী: আমি বলতে চাই এভাবে, কেউ আমাকে অবজ্ঞা করবে এ সুযোগটিই আমি দেইনি। আবার এভাবেও বলতে পারেন। আমি ধরে নিয়েছি যিনি আমাকে অবজ্ঞা সূচক কথা বলছেন তিনি এভাবেই কথা বলেন। তাহলে হয় কি, কষ্ট টাকে পজেটিভ ভাবে নেয়া যায়। আর পজেটিভ কষ্ট আপনাকে সামনে এগুতে সাহায্য করে।
আনন্দ আলো: আপনারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অভিনয় শিল্পী পরিবারকে সময় দেন কি করে?
শাহেদী আলী: আমাদের নিজেদের বিনোদনের জায়গা আমাদের পরিবার। কাজের বাইরে পরিবারকে সময় দেয়াই আমাদের মূল কাজ। অবসরে গান করা, সিনেমা দেখা, রান্না করা, পারিবারিক আলোচনা এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকি আমরা। মাঝে মধ্যে খুট খাট লাগে। আমার জায়গা থেকে জেতার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। তাই খুট খাট লাগলে আমি চুপ করে থাকি। দীপা খন্দকার আমার স্ত্রী। সে নিজেও বেশ চুপচাপ থাকে। যে কারনে খুট খাট লাগলেও স্থায়ী হয় না।
আনন্দ আলো: আপনার প্রিয় চরিত্র সম্পর্কে বলুন?
শাহেদ আলী: শেক্সপিয়রের চরিত্র, কিং লিয়ারের চরিত্র, রবীন্দ্রনাথের চরিত্র, নজরুলের চরিত্র, আর্থার মিলারের চরিত্রে কাজ করতে চাই। উৎপল দত্তের নাটকে অভিনয় করতে চাই। মঞ্চে এসব সহ টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে আরও অসংখ্য চরিত্র রয়েছে যেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী খল চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
আনন্দ আলো: মহানগর নিয়ে বলুন?
শাহেদ আলী: আমি মনে করি সংলাপ হচ্ছে অভিনয় ফুটিয়ে তোলার একটি দূর্বল অংশ বিশেষ। যে অভিনয় সংলাপ দিয়ে বোঝাতে হয় সে অভিনয় আমার কাছে অভিনয় লাগে না। ব্যক্তিগত ভাবে যত কম সংলাপে আমি অভিনয় বোঝাতে পারি সে চরিত্র আমার বেশি প্রিয়। কথা না বলে অনেক সময় অনেক কথা বলা যায়। অভিনেতা হিসেবে আমার স্ট্রাগলের জায়গাটি এখানেই। আমি এই জায়গাতে ছাড় দিতে নারাজ। অভিনয় ফুটিয়ে তুলতে, আমি মুখে কিছু বলবো না অথচও আমার অভিনয়ে দর্শক তা বুঝতে পারছেন। আমরা যেমন ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কথা না বলে বুঝাই সেভাবেই আমি কাজ করে যেতে চাই। মহানগর দেখে দর্শক যখন বুঝতে শুরু করেছেন আমি না বলেও অনেক কিছু বুঝাতে পারছি তখনই আমার দক্ষতা ও সক্ষমতাকে খুঁজতে শুরু করেছি। মহানগরের কঠিন চরিত্রটিকে সহজ করে করার চেষ্টা করেছি মাত্র। অসম্ভব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। মোশাররফ করিমের সাথে কাজ করে আমরা দুজনই বেশ আনন্দিত বোধ করেছি। মহানগর কিন্তু একটি ওয়ার্কশপের ফসল। আমার চরিত্রটি আশফাক নিপুন এমন ভাবে সাজিয়েছেন যে আমি যে কাজটি করি একসময়ে সেটিই আমার কাজ এর বাইরে অন্য কোন কাজ আমি করি না। আমি নিজেকে পরিচালকের প্রপস্ মনে করি। পরিচালক যেভাবে চায় সেভাবে কাজ করতেই আমার স্বাচ্ছন্দ্য।

  • সাক্ষাৎকার