নাটক থেকে সিনেমার পথে

বড় পর্দা অর্থাৎ সিনেমা একজন অভিনয় শিল্পীর অনেক বড় জায়গা। প্রত্যেক অভিনয় শিল্পীর বাসনা থাকে যে কোনো ভাবে হউক সিনেমায় অভিনয় করার। আফরান নিশো আমাদের টিভি নাটকের দুর্দান্ত এক অভিনেতা। তবে তাকে সিনেমায় অভিনয়ে রাজি করানো যাচ্ছিলো না। এবার তিনি রাজি হয়েছেন। সুড়ঙ্গ নিয়ে আসছেন তিনি। এই সুযোগে আসুন দেখি ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় কারা উজ্জ্বল বেশি। লিখেছেন রেজানুর রহমান

অবশেষে তিনি সিনেমায় এলেন

বড় পর্দায় কবে আসবেন তিনি। এনিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছিলই। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কথা, এত আলোচনা তার কোন প্রতিক্রিয়া নাই। মাঝে মধ্যে বলেছেন, ভালো স্ক্রীপ্ট, দক্ষ পরিচালকের ডাক পেলে অবশ্যই বড় পর্দায় অভিনয়ে নামবেন। কিন্তু সেই সময় আর আসে না। তবে তার ভক্তরা বিরামহীন প্রত্যাশার ডালপালা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। বড় পর্দায় তাকে চাই-ই চাই। অবশেষে অনেকটা হুট করেই বড় পর্দায় পা রাখলেন তিনি। জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক রায়হান রাফির নতুন সিনেমা সুড়ঙ্গতে দেখা যাবে তাকে। বলছি ছোট পর্দার রাজকুমার, টিভি নাটকের দুর্দান্ত জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর কথা। টিভি পর্দায় ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। নিশো যে নাটকে আছেন সেই নাটক প্রচারের আগেই হিট হয়ে যায়। তার অভিনয় সৌকর্যে মুগ্ধ দেশ-বিদেশের বাংলা নাটকের দর্শক। আফরান নিশো নাটকে আছেন। আর কিছু লাগে না। তার অভিনয় দেখার জন্য দর্শক মুখিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত নিশোর টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজ ও টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নাটকের সংখ্যা ৮০০’রও বেশি। এত নাটক, এত টেলিফিল্ম অথচ একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল নাই। প্রতিটি কাজই আলাদা, অন্যরকম। আর তাই আফরান নিশোর প্রতি সবার এত আগ্রহ, এত ভালোবাসা। সিনেমায় পা রেখেছেন এই সংবাদ পেয়ে তার ভক্তরা বেজায় খুশি। মূলতঃ নিশোর কারনেই রায়হান রাফির নতুন সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ দেশের বিনোদন জগত, চলচ্চিত্র পাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন সিনেমার জন্য প্রচারটা বেশ গুরুত্বপুর্ন। কিন্তু নিশো নিজেই নিজের প্রচারে যথেষ্ট। নিশো সিনেমায় আসছেন এটাই তার ভক্তদের জন্য বড় খবর। কাজেই সিনেমার বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন নাই। ঈদে মুক্তি পাবে নিশোর প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’। সিনেমার এই খরা সময়ে নিশোর প্রথম সিনেমার ব্যাপারে দর্শকদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। অনেকেই ধারনা করছেন নিশোর প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ দেশের সিনেমার পালে নতুন করে গতির সঞ্চার করবে। সে কারনে সবার প্রতীক্ষা এখন সুড়ঙ্গের প্রতি।
আফরান নিশোর জন্ম ১৯৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর। মূলতঃ মডেলিং এর মাধ্যমে শোবিজে যাত্রা শুরু। নাটকে অভিনয়ের শুরুর দিকে সংগ্রামটা খুব যে সহজ ছিল তা নয়। সহজেই অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। নন্দিত বিজ্ঞাপন নির্মাতা, পরিচালক অমিতাভ রেজার হাত ধরে একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় করেন নিশো। বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েতের টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। সেটা ২০০৬ সালের কথা। ২০০৬ থেকে ২০২৩ প্রায় ১৭ বছরে ৮০০’রও বেশী নাটক, টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এবার তাকে দেখা যাবে সিনেমার পর্দায়। সিনেমার নাম সুড়ঙ্গ। অনেক শুভ কামনা নিশোর জন্য।

সিনেমায়ও সমান আলোচিত
মোশাররফ করিম। আমাদের টিভি নাটকের আরেকজন রাজকুমার দেশের টিভি নাটকে অভিনয়ের নতুন দরজা খুলে দিয়েছেন তিনি। নাট্যকেন্দ্রের সদস্য হিসেবে মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। কিন্তু মঞ্চে কাজ করলেও শুরুর দিকে টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এমনও হয়েছে পরিচালকের ডাকে নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে সারাদিন অপেক্ষা করেছেন। ছোট্ট চরিত্র। তাই তার ডাক আসেনি। সারাদিন অপেক্ষা করে আবার পরের দিন সবার আগে সুটিং স্পটে হাজির হয়েছেন। মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ক্যারাম নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মোশাররফের অভিনয় জীবনের গতিপথ সঞ্চারিত হয়। এ যাবৎ দেড় হাজারেরও বেশি টিভি নাটক, টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ ও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। ‘যমজ’ নামের একটি টিভি সিরিজ তার অভিনয় জীবনের অন্যতম অর্জন। যমজে মোশাররফ এক সঙ্গে তিনটি চিরত্রে অভিনয় করেন। বাবা এবং দুই ছেলের অভিনয় এতটাই পরিপক্ক যে ‘যমজ’ দেখার জন্য দর্শকের আগ্রহ দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি মহানগর নামে একটি ওয়েব সিরিজে মোশাররফ করিমের অভিনয় দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বড় পর্দায়ও মোশাররফ করিম তার প্রতিভার দ্যূতি ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেশে তো বটেই বিদেশে অর্থাৎ কলকাতার সিনেমায় তিনি এখন একজন নির্ভরযোগ্য অভিনেতার মর্যাদায় অভিসিক্ত। তৌকির আহমেদের ‘জয়যাত্রা’ মোশাররফ করিম অভিনীত প্রথম সিনেমা। একই পরিচালকের রুপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মোস্তফা কামাল রাজের প্রজাপতি, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর টেলিভিশন, আবু শাহেদ ইমনের জালালের গল্প, তৌকির আহমেদের অজ্ঞাতনামা, হালদা, নূর ইমরান মিঠুর কমলা রকেট, ব্রাত্য বসুর (কলকাতা) ডিকশনারি, ইফতেখার শুভ’র মুখোশ, সঞ্চয় সমাদ্দারের দাগ এ অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। কলকাতায় নতুন একটি সিনেমা অভিনয়ের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবে ইদানিং ওয়েব সিরিজের প্রতি প্রচুর সময় দিচ্ছেন।
এপার বাংলা ওপার বাংলায়
চঞ্চল চৌধুরী
মনের মানুষ সিনেমায় যারা চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় দেখেছেন তারা একবাক্যে স্বীকার করবেন চঞ্চল একজন জাত অভিনেতা। ইমপ্রেস এর এই সিনেমার পরিচালক গৌতম ঘোষ। উপমহাদেশের অন্যতম গুণী চিত্র পরিচালক। পাশাপাশি প্রসেনজিৎ উপমহাদেশের একজন নামকরা অভিনেতা। তাদের সঙ্গে মনের মানুষ সিনেমায় অভিনয় করে চঞ্চল চৌধুরী ভারতের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। মনের মানুষ-এ অভিনয়ের জন্য চঞ্চলকে কলকাতায় যেতে হয়েছিল। তখনও কলকাতার সিনেমার দর্শক তাকে সেভাবে চিনে না, জানেও না। ফলে তার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহও ছিল না। বরং অনেকের মাঝে এক ধরনের উপেক্ষা-অবহেলার প্রকাশভঙ্গি ছিল। চঞ্চল তার অভিনীত কিছু নাটক এর সিডি নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায়। সুটিং এর অবসরে সেগুলো কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখান। ব্যস চঞ্চলের কদর বেড়ে যায়। সেই চঞ্চল এখন কলকাতার সিনেমায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। নন্দিত চিত্র পরিচালক মৃনাল সেনের জীবনী অবলম্বনে নতুন সিনেমা ‘পদাতিক’ এ অভিনয় করছেন তিনি। পদাতিক এ চঞ্চল চৌধুরীর মেকআপ দেখে বাংলা সিনেমার দর্শকেরা যেন একটু নড়ে চড়ে বসেছেন।
নাটকের মানুষ চঞ্চল চৌধুরী এখন সিনেমার পর্দায়ই ভীষণ ব্যস্ত। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার নাম তৌকির আহমেদের রুপকথার গল্প, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর টেলিভিশন, অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি, মোস্তফা কামাল রাজের হাওয়া।
সিনেমায়ও তিনি সবার প্রিয়
জাহিদ হাসান। এক নামেই যার ব্যাপক পরিচিতি। যদিও সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে আব্দুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘বলবান’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। জীবন যেমন’ তার প্রথম টিভি নাটক। আলীমুজ্জামান দুলুর প্রযোজনায় ১৯৯০ সালে বিটিভিতে নাটকটি প্রচার হয়। সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হলেও টিভি নাটককেই অভিনয়ের মূল জায়গা হিসেবে বেছে নেন জাহিদ হাসান। তার অভিনীত টিভি নাটকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। নাট্যকেন্দ্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে মঞ্চে অভিনয় করেছেন দীর্ঘদিন। বলবান এর পর তিনি রেজানুর রহমান পরিচালিত ‘ঠিকানা’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করেন। ঠিকানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিল। জাহিদ হাসানের সিনেমা জীবন গড়ে দিয়েছেন প্রয়াত চিত্র পরিচালক, নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। একই বছর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত মেডইন বাংলাদেশ এ দুর্দান্ত অভিনয় করেন জাহিদ হাসান। ২০০৭ সালে আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ঝন্টু মন্টু, ২০০৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত আমার আছে জল, ২০১১ সালে মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত প্রজাপতি, ২০১৭ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত হালদা, ২০১৯ সালে গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত সাপলুডু, ২০২২ সালে তৌহিদ হোসেন পরিচালিত মাফিয়া সিনেমায় অভিনয় করেন জাহিদ হাসান। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বহুল আলোচিত, সমালোচিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ এ অভিনয় করেছেন তিনি। ছবিটি এখনও বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি। তবে বিদেশে এর প্রদর্শনী হয়েছে।
মাহফুজ আহমেদের আনেক পরিচয়। ছিলেন সংবাদকর্মী। পেশাগত সূত্রেই নন্দিত পরিচালক, লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। মূলত হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠার পরই টিভি নাটকের অভিনয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সিনেমায় অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরুপ দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ৯০ দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকে অভিনয় জীবন শুরু। নূরুল হুদা তার অভিনীত একটি আলোচিত চরিত্র। মাহফুজ আহমেদ দেশের একজন স্বনামধন্য নাট্য নির্মাতাও বটে। বনলতা সেন, গনি সাহেবের শেষ কিছু দিন, খেলা, অল দ্য বেস্ট, বাহাদুর ডাক্তার, আমাদের নূরুল হুদা, তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা, চৈতা পাগল, এবং মাগো তোমার জন্য তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য একক ও ধারাবাহিক নাটক। সম্প্রতি ‘প্রহেলিকা’ নামে একটি নতুন সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত সিনেমা সমূহ: শ্রাবণ মেঘের দিন, ভালোবাসি তোমাকে, আমার প্রেম আমার অহংকার, আজ গায়ে হলুদ, দুই দুয়ারী, কেন ভালোবাসলাম, মরণ নিয়ে খেলা, মেঘের পরে মেঘ, জয়যাত্রা, লাল সবুজ, চার সতীনের ঘর, বাঙলা, কপাল, শবন, জিরো ডিগ্রী ও সাদাকালো।
সিনেমার সুন্দরী মম…
মম ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় জয়লাভের পর হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও তৌকির আহমেদ পরিচালিত দারুচিনি দ্বীপ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। এই চলচ্চিত্রে জরি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর তিনি নাটকে অভিনয় করা শুরু করেন। তার অভিনীত স্বর্ণমায়া, বিবর, নীড় নাটকগুলো তাকে জনপ্রিয়তা পায়।
২০১৩ সালে সঙ্গীতশিল্পী তাহসানের বিপরীতে নীলপরী নীলাঞ্জনা ও এক্লিপস নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি ভালোবাসার চতুষ্কোণ ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেন। ২০১৪ সালে যায়েদ খানের বিপরীতে প্রেম করব তোমার সাথে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে দীর্ঘদিন পর দ্বিতীয় কুসুম ধারাবিহিক নাটকে অভিনয় করেন। পাশাপাশি ব্যস্ত ছিলেন শিহাব শাহীন পরিচালিত ছুঁয়ে দিলে মন চলচ্চিত্র নিয়ে। রোমান্টিক ঘরানার এ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন আরিফিন শুভ। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দর্শক জরিপ ও সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে বেসরকারী চ্যানেল আরটিভির জন্য নির্মিত অপরিচিতা নাটকে তাকে দেখা যায়। নাট্যকার সুমন আনোয়ারের নির্দেশনায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন রওনক হাসান। এই বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাট্যকার সুমন আনোয়ার নির্মিত পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেন। নাটকগুলো হল ফুলমতি, আশার আলো, হলুদ বসন্ত, নীল দুপুর, আবর্ত। এছাড়াও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাহসানের বিপরীতে তিন বছর পর নাগরিক মানুষের জীবন নিয়ে চিত্রিত এখন আর রূপকথা হয় না নাটকে অভিনয় করেন।
মম ২০১৮ সালে নাট্য নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র আলতা বানু-এ আলতা চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত দহন ছবিতে তাকে সাংবাদিক মায়া চরিত্রে দেখা যায়। বছরের শেষে মুক্তি পায় তার অভিনীত ভৌতিক-থ্রিলার চলচ্চিত্র স্বপ্নের ঘর।
ছোট থেকে বড় পর্দায় আরও উজ্জ্বল
নব্বই এর দশকে জনপ্রিয় অনেক টিভি নাটকে অভিনয়ই তাকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মঞ্চনাটকেও তিনি সমানভাবে সফল ছিলেন, কিন্তু বিয়ের পর মঞ্চনাটকে অভিনয় ছেড়ে দেন। বিপাশা হায়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতক পাশ করেন। তিনি তার আঁকা ছবি প্রদর্শন করেন না বললেই চলে। ২০০৯ সালের মে মাসে তিনি তার আঁকা ছবি এসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যার্থে আয়োজিত প্রদর্শনীতে দান করেন।
তিনি দুটি মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন- আগুনের পরশমণি ও জয়যাত্রা। তার প্রথম ছবি আগুনের পরশমণি পরিচালনা করেছেন হুমায়ুন আহমেদ। এ ছবিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা শহরে আটকে পড়া এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের নাম রাত্রি, যিনি এক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম (বদি) (আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত) ভালোবেসে ফেলেন। বদিউল আলম বৃষ্টির সময় একরাতে বাড়িতে আশ্রয়ের জন্যে আসেন। বদিউল আলম নামের সেই গেরিলা যোদ্ধার প্রতি রাত্রির প্রেম যুদ্ধের সময় গেরিলা যোদ্ধাদের প্রতি সাধারণ মানুষের মমতা ও সমর্থনের প্রতিফলন। তৌকির আহমেদ পরিচালিত জয়যাত্রা চলচ্চিত্রে তার চরিত্র ভিন্ন ধরনের। এ ছবিতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পলায়নরত এক মধ্যবয়ষ্কা নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে তার সন্তানকে হারিয়ে ফেলে। দুটি চলচ্চিত্রেই তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়। বিপাশা হায়াত আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
নাটকে শুরু সিনেমায় বেশ আলোচিত
প্রশ্ন উঠতে পারে কোন পরিচয়ে তিনি বড়? অভিনতো, নির্মাতা নাকি সংগঠক। তবে একথা সত্য বিটিভিতে নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তৌকির আহমেদ শোবিজে পরিচিতি পান। আশির দশকে বিটিভিতে তার অভিনীত প্রথম নাটক প্রচার হয়। মাদক সমস্যার ওপর নাটকটি নির্মিত হয়েছিল। প্রথম নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তৌকির দর্শকদের নজর কাড়েন। এরপর বিটিভিতে রোমান্টিক নাটকের জুটি হিসেবে তার প্রতি দর্শকের আগ্রহ বাড়ে। নাটক ও চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমেই তিনি সমান সক্রিয় হয়ে ওঠেন। লন্ডনের রয়ালকোট থিয়েটার থেকে নাটক পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি থেকে চলচ্চিত্রে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তার পরিচালিত সিনেমা সমূহ: জয় যাত্রা, রুপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, অজ্ঞাতনামা, হালদা, ফাগুন হাওয়া, স্ফুলিঙ্গ।
তার অভিনীত সিনেমা সমূহÑ তানভীর মোেকাম্মেল পরিচালিত নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, নিজের পরিচালনায় রুপকথার গল্প, মোরশেদুল ইসলামের প্রিয়তমেষু, তামিম নূর পরিচালিত ফিরে এসো বেহুলা, কাজী মোরশেদ পরিচালিত একই বৃত্তে, আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত জালালের গল্প, শাহরিয়ার নাজিম জয়ের প্রার্থনা এবং সেলিম খান ও শামিম আহমেদ রনির পরিচালিত আগস্ট ১৯৭৫।
বাবু সিনেমার কারিগর
ব্যাংকে কাজ করতেন। অভিনয়ে টিকে থাকার জন্য একসময় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন গুণী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। টিভি নাটকের দুর্দান্ত এক অভিনেতার নাম ফজলুর রহমান বাবু। তবে অভিনেতা হিসেবে সিনেমায়ও তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। আরন্যক নাট্যদলের সক্রিয় সদস্য বাবু মঞ্চেও ব্যাপক আলোচিত অভিনেতা। একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি দেশ জোড়া। মনপুরা ছবিতে তার কণ্ঠে একটি গান তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। ১৯৯১ সালে বিটিভিতে প্রয়াত আবু জাফর সিদ্দিকীর প্রযোজনায় মৃত্যুক্ষুধা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে টিভি নাটকে বাবুর অভিনয় জীবন শুরু হয়। ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি টিভি নাটক, টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমার নামÑ শঙ্খনাদ। আবু সায়ীদ পরিচালিত এই সিনেমাটি ২০০৪ সালে নির্মিত হয়। এরপর ২০০৬ সালে দিাদরুল আলম বাদল পরিচালিত না বলো না, একই বছরে এনামুল করিম নির্ঝর পরিচালিত ‘আহা’ তৌকির আহমেদ পরিচালিত দারুচিনি দ্বীপ, ২০০৭ সালে গোলাম রব্বানী বিপ্লব পরিচালিত স্বপ্ন ডানায়। ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত মনপুরা, ২০১৬ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত অজ্ঞাতনামা, ২০১০৭ সালে নাদের চৌধুরী পরিচালিত। মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, ২০১৮ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত স্বপ্নজাল, ২০১৯ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ফাগুন হাওয়ায়, ২০২০ সালে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত বিশ্বসুন্দীর, ২০২১ সালে সানী সারোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত মিশন এক্সট্রিম, ২০২২ সালে আনম বিশ্বাস পরিচালিত দুই দিনের দুনিয়ায় অভিনয় করেছেন।
নাটকের শুরুতেই বলেছিলেন
সিনেমাই আমার পথ
মডেলিং দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু। ছিলেন রেডিও জকি। টিভি নাটকে অভিনয়ের এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সিনেমাই হবে তার গন্তব্য। তার নাম আরেফিন শুভ। ২০০৭ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘হ্যা-না’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মূলতঃ অভিনয় জগতে পা রাখেন। ২০১০ সালে খিজির হায়াত খান পরিচালিত ‘জাগো’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক হয়। ২০১৩ সালে সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পুর্নদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। নাটকের অঙ্গনে আর ফিরে যাননি শুভ। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার নাম ইফতেখার চৌধুরীর অগ্নি, শাহাদৎ হোসেন লিটনের ‘মন বোঝে না’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘তারকাটা’, আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘কিস্তিমাত’, শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, অনন্য মামুনের ‘অস্তিত্ব’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নিয়তি’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘প্রেমী ও প্রেমী’, শামিম আহমেদ রনি পরিচালিত কমেডি ধর্মী চলচ্চিত্র ‘ধ্যাততেরিকা’, দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সহ আরও কিছু সিনেমো।
শুভ’র অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বঙ্গবন্ধুর জীবন নির্ভর ‘মুজিব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে। উপমহাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব’ সিনেমায় শুভকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে দেখা যাবে। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা।
সিনেমার গন্তব্যে আমাদের তিশা
নুসরাত ইমরোজ তিশা। বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী। টিভি নাটকের মাধ্যমে তিনি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। তবে গান দিয়েই শুরু হয়েছিল তিশার পথচলা। ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পাওয়া তিশা’র মিডিয়া জগতে পদার্পণ টেলিভিশনের মাধ্যমেই। শিশুশিল্পী হিসেবে মূলত গান করতেন। ১৯৯৭ সালে অনন্ত হীরার সাতপেড়ে কাব্য নামে একটি নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে শখের বশে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পদার্পণ করেন। ২০০৩ সাল থেকে অভিনয় ও মডেলিং ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তিশা এঞ্জেল ফোর নামের একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল নাট্যধর্মী থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯), টেলিভিশন (২০১২), ক্রীড়া নাট্যধর্মী অস্তিত্ব (২০১৬), নাট্যধর্মী ডুব (২০১৭) এবং হালদা (২০১৭)। অস্তিত্ব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
সিনেমাতেই ব্যাপক আলোচিত
বাঁধন জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারে রানার-আপ হওয়ার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ভীষন প্রশংসিত হন এবং কান চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকবৃন্দ উঠে দাড়িয়ে অভ্যর্থনা প্রদান করেন।
বাঁধন ২০০৬ সাল থেকে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি তীরন্দাজ, ডিবি, মেঘের পরে মেঘ, সহযাত্রী, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, নীল নির্বাসন, ও রূপকথার মা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি আরএফএল ফার্নিচার ও কোকোলা নুডুলসের টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।
তার অভিনীত রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তার অভিনয় সমাদৃত হয়।
বাঁধন উল্লেখযোগ্য কাজ সমূহ: চলচ্চিত্র: নিঝুম অরণ্যে (২০১০), রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১)। নাটক: “বুয়াবিলাস”, “শুভবিবাহ”, “নিয়তির লেখা”, “এক মুঠো স্বপ্ন”, “আগুন মুখো টিপ”, “অদৃশ্য ভালোবাসা”। ধারাবাহিক নাটক: “চাঁদ ফুল অমাবস্যা”, “বিজি ফর নাথিং”, “এয়ারকম”, “চৈতা পাগল”, “রঙ”। ওয়েব সিরিজ: “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি”, “গুটি”।
সর্বশেষ “গুটি” দিয়ে তিনি আবার আলোচনায় আসেন।
নাটকের সিয়াম সিনেমায়
আরও বেশি উজ্জ্বল
মডেলিং ও টিভি নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করা সিয়ামের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ২০১৭ সালে ব্যবসাসফল ‘পোড়ামন ২’ ছবি দিয়ে। একই বছর তার অভিনীত ‘দহন’ ছবিটিও ব্যবসা সফল হয়। পরের বছর তিনি ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত তৌকির আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
সিয়াম ২০১২ সাল থেকে টেলিভিশনে নাটক, বিজ্ঞাপন, উপস্থাপনা করছেন। একটি বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। “ভালোবাসা ১০১” টিভি চলচ্চিত্রে আফনানের ভূমিকায় অভিনয় করার মাধ্যমে তিনি টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করেন। এর পরে তিনি একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে: ঝড়ের পরে, শিহরণের গান, তোমার আমার প্রেম্, টু লেট ব্যাচেলর, মিস্টার বয়েড ফ্রেন্ড ইত্যাদি।
তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল পোড়ামন ২। একই বছরের অপরাধ-নাট্যধর্মী দহন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন এবং সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। পরের বছর ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত ফাগুন হাওয়ায় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি প্রণয়-নাট্যধর্মী বিশ্বসুন্দরী (২০২০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
আমাদের একজন
জয়া আহসান
জয়া আহসান। আমাদের চলচ্চিত্রের গুণী তারকা। টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। এখন আর টিভি নাটকে তাকে দেখা যায় না। এপার বাংলা, ওপার বাংলা দুই খানেই চলচ্চিত্রে তিনি ব্যস্ত তারকা। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ব্যাচেলর (২০০৪)। তিনি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত সৈয়দ শামসুল হক’র নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত গেরিলা চলচ্চিত্রে বিলকিস বানু চরিত্রে এবং রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালি চলচ্চিত্রে সাংবাদিক নবনী আফরোজ চরিত্রে অভিনয় করে টানা দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি অনিমেষ আইচ পরিচালিত জিরো ডিগ্রী (২০১৫) ও অনম বিশ্বাস পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরও দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। পরে দীর্ঘ ৬ বছর পর নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ডুবসাঁতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১১ সালে তানিম নূর পরিচালিত ফিরে এসো বেহুলা এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গেরিলায় বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ জুরিদের বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৩ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
গেরিলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর থেকে তিনি নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করা শুরু করেন। জয়া আহসান ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিমন্ত্রণ পান। এই বছর তিনি অভিনয় করেন কলকাতার অরিন্দম শীল পরিচালিত আবর্ত ছায়াছবিতে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন আবীর চ্যাটার্জি। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পূর্বে শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। একই বছর বাংলাদেশের সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত রোমান্টিক ছায়াছবি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীতে অভিনয় করেন। এতে প্রথমবারের মত বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। ছায়াছবিটি ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় এবং ব্যবসাসফল হয়। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ টানা দ্বিতীয়বারের মত তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে মারুফ হাসান পরিচালিত পারলে ঠেকা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কিন্তু ছায়াছবিটি এখনো মুক্তি পায় নি।
২০১৫ সালে অভিনয় করেন বাংলাদেশের অনিমেষ আইচ পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক-থ্রিলারধর্মী জিরো ডিগ্রী ছবিতে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ। চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল না হলেও জয়ার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নারী চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বিভাগে মনোনীত হন এবং ২০১৭ সালে প্রদত্ত ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর কলকাতার ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো ও সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ নিয়ে নির্মিত রাজকাহিনী ছবিতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে যৌবনাশ্রিত ও আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। রাজকাহিনী ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৬তম টেলি সিনে পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৬ সালে মুক্তি পায় সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২। এটি ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর সিক্যুয়াল। এতে অভিনয়ের জন্য তিনি চতুর্থবারের মত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছর আরো অভিনয় করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় রচিত জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্তর ওপর লেখা উপন্যাসের ভিত্তিতে অরিন্দম শীল পরিচালিত ঈগলের চোখ-এ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় তার অভিনীত পুত্র। সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত এই ছবিতে একজন অটিস্টিক শিশুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। আগস্ট মাসে বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত নারীবাদী চলচ্চিত্র ক্রিসক্রস মুক্তি পায়।
সিনেমায় উজ্জ্বল হচ্ছেন তিনি…
একজন মডেল ও অভিনেত্রী। তিনি মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ লেডিস অ্যান্ড জ্যান্টলমেনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২১ সালের ৯ জুলাই জি৫ওয়েব সিরিজটি মুক্তি দিয়েছে। একই বছরের ১৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়া মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ও রেদওয়ান রনি প্রযোজিত নেটওয়ার্কের বাইরে ওয়েব চলচ্চিত্রে তিনি কথা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০২২ সালে ফারিণ কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা অতনু ঘোষ পরিচালিত আরও এক পৃথিবী চলচ্চিত্র অভনিয়ের কথা জানান। চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের শেষের দিকে মুক্তি পেতে পারে। ২০২২ সালে তিনি লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যানে অভিনয়ের জন্য ওয়েব সিরিজে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ও শ্রেষ্ঠ উদিয়মান নারী অভিনয়শিল্পী বিভাগে চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৭ সালে আমরা আবার ফিরবো কবে নাটকে অভিনয় দিয়ে ছোট পর্দায় তার অভিষেক হয়।মায়ের ইচ্ছেতে তিনি অভিনয় শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি বিকাশের একটি বিজ্ঞাপনে মাশরাফি মর্তুজার সাথে কাজ করেন। একই বছর ফারিন অভিনীত ভালোবাসা দিবসে ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ নাটকটি বেশ পরিচিতি এনে দেয় তাকে। ঐ বছর ‘এক্স বয়ফ্রেন্ড’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান। তার অভিনীত নাটকের মধ্যে ‘দৌড়া বাজান’, ‘টাপুর-টুপুর’, ‘পুলিশ একজন মানুষ’, ‘চারকাহন’, ‘ফেয়ার ইন লাভ’, ‘সরি স্যার’,‘ফার্স্ট ইয়ার ডেম কেয়ার টু’,‘কমলা রঙয়ের রৌদ’ , ‘বাসায় কি মানবে’ ,‘এই মন তোমারই’, ‘আমার তুমি’,‘মেড ফর ইচ আদার’ , ‘আমি ব্রেকআপ চাই’, ‘অ্যাওয়ার্ড’, ‘হাবিবুল ও এক ভয়ংকর প্রেম’, ‘যে শহরে টাকা উড়ে’, ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’,‘মেড ফর ইচ আদার’, ‘কতিপয় স্বল্পমেয়াদী প্রেম’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস যন্ত্রণা’, ‘জানবে না কোনো দিন’,‘৩০০ টাকার প্রেম ১০০ টাকা’, ‘ইয়েস নো ভেরি গুড’ ,‘উই আর ওয়েটার’ , ‘উইল ইউ মেরি মি’, ‘লাডডু সোনা’ ,‘মাস্ক’ ‘মিল ব্যারাক কল্যাণ সমিতি’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জি ফাইভের ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’,ওয়েব সিরিজ ‘ট্রল’ এ তাকে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে তিনি প্রায় আশিটি নাটকে অভিনয় করেছেন।
সিনেমাতেও জয়ী তিনি
২০০৭ সালে গোধুলী লগ্নে নাটক দিয়ে শাহরিয়ার নাজিম জয় এর টেলিভিশন পর্দায় অভিষেক হয়। তিনি বিলেত বিলাস ও কন্যা কুমারী টেলিভিশন নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার পরিচালিত প্রথম টেলিভিশন নাটক গলির মোড়ে সিডির দোকান। ২০০৬ সালে জীবনের গল্প দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। পরবর্তীতে তিনি এই যে দুনিয়া, গ্রাম গঞ্জের পিরীত, পাষাণের প্রেম, ও মোস্ট ওয়েলকাম ২ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে প্রার্থনা দিয়ে তার চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয়। এছাড়া তিনি এটিএন বাংলার সেলিব্রিটি টক-শো “সেন্স অফ হিউমার”, এশিয়ান টিভির “কমনসেন্স” এবং একুশে টেলিভিশনের “উইথ নাজিম জয়” অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। বর্তমানে তিনি চ্যানেল আইয়ের ৩০০ সেকেন্ড অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
১৯৯৭ সালে গোধুলী লগ্নে নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জয়ের টেলিভিশন পর্দায় অভিষেক হয়। একই বছর তিনি বুলবুল আহমেদ পরিচালিত অন্যমনে টেলিভিশন নাটকে তাজিন আহমেদের বিপরীতে অভিনয় করেন। একক নায়ক হিসেবে তিনি বুলবুল আহমেদের বিলেত বিলাস ও কন্যা কুমারী টেলিভিশন নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি পাতা ঝরে বৃক্ষ মরে না টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। সোহেল আরমান পরিচালিত এই নাটকে তার বিপরীতে ছিলেন রুমানা রশিদ ঈশিতা।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত জীবনের গল্প (২০০৬) দিয়ে তার চলচ্চিত্র অভিনয়ে অভিষেক হয়। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। পরের বছর তিনি মাজহারুল আনোয়ারের এই যে দুনিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি সোহেল আরমান পরিচালিত গ্রাম গঞ্জের পিরীত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। গলির মোড়ে সিডির দোকান দিয়ে তার টেলিভিশন নাটক পরিচালনায় অভিষেক হয়।
২০১৫ সালে জয়ের চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয়। তার নিজের রচিত ও পরিচালিত প্রার্থনা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। শুরুতে এর নাম রাখা হয়েছিল আমরা যারা বাবা-মা, পরে তা পরিবর্তন করে প্রার্থনা রাখা হয়। এটি শহুরে জীবনে পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের দুরত্ব সৃষ্টির গল্প। চলচ্চিত্রটি ঈদুল আযহায় চ্যানেল আইয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে জয় এটিএন বাংলার সেলিব্রিটি টক-শো সেন্স অফ হিউমার উপস্থাপনা করেন। তিনি নিজেই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন। এছাড়া তিনি ২০১৭ সালে এশিয়ান টিভির “কমনসেন্স” এবং একুশে টেলিভিশনের “উইথ নাজিম জয়” অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি তিনি জিনাত হাকিম রচিত তাহাদের কথা টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি প্রায় এক যুগ পর ফারজানা চুমকির বিপরীতে অভিনয় করেন। নাটকটি সেপ্টেম্বর মাসে বিটিভিতে প্রচারিত হয়। এছাড়া তার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র অর্পিতার নির্মাণ-উত্তর কাজ চলছে।

  • শীর্ষ কাহিনি