কতদূর যাবে বাংলাদেশ?

রেজানুর রহমান

টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। সবে তো শুরু হল। চলবে প্রায় এক মাস। তবে প্রশ্ন হলো পুরো এক মাস ধরে বাংলাদেশ দল হিসেবে আলোচনায় থাকবে কী? মর্নিং শোজ দ্য ডে বলে একটা কথা আছে। সকালের সুর্যই বলে দেয় দিনটা কেমন হবে। তাহলে স্কটল্যান্ডের সাথে প্রথম খেলায়ই কী বোঝা গেল এবারের টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আসলে কতদূর যেতে পারবে? ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। তাই বলে স্কটল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ এভাবে হারবে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। বিশ্বকাপের আগে আমরা অনেকটা তড়িঘড়ি করে নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে ডেকে এনে নিজেদের মতো মাঠ সাজিয়ে টি-২০ সিরিজ খেললাম। দুই দলকেই পরাজিত করেছি। তখনই ভাবটা এমন দাঁড়িয়ে যায় যে, আমরা বিশ্বকাপে অনেক ভালো করব। অথচ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডেই আমরা হোঁচট খেলাম। কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে দুই গ্রুপে ৮ দলের খেলা। ৪টি দল মূল পর্বে যাবে। এই মুহূর্তে সাহস করে কী বলা যায় বাংলাদেশ মূল পর্বে যাবে? কোয়ালিফায়ার রাউন্ড টপকানোই যেখানে শংকা জাগাচ্ছে সেখানে মূল পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? ধরে নিলাম বাংলাদেশ মূল পর্বে যাবে। তারপর? বাংলাদেশ স্কটল্যান্ডের সাথেই টিকতে পারল না সেখানে ক্রিকেট শক্তিধর দেশ গুলোর বিরুদ্ধে আদৌ কী দাঁড়াতে পারবে। মরুর দেশে বলতে গেলে ব্যাটিং স্বর্গে এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। টি-২০ কে বলা হয় চার ছক্কার উৎসব। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটিং খুবই ম্রিয়মান।

স্কটল্যান্ডের সাথে পরাজয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অসহায় আত্মসমর্পন করেছেন দেশী-বিদেশী মিডিয়ার সামনে। বলেছেন, আমি হতাশ। এই মুহূর্তে আমাদের হতাশ না হয়ে উপায় নেই। ব্যাটিংটাই আমাদেরকে ডুবিয়েছে। ব্যাটিংই আমদের মূল চিন্তার বিষয়। আমাদের ব্যাটিং ভালো করতে হবে।

মাহমুদউল্লাহ সত্য কথা বলেছেন! স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরকে খুবই ভীতু মনে হয়েছে। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে অনেকদিন ধরেই নানা কথা বলা হচ্ছে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচ গুলোতেও বাংলাদেশ যে আহামরি ব্যাটিং করেছে তা বলা যাবে না। তামিম ইকবাল শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্রিকেট বিশ্বের আলোচিত খেলোয়াড়। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ যখন টি-২০ স্কোয়াড সাজালো তখনই ব্যাটিং নিয়ে কথা উঠেছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে কর্তৃপক্ষ ‘দেখি না কী হয়? এমন মানসিকতায় সময় পার করছেন। সবাই জানেন বাংলাদেশ দলের যে ব্যাটিং বাস্তবতা তা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে লড়াই করার মতো নয়। তবুও আমরা সময়ের কাজ সময়ে করিনি। দেখি না কী হয় এই মানসিকতায় ক্রিকেটের পথে হাঁটছি। আবার প্রতিপক্ষকে কখনও কখনও এতটাই গুরুত্বহীন করে তুলেছি যে পচা শামুকে পা কাটার পরও জ্ঞান হচ্ছে না।

স্কটল্যান্ডের সাথে টি-২০ ক্রিকেটে এর আগে আরও একবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল। সেটাও ছিল পরাজয়ের ইতিহাস। মরুর দেশে বিশ্বকাপ শুরুর আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও বাংলাদেশ হেরে যায় স্কটল্যান্ডের কাছে। প্রস্তুতি ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন না। সে কারণে অনেকেই প্রস্তুতি ম্যাচের হারকে তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। ভাবটা এমন- স্কটল্যান্ডকে ভয় পাবার কি আছে?

অথচ সেই স্কটল্যান্ডের কাছেই শোচনীয় হার হলো বাংলাদেশের। ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ। পাশের কক্ষেই জয়োৎসব করছিল স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়রা। তাদের জয়োধ্বনিতে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন ঠিকমত কথা বলতে পারছিলেন না। পাশাপাশি রুম হওয়ায় স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়দের আনন্দ চিৎকারই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছিল। ফলে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে বিব্রত হচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ। হতাশা কাটাতে শুধু বললেন, ব্যাটিংটাই আমাদের মূল চিন্তার বিষয়। আমাদের ভালো ব্যাটিং করতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো ভালো ব্যাটিং করবে কে? তামিম বাংলাদেশ দলে নেই। সৌম্য সরকার ও লিটন দাস ওপেনিং জুটি। স্কটল্যান্ডের সাথেই দাঁড়াতে পারল না। বড় দল গুলোর সাথে তারা কি করবে?

সাধারনত কি হয়? কোনো দল জয়ের ধারায় থাকলে আমরা নেতিবাচক দিক গুলো তেমন আলোচনা করি না। অথবা করতে চাই না। দল হারতে শুরু করলেই নেতিবাচক কথা বেরিয়ে আসে। যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, স্কটল্যান্ডের ১৪০ রান তাড়া করে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিৎ ছিল। যে কেউই তা বলবে। এছাড়া মাসকটের উইকেট যেমন দেখলাম, লক্ষ্যটা মোটেই কঠিন ছিল না। বাংলাদেশ তবু পারেনি। হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে বললে আমি এক কথাই বলব, ব্যাটিং জড়তাই আমাাদের ডুবিয়েছে। পাইলট আরও বলেছেন, দেশে নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজে আমাদের ব্যাটিং মোটেই ভালো ছিল না। আমি একথা বার-বার বলেছি। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশিত রান পায়নি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কিছু শট লক্ষ্য করলেই দেখবেন ওরা যেন একটু ভয় ও দ্বিধা নিয়ে ছিল। এটা ক্রিকেট লড়াইয়ের মানসিকতা নয়। ভয় থাকলে জয় পাওয়া যায় না। কথা সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের ভয় কিসে? তবুও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয় হোক।

  • এক্সক্লুসিভ
  • ক্রীড়া বিনোদন