Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বজ্রকণ্ঠ থেকে স্বাধীনতা

১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তালবাহানা শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনসভায় সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। ঐতিহাসিক এই ভাষণের শেষ অংশে বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক ভাষনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল এক দিন ছিল ৭ ই মার্চ । একটি অমর কবিতার জন্মদিন। বাঙালির অস্তিত্বের অমর সাক্ষ্য এ দিনটি। যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন বাঙালির অর্থবহ অনুপ্রেরণার দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। তেইশ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা ছাড়া বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। একাত্তরের মার্চ মাসের প্রথম তারিখ থেকে অগ্নিগর্ভ পুরো বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি জাতি। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে এ দেশের প্রশাসন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশই চলেছে। এই ভাষণের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কখনোই হারাবে না। আজীবন আপোষহীন লড়াই সংগ্রামে আপোষহীন নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের জাতীয় জীবনের অমূল্য সম্পদ ও অন্তহীন প্রেরণা। এ ভাষণ থেকে বাঙালিরা আবিষ্কার করবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। পাশাপাশি এ ভাষণের চেতনা ও আদর্শ আমাদের সকলের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এ ভাষণটি বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠতম ভাষণ। মানব সভ্যতার ইতিহাস ধারাবাহিকতায় এই ভাষণটি ছিল খুবই সাজানো ও প্রাণবন্ত। আবার রাষ্ট্রনায়কসুলভ অভিব্যক্তি এতে প্রকাশ পেয়েছে। ভাষণে কীভাবে লড়াই করতে হবে সে বিষয়ের নির্দেশ ছিল। বিশ্বে এ ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভাষণ হিসেবে বিধৃত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ তারিখের প্রদত্ত গেটিসবার্গ ভাষণ গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। তেমনিভাবে ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং নির্যাতিত মানুষের কাছে স্বাধীনতার বীজমন্ত্রতুল্য বলে বিবেচিত হবে। আব্রাহাম লিংকন ভাষণ দিয়েছেন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে। আর বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণ ছিল স্বাধীনতা লাভের পটভূমিতে। আর আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের পটভূমি ছিল গণতন্ত্র রক্ষা। এ ভাষণের পরিসর ছিল সীমিত। আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিষয়বস্তু ছিল আরও অনেক ব্যাপকতা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পটভূমি , পরিস্থিতি ও পরিবেশ ছিল আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের চাইতে বেশি সংকটময় ও অগ্নিগর্ভ। আর উল্লেখ করা যায়, আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের একটি লিখিত রূপ ছিল। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের ভাষণ লিখিত ছিল না। আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের সময়সীমা ছিল তিন থেকে চার মিনিট। আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের শব্দসংখ্যা ছিল মাত্র ২৭২টি। আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শব্দসংখ্যা ছিল ১১০৭টি। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আব্রাহাম লিংকন ভাষণ দিয়েছেন আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের অনেক পরে। তখন তিনি ছিলেন ষোলতম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। আর বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। একাত্তরের ৭ মার্চে বিশাল রেসকোর্স ময়দান রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ছাত্র শ্রমিক জনতার সব মিছিলই এসে থামে রেসকোর্স ময়দানে। ঢাকা শহর ছিল মিছিলের শহর। মিছিল আর মিছিল। জনতার ঢলে শুধু শ্লোগান আর শ্লোগান। বাঁশের লাঠির সঙ্গে লাখো কণ্ঠের শ্লোগানে কেঁপে ওঠে সেদিনের জনসমুদ্র এবং ঢাকা শহর। বাতাসে উড়ে সবুজ জমিনে বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সূর্যের অসংখ্য পতাকা। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি আর হাতাকাটা কালো কোট পরে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু দৃপ্ত পায়ে উঠে এলেন মঞ্চে। শ্লোগান আর মহুর্মুহু করতালির মধ্যে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন অপেক্ষামাণ জনসমুদ্রকে। তারপর শুরু করলেন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ। রেসকোর্স ময়দানের এই ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দেন, সেই ডাকেই বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। পরে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংস গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এদিকে গোটা জাতি ছিল প্রস্তুত, ৭ মার্চের ভাষণের দিকনিদের্শনা জাতির সামনে স্পষ্ট যা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিল এভাবে, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।’ ভাষণের যেসব অংশে বঙ্গবন্ধুর আদেশ, নির্দেশ, অনুরোধ ছিল সেগুলো মুক্তিযুদ্ধকালে অগ্নিমন্ত্রের মতো কাজ করেছে। আবার বিশ্ব জনমতের সমর্থন ও কূটনীতির ক্ষেত্রে এই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রভাবিত করেছে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানি ও সমগ্র বাঙালি জাতির বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা। বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে পাকিস্তানের তেইশ বছরের রাজনৈতিক শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস এবং বাঙালির সুস্পষ্ট অবস্থানের চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেন। তুলে ধরেন দ্বন্দ্বের স্বরূপ। পাশাপাশি বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। ভাষণে তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামের কলাকৌশল ও শত্রু মোকাবিলার কায়দা সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেন, যা ছিল এক অপূর্ব ও নাতিদীর্ঘ উপস্থাপনা। স্বাধীনতা ঘোষণার প্রশ্নে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে যাতে চিহ্নিত না হন সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অন্যদিকে শত্রুপক্ষকে এমন কোনো সুয়োগ দেওয়া যাবে না যাতে তারা অপ্রস্তুত জনগণের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করার সুয়োগ পেয়ে যায় সে দিকেও নজর রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে। এই ভাষণে বাঙালির প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তাঁর এই ভাষণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও উল্লেখ করেন। মানুষকে হত্যার প্রসঙ্গে এই ভাষণে বারবার উত্থাপিত হয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এসব ঘটনাকে চিহ্নিত করেছিলেন আমার লোক, আমার মানুষকে হত্যা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি উক্তিই উদ্ধৃতিযোগ্য ও বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। জোরালো যুক্তি খুব সহজাত বিশেষত্বে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ যে আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য- আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব দুখী আর্ত মানুষের মধ্যে।’ বঙ্গবন্ধু নিজস্ব ভঙ্গিতে এক পর্যায়ে উচ্চারণ করলেন,‘আর আমার বুকের ওপর গুলি চালানোর চেষ্টা করবা না। সাত কোটি মানুষের দাবায়ে রাখবার পারবা না। আমরা মরতে শিখেছি, এখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্যে কঠিনের সাথে কোমলের সহাবস্থান ছিল। এই বৈশিষ্ট্যটি বঙ্গবন্ধুর মাঝে সর্বদাই বিদ্যমান ছিল। তিনি বড় কঠিনভাবে বললেন, ‘আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।’ আবার আশ্বাসবাণী হিসেবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী উদ্দেশে উচ্চারণ করলেন,‘ তোমরা আমার ভাই- তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।’
রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র তখন উত্তাল। সময় তখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি যেন আরও কিছু শুনতে চায়। অবশেষে অবিনশ্বর পংক্তিটি বঙ্গবন্ধু উচ্চ করলেন, যা শোনার জন্য বাঙালি জাতি উন্মুখ ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তখন বাংলার মাটি ও বাঙালি জাতি একাকার হয়ে গর্জন দিয়ে ওঠে লক্ষ কোটি কামানের মতো। সেদিনের ভাষণে শুধু স্বাধীনতা নয়, মুক্তির কথাও বলেছেন। যার তাৎপর্য আরও গভীর। রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে নিদের্শনামূলক কাব্যময় বক্তৃতা প্রদান একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব বিধায় আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউজউইক একাত্তরের ৫ এপ্রিলে প্রকাশিত তাদের প্রচ্ছদ নিবন্ধে ‘রাজনৈতিক কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। এই রাজনৈতিক কবির অমর রচনা হচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণ। যা বাঙালির মহাকাব্য। রেসকোর্সের জনসমুদ্র সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট হয়েছিল সেই বজ্রকণ্ঠে। তাঁর ভাষণের প্রতিটি পংক্তি যেন কালজয়ী কবিতার পংক্তি। এই মহাকাব্য বাঙালি জাতির সংগ্রাম আন্দোলনের ধারা ও লালিত স্বপ্ন থেকে উৎসারিত। এই মহাকাব্য বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উদ্দীপ্ত ও দীক্ষিত করেছিল। সাহস, প্রতিজ্ঞা ও স্বদেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতির ঘুরে দাঁড়ানোর একটি দিন ছিল একাত্তরের ৭ মার্চ। বাংলাদেশ নামক দেশটি অবয়ব তৈরির কাজটি করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে। একাত্তরের ৭ মার্চ ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ। আন্দোলন সংগ্রামের পরিণত ফসল। বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, যখন বাঙালি জাতি পরাধীনতার দীর্ঘ প্রহর শেষে কাংখিত স্বাধীনতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তখনই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে। এ ভাষণের স্তরে স্তরে ছিল এদেশে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির শাসনের পরিসমাপ্তির ঘোষণা ও বিবরণ। সেই সঙ্গে ছিল পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয়বার্তা। এই ভাষণ থেকে বাঙালি জাতি পায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা। সব ভেদাভেদ ভুলে সমগ্র বাঙালি জাতিকে এক করে দিয়েছিল এ ভাষণটি। বিদ্যামান রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে এ ভাষণে ছিল বিচক্ষণ রণকৌশলের নির্দেশনা। ঐ ভাষণের পরেই বাঙালি জাতির সামনে একটি গন্তব্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। সেই গন্তব্যটি হলো স্বাধীনতা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যে ছিল সাহস, প্রত্যয়, দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা ও বাঙালির প্রতি মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হবার দিক নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি জাতির মাঝে বেঁচে থাকবে বাঙালির অন্যতম মহাকাব্য হিসেবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় হিসেবে এ মহাকাব্যের আবেদন কোনোদিন শেষ হয়ে যাবে না। ওই ভাষণ আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, ওই ভাষণে নিহিত সত্য শিক্ষা যত বেশি গভীরে অনুধাবন করতে শিখবো ততই আমাদের মুক্তির পথ সহজতর হবে। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশানমূলক এই ঐতিহাসিক ভাষণের শেষ অবিনশ্বর পংক্তিটি এবং অমোঘ বাণী ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাঙালির কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছে ও থাকবে। পাশাপাশি মহাকাব্যিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় উজ্জীবিত করে রাখবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি গণতান্ত্রিক চেতনার উজ্জ্বলতা, নিপীড়িত জাতির স্বাধিকার অর্জন এবং মুক্তিসংগ্রামের এক অনন্যসাধারণ দলিল। ঐ অনন্যসাধাণ দলিলটি যা বাঙালির মহাকাব্য। এই মহাকাব্য কালজয়ী প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই মহাকাব্যের আলোকশিখা পৌঁছে যাবে। সেই সঙ্গে বাঙালি জাতি পাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে অবিনাশী প্রেরণা। সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ, রাজনীতি বিশ্লেষকগণ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ণ ৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল হতেই করে চলেছেন, এখনো করছেন; আগামী দিনগুলোতেও এ ভাষণ নিয়ে আরো অনেক গবেষণা হবে। এমনকি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদেরও অনেক অমর সৃষ্টি হয়েছে, এ ভাষণের মহিমা ভিত্তি করে। বর্তমান প্রজন্মকে জাতির পিতা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে অনুসন্ধিৎসু হতে আগ্রহী করে তুলতে হবে তরুণদের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সে সময় এমন ছিল যে, কোনো কোনো বিদেশি পত্রিকাও তখন জানিয়েছিল, ৭ই মার্চ শেখ মুজিব হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। ১৯৭১ সালের ৫ই মার্চ লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার এবং ৬ই মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ৭ই মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দেয়া হয়। ৬ই মার্চ ৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয় ‘শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল ৭ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের ক্ষমতাবান সরকারসমূহ ও বিশ্ব-সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। সকল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধিরা ঢাকায় উপস্থিত থেকে ভাষণের বিবরণ প্রদান করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো নিউজউইক সাময়িকীর বিখ্যাত রিপোর্ট, যেখানে বঙ্গবন্ধুকে উল্লেখ করা হয়েছিল পোয়েট অব পলিটিক্স রাজনীতির কবি হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের কাছেই নয়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যমেও এ ভাষণকে একটি যুগান্তকারী দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসাবে মূল্যায়ণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন লড়াই, সংগ্রাম ও ২৭ বছর কারাভোগের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার আদায় করে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, সুদীর্ঘকাল দক্ষিন আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারি এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল।’ কিউবার মহান বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’ যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট যোশেফ মার্শাল টিটো বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এই ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রমাণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানীদের কোন রকম বৈধতা নেই। পূর্ব পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশ।’ গ্রেট বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’ পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত সিপিএম নেতা ও সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা। অন্যদিকে আছে স্বাধীনতার পরবর্তী কর্ম-পরিকল্পনা।’ রেসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড লিখেছেন, ‘রোববার ৭ই মার্চ প্রদত্ত মুজিবের ভাষণে তিনি যা বলেছিলেন, তার চেয়ে লক্ষণীয় হলো তিনি কি বলেননি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছিলেন, আবার কেউ কেউ আশা করেছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশকে সরাসরি স্বাধীন ঘোষণা করবেন। এর বদলে বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান তিনি জানালেন।’ আর্চার ব্লাড ঢাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মর্মার্থ ও তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।বিশ্ব বিবেকের বিচারে মুজিবের ভাষণ ছিলো ভৌগলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের মুক্তির দলিলও। ১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি ও বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার সমার্থক। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ই মার্চের ভাষণে।’ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন মানব জাতির পথ প্রদর্শক। তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে।’ নিউজ উইক, পত্রিকার নিবন্ধ ‘দ্য পয়েট অব পলিটিক্স’ এ বলা হয়েছে, ৭ই মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি ‘রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান।’ ১৯৭১ সালে দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের এক ভাষ্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক ঘোষণা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে ঐ ভাষণেরই আলোকে।’ বিবিসি-১৯৭১ এই মন্তব্য করেছে, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে জন আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলণীয় এই ভাষণটি। যেখানে তিনি একাধারে বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক।’ রয়টার্স এর বিশ্বখ্যাত প্রতিনিধি ১৯৭১এ মন্তব্য করেছেন- ‘বিশ্বের ইতিহাসে এ রকম আর একটি পরিকল্পিত এবং বিন্যস্ত ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একই সংগে বিপ্লবের রূপরেখা দেয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’ ১৯৭১ সালেই এএফপি বলেছে, ‘৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যদিয়ে শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বাঙালিদের যুদ্ধের নির্দেশনাও দিয়ে যান। ঐ দিনই আসলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’ ১৯৭২ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘উত্তাল জনস্রোতের মাঝে, এ রকম একটি ভারসাম্যপূর্ণ, দিকনির্দেশনামূলক ভাষণই শেখ মুজিবকে অনন্য এক ভাবমূর্তি দিয়েছে। দিয়েছে অনন্য মহান নেতার মর্যাদা।’ ১৯৯৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই আসলে বাংলাদেশর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ঐ ভাষণে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলও ছিল।’ গত সাড়ে চার দশক যাবত বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী গণমাধ্যম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ বাঙ্গালী জাতির পিতা ও অবিসংবাদিত নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রাজনীতি বিষয়ক গবেষক মাহবুবুল আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ও জীবনধারা নামক প্রায় সাত শত পৃষ্ঠার একটি গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা। যে বইটি ২০১৩ সালে অমর একুশের গ্রন্থমেলায় ‘জনতা পাবলিকেশনস’ থেকে প্রকাশিত। তার ৭ই মার্চ ২০১৫ সালে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ প্রাজ্ঞ ও কৌশলী ভাষণ পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গে প্রদত্ত ভাষণের চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণকে তুলনা করে বলেছেন, আব্রাহাম লিংকনের প্রদত্ত ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত ভাষণ, প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি ছিল তাৎক্ষণিক এবং অলিখিত। সে হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি আব্রাহাম লিংকনের ভাষণটিকেও ছাপিয়ে গেছে। তাই এই ভাষণটি যুগোত্তীর্ণ। যুগে যুগে এ ভাষণ নিপীড়ত, লাঞ্ছিত স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রেরণা ও উদ্দীপনা হিসাবে কাজ করবে। এই কারণেই বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণটি সারা বিশ্বের সমসাময়িক রাজনৈতিক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, রাজনীতির ছাত্র ও রাজনৈতিক গবেষকদের দ্বারা প্রশংসিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের ৪০ টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দ্যা স্পিচ বিহাইন্ড দ্যা লিবারেশন অব বাংলাদেশ শীর্ষক এ প্রকাশনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ৪০ টি দেশের দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রকাশনাটিকে সূচারুরূপে অনুবাদে সহায়তা দিয়েছেন। ক্রিয়েশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন সিডিএফ এ প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব এবং প্রভাব নির্ণয়ে লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা অগ্রণী রিসার্চ ৭ই মার্চ রিচার্স প্রজেক্ট নামে একটি গবেষণা কাজ শুরু করেছে। তারা চান বিশ্বের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর সাথে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তুলনার মাধ্যমে ইতিহাসে এর স্থান নির্নয় করতে।