আমি একশ বছর বাঁচতে চাই না। কারণ এতে একটা বিরাট রিকস আছে। আমি একটা গল্প বলতে চাই। গ্রীক রুপকথার একটি গল্প। সিভিল্ল্যা নামে অত্যন্ত সুন্দরী একটি মেয়ে ছিল। অসম্ভব সুন্দরী। অ্যাপোলা দেবতা সেই সিভিল্ল্যার প্রেমে পড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো সিভিল্ল্যা অ্যাপোলোর প্রেম গ্রহণ করবেন কিনা। এক পর্যায়ে সিভিল্ল্যা বললেন আমি এই প্রেম গ্রহণ করতে পারি এক শর্তে। কী শর্ত? ওই যে বিশাল বালুর স্তুপ রয়েছে, ওই স্তুপে যত বালু আছে আমি যেন ততদিন বাঁচি। তুমি দেবতা। তুমি যদি আমার এই শর্ত পালনে রাজি হও তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করব। অ্যাপোলো রাজি হলেন। তারপরই সিভিল্ল্যার মনে হলÑ এ আমি কি করলাম? আমি তো ভুল করে ফেলেছি। আমি তো চিরদিন বেঁচে থাকার ‘বর’ চেয়েছি। কিন্তু চির যৌবনের বর তো চাইনি। সুতরাং কি হতে লাগল? সিভিল্ল্যা যৌবন হারাতে লাগল। এবং হারাতে হারাতে… যখন একশ বছর হল, দুইশ বছর হল, তখন তিনি জ্ববাগ্রস্থ কুৎসিত একজন মহিলায় পরিণত হলেন। এবং যতদিন যেতে লাগল তিনি তত কুৎসিত হতে থাকলেন। ভাবুন একবার বালুর স্তুপ যতদিন ছিল ততদিনে সিভিল্ল্যার পরিণতি কি হয়েছিল?
কাজেই আমি বয়স চাই না। আমি যৌবণ চাই। যে কয়দিন বাঁচি, আমি সজীব ভাবে বাঁচতে চাই। আমি কাজ করে বাঁচতে চাই। আমি ভালোবেসে বাঁচতে চাই।
রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে। সবারই জানা। কী পাইনি তার হিসাব মেলাতে মন ও মোর নহে রাজি। কেন হিসাব মিলাতে তিনি রাজি নন? কেন? আমরা তো সবাই জীবনের হিসাব মিলাতে চাই। কি পেলাম? কি চেয়েছিলাম? কি হল? কি হয়নি? কেন হয়নি? আমরা তো সবাই এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। অথচ বরীন্দ্রনাথ সেটা চাননি। কেন চাননি? কারণ উনি কাজ করেছেন আনন্দে। আনন্দের জন্য যদি কিছু করা যায় তাহলে তো আনন্দই পাওয়া যায়। আনন্দ তো নিজেই পাওয়ার। তারপরে তো আর কোনো পাওয়ারের প্রশ্ন আসে না। তবে একথা সত্য, আনন্দের জন্য যারা কাজ করে না তাদের অনেক অসুবিধা হয়। তারা অনেক ঝামেলায় পড়ে যায়। অসুবিধার মুখোমুখি হয়। কি রকম অসুবিধা? ধরা যাক, ওয়ার্ল্ড কাপ। অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে। কিন্তু কোনো দিন সত্যও হয়ে যেতে পারে। ওয়ার্ল্ড কাপে ধরা যাক বাংরাদেশ ফাইনালে উঠে গেছে। বাংলাদেশ একদিকে ব্রাজিল অন্যদিকে। খেলা শুরু হতে যাচ্ছে। সবাই উত্তেজিত। সবাই মুখরিত। কি হয়? কে জিতে? ব্রাজিল না বাংলাদেশ? এটা নিয়ে উদ্দীপনা ও উম্মাদনার শেষ নাই দুইপক্ষে। বাংলাদেশে সমস্ত টিভি সেট অন হয়ে আছে। ব্রাজিলের সমস্ত টিভি অন হয়ে আছে। বাংলাদেশ যদি জিতে তাহলে তো বাংলাদেশ আকাশে। আর যদি ব্রাজিল হারে তাহলে ব্রাজিল একদম কবরে। এরকম একটা অবস্থা। তো ধরা যাক, খেলা চলছে। একেবারে খেলার শেষ মুহূর্ত! আর তিন মিনিট আছে। এমন সময় বাংলাদেশের প্লেয়াররা কি করে নিজেদের মধ্যে বল কাটিয়ে, টাটিয়ে একদম সেন্টার ফরোয়াড… গোলকিপারের সামনে। আস্তে করে ছুঁয়ে দিলেই গোল! তখন তিনি কি করবেন? তিনি কি আস্তে করে ছুঁয়ে দিবেন? নাকি সেই সময় তার যদি হঠাৎ মনে হয় এই যে গোল দিব, কালকে সারা বাংলাদেশে, সারা পৃথিবীতে কাগজে, টেলিভিশনে সব জায়গায় আমার নাম নিয়ে হৈচৈ হবে। আমার ছবি ছাপা হবে। সমস্ত টেলিভিশন মুখরিত হয়ে উঠবে। সমস্ত বাঙ্গালী পাগল হয়ে যাবে। এই কথা তার যদি মনে আসে তাহলে সে কি ওই গোলটা দিতে পারবে?
ইতিহাসের বীরত্ব গাথায় আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ
গোলন্দাজ বাহিনীর একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন পীর মোহাম্মদ গোলন্দাজ। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর তিনি পরিবার পরিজন সহ ময়মনসিং এর গফরগাঁওয়ের বাগুয়া গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। ব্রক্ষপুত্রের তীরে বাগুয়া গ্রাম ছিল নির্জন এক বনভূমি। হিংস্র জন্তু জানোয়ারের আবাস স্থল। তবুও এই নির্জন প্রকৃতিই আকৃষ্ট করে পীর মোহাম্মদ গোলন্দাজকে। গফরগাঁওয়েই জীবন-জীবিকার প্রেরণা খুঁজে নেন। স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন গফরগাঁওয়ের বাগুয়ায়। ইতিহাস খ্যাত গোলন্দাজ বংশের এভাবেই গোড়া পত্তন হয় গফরগাঁও-এ।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট গফরগাঁওয়ের নিশুয়ারী গ্রামে জননেতা আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের জন্ম হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। স্ত্রীর নাম মাহফুজা গোলন্দাজ। দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। বড় ছেলে মরহুম ফুয়াদ গোলন্দাজ জগলু। ছোট ছেলের নাম ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল। তিনি একজন জনপ্রিয় সাংসদ। এলাকার উন্নয়নে পিতার মতই আলো ছড়িয়ে চলেছেন ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। একমাত্র মেয়ের নাম- আনজুম গোলন্দাজ।
মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজকে বলা হয় আধুনিক গফরগাঁওয়ের রুপকার। একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সুনাম শুধু গফরগাঁওয়ে নয় সারাদেশে ছড়িয়ে আছে। রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও খেলাধুলার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ।
এই কথা বললাম এই জন্য যে, মানুষ যদি লোভে উম্মাদ হয় তখন সে ওই আনন্দটা হারিয়ে ফেলে। আনন্দ হারিয়ে ফেললে মানুষের কাজের মধ্যে শুধু শাস্তি, শুধু যন্ত্রনা, শুধু নিরাপত্তাহীনতা, শুধু কষ্ট পেতে থাকে।
আর তাই আমি মনে করি মানুষের খ্যাতির জন্য কাজ করা উচিৎ নয়। মানুষের আনন্দের জন্য কাজ করা উচিৎ। এই পৃথিবীতে যত খ্যাতিমানই আমি হই, আমি তো এই পৃথিবীতে বেশী দিন থাকবো না। তাহলে অযথা লোভ করে লাভটা কী? অযথা বেশী চেয়ে লাভ কী? অযথা পাগল হয়ে লাভ কী? ভেবে দেখুন বলটা শুধু ছুয়ে দিলে। নিশ্চিত জয়। কাজেই আমাদের ভাবতে হবে আমি খেলোয়াড় হিসেবে বড় হতে চাই? নাকি খ্যাতিমান হিসেবে বড় হতে চাই? আমি খেলোয়াড় হিসেবে বড় হতে চাই। এই স্বপ্ন থাকলে আমি প্রথমেই ভাববো কি করে গোল পোস্টে বলটা ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই তা করি না।
মানুষের জন্য খ্যাতিরও প্রয়োজন আছে। এতে কর্মে উৎসাহ যুক্ত হয়। মানুষ কিন্তু একা বাঁচতে পারে না। অন্য সব প্রাণীর ক্ষেত্রে কোনো না কোনো আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র আছে। কারও বিরাট দাঁত আছে। কারও লেজে বড় কাটা আছে। কারও ধারালো নখর আছে। কেউ রং বদলায়। একে জনের একে অস্ত্র আছে। সেই অর্থে মানুষের কোনো অস্ত্র নাই। দুটি খোলা হাত ছাড়া মানুষের কিছুই নাই। তো, এই দুটো খোলা হাত দিয়ে মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী হল কি করে? কি দিয়ে? উত্তর হলোÑ ভালোবাসা দিয়ে। পরস্পরকে ভালোবাসতে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছি এবং পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।
এই যে মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় এটা একটা বিরাট ব্যাপার। সেই জন্য মানুষ এতো বড়। আমি আমার কাজ আনন্দের জন্যই করি অথবা অন্য যে কোনো কারনেই করিনা কেন মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এবং ভালোবেসে একটু আনন্দের সঙ্গে আদরও দিতে চায়। এজন্যই গোলন্দাজ আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার। এই পুরস্কার তো ভালোবাসার। এই পুরস্কার হচ্ছে আদর। এই পুরস্কার হচ্ছে মমতার।
পথচলা যেভাবে
শুরু হলো
সাগর ভাইয়ের এই প্রস্তাবটি পছন্দ হলো ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের। সাগর ভাইয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হল গোলন্দাজ আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার প্রতি বছর দেশের একজন বিশিষ্ট কবি অথবা সাহিত্যিককে প্রদান করা হবে। শুরু হলো নতুন এক স্বপ্নযাত্রা। বাংলা সাহিত্যে নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো।
অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা
ফাহিম গোলন্দাজ বাবেল, সংসদ সদস্য
অবসরে গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়তেন। দেশের কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে অনেক গর্ব করতেন। আজ যিনি এই সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক, মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের গুণের কথা তার মুখে বহুবার শুনেছি। আমি আমার পরিবার বেশ আনন্দিত যে গোলন্দাজ আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার প্রথম পাচ্ছেন আমদের অভিভাবক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আমরা এজন্য গর্বিত।
দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে আনন্দ আলোর সহায়তায় আমরা এই পুরস্কার প্রবর্তণ করেছি। এক্ষেত্রে আনন্দ আলোর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি, চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। মূলতঃ তার আগ্রহে ও আন্তরিকতায় পুরস্কারটি প্রবর্তণ করা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে এই পুরস্কারের আওতায় দেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য কার্যকর নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ইচ্ছে আছে। সবার কাছে দোয়া চাই।
সায়ীদ স্যার আমাদের প্রেরণা
আমীরুল ইসলাম, শিশুসাহিত্যিক
আমাদের একজন সায়ীদ স্যার আছেন এটাই আমার জন্য অনেক প্রেরণার
শাহরিয়ার নাজিম জয়, অভিনেতা, উপস্থাপক