বড় পর্দা অর্থাৎ সিনেমা একজন অভিনয় শিল্পীর অনেক বড় জায়গা। প্রত্যেক অভিনয় শিল্পীর বাসনা থাকে যে কোনো ভাবে হউক সিনেমায় অভিনয় করার। আফরান নিশো আমাদের টিভি নাটকের দুর্দান্ত এক অভিনেতা। তবে তাকে সিনেমায় অভিনয়ে রাজি করানো যাচ্ছিলো না। এবার তিনি রাজি হয়েছেন। সুড়ঙ্গ নিয়ে আসছেন তিনি। এই সুযোগে আসুন দেখি ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় কারা উজ্জ্বল বেশি। লিখেছেন রেজানুর রহমান
অবশেষে তিনি সিনেমায় এলেন
আফরান নিশোর জন্ম ১৯৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর। মূলতঃ মডেলিং এর মাধ্যমে শোবিজে যাত্রা শুরু। নাটকে অভিনয়ের শুরুর দিকে সংগ্রামটা খুব যে সহজ ছিল তা নয়। সহজেই অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। নন্দিত বিজ্ঞাপন নির্মাতা, পরিচালক অমিতাভ রেজার হাত ধরে একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করেন নিশো। বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েতের টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। সেটা ২০০৬ সালের কথা। ২০০৬ থেকে ২০২৩ প্রায় ১৭ বছরে ৮০০’রও বেশী নাটক, টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এবার তাকে দেখা যাবে সিনেমার পর্দায়। সিনেমার নাম সুড়ঙ্গ। অনেক শুভ কামনা নিশোর জন্য।
সিনেমায়ও সমান আলোচিত
টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বড় পর্দায়ও মোশাররফ করিম তার প্রতিভার দ্যূতি ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেশে তো বটেই বিদেশে অর্থাৎ কলকাতার সিনেমায় তিনি এখন একজন নির্ভরযোগ্য অভিনেতার মর্যাদায় অভিসিক্ত। তৌকির আহমেদের ‘জয়যাত্রা’ মোশাররফ করিম অভিনীত প্রথম সিনেমা। একই পরিচালকের রুপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মোস্তফা কামাল রাজের প্রজাপতি, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর টেলিভিশন, আবু শাহেদ ইমনের জালালের গল্প, তৌকির আহমেদের অজ্ঞাতনামা, হালদা, নূর ইমরান মিঠুর কমলা রকেট, ব্রাত্য বসুর (কলকাতা) ডিকশনারি, ইফতেখার শুভ’র মুখোশ, সঞ্চয় সমাদ্দারের দাগ এ অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। কলকাতায় নতুন একটি সিনেমা অভিনয়ের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবে ইদানিং ওয়েব সিরিজের প্রতি প্রচুর সময় দিচ্ছেন।
এপার বাংলা ওপার বাংলায়
চঞ্চল চৌধুরী
নাটকের মানুষ চঞ্চল চৌধুরী এখন সিনেমার পর্দায়ই ভীষণ ব্যস্ত। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার নাম তৌকির আহমেদের রুপকথার গল্প, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর টেলিভিশন, অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি, মোস্তফা কামাল রাজের হাওয়া।
সিনেমায়ও তিনি সবার প্রিয়
মাহফুজ আহমেদের আনেক পরিচয়। ছিলেন সংবাদকর্মী। পেশাগত সূত্রেই নন্দিত পরিচালক, লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। মূলত হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠার পরই টিভি নাটকের অভিনয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সিনেমায় অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকে অভিনয় জীবন শুরু। নূরুল হুদা তার অভিনীত একটি আলোচিত চরিত্র। মাহফুজ আহমেদ দেশের একজন স্বনামধন্য নাট্য নির্মাতাও বটে। বনলতা সেন, গনি সাহেবের শেষ কিছু দিন, খেলা, অল দ্য বেস্ট, বাহাদুর ডাক্তার, আমাদের নূরুল হুদা, তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা, চৈতা পাগল, এবং মাগো তোমার জন্য তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য একক ও ধারাবাহিক নাটক। সম্প্রতি ‘প্রহেলিকা’ নামে একটি নতুন সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সিনেমা সমূহ: শ্রাবণ মেঘের দিন, ভালোবাসি তোমাকে, আমার প্রেম আমার অহংকার, আজ গায়ে হলুদ, দুই দুয়ারী, কেন ভালোবাসলাম, মরণ নিয়ে খেলা, মেঘের পরে মেঘ, জয়যাত্রা, লাল সবুজ, চার সতীনের ঘর, বাঙলা, কপাল, শবন, জিরো ডিগ্রী ও সাদাকালো।
সিনেমার সুন্দরী মম…
২০১৩ সালে সঙ্গীতশিল্পী তাহসানের বিপরীতে নীলপরী নীলাঞ্জনা ও এক্লিপস নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি ভালোবাসার চতুষ্কোণ ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেন। ২০১৪ সালে যায়েদ খানের বিপরীতে প্রেম করব তোমার সাথে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে দীর্ঘদিন পর দ্বিতীয় কুসুম ধারাবিহিক নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি ব্যস্ত ছিলেন শিহাব শাহীন পরিচালিত ছুঁয়ে দিলে মন চলচ্চিত্র নিয়ে। রোমান্টিক ঘরানার এ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন আরিফিন শুভ। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দর্শক জরিপ ও সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে বেসরকারী চ্যানেল আরটিভির জন্য নির্মিত অপরিচিতা নাটকে তাকে দেখা যায়। নাট্যকার সুমন আনোয়ারের নির্দেশনায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন রওনক হাসান। এই বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাট্যকার সুমন আনোয়ার নির্মিত পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেন। নাটকগুলো হল ফুলমতি, আশার আলো, হলুদ বসন্ত, নীল দুপুর, আবর্ত। এছাড়াও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাহসানের বিপরীতে তিন বছর পর নাগরিক মানুষের জীবন নিয়ে চিত্রিত এখন আর রূপকথা হয় না নাটকে অভিনয় করেন।
মম ২০১৮ সালে নাট্য নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র আলতা বানু-এ আলতা চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত দহন ছবিতে তাকে সাংবাদিক মায়া চরিত্রে দেখা যায়। বছরের শেষে মুক্তি পায় তার অভিনীত ভৌতিক-থ্রিলার চলচ্চিত্র স্বপ্নের ঘর।
ছোট থেকে বড় পর্দায় আরও উজ্জ্বল
তিনি দুটি মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন- আগুনের পরশমণি ও জয়যাত্রা। তার প্রথম ছবি আগুনের পরশমণি পরিচালনা করেছেন হুমায়ুন আহমেদ। এ ছবিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা শহরে আটকে পড়া এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের নাম রাত্রি, যিনি এক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম (বদি) (আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত) ভালোবেসে ফেলেন। বদিউল আলম বৃষ্টির সময় একরাতে বাড়িতে আশ্রয়ের জন্যে আসেন। বদিউল আলম নামের সেই গেরিলা যোদ্ধার প্রতি রাত্রির প্রেম যুদ্ধের সময় গেরিলা যোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষের মমতা ও সমর্থনের প্রতিফলন। তৌকির আহমেদ পরিচালিত জয়যাত্রা চলচ্চিত্রে তার চরিত্র ভিন্ন ধরনের। এ ছবিতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পলায়নরত এক মধ্যবয়ষ্কা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে তার সন্তানকে হারিয়ে ফেলে। দুটি চলচ্চিত্রেই তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়। বিপাশা হায়াত আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
নাটকে শুরু সিনেমায় বেশ আলোচিত
তার অভিনীত সিনেমা সমূহÑ তানভীর মোেকাম্মেল পরিচালিত নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, নিজের পরিচালনায় রুপকথার গল্প, মোরশেদুল ইসলামের প্রিয়তমেষু, তামিম নূর পরিচালিত ফিরে এসো বেহুলা, কাজী মোরশেদ পরিচালিত একই বৃত্তে, আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত জালালের গল্প, শাহরিয়ার নাজিম জয়ের প্রার্থনা এবং সেলিম খান ও শামিম আহমেদ রনির পরিচালিত আগস্ট ১৯৭৫।
বাবু সিনেমার কারিগর
নাটকের শুরুতেই বলেছিলেন
সিনেমাই আমার পথ
শুভ’র অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বঙ্গবন্ধুর জীবন নির্ভর ‘মুজিব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। উপমহাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব’ সিনেমায় শুভকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে দেখা যাবে। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা।
সিনেমার গন্তব্যে আমাদের তিশা
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল নাট্যধর্মী থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯), টেলিভিশন (২০১২), ক্রীড়া নাট্যধর্মী অস্তিত্ব (২০১৬), নাট্যধর্মী ডুব (২০১৭) এবং হালদা (২০১৭)। অস্তিত্ব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
সিনেমাতেই ব্যাপক আলোচিত
বাঁধন ২০০৬ সাল থেকে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি তীরন্দাজ, ডিবি, মেঘের পরে মেঘ, সহযাত্রী, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, নীল নির্বাসন, ও রূপকথার মা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি আরএফএল ফার্নিচার ও কোকোলা নুডুলসের টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।
তার অভিনীত রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তার অভিনয় সমাদৃত হয়।
বাঁধন উল্লেখযোগ্য কাজ সমূহ: চলচ্চিত্র: নিঝুম অরণ্যে (২০১০), রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১)। নাটক: “বুয়াবিলাস”, “শুভবিবাহ”, “নিয়তির লেখা”, “এক মুঠো স্বপ্ন”, “আগুন মুখো টিপ”, “অদৃশ্য ভালোবাসা”। ধারাবাহিক নাটক: “চাঁদ ফুল অমাবস্যা”, “বিজি ফর নাথিং”, “এয়ারকম”, “চৈতা পাগল”, “রঙ”। ওয়েব সিরিজ: “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি”, “গুটি”।
সর্বশেষ “গুটি” দিয়ে তিনি আবার আলোচনায় আসেন।
নাটকের সিয়াম সিনেমায়
আরও বেশি উজ্জ্বল
সিয়াম ২০১২ সাল থেকে টেলিভিশনে নাটক, বিজ্ঞাপন, উপস্থাপনা করছেন। একটি বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। “ভালোবাসা ১০১” টিভি চলচ্চিত্রে আফনানের ভূমিকায় অভিনয় করার মাধ্যমে তিনি টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন। এর পরে তিনি একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে: ঝড়ের পরে, শিহরণের গান, তোমার আমার প্রেম্, টু লেট ব্যাচেলর, মিস্টার বয়েড ফ্রেন্ড ইত্যাদি।
তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল পোড়ামন ২। একই বছরের অপরাধ-নাট্যধর্মী দহন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন এবং সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরের বছর ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি প্রণয়-নাট্যধর্মী বিশ্বসুন্দরী (২০২০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
আমাদের একজন
জয়া আহসান
জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। পরে দীর্ঘ ৬ বছর পর নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ডুবসাঁতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১১ সালে তানিম নূর পরিচালিত ফিরে এসো বেহুলা এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গেরিলায় বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
গেরিলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর থেকে তিনি নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। জয়া আহসান ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিমন্ত্রণ পান। এই বছর তিনি অভিনয় করেন কলকাতার অরিন্দম শীল পরিচালিত আবর্ত ছায়াছবিতে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন আবীর চ্যাটার্জি। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্বে শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। একই বছর বাংলাদেশের সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত রোমান্টিক ছায়াছবি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীতে অভিনয় করেন। এতে প্রথমবারের মত বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। ছায়াছবিটি ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় এবং ব্যবসাসফল হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ টানা দ্বিতীয়বারের মত তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে মারুফ হাসান পরিচালিত পারলে ঠেকা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কিন্তু ছায়াছবিটি এখনো মুক্তি পায় নি।
২০১৫ সালে অভিনয় করেন বাংলাদেশের অনিমেষ আইচ পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক-থ্রিলারধর্মী জিরো ডিগ্রী ছবিতে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ। চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল না হলেও জয়ার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে মনোনীত হন এবং ২০১৭ সালে প্রদত্ত ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর কলকাতার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো ও সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ নিয়ে নির্মিত রাজকাহিনী ছবিতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে যৌবনাশ্রিত ও আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। রাজকাহিনী ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৬তম টেলি সিনে পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৬ সালে মুক্তি পায় সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২। এটি ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর সিক্যুয়াল। এতে অভিনয়ের জন্য তিনি চতুর্থবারের মত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছর আরো অভিনয় করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্তর ওপর লেখা উপন্যাসের ভিত্তিতে অরিন্দম শীল পরিচালিত ঈগলের চোখ-এ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় তার অভিনীত পুত্র। সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত এই ছবিতে একজন অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। আগস্ট মাসে বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত নারীবাদী চলচ্চিত্র ক্রিসক্রস মুক্তি পায়।
সিনেমায় উজ্জ্বল হচ্ছেন তিনি…
একজন মডেল ও অভিনেত্রী। তিনি মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ লেডিস অ্যান্ড জ্যান্টলমেনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২১ সালের ৯ জুলাই জি৫ওয়েব সিরিজটি মুক্তি দিয়েছে। একই বছরের ১৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়া মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ও রেদওয়ান রনি প্রযোজিত নেটওয়ার্কের বাইরে ওয়েব চলচ্চিত্রে তিনি কথা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২২ সালে ফারিণ কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা অতনু ঘোষ পরিচালিত আরও এক পৃথিবী চলচ্চিত্র অভনিয়ের কথা জানান। চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের শেষের দিকে মুক্তি পেতে পারে। ২০২২ সালে তিনি লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যানে অভিনয়ের জন্য ওয়েব সিরিজে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ও শ্রেষ্ঠ উদিয়মান নারী অভিনয়শিল্পী বিভাগে চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৭ সালে আমরা আবার ফিরবো কবে নাটকে অভিনয় দিয়ে ছোট পর্দায় তার অভিষেক হয়।মায়ের ইচ্ছেতে তিনি অভিনয় শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি বিকাশের একটি বিজ্ঞাপনে মাশরাফি মর্তুজার সাথে কাজ করেন। একই বছর ফারিন অভিনীত ভালোবাসা দিবসে ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ নাটকটি বেশ পরিচিতি এনে দেয় তাকে। ঐ বছর ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান। তার অভিনীত নাটকের মধ্যে ‘দৌড়া বাজান’, ‘টাপুর-টুপুর’, ‘পুলিশ একজন মানুষ’, ‘চারকাহন’, ‘ফেয়ার ইন লাভ’, ‘সরি স্যার’,‘ফার্স্ট ইয়ার ডেম কেয়ার টু’,‘কমলা রঙয়ের রৌদ’ , ‘বাসায় কি মানবে’ ,‘এই মন তোমারই’, ‘আমার তুমি’,‘মেড ফর ইচ আদার’ , ‘আমি ব্রেকআপ চাই’, ‘অ্যাওয়ার্ড’, ‘হাবিবুল ও এক ভয়ংকর প্রেম’, ‘যে শহরে টাকা উড়ে’, ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’,‘মেড ফর ইচ আদার’, ‘কতিপয় স্বল্পমেয়াদী প্রেম’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস যন্ত্রণা’, ‘জানবে না কোনো দিন’,‘৩০০ টাকার প্রেম ১০০ টাকা’, ‘ইয়েস নো ভেরি গুড’ ,‘উই আর ওয়েটার’ , ‘উইল ইউ মেরি মি’, ‘লাডডু সোনা’ ,‘মাস্ক’ ‘মিল ব্যারাক কল্যাণ সমিতি’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জি ফাইভের ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’,ওয়েব সিরিজ ‘ট্রল’ এ তাকে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে তিনি প্রায় আশিটি নাটকে অভিনয় করেছেন।
সিনেমাতেও জয়ী তিনি
১৯৯৭ সালে গোধুলী লগ্নে নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জয়ের টেলিভিশন পর্দায় অভিষেক হয়। একই বছর তিনি বুলবুল আহমেদ পরিচালিত অন্যমনে টেলিভিশন নাটকে তাজিন আহমেদের বিপরীতে অভিনয় করেন। একক নায়ক হিসেবে তিনি বুলবুল আহমেদের বিলেত বিলাস ও কন্যা কুমারী টেলিভিশন নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি পাতা ঝরে বৃক্ষ মরে না টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। সোহেল আরমান পরিচালিত এই নাটকে তার বিপরীতে ছিলেন রুমানা রশিদ ঈশিতা।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত জীবনের গল্প (২০০৬) দিয়ে তার চলচ্চিত্র অভিনয়ে অভিষেক হয়। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। পরের বছর তিনি মাজহারুল আনোয়ারের এই যে দুনিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি সোহেল আরমান পরিচালিত গ্রাম গঞ্জের পিরীত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গলির মোড়ে সিডির দোকান দিয়ে তার টেলিভিশন নাটক পরিচালনায় অভিষেক হয়।
২০১৫ সালে জয়ের চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয়। তার নিজের রচিত ও পরিচালিত প্রার্থনা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। শুরুতে এর নাম রাখা হয়েছিল আমরা যারা বাবা-মা, পরে তা পরিবর্তন করে প্রার্থনা রাখা হয়। এটি শহুরে জীবনে পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের দুরত্ব সৃষ্টির গল্প। চলচ্চিত্রটি ঈদুল আযহায় চ্যানেল আইয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে জয় এটিএন বাংলার সেলিব্রিটি টক-শো সেন্স অফ হিউমার উপস্থাপনা করেন। তিনি নিজেই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন। এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে এশিয়ান টিভির “কমনসেন্স” এবং একুশে টেলিভিশনের “উইথ নাজিম জয়” অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি তিনি জিনাত হাকিম রচিত তাহাদের কথা টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি প্রায় এক যুগ পর ফারজানা চুমকির বিপরীতে অভিনয় করেন। নাটকটি সেপ্টেম্বর মাসে বিটিভিতে প্রচারিত হয়। এছাড়া তার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র অর্পিতার নির্মাণ-উত্তর কাজ চলছে।