মুক্তিযোদ্ধার মা

ছেলে মাকে বলেছে পিঠা খাবে। তাই মা পিঠা বানিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যায় এমনকি রাত অবধি অপেক্ষা করে মা। ছেলের জন্য অপেক্ষা করতেই থাকে। প্রতিদিন পিঠা বানায়। এক সময় মা সেই পিঠা নিয়ে বসে থাকতে থাকতে দুনিয়া থেকেই চলে যায়। তার পরও ছেলে আসে না। ছেলে কিভাবে আসবে? কারণ ছেলে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। এই ঘটনাটি কোনো রূপকথার গল্প নয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো সত্য ঘটনার মধ্যে একটি। এরকম হাজারো ছেলের জন্য মায়েরা আজো অপেক্ষায় আছেন। সেই যে বাড়ি থেকে গেছে তার ছেলে আজো ফিরেনি। আর ফিরেনি বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন একটি ভ‚-খন্ড প্রিয় বাংলাদেশ। হ্যাঁ, পাঠক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এরকম নানান ঘটনা নিয়ে নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। যাতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পীরা। তেমনই ক’জন মাকে নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল

কোকিলারাই আমার প্রথম পছন্দ

ফেরদৌসী মজুমদার
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোনো নাটকের কথা এলেই আমার অভিনীত মঞ্চনাটক ‘কোকিলারা’ এর কথা সবার আগে আসে। এই নাটকে আমি একজন কিশোরী থেকে শুরু করে মা, স্ত্রী, বৃদ্ধা সকল চরিত্রেই অভিনয় করি। একক অভিনয়ের নাটক এটি। এখানে কাজ করতে গিয়ে আমি একজন মায়ের অনুভ‚তি যেমনি পেয়েছি তেমনি কিশোরী বয়সকেও উপলব্দি করেছি। আর টিভিতে অনেকগুলো নাটকে আমি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যার সবগুলোই বিটিভির আমলের কাজ। এই মুহূর্তে অনেক নাটকের নামই মনে করতে পারছিনা।

অনেক নাটকেই মুক্তিযোদ্ধার মা হয়েছি

শর্মিলী আহমেদ
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কোনো কাজের কথা বলা হলে আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ ছবির কথা। যদিও এই ছবিতে সুচরিতা আর তার ছেলের অভিনীত চরিত্রটিই সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত। আমার চরিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের আগের দেখানো হয়েছে। তারপরও এরকম একটি ছবিতে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে অসাধারন অনুভ‚তি সবসময় কাজ করে। একজন মা দেশের জন্য নিজের সন্তানকে কিভাবে বিসর্জন দিতে পারে তা ছবিতে দেখানো হয়। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের লেখা উপন্যাস থেকে ছবিটি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। আর নাটকের কথা যদি বলা হয় তাহলে আমি বলবো বিটিভির আমলে বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করি। যেগুলোর নাম মনে করতে না পারলেও বেশ কয়েকটির ঘটনা মনে আছে। তবে বেশির ভাগ নাটকেই আমি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি।

পিঠা বানাতে বলে ছেলে চলে যায়!

আফরোজা বানু
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। বেশিভাগ নাটকে মায়ের চরিত্রেই অভিনয় করেছি। অনেক নাটকের নাম এখন মনে করতে পারছিনা। অনেক বছর আগে বিটিভিতে চন্দনের পরিচালনায় একটি নাটক প্রচার হয়। যেটির গল্প আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসের মতোই অনেকটা। মা ছেলেটির জন্য পিঠা বানিয়ে রাখে। ছেলে মায়ের কাছে পিঠা খেতে চায়। কিন্তু ছেলে যে, মাকে পিঠা বানাতে বলে যায় আর ফিরে আসে না। বছরের পর বছর মা পিঠা বানিয়েই যায়। আর ছেলে আসে না। হৃদয় স্পর্শ করা একটি নাটক ছিলো। আমার অভিনয় জীবনের এই চরিত্রটি কথা মনে থাকবে সবসময়। এরকম আরো কয়েকটি নাটকের মধ্যে চ্যানেল আইতে প্রচার হওয়া ‘একাত্তরের নিশান’ সহ ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা বেশ কয়েকটি নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যেগুলো আমার অনেক ভালো লাগার মতো কাজ।

রাস্তায় কোনে ছেলে দেখলেই খোকন বলে ডাকতাম

দিলারা জামান
মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছি। এই মুহূর্তে সবগুলো নাটকের কথা মনে পড়ছেনা। তবে চ্যানেল আইতে প্রচার হওয়া হারুন-অর-রশিদের লেখা ও রেজানুর রহমানের নির্মিত ‘ছায়াসঙ্গী’ নাটকটির কথা খুব মনে পড়ে। এই নাটকের গল্প এবং আমার চরিত্র সবসময়ই মনে থাকবে।
একজন অভিনয়শিল্পীর যে ধরনের চরিত্রগুলোতে অভিনয় করার ইচ্ছা থাকে এটি তেমনই একটি চরিত্র। আরো কয়েকটি নাটকেও আমি মুক্তিযোদ্ধার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই মুহূর্তে নাটকের নাম মনে না পড়লেও ঘটনা মনে আছে। যেমনÑ একটি নাটকে ছেলে আমাকে ঘুমে রেখে যুদ্ধে চলে যায়। সে আর ফিরে আসে না। গল্পের শেষে দেখা যায় দেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও ছেলে আর ফিরে আসে না। মা পথ চেয়ে বসে আছে। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কোন ছেলে গেলেই তাকে খোকন বলে ডাকতে থাকি। এরকম আরো অনেকগুলো নাটকে কাজ করেছি।

  • এক্সক্লুসিভ