আরেক পৃথিবী -ফরিদুর রেজা সাগর

বোর্ড রুমে সবাই বেশ অস্থির। মিটিং শুরু হবার কথা সকাল ১০টায়। সাড়ে ১১টা বাজে তবুও মিটিং শুরু হবার কোন লক্ষনই দেখা যাচ্ছে না। কোম্পানীর চেয়ারম্যান তাপস খান এখনও আসেননি। তাই মিটিং শুরু হচ্ছে না। ৭ দিন আগে এই জরুরি মিটিং আহবান করেছেন স্বয়ং চেয়ারম্যান তাপস খান। চিঠিতে লেখা ছিল বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ। সকলের উপস্থিতি কাম্য। অথচ যিনি মিটিং ডেকেছেন তারই কোনো খবর নাই। এই নিয়ে বোর্ড সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একেক জন একেক মন্তব্য করছেন। আবুল হোসেন মজুমদার স্বভাবে ঠোঁটকাটা টাইপের মানুষ। ফেনী অঞ্চলের অধিবাসী। নিয়ম করা হয়েছে বোর্ড মিটিং এ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে হবে। কিন্তু আবুল হোসেন মজুমদার কখনই এই নিয়ম মানেন না। বিশেষ করে রেগে গেলে ফেনীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। ধৈর্য্যরেও তো একটা সীমা থাকে! মিটিং আদৌ শুরু হবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। বোর্ডের ১৩ জন সদস্য অনেকটা অসহায়ের মতো চেয়ারে বসে আছেন। তবে গ্রুপে গ্রুপে বিতর্ক হচ্ছে। সবার বিতর্কের বিষয় মোটামুটি এক। দেশের রাজনীতি। এতদিন ভালই ছিল। সামনে জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন মানেই দেশব্যাপি বড় উৎসব। অথচ উৎসবের চেয়ে উৎকণ্ঠার লক্ষণ স্পষ্ট। রাজনীতি শান্ত না থাকলে ব্যবসায়িক পরিবেশও শান্ত থাকে না। এসবই আলোচনা চলছিল। হঠাৎ আবুল হোসেন মজুমদার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেনÑ
আপনেরা কি আমার একটা কথার জবা দিবেন? হঠাৎ অন্য ধরনের একটা প্রশ্ন শুনে সবাই অবাক হয়ে মজুমদারের দিকে তাকালেন। পিনপতন নীরবতা বোর্ড রুমে।
মজুমদার বললেন, আমরা কিল্ল্যাই এই খানে বসি আছি! মনে হইতেছে আমরার চাকরির ইন্টারভিউ হইব। ইন্টারভিউর লাই ওয়েট করতেছি। হাছানি? আমার কিন্তু চান্দি গরম হয়ে গেছে… আপনারা কিছু বলতেছেন না ক্যা?
সাথে সাথে বোর্ড রুমে একটা হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। মজুমদারের কথায় সমর্থনের ঢেউ উঠল। কে আগে কথা বলবেন তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। জিয়াউল হক অনেক কষ্টে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে নিলেন।
প্লিজ, আপনারা সবাই থামেন। প্লিজ…. মজুমদার ভাই যথার্থ বলেছেন। আমরা কি এখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি? ৭দিন আগে মিটিং ডাকা হয়েছে। আমরা নিজেদের জরুরি কাজ ফেলে মিটিং এ এসেছি। ওই যে জহির রায়হান সাহেবকে দেখছেন তিনি বিদেশে ছিলেন। শুধুমাত্র এই মিটিং এর জন্য তড়িঘড়ি করে দেশে এসেছেন। জিল্লুর হোসেন এসেছেন চিটাগাং থেকে। মোতালেব সাহেব এসেছেন রাজশাহী থেকে…
জিয়াউল হককে থামিয়ে দিলেন ফেরদৌস কোরেশি। হাতে ধরা পাসপোর্ট আর উড়োজাহাজের টিকেট দেখিয়ে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, দুপুরে আমার ইউকে যাবার ফ্লাইট। এই সময় আমার তো এখানে থাকার কথা নয়। প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসি বলেই মিটিং এ এসেছি। আমি আর থাকতে পারব না। যাবার আগে একটা কথা বলে যাই। সবাই জানেন টাইম এ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান। সো… সময়ের মূল্য যদি না বোঝেন তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আপনারা আমার কথায় হয়তা বিরক্ত হচ্ছেন। তবুও বলি। আর্টিফেশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয় নিয়ে আপনারা ভাবছেন কিনা জানিনা। আমি আশা করেছিলাম আজকের বোর্ড মিটিংয়ে আমরা নিশ্চয়ই এই বিষয়ে কথা বলব। বাট তার তো কোনো লক্ষনই দেখছি না। আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এখন যাব।
ফেরদৌস কোরেশিকে থামিয়ে দিলেন জাফর সিদ্দিকী। কোরেশির কথায় সমর্থন জানিয়ে বললেন, আই এগ্রি উইথ কোরেশি। আমাদের সময়ের কি কোনোই মূল্য নাই? বোর্ড চেয়ারম্যান কেন মিটিং এ আসতে দেরী করছেন সেটা কি আমরা জানি? না জানি না। আপনারা আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেন। অনলি ফাইভ মিনিটস। তারপর আমরা একটা ফাইনাল ডিসিশন নিব।
জাফর সিদ্দিকীর কথা শেষ হতে না হতেই একটা হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। সবাইকে শান্ত করে জিয়াউল হক প্রশ্ন তুললেনÑ চেয়ারম্যান সাহেব যদি শেষ পর্যন্ত মিটিং এ না আসেন তাহলে কি মিটিং হবে না? অনেকগুলো জরুরি এজেন্ডা ছিল। সামনে ঈদের বাজার। আমাদের ব্যবসায়িক পলিসি কি হবে? আমরা কি ভাবে এগুবো সার্বিক বিষয়ে একটা ফ্রটুফুল ডিসকাশন দরকার।
জাফর সিদ্দিকী যারপর নাই বিরক্ত কণ্ঠে জিয়াউল হককে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা আমাকে একটা কথার উত্তর দেন তো… সবাই নিশ্চুপ। জাফর সিদ্দিকী বললেন, চেয়ারম্যান সাহেব কেন মিটিং এ আসতে দেরী করতেছেন সেটা কি আমরা জানি?
জহির রায়হান বিরক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, চেয়ারম্যান সাহেব মিটিং এ আসতে দেরী করবেন অথবা মিটিং এ আসতে তার দেরী হচ্ছে… এ ব্যাপারে আমাদেরকে তো জানাতে হবে। আমরা কি ফেরেশতা যে না জানালেও আমরা জানব? আমাকে ক্লিয়ার করে বলেন তো আজ মিটিং হবে কি হবে না?
হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বোর্ড রুমে ঢুকলেন শবনম তাপস। তিনিও বোর্র্ডের একজন সদস্য। জহির রায়হান এতক্ষণ বিরক্ত হয়ে কথা বলছিলেন। শবনম তাপসকে দেখে মৃদু হেসে প্রশ্ন করলেন, ম্যাডাম ভালো আছেন?
শবনম তাপসও মৃদু হেসে বললেন, জ্বি আমি ভালো আছি। সবার কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অথচ আমরা বোর্ড মিটিং শুরু করতে পারিনি। এজন্য চেয়ারম্যান সাহেব আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন…
শবনম তাপসকে তামিয়ে দিলেন জাফর সিদ্দিকী- ম্যাডাম আজকের মিটিং কি তাহলে হবে না?
না। তবে চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন খুব তাড়াতাড়ি মিটিংটা করবেন।
চেয়ারম্যান সাহেব কেন মিটিং এ আসলেন না। তিনি কি অসুস্থ? জানতে চাইলেন জাফর সিদ্দিকী।
শবনম তাপস একটু ভেবে নিয়ে বললেন, হ্যা তিনি অসুস্থ।
কি হয়েছে?
মাথার গন্ডগোলটা আবার বেড়েছে।
চিকিৎসা? প্রশ্ন করলেন কোরেশি।
শবনম বললেন- চিকিৎসা চলছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নাই।
বোর্ড মিটিং এ এতক্ষণ একটা হৈচৈ ছিল। এখন সেটা নেই। জাফর সিদ্দিকী প্রশ্ন করলেন, মাথা ব্যাথাটা কি রকম? সিটি স্ক্যান…
শবনম তাপস সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন, আমি আবারও চেয়ারম্যান সাহেবের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আমরা মিটিং এ বসতে পারব। আপনারা চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের জন্য দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু খাবার আনা হয়েছে সিঙ্গাপুর থেকে। প্লিজ আপনারা সবাই খেয়ে যাবেন…
বোর্ড রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন শবনম তাপস। আবারও বোর্ড রুমে একটা মৃদু হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। চেয়ারম্যানের অসুস্থতার জন্য একদল সহমর্মিতা জানাচ্ছে। অন্যদল সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। সিঙ্গাপুর থেকে আনা খাবার নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। জহির রায়হান চিৎকার করে বললেনÑ এইসব ফুটানি ভালো না। সিঙ্গাপুর থেকে খাবার আনতে হবে কেন? এইসব কারণে তো দেশটা… তর্ক-বির্তকে বোর্ড রুম উত্তপ্ত হয়ে উঠল।

ধানমন্ডির লেকের ধারে গড়ে ওঠা আধুনিক স্থাপত্যের এই বাড়িটিকে এলাকার অনেকে নাম দিয়েছেন, রাজার বাড়ি। আশে-পাশের অন্যান্য বাড়ির তুলনায় স্থাপত্যের ডিজাইন একেবারেই আলাদা। বাড়িটিতে সাদা রং এর আধিক্য বেশী। পাঁচতলা বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা অফিসের কাজে ব্যবহার হয়। অফিস বলতে ‘সলিডারিটি’র হেড অফিস। নামটা তাপস খান এরই দেওয়া। সলিডারিটির বোর্ড মিটিং সাধারনত এই রাজার বাড়িতেই করা হয়। প্রিন্টিং ব্যবসার মাধ্যমে সলিডারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এক পর্যায়ে কোচিং ব্যবসায় পা রাখে সলিডারিটি। তারপর আবাসন খাতের প্রতি জোর দেয়। ইদানিং মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, ডিম, পোলট্রির দিকেও ঝুঁকেছে। একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সদস্য সলিডারিটি। সামনে ঈদ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনার জন্য জরুরি মিটিং আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু তাপস খানের অসুস্থতার কারণে মিটিংটা হল না। ৪ তলা থেকে নীচে তাকিয়ে আছেন তাপস খান। অনেকগুলো গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। মাথা ব্যথার কারণে চোখে ভালো করে দেখতে পারছেন না। তবুও দেখার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ স্ত্রীর ডাকে চমকে উঠলেন তাপস খান।
তুমি বারান্দায় কি করছ? শবনম তাপস প্রশ্ন করলেন।
স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাপস জানতে চাইলেনÑ সবাই চলে গেছে?
হ্যা।
যাবার সময় কি কে কি বলল?
আমি লিখে রাখিনি। তবে সবাই বেশ ক্ষুদ্ধ। সামনে ঈদ। অনেক সিদ্ধান্ত বাকি।
তুমি বল নাই আমি অসুস্থ?
বলেছি। তবুও…
তবুও কি?
নানান জনের নানান কথা।
নানান জনের নানান কথাটা কি?
শুনলে তুমি রাগ করবে। তোমার মাথা ব্যথা আরও বাড়বে।
বাড়বে না। তুমি বল।
মাথায় হাত দিয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করলেন তাপস।
শবনম বললেন, ওই যে কথা না শুনেই তোমার অস্থিরতা বেড়ে গেছে….
তাপস বিরক্ত কণ্ঠে বললেনÑ তবুও তুমি বল। কে কি বলেছে আমার জানা দরকার।
শবনম ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বললেনÑ তুমি শান্ত হও। পরে তোমাকে সব বলব।
তাপস হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলেন, পরে না আমি এখনই শুনব। তুমি বলো…
দূরে কাজের লোক দাঁড়িয়ে আছে। ওর নাম রহিম।
শবনম জিজ্ঞেস করলেনÑ কি খবর বল?
রহিম মাথা নীচু করে বললÑ ডাক্তার সাহেব এসেছেন।
তাই নাকি? তাকে গেস্ট রুমে বসতে দাও।
রহিম চলে যাচ্ছিল। শবনম তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, দাঁড়াও। তোমাকে বলতে হবে না। আমিই যাচ্ছি। বলেই গেস্ট রুমের দিকে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে তাপসকে উদ্দেশ্য করে শবনম বললেন, তুমি কি গেস্ট রুমে আসবে? নাকি ডাক্তার সাহেবকে এখানেই আসতে বলব?
তাপস সামনে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে বললেন, চলো গেস্ট রুমেই যাই।
ডা. শান্তুনু গেস্ট রুমে বসে মোবাইলে কথা বলছিলেন। তাপস ও শবনমকে এক সঙ্গে দেখে মোবাইলের কথা শেষ করে মৃদু হেসে তাপসকে উদ্দেশ্য করে বললেনÑ মাথা ব্যথাটা কি বেড়েছে?
তাপস কিছু বললেন না। শবনমের দিকে তাকালেন। শবনম মৃদু হেসে বললেনÑ ডাক্তার ওর মাথার ব্যথাটা কমছেই না। গত রাতে মাথা ব্যপার কারণে ঘুমাতে পারেনি।
ওষুধগুলো ঠিকমত খাচ্ছে তো?
হ্যা। রুটিন মেনেই তো খাওয়াচ্ছি।
তাহলে তো সমস্যা হবার কথা নয়। বলেই ডাক্তার শান্তুনু তাপসের চোখের দিকে তাকালেনÑ ব্যথাটা ঠিক কোথায়?
সারা মাথায়?
সারাক্ষণ ব্যথা থাকে?
না। কখনও ডানে। কখনও বামে। কখনও মনে হয় মাথার তালুতে ব্যথা।
ডা. শান্তুনু ভেবে নিয়ে বললেন, তাহলে আমরা আবার সিটিস্ক্যান করে দেখি।
কোন লাভ হবে না। বললেন তাপস।
তাহলে কি করতে চান? বিদেশে? ব্যাংকক অথবা সিঙ্গাপুর? ইউকেতেও যেতে পারেন।
আমি বিদেশে যাব না। দেশেই বিদেশী ডাক্তারকে ডেকে আনো। টাকার জন্য চিন্তা করবে না। বলেই দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে উহ-আহ করতে লাগলেন তাপস।
ডা. শান্তুনু কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাপস খানের মাথার যন্ত্রণা কেন হচ্ছে এ ব্যাপারে ঢাকায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে অনেকবার বৈঠক হয়েছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। তবে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে একটাই অপশন তাপসকে বিদেশে নেওয়া। কিন্তু তিনি বিদেশে যাবেন না। দেশেই বিদেশী চিকিৎসকে চান। বিদেশী চিকিৎসকের ক্ষেত্রে ভারত ছাড়া অন্য দেশের চিকিৎসককে দেশে ডেকে আনা বেশ মুশকিল। হঠাৎ ভারতের কলকাতার একজন চিকিৎসকের কথা মনে পড়ে গেল শান্তুনুর। ডা. কৌশিক গাঙ্গুলি। নামকরা নিউরো সার্জন। তাকে অনুরোধ করলে হয়তো ঢাকায় আসতেও পারেন। মানিব্যাগে কৌশিক গাঙ্গুলির ভিজিটিং কার্ড ছিল। তাকে ফোন করতে গিয়ে তাপসের অনুমতি নেওয়ার কথা ভাবলেন শান্তুনু।
কলকাতায় একজন ডাক্তার আছে। নামকরা নিউরো সার্জন। তাকে রিকোয়েস্ট করে দেখতে পারি। রিকোয়েস্ট করব?
ভালো ডাক্তার? জানতে চাইলেন তাপস। শবনম জানতে চাইলেনÑ ব্যবহার কেমন?
শান্তুনু মৃদু হেসে বললেনÑ কৌশিক গাঙ্গুলি অনেক নামকরা ডাক্তার। সমস্যা হল তাকে খুব সহজে পাওয়া যায় না। তবে আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে তার সঙ্গে আলাপ করে দেখতে পারি।
তাপস কিছু বললেন না। মাথার যন্ত্রনায় কোকাচ্ছেন তিনি। শবনম ডা. শান্তুনুকে বললেনÑ আপনি কথা বলে দেখুন।
ডা. কৌশিক গাঙ্গুলিকে ফোন করতে গিয়েও করলেন না শান্তুনু। তার মনে হল কৌশিক গাঙ্গুলির ব্যাপারে কিছু ইনফরমেশন তাপস ও শবনমকে জানানো দরকার। তাপসের দিকে তাকালেন তিনি।
মাথার যন্ত্রনাটা কি একটু কমেছে?
একটু কমেছে।
মনোযোগ দিয়ে আমার একটা কথা শুনবেন?
বলেন, আমি শুনছি।
কৌশিক গাঙ্গুলির চিকিৎসা পদ্ধতি একটু ভিন্ন রকম।
সেটা কেমন জানতে চাইলে শবনম।
শান্তুনু বললেন. কৌশিক গাঙ্গুলি রোগীর চিকিৎসায় কোন যন্ত্র ব্যবহার করেন না।
সেটা কি রকম?
শান্তুনু একটু ভেবে নিয়ে বললেন, কৌশিক গাঙ্গুলি রোগীর চোখ আর মুখ দেখে চিকিৎসা করেন। কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন না।
তাপস খান যারপর নাই অবাক হলেন। যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে চোখ আর মুখ দেখে চিকিৎসা করার কথা এই প্রথম শুনলেন তিনি। চোখ মুখ দেখে চিকিৎসা- এও কি সম্ভব? শবনমও বেশ অবাক হয়েছেন। শবনমই শান্তুনুকে প্রশ্ন করলেনÑ যন্ত্রপাতি ছাড়া চিকিৎসা, কিভাবে সম্ভব?
শান্তুনু বললেনÑ এটাই তার চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য।
তার মানে রোগীর প্রেসার দেখতে হলে তিনি কোনো মেশিন ব্যবহার করেন না?
না।
ইনজেকশন দিতে হলে?
তিনি ইনজেকশন দেন না।
তাহলে কিভাবে চিকিৎসা করেন?
রোগীর সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা করেন।
সেটা কেমন?
শান্তুনু আবার ভেবে নিয়ে বললেন, রোগীর চিকিৎসা করার আগে তাকে রোগীর একটা বায়োডাটা দিতে হয়। রোগীর সমস্যা কি? সমস্যাটা কবে থেকে শুরু হয়েছে। রোগীর বাবা-মা, ভাই-বোনের পাশাপাশি বংশের কারও এই রোগ ছিল কিনা সব কিছু ডা. গাঙ্গুলিকে আগে জানাতে হয়। তবে এক্ষেত্রে একটা শর্ত আছে?
শর্ত? কী? প্রশ্ন করলেন তাপস খান।
শান্তুনু বললেনÑ শর্ত একটাই কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না। যা সত্য তাই বলতে হবে। সত্য যদি অপ্রীতিকরও হয় তাহলেও গোপন করা যাবে না।
কথাগুলো বলে তাপস খানের দিকে তাকালেনÑ ডা. শান্তুনু। ইশারায় জানতে চাইলেন কৌশিক গাঙ্গুলিকে কল দিবেন কিনা। তাপস খান ভেবে নিয়ে বললেন. খবর দাও।
সময় ক্ষেপন না করে সাথে সাথে কৌশিক গাঙ্গুলির মোবাইলে ফোন দিলেন শান্তুনু। ফোন বন্ধ। হোয়াটস অ্যাপে লিখলেনÑ াবৎু ঁৎমবহঃ. ংধহঃঁহড়, ভৎড়স উযধশধ. হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ দেবার মিনিট খানেকের মধ্যেই কৌশিক গাঙ্গুলির ফোন এলো। তড়িঘড়ি ফোন রিসিভ করে শান্তুনু খুশি হয়ে বললেন, দাদা নমস্কার।
নমস্কার। খবর কী? আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন?
হ্যা।
নিশ্চয়ই জরুরি?
হ্যা।
বলুন।
আপনি কি এখন কলকাতায়?
না।
তাহলে কোথায়?
কৌশিক গাঙ্গুলি হাসতে হাসতে বললেন, আমি তো আপনাদের ঢাকায়। একটা সেমিনারে এটেন্ড করতে এসেছি। কাল চলে যাব!
মেঘ না চাইতে যেন বৃষ্টি আসার মতো আনন্দ। শান্তুনু খুশি হয়ে বললেন, দাদা কাল আপনার কোলকাতা যাওয়া চলবে না।
কেন?
একজন রোগীকে দেখতে হবে।
আপনার আত্মীয়?
হ্যা। আমার বড় ভাই। নামকরা শিল্পপতি।
সমস্যা কি?
মাথা ব্যথা।
শুধুই মাথা ব্যথা?
না আরও নানান ঝামেলা আছে।
ক’দিন ধরে?
প্রায় এক মাস।
চিকিৎসা চলছে না?
হ্যা। কোনো কাজ হচ্ছে না।
সিটিস্ক্যান করা হয়েছে?
হ্যা। ডাক্তার বলেছে কোনো সমস্যা নাই।
ভদ্রলোক কি করেন?
ব্যবসা?
কিসের ব্যবসা?
গার্মেন্টস, ম্যানপাওয়ার, টিভি চ্যানেলও আছে। ইদানিং পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, চিনির ব্যবসাও করছেন।
তার মানে মানুষকে ঠকায়?
কৌশিক গাঙ্গুলির প্রশ্ন শুনে একটু যেন ভ্যাবাচেকা খেলেন ডা. শান্তুনু। তবে বুঝতে না দিয়ে বললেনÑ আপনি তাহলে কাল কলকাতায় যাচ্ছেন না?
আমাকে ৩০ মিনিট সময় দেন। কলকাতায় নিশ্চয়ই আমার কিছু জরুরি কাজ আছে। সেগুলো অন্যরা ম্যানেজ করতে পারবে কিনা সেটা বুঝে নিয়ে আপনাকে ফোন দিচ্ছি। বলেই ফোন কেটে দিলেন কৌশিক গাঙ্গুলি। তাপস খান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। মাথার ডান দিকে ব্যথাটা বেড়েছে। কারও কথা সহ্য হচ্ছে না। তবে কৌশিক গাঙ্গুলির ব্যাপারে বেশ কৌতুহল দেখা দিয়েছে। কোন প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে যে চিকিৎসক চিকিৎসা দেন তাকে দেখার খুউব ইচ্ছে করছে। শান্তুনুকে সে কথা বললেনÑ শান্তুনু তোমার কি মনে হচ্ছে কলকাতার ডাক্তার আসবেন?
শান্তুনু জোর দিয়ে বললেন, আশাকরি তিনি আসবেন। তাপস খানের মনের ভেতরে এক ধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিল।

রাতেই ধানমন্ডিতে রাজার বাড়িতে উঠলেন কৌশিক গাঙ্গুলি। বেঁটে খাটো মানুষ। ফর্সা শরীর। চোখে পাওয়ারি চশমা। টাক মাথা। তৃতীয় তলার একটি বড় ঘরে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটা রাত রাজার বাড়িতে থাকবেন কৌশিক গাঙ্গুলি। কলকাতায় জরুরি কাজ আছে। সেজন্য পরের দিন সকালের ফ্লাইটেই ঢাকা ত্যাগ করবেন। এমন শর্ত সাপেক্ষে তিনি রাজার বাড়িতে এসে উঠেছেন। বাড়ির পরিবেশ দেখে তিনি বেশ খুশি। যেন এক রাজ প্রাসাদ। এই প্রাসাদের মালিকের মাথায় যন্ত্রনা হবে কেন? তার তো সুখে থাকার কথা। রাতের খাওয়া- শেষে বড় হল ঘরে তাপস খানের মুখোমুখি বসলেন কৌশিক গাঙ্গুলি। ঘরে অধিকাংশ আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলো আধারি পরিবেশ। তাপস খান অনুভব করলেন তার মাথার যন্ত্রনাটা আগের চেয়ে বেড়েছে। যন্ত্রনাটা ডান দিক থেকে বাম দিকে শিফট করেছে। কৌশিক গাঙ্গুলি তাপস খানকে প্রশ্ন করলেনÑ
আপনার মূলতঃ সমস্যা কি?
সমস্যা মাথায়।।
কতদিন ধরে?
প্রায় এক বছর। তবে সমস্যাটা তীব্র হয়েছে এক মাস ধরে।
এখন কি মাথায় ব্যথা হচ্ছে?
হ্যা।
খুব বেশি?
না, মাঝারি।
আপনি ১০০ থেকে ১ গোনার চেষ্টা করুন তো?
তাপস খান ১০০ থেকে ১ গুনতে গিয়ে ভুল করলেন। মাথার যন্ত্রনায় ঠিকমত গুনতে পারছেন না। বুঝতে পেরে কৌশিক গাঙ্গুলি তাকে প্রশ্ন করলেনÑ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে?
হ্যা।
শান্ত না ডানপিটে ছিলেন?
শান্ত।
ভাই বোন ক’জন?
পাঁচ ভাই দুই বোন।
আপনি কত নম্বর?
আমি তৃতীয়।
বাবা কি করতেন?
প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক।
আপনাদের আর্থিক অবস্থা?
কখন?
ছোট বেলায়…
ভালো ছিল না।
আপনার পড়াশুনা?
স্কুল গ্রামে। কলেজ মফস্বল শহরে। ভার্সিটি ঢাকায়।
আপনি তো ব্যবসা করেন? প্রথম ব্যবসা?
কোচিং।
তারপর?
গার্মেন্টস।
বর্তমানে?
হোটেল ও পোলট্রি যুক্ত হয়েছে।
আপনার কি এখনও মাথাব্যথা করছে?
না। বেশ হালকা লাগছে।
আমার সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। আরও হালকা লাগবে।
বর্তমান সময়ে কি নিয়ে চিন্তিত আপনি? ব্যবসায় কোনো ঝামেলা হচ্ছে?
না তেমন ঝামেলা হচ্ছে না।
তেমন শব্দটা কেন? তার মানে ঝামেলা হচ্ছে?
না। ঝামেলা হচ্ছে না।
কৌশিক গাঙ্গুলি হঠাৎ হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি করে বললেনÑ আপনার চিকিৎসা আমি করতে পারব না। স্যরি…
বলেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। পাশের ঘরে শবনম ও ডা. শান্তুনু অপেক্ষা করছিলেন। দু’জনে দৌড়ে এলেন। কৌশিক গাঙ্গুলি মোটামুটি গুটিয়ে নিয়েছেন। চলে যাবেন ভাবছেন। শবনম অনুরোধ করে জিজ্ঞেস করলেনÑ ডা. কোনো সমস্যা?
হ্যা অনেক বড় সমস্যা। আমি আগেই বলেছি আমার কাছে মিথ্যা বলা যাবে না। সত্য যত কঠিনই হোক তা বলতে হবে। তা নাহলে আমি চিকিৎসা করতে পারব না। তাপস সাহেব আমার কাছে সত্য লুকাচ্ছেন। সত্য লুকালে তো আমি… স্যরি। আমাকে মাফ করবেন।
তাপস খান অপরাধীর মতো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। শবনম প্রায় কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে কৌশিক গাঙ্গুলিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আজ আমাদের একমাত্র পুত্রের মৃত্যু দিবস। তাই হয়তো তাপস মন খুলে কথা বলতে পারছে না।
কি হয়েছিল ছেলের? স্বাভাবিক মৃত্যু?
না। তাকে ভেজাল ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।
শবনমের কথা শেষ হতে না হতেই তাপস খান চিৎকার দিয়ে উঠলেন। কৌশিক গাঙ্গুলি ভয় পেয়েছেন। তবে বুঝতে না দিয়ে শবনম ও শান্তুনুকে বাইরে যাবার জন্য বললেন। তখনই বাইরে হঠাৎ আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামল।

পত্রিকার শিরোনামটা কয়েকবার পড়লেন হাবিবুর রহমান খান। তিনি দেশের একজন নামকরা চলচ্চিত্র প্রযোজক। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষের ব্যাপক আলোচিত সিনেমা পদ্মা নদীর মাঝি, মনের মানুষ সহ একাধিক আলোচিত সিনেমার প্রযোজক তিনি। ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি তার বন্ধু। তার সঙ্গে দেখা করার জন্যই ধানমন্ডিতে রাজার বাড়িতে এসেছেন। ব্যবসায়ী তাপস খান তার জুনিয়র বন্ধু। তবে ডা: শান্তুনু তার পরিচিত।
কৌশিক গাঙ্গুলি গত রাতে হাবিবুর রহমানকে ফোন করেছিলেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশো দেখার অভ্যাস হয়ে গেছে হাবিবুর রহমানের। বিশেষ করে চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রার ব্যাপারে তার একটা আলাদা টান আছে। তৃতীয় মাত্রা দেখার পর ঘুমাতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠে। নম্বর দেখে তো তিনি অবাক। কলকাতার কৌশিক গাঙ্গুলি ফোন দিয়েছে। যাকে ফোন করে পাওয়া যায় না সেই কিনা ফোন দিয়েছে! ফোন ধরেই সে কথা বললেন হাবিব খান।
কৌশিক সূর্য কি আজ পশ্চিম দিকে উঠেছে?
নমস্কার হাবিব ভাই।
নমস্কার। বলছিলাম সূর্য কি আজ পশ্চিম দিকে উঠেছে? তোমার ফোন পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।
কৌশিক গাঙ্গুলি হাসতে হাসতে বললেন, এভাবে বলছেন কেন হাবিব ভাই? আচ্ছা বলেন তো আমি এখন কোথায়?
হাবিব খান ভেবে নিয়ে বললেনÑ কোথায় আবার হয় কলকাতায় না হয় নিউইয়র্ক অথবা লন্ডন…
আপনার অনুমান ঠিক হল না। আমি এখন আপনাদের ঢাকায়।
হাবিব খান আনন্দে চিৎকার দিয়ে বললেনÑ বলেন কি? ঢাকায় কবে এসেছেন? কোথায় উঠেছেন। থাকবেন কয়দিন?
এক সঙ্গে এত প্রশ্ন শুনে কৌশিক গাঙ্গুলি হাসতে হাসতে বললেনÑ একটু থামেন, থামেন হাবিব ভাই। ঢাকায় এসেছি একটা সেমিনারে যোগ দিতে। আপনাদের সোনারগাঁও হোটেলে ছিলাম। বর্তমানে ধানমন্ডিতে একজন শিল্পপতির বাড়িতে আছি। বাড়িতো না রাজপ্রাসাদ। নাম বললেও হয়তো চিনবেন। তাপস খান… ধানমন্ডিতে লেকের ধারে বাড়ি…
হাবিবুর রহমান কৌতুহলী জানতে চাইলেনÑ হোটেল ছেড়ে তাপস খানের বাড়িতে কেন? তাপস খান কি অসুস্থ?
হ্যা।
কি অসুখ?
মাথা ব্যথা।
স্রেফ মাথা ব্যথা?
না তার আরও অনেক ঝামেলা আছে। এক কাজ করেন আপনি কাল ধানমন্ডিত আসেন। আপনার সঙ্গে অনেক কথা আছে। আসবেন?
হ্যা আসব।
কৌশিক গাঙ্গুলির সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজার বাড়িতে এসেছেন হাবিবুর রহমান খান। ডা: শান্তুনু তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বাড়ির গেটে তাকে দেখে হাবিবুর রহমান খুশি হন। তার কাছেই তাপস খানের অসুস্থতার ব্যাপারে ডিটেইল জেনে নেন। বিশাল ড্রয়িং রুম চা খেতে খেতে আড্ডা জমে যায়। টেবিলে অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা পড়ে আছে। দৈনিক প্রথম আলোর একটা শিরোনাম পড়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। ‘দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সিন্ডিকেটকেই দুষলেন বানিজ্যমন্ত্রী’। এই সিন্ডিকেট শব্দটা নিয়েই হাবিবুর রহমানের যত আপত্তি। মন্ত্রী বলেছেন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সিন্ডিকেট দায়ী। তাহলে সিন্ডিকেট বড় না সরকার বড়? ডা. শান্তুনুকে এই প্রশ্নটাই করলেন তিনি।
তুমি কি আজকাল পত্রিকা পড়?
মাঝে মাঝে পড়ি।
এই যে পত্রিকায় লিখেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সিন্ডিকেটাই দায়ী। সিন্ডিকেট কে চালায়? মানুষই তো! তারা কি রাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী?
শান্তুনু কিছু বলেন না। কারণ এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য নিয়ে তার কোনো উৎকণ্ঠা নাই। যত উৎকণ্ঠা তাপস খানকে নিয়ে গত রাতে দীর্ঘ সময় ধরে ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি ও তাপস খান অন্ধকার ঘরে কথা বলেছেন। বাইরে উৎকণ্ঠায় সময়। কেটেছে শবনম ও শান্তুনুর।
ফজরের আজান দেওয়ার আগে আগে রুমের আলো জালিয়ে কৌশিক গাঙ্গুলি জানিয়ে দেন তাপস খানের অসুস্থতার ব্যাপারে আজ আর কোনো কথা হবে না। কাল দিনে তিনি আবার বসবেন তাপসের সঙ্গে। তাপরই বলতে পারবেন তাপসের সুস্থতার জন্য কোন্ প্রক্রিয়ায় এগুতে হবে। শেষ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি বলেছিলেন সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠবেন। সাড়ে ৯টায় সকালের নাস্তা খাবেন। ১০টায় আবার তাপস খানের সঙ্গে বসবেন। অথচ সকাল ১০টা বাজে কৌশিক গাঙ্গুলির কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ভেতর বাড়ি থেকে শবনম কয়েকবার তাগদা দিয়েছেন।
শান্তুনু, ডাক্তার সাহেব কি উঠেছেন?
না।
বেলা তো অনেক হল। সকাল ১০টায় তাপসের সঙ্গে নতুন করে বসার কথা। তাপসও ঘুম থেকে উঠেনি। কি করা যায় বলেন তো?
শান্তুনু নিজেও একই কথা ভাবছিলেন। সময়ের ব্যাপারে কৌশিক গাঙ্গুলি বেশ সিরিয়াস। তার কাছে সকাল ১০টা মানেই ৯টা ৫৯মিনিট। অথচ আজ যেন একটু ব্যতিক্রম ঘটছে। চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছিলেন হাবিব খান।
শান্তুনু বলল, হাবিব ভাই কি করি বলেন তো।
শান্তুনুর প্রশ্নটা বুঝতে না পেরে তার মুখের দিকে তাকলেন হাবিবুর রহমান খান।
শান্তুনু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে বললÑ ডা: কৌশিক সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠবেন বলেছিলেন। এখন ১০টা বাজে। দরজায় নক করবো?
হাবিবুর রহমান ভেবে নিয়ে বললেনÑ নক করো। শান্তুনু ড্রয়িং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললÑ ডা. কৌশিক তো রুমে নাই।
বলো কি? উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে প্রশ্ন করলেন হাবিবুর রহমান। একই সময়ে শবনম এলো তাদের সামনে। তার চোখে-মুখে সীমাহীন উৎকণ্ঠা। তাপসও তার রুমে নাই। ডাক্তার এবং রোগী দু’জনই লাপাত্তা। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। সারা বাড়িতে রীতিমত একটা হৈচৈ পড়ে গেল।

রুপনীর মন খারাপ। রুপনী ভিকারুননিসা নুন স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে তার কিছু ভালো বান্ধবী আছে। আবার কিছু খারাপ বান্ধবীও আছে। তাদের কাজই হল পড়াশুনার বাইরের বিষয় নিয়ে আলাপ করা। তিলকে তাল বানানো। কয়েকদিন আগে নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে কত কথাই না বলেছে। এখন পরীমনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আজ ওদের আলোচনার বিষয় ছিল সিন্ডিকেট। বাজারদর বিষয়টা রুপনী সঠিক ভাবে বোঝে না। কারণ এই বিষয়ে তাকে কোনদিন ফেস করতে হয়নি। আজ ক্লাশের সেই বান্ধবীরা বাজারদর নিয়ে কথা বলতে বলতে রুপনীর বাবার কথা টেনে আনে। ওদের মুখেই সিন্ডিকেট শব্দটা শুনতে পায়। সোহেলী নামে রুপনীর একজন বান্ধবী প্রকাশ্যেই বলে ফেলে রুপনীর বাবাই নাকি সিন্ডিকেটের গুরুত্বপুর্ণ সদস্য। সোহেলীর কথার রেশ ধরে অন্যরাও রুপনীকে যা ইচ্ছে তাই বলতে থাকে। রুপনীর বাবা নাকি হারাম টাকা আয় করে। হারাম টাকা ভালো না। এই ধরনের কত কথা…
গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় ড্রাইভার আংকেলের কাছে সিন্ডিকেট শব্দটার মানে জানতে চেয়েছিল রুপনী। বয়স্ক ড্রাইভারের নাম আব্দুল খালেক। সে প্রথমে রুপনীর কথা বুঝতে পারেনি। পরে বুঝতে পেরে বিব্রত হয়ে বলেছে, মামনি তোমাদের স্কুলে কি আজকাল পড়াশুনার বাইরের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়?
রুপনী বুঝতে পারে খালেক চাচা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তাই সে আবারও একই প্রশ্ন করেÑ আংকেল আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন। আপনি কি জানেন সিন্ডিকেট মানে কী? না জানলে চুপ থাকেন। আমাদের স্কুলের দোষ দিবেন না। আমাদের স্কুল অনেক ভালো স্কুল।
আব্দুল খালেক নিশ্চুপ থাকাকেই স্বস্তির জায়গা ভেবে সিন্ডিকেট নিয়ে কোন মন্তব্য করে না। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টায় বলে, এইটা বেশ কঠিন শব্দ। আমি আসল মানে জানি না। রুপনী ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলে আমি আপনার কাছে এই শব্দের মানে জানতে চাইনি। সিন্ডিকেট শব্দের অর্থ আমি জানি। সংঘবদ্ধ দল। সংঘবদ্ধ বোঝেন? যারা এক সঙ্গে থাকে। এক সঙ্গে কাজ করে…
আব্দুল খালেক আর কথা বাড়ায়নি। ফলে মেজাজ আরও বিগড়ে যায় রুপনীর। বাসায় এসে গাড়ি থেকে নামার পর বুঝতে পারে বাড়িতে কিছু একটা হয়েছে। টিভি ক্যামেরা সহ কিছু মানুষ বাসার সামনে হাঁটাচলা করছে। তাদেরকে দেখে আব্দুল খালেক আনমনে মন্তব্য করেÑ হায় আল্লাহ সিচুয়েশন তো বেশ খারাপ…
গাড়ি থেকে নেমে সোজা মায়ের ঘরে ঢুকে যায় রুপনী। শবনম ফোনে জরুরি কথা বলছিলেন। রুপনীকে এভাবে ঘরে আসতে দেখে কাজের মেয়েটাকে ডাক দেন। সালমা পাশেই ছিল। সে দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢোকে। শবনম রুঢ় ভঙ্গিতে সালমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেনÑ
কোথায় থাকিস?
এই তো পাশেই ছিলাম।
পাশে ছিলি মানে? তামাসা দেখতেছিস? আপুকে তার ঘরে নিয়ে যা। বলেই রুপনীর দিকে তাকালেন শবনম- রুপনী নিজের ঘরে যাও। আমি এখন ব্যস্ত।
রুপনী মায়ের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেÑ মাম্মি বলতো সিন্ডিকেট মানে কি?
মেয়ের কথা শুনে শবনম চমকে ওঠেন। অমঙ্গল আশঙ্কায় বুকের ভিতর একটা ঝাকুনি খেলে যায়। তবে সেটা বুঝতে না দিয়ে রুপনীকে জিজ্ঞেস করেনÑ
হঠাৎ তুমি সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন করছ কেন? কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?
বান্ধবীদের কথা বলতে গিয়েও বলল না রুপনি।
মাকে জিজ্ঞেস করলোÑ মা তুমি আমাকে শুধু বল সিন্ডিকেট কি বাজে শব্দ? মানুষের ক্ষতি করে?
মেয়ের কথার উত্তর দিতে পারলেন না শবনম। বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। দ্রুত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। একদল সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান বাড়ির ভিতরে ঢুকতে চাচ্ছে। দারোয়ান তাদেরকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সংবাদকর্মীরা বেশ উত্তেজিত। তারা জোর করে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে চাচ্ছে। পুলিশকে ফোন করার কথা ভাবলেন শবনম। কিন্তু তার আগেই পুলিশের একটা গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামলো। শবনম নীচতলায় নামার জন্য দ্রুত সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালেন।
টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখছেন হাবিবুর রহমান খান ও ডাক্তার শান্তুনু। একটু আগে হাবিবুর রহমানের মোবাইলে একটা ফোন আসে। অপরিচিত নাম্বার।
স্লামালেকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন? প্রশ্ন করেন হাবিবুর রহমান।
ফোনের ওপাশে গম্ভীর কণ্ঠ শোনা যায়Ñ ভাই আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনার কাছে একটা ইনফরমেশন চাচ্ছি। দেওয়া যাবে?
ইনফরমেশন? কিসের ইনফরমেশন?
আপনি তো তাপস খানের বন্ধু?
হ্যা। তাপস খান আমার ছোট ভাইয়ের মতো।
আপনি কি জানেন তাপস খান এখন কোথায়?
কোথায় মানে? তাপস খান তো তার বাড়িতে।
আপনি ভুল বলছেন। তাপস খান বাড়িতে নাই। তাকে পুলিশ খুঁজছে আপনি কি তা জানেন?
হাবিবুর রহমান অবাক হয়ে বললেনÑ তাপসকে পুলিশ খুঁজছে আপনি জানলেন কি করে?
আমি আরও অনেক কিছু জানি। আপনি একটু সাবধানে
থাকবেন। বলেই ফোন কেটে দিল লোকটি।
সাথে সাথে টেলিভিশন অন করলেন হাবিবুর রহমান। চ্যানেল আইতে স্ক্রল যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, সয়াবিন তেল ও ডিম সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়েছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন বানিজ্যমন্ত্রী। হঠাৎ একটি অনুষ্ঠান শুরু হল। অনুষ্ঠানের নাম আই ফোকাস। একজন উপস্থাপক রাস্তায় পথচারীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। উপস্থাপক একজন পুরুষকে জিজ্ঞেস করলেনÑ
উপস্থাপক: বাজার করলেন?
লোক: হ্যা।
উপস্থাপক: জিনিসপত্রের দাম কেমন?
লোক: সে কথা আর বলবেন না। এক হালি ডিমের দাম ৬৫ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ৬০ টাকা বেড়ে গেছে। যে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। সেই পেঁয়াজ এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। একটা সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়েছে।
উপস্থাপক: আপনি সিন্ডিকেটের কথা বললেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব কারা দিচ্ছে?
লোক: নিশ্চয়ই সরকারের প্রভাবশালী মহল। একটা কথা বলি। অনুষ্ঠান থেকে কাইট্যা দিয়েন না। বাঁশের থেকে কঞ্চি যদি বড় হয় তাহলে বাঁশের মর্যাদা থাকে না। সরকারের মন্ত্রী যখন বলেন আমরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি তখন আমরা কার কাছে যাব। আমার কথাটা রাইখেন কাইটা দিয়েন না।
হাবিব খান টিভি বন্ধ করে দেন। শবনম পাশে এসে দাঁড়ায়।
ভাইজান বাইরে তো মিডিয়ার লোকজন ভীড় করেছে। পুলিশও আসছে।
শবনমকে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিব্রত বোধ করেন হাবিব খান।

ধু ধু ফাঁকা মাঠ। দুটি দরজা দাঁড় করানো। তাপস ও ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছেন। কৌশিক গাঙ্গুলি প্রশ্ন করেন তাপস খানকে।
আমাকে কি আপনার আদৌ বিশ্বাস হচ্ছে?
হ্যা হচ্ছে।
আপনি এখনও দ্বিধান্বিত। কেন দ্বিধান্বিত বলব?
তাপস কোনো কথা বলেন না। ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
কৌশিক বলেন, জীবনে ডাক্তার, উকিল আর পুলিশের কাছে কিছু গোপন করবেন না। এই যেমন কোনো প্রকার যন্ত্র ছাড়াই আমি চিকিৎসা করি, আপনি প্রথম দিকে বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না। রাতে যখন প্রমাণ করে দেখালাম তখন বিশ্বাস করতে শুরু করলেন। এখনও কি আমার ওপর বিশ্বাস আছে?
অবশ্যই আছে।
প্রথম প্রশ্ন। আপনি আমাকে হঠাৎ এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? এরকম একটা ধু ধু মাঠে….
তাপস বললেন, এখানে আমার বাল্যস্মৃতি জড়িত আছে। আপনি বলেছেন আমি যেন একদম শুরু থেকে আমার জীবনের কথা বলি। সে জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।
কৌশিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললেন, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি কি জানেন পুলিশ আপনাকে খুঁজছে?
হ্যা জানি। এটা রুটিন ওয়ার্ক। এর আগেও খুঁজেছে। আমি বাসায় থাকা সত্বেও আমাকে গ্রেফতার না করে চলে গেছে। এর জন্য সিস্টেম করা আছে। এটাকে বলতে পারেন গোপন সমঝোতায় চোর পুলিশ খেলা…. আমরা কাজের কথায় আসি। আমার মাথা ব্য থা দুর হবে কি ভাবে? সেটা বলেন।
এখনও ব্যথা করছে?
হ্যা। একটু আগে ছিল মাথার ডান দিকে। এখন ব্যথাটা চলে গেছে বাম দিকে। আজিব কিসিমের ব্যথা।
আপনি আমাকে সহযোগিতা করেন, আপনার মাথা ব্যথা সেরে যাবে।
বলেন কি করতে হবে আমাকে।
সত্য বলতে হবে। কথা দিন যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না।
তাপস ডাক্তারের কথাটাই উচ্চারণ করেন। যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না।
আমার মুখের দিকে তাকান।
তাপস কৌশিক গাঙ্গুলির মুখের দিকে তাকান।
আপনার নাম?
তাপস খান।
পেশা?
কোন্টা বলব। আমার তো অনেক পেশা।
সব কি বৈধ।
কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?
আপনি কথা দিয়েছেন আমাকে মিথ্যা বলবেন না। আপনার অধিকাংশ ব্যবসাই অবৈধ। কোচিং ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ওটা ছিল বৈধ ব্যবসা। তারপর ধাপে ধাপে অনৈতিক উপায়ে একেকটা ব্যবসা ধরেছেন। আপনি কি নিয়মিত ট্যাক্স দেন?
অবশ্যই।
এটা সত্য নয়। আপনার মাথা ব্যথাটা কিভাবে শুরু হয়েছিল বলব?
তাপস কিছু বলেন না। অসহায়ের মতো গাঙ্গুলির দিকে তাকান। কৌশিক গাঙ্গুলি বলেন, আপনারা চার বন্ধু কোচিং ব্যবসা শুরু করলেন। শ্রমে ঘামে ব্যবসাটা দাঁড় করালেন। এরপর শুরু করলেন হাউজিং ব্যবসা। শুরু হল ফাঁকিবাজি। পানির উপরে প্লট দেখিয়ে জমি বিক্রি করেছেন। অনেকে প্রতারিত হয়েছে। হাউজিং থেকে নিউজ পেপার বের করলেন। কেন? প্রভাব খাটানোর জন্য। করোনার সময় ঔষধের ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠলেন। আপনাদের বানানো ভেজাল ঔষধ খেয়ে দেশের অনেক শিশু মারা গেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য অসাধাবনতা বশতঃ আপনাদের ভেজাল ঔষধ খেয়ে আপনার একমাত্র পুত্র সন্তান মারা যায়। এরপরই আপনার মাথায় ব্যথাটা শুরু হয়। আমি কি ভুল বলেছি? চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তাপস। অসহায়ের মতো গাঙ্গুলির চোখের দিকে তাকিয়ে বলেনÑ আপনি ঠিক বলেছেন।
গাঙ্গুলি মৃদু হেসে বলেন, ধন্যবাদ সত্য স্বীকার করার জন্য। ভেজাল ঔষধ খেয়ে নিজের সন্তান মারা যাবার পরও আপনি অর্থের নেশায় অস্থির হয়ে ওঠেন। টিভি চ্যানেল, হাউজিং, ঔষধের ব্যবসা থাকার পরও আপনি আপনারা পেঁয়াজ, তেল, লবণ, আলু, সয়াবিন তেল মজুদ করতে শুরু করেন। ফলে দেশের বাজার- পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। আপনি অর্থবিত্তের পাহাড়ে উঠতে থাকেন। কিন্তু আপনার মাথা ব্যথা কমে না। ব্যথা বাড়তেই থাকে। সত্যি বলতে কি আপনার মাথাব্যথা সারানোর মতো আমার কাছে কোন ঔষুধ নেই। স্যরি…
বলেই উঠে দাঁড়ান ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি। তাপস খান অসহায়ের মতো ডা: কৌশিক গাঙ্গুলির সামনে এসে দাঁড়ান। মিনতি করে বলেনÑ কোনো পথই কি নাই? আমি শান্তিতে ঘুমাতে চাই। অনেক দিন শান্তিতে ঘুমাই না। আমাকে একটা পথ বলে দিন।
ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি এবার সরাসরি তাপস খানের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেনÑ আমি যা বলব, শুনবেন?
হ্যা শুনব।
কথা দিচ্ছেন?
হ্যা।
সামনে তাকান।
তাপস খান সামনে তাকান।
কি দেখতে পাচ্ছেন? প্রশ্ন করেন ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি। দুটো দরজা। দেখতে পাচ্ছেন?
হ্যা।
একটা দরজা দিয়ে ঢুকলে আপনি আপনার কৈশোর ও তারুণ্যকে খুঁজে পাবেন। আরেকটি দরজা দিয়ে ঢুকলে পাবেন বর্তমান সময়কে। দুটি দরজার একটিতে আপনার মাথা ব্যথা সারার ঔষুধ আছে। সিদ্ধান্ত নিন। আপনি কোন্ দরজার পক্ষে?
তাপস খান দরজা দুটোর দিকে এগিয়ে যান। দুটো দরজাই একরকম। কোন্ দরজায় পা রাখবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন ডা: কৌশিক গাঙ্গুলি। তিনি শুধু হাসছেন…

  • শীর্ষ কাহিনি