ঈদ ভ্রমণে নতুন ভাবনা

রাজু আলীম

এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের প্রধান উৎসব আর আনন্দের দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর। সাধারণত মুসলিম বিশ্বে দু’টি ঈদ উদযাপন হয়। আর এই ঈদকে ঘিরে থাকে কত আয়োজন, কত উদ্দীপনা। তবে ঈদুল ফিতরের উদযাপনটা একটু বেশিই হয়ে থাকে। কারণ, ঈদুল আজহা’র সাথে কুরবানির একটি সম্পর্ক থাকায় উদযাপনটাও হয় ভিন্ন আঙ্গিকে।
ঈদুল ফিতর হোক কিংবা আজহা, ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর থাকবে আনন্দ ভ্রমণ। ঈদের সাথে ভ্রমণ নামক শব্দটি বেশ অনুষঙ্গ। ঈদের আনন্দ হাজারগুন বৃদ্ধি করে এই ভ্রমণ।
একটা সময় ছিল ঈদ ভ্রমণ বলতে কেবল শহর থেকে গ্রামে যাওয়াকে বুঝানো হতো। ঈদ যত ঘুনিয়ে আসতো ততই লঞ্চ ঘাট, বাস স্টফ কিংবা রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড় আর ভিড় চোখে পড়তো। হাজারও কষ্ট সহ্য করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনকে আপন করে নিতো সবাই।
আর ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ বলতে যা বোঝানো হতো কক্সবাজার, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি কিংবা জেলা শহরের কোন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ। কিন্তু সময়ের সাথেসাথে আমাদের এই ঈদ উদযাপন এবং ঈদ ভ্রমণের ভাবনার হয়েছে বিস্তর পরিবর্তন।
পৃথিবী যত আধুনিক হচ্ছে, যত ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, যত তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া বাড়ছে ততই পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের চাহিদা এবং আনন্দ উদযাপনের মাধ্যম। কর্মমুখী মানুষ এখন ঈদ যাত্রায় কেবল গ্রামে যাওয়াতে আবদ্ধ নেয়।
উচ্চ বিত্তের ন্যায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে মধ্য বিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্য বিত্তদের মাঝেও। এছাড়া শহরের মানুষের ন্যায় পরিবর্তনের আভাস মিলছে গ্রামের মানুষদের মাঝেও।
মানুষ এখন গ্রাম কিংবা শহরে নয় ঈদ উদযাপনের জন্য বেচে নিয়েছে রিসোর্ট, পার্ক, কিংবা বিদেশের মাটিকে। পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে দেশের বাহিরে ঈদ উদযাপনকে যেন বেশ আনন্দের সাথে গ্রহণ করছে কর্পোরেট ব্যক্তিরা।
মূলত সারা বছরের কর্মময় জীবনের এই ব্যস্ততম সময়গুলো পার করতে গিয়ে হাপিয়ে যাচ্ছেন কর্পোরেট ব্যক্তিরা। আর তাইতো ঈদের এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণের প্রথম পছন্দ বিদেশের মাটি। আমাদের দেশের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের প্রধান পছন্দ অবশ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে অনেকে এরই মধ্যে এয়ার টিকেট সংগ্রহ করেছেন।
কোভিড় পরবর্তী সময় থেকে মূলত বিদেশের মাটিতে ঈদ উদযাপনের এই বিষয়টি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ন্যায় মধ্যবিত্তরাও পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের বাইরে। তাদের আবার পছন্দের শীর্ষে নেপাল, ভূটান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশ।
এই তালিকায় পিছেয়ে নেয় নিম্ন মধ্যবিত্তরাও। তবে তারা সাধারণত দেশের বাইরে না গেলেও দেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবন কিংবা রাঙ্গামাটির মতো দর্শনীয় স্থানে পরিবারসহ ঈদ উদযাপনে বেশ আগ্রহ এই শ্রেণীর মানুষদের মাঝে।
ঈদের লম্বা ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হিমালয়কন্যা নেপাল বেড়াতে ঈদের আগের দিনই ঢাকা ছাড়বেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু সাইদ। তিনি বলেন, হিমালয় কন্যা নেপালকে দেখার ইচ্ছে বহুদিনের। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সেখানেই বেড়াতে যাচ্ছি।
বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম মেঘের রাজ্য দার্জিলিং যাচ্ছেন ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সামছুল হক। তিনি বলেন, আগে কখনও দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আর বিয়ের পর বউ বলেছিল দেশের বাইরে কোথাও যেতে, কিন্তু সুযোগ হয়নি। ঈদ ছাড়া তেমন ছুটিও পাওয়া যায় না। যে দুয়েক দিন ছুটি থারে তাও কোথাও বেড়ানোর সুযোগ থাকে না। আর তাই ঈদকেই বেড়ানোর জন্য বেছে নিলাম।
আর বন্ধুদের নিয়ে সিলেটে বেড়াতে যাচ্ছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিম। তিনি বলেন, ঘুরতে বেশ ভালোই লাগে। তবে ঈদ কেন্দ্রিক ঘুরাফেরা খুব কমই হয়ে থাকে। আর দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও যেহেতু সামর্থ্য নেই, তাই নিজের দেশই ঘুরে দেখবো। বছরের অন্য সময়টাতে বেড়ানোর সুযোগ থাকে না, তাই ঈদের সময়টাকে বেছে নিয়েছি।
এছাড়াও বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোও ঈদ কেন্দ্রিক বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠে। সম্প্রতিক সময়ে যেমন রিসোর্ট সংখ্যা বাড়ছে, একই রকম এর মান এবং সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাইতো ঈদের ছুটিতে এই এলাকাগুলোতেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঈদে বিদেশ ভ্রমণের এই প্রবণতা ধীরেধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তিন-চারজনের পরিবার ঈদ উদযাপনে দেশের বাহিরে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ভিন্ন আঙ্গিকে ঈদ উপভোগ করতে তারা এবারই প্রথম বিদেশে যাবেন। আবার অনেকে বলছেন, বছরের অন্যান্য সময় এমন লম্বা বিরতি পাওয়া যায় না। সাধারণত কর্ম ব্যস্ততায় সময় পার করতে হয়। আর তাইতো এই ছুটিতে একটু স্বস্তির বাতাস নিতে চান। যার ফলে, বেচে নিচ্ছেন বিদেশ ভ্রমণকে।
ঈদ কেন্দ্রিক দেশের দর্শনীয় স্থানসমূহও জমে উঠে। দেশের একটা অংশ কক্সবাজার, সিলেট, রাঙ্গামাটির মতো দর্শনীয় স্থানসমূহে ভিড় জমান।কেউ কেউ যান পরিবারের সাথে, আবার কেউ কেউ যান বন্ধু-বান্ধবকে সাথে নিয়ে।
তবে লক্ষ্যনীয় যে ঈদ কেন্দ্রিক সড়কের দুর্ঘটনাও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত পরিসংখ্যান বলছে, স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যায় দুর্ঘটনার হার। আর তাইতো সচেতনতার সাথে পথচলা আপনাদের সুগম হোক। ঈদ আনন্দ, ঈদ উদযাপন দেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই হোক সুস্থার সাথে সম্পন্ন হোক এই সময়।

  • শীর্ষ কাহিনি