সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সোহেল রানা সেদিন শরৎ- এর এক সন্ধ্যায় অন্য রকম এক ভালো লাগা যেন সবাইকে মোহিত করেছিল। উত্তরা ক্লাবের তৃতীয় তলায় বিরাট হল ঘরে ঢুকতেই সুমধুর রোমান্টিক গান ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি সে তো বুঝিনা… কানে ভেসে আসছিল। আজাদ রহমানের গাওয়া এপার ‘ওপার ছবির’ এই গানটি এক সময় তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ছিল। গানটির লিপসিং করেছিলেন ছবির নায়ক যিনি অভিনয় জীবনের চার দশক পরও নায়ক ইমেজেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেনÐ সেই কিংবদন্তী অভিনেতা সোহেল রানা। উত্তরা ক্লাবের হল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দুর এগুতেই দেখা গেল সামনে মঞ্চ পরিপাটি করে সাজানো। মঞ্চে রাখা বিশাল বড় একটি কেক। ব্যাকড্র্রপে নায়কের সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে তোলা তার স্ত্রীর একটি ছবি টাঙ্গানো। পাঠক, এতোক্ষণে নিশ্চয় জেনে গেছেন এই নায়ককে। হ্যা, তিনি ড্যাসিং হিরো, মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী ছবি ‘ওরা এগার জন’-এর প্রযোজক ও অনেক সৃষ্টিশীল ছবির অভিনেতা প্রযোজক এবং পরিচালক সোহেল রানা ওরফে মাসুদ পারভেজ। ১৯৯০ সালের ১৬ আগষ্ট তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পিজি হাসপাতালের (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) গাইনী বিভাগের কৃতি ডাক্তার জীনাত বেগমের সঙ্গে। এবছরের ১৬ আগষ্ট এই দম্পতি তাঁদের দাম্পত্য জীবনের ২৫ বছর পার করেছেন। এ উপলক্ষেই উত্তরা ক্লাবে আয়োজন করা হয়েছিল জাকজমক এক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল রুচিশীলতার ছাপ। পুরো হল ঘর শুভ্র সাদা আবহে সাজানো হয়েছিল। হলঘরে ছিল অসংখ্য তাজা ফুলের সমারোহ। ছিল সংগীতের হৃদয় ছোঁয়া আয়োজন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত যতই বাড়তে থাকে সাথে সাথে অনুষ্ঠানে তারকাদের আগমনও বাড়তে থাকে। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই উপস্থিত হন আমাদের চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ বলে খ্যাত কবরী। তিনি সোহেল রানা পরিচালিত ও অভিনীত প্রথম ছবি মাসুদ রানার নায়িকা। প্রিয় নায়ককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সময় কবরী হাসতে হাসতে বলেন, নায়কদের স্ত্রীরা সাধারনত অতটা সুন্দরী হয়না কিন্তু সোহেল রানার স্ত্রী জীনাত এই দিক থেকে ব্যতিক্রম। তিনি দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি শিক্ষিত ও ভালো মানুষ। আমি এই দম্পতিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সোহেলরানার প্রথম ছবির নায়িকা আমি। শুরু থেকে দেখে আসছি তিনি অন্যান্য নায়কদের চেয়ে সম্পূর্নই আলাদা। ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন সফল মানুষ। আমার কাছে এখনও তিনি নায়ক। সারা বিশ্বেই চলচ্চিত্রের নায়ক নায়িকারা শেষ বয়স পর্যন্ত স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকেন। সোহেল রানাও তাই। এরপর তারকা দম্পতি মৌসুমী ও ওমর সানি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সোহেল রানা- জীনাত দম্পতিকে। মৌসুমী বলেন, সোহেল রানা শুধু চলচ্চিত্র নায়ক প্রযোজক, পরিচালক হিশেবেই একজন জনপ্রিয় ও সফল মানুষ নন। ব্যক্তি জীবনেও তিনি সফল। তিনি পরোপকারী, সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে চলচ্চিত্রে সবার কাছে ‘ভাইয়া’ বলে খ্যাত। তাঁর দাম্পত্য জীবন আরো সুখী ও সমৃদ্ধ হোক এই কামনা করি। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানে আসেন জাতীয় পার্টি (এরশাদ)- এর প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের। তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্র তখন থেকেই সোহেল রানার সিনেমার ভক্ত। তাঁর সৃজনশীল অভিনয় আমাকে সব সময় মুগ্ধ করে। একটা সময় তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। এখন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমার প্রিয় এই অভিনেতাকে একসময় পর্দায় দেখতাম এখন তার সাথে এক সঙ্গে রাজনীতি করি। সফল এই তারকার বিয়ে বার্ষিকীর ২৫ বছরে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের পকক্ষ থেকে সোহেল রানাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তার একান্ত সচিব ববি হাজ্জাজ। অনুষ্ঠানে এই তারকা দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে আরো উপস্থিত হয়েছিলেন প্রযোজক নাসির উদ্দিন দিলু, প্রযোজক পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি, অভিনেতা ও নৃত্য পরিচালক ইলিয়াস জাভেদ, নায়ক রুবেল, নায়িকা পপি, শাবনূর, সিমলা, নায়ক জায়েদ খান সহ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, রাজনীতিবিদ এবং সোহেল রানার পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই এর পক্ষ থেকে সোহেল রানা ও জীনাত দম্পতির ছবি সম্বলিত ফুলের শুভেচ্ছা পাঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সোহেল রানা ও ডা: জিনাত এর একমাত্র ছেলে নায়ক মাশরুর পারভেজ জিবরান অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন ও অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন। অনুষ্ঠানে সোহেল রানা বলেন, মনে হয় এইতো সেদিন ডা: জিনাতের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। অথচ দেখতে দেখতে ২৫টি বছর চলে গেছে। সত্যিই আমি একজন সুখী মানুষ আমার পরিবার পরিজন নিয়ে। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন যেন সবার দোয়ায় এভাবেই সময় কাটাতে পারি।