হলের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন প্রয়োজন

সৈয়দ ইকবাল
একজন মায়ের কথাই প্রথমে বলি। তিনি অকপটে বললেন, আমার কাছে ছবিটা খুবই ভালো লেগেছে। আমি মনে করি ছবিটা ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সবার দেখা উচিৎ। ইদানিং দেখা যাচ্ছে আমাদের বাচ্চারা উর্দুতে কথা বলে হিন্দীতে কথা বলে… কিন্তু তারা ভালো করে বাংলা জানেনা। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করেছি। কাজেই মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আরও বেশি যতœবান হওয়া প্রয়োজন। ছবিটা দেখলে সবার মাঝে সেই চেতনাটা ছড়িয়ে যাবে।
একজন তরুণী বললেন, এই ছবিতে পরিচালক থেকে শুরু করে সকল কলাকুশলী এমনভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন যে দেখেই মন জুড়িয়ে গেছে। সবারই উচিৎ হলে গিয়ে ছবিটি দেখা। পাকিস্তানীরা কতটা অন্যায় ও নিষ্ঠুর কায়দায় আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল এই সিনেমা দেখলে তার বাস্তব ছবিই চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
বিশিষ্ট অভিনেতা আজিজুল হাকীম বললেন, ছবিটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি খুবই উদ্বেলিত। কারণ তৌকীর আহমেদের নির্মাণ সম্পর্কে তো আর বলার কিছু নাই। আমি ওর প্রথম ছবি জয়যাত্রায় যুক্ত ছিলাম। কাছে থেকে দেখেছি তার নির্মাণ শেলী। এরপর তো তিনি একের পর এক ছবি নির্মাণ করেছেন। দেশে-বিদেশে তার ছবি পুরস্কৃত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। তবে ফাগুন হাওয়ায় ছবিটির বিষয়বস্তু নির্বাচনে তার যে চয়েজটা অত্যন্ত সময়োপযোগী। কারণ ২১শে ফেব্রæয়ারি অথবা ভাষা নিয়ে আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে খুবই কম। অনেকদিন পর তৌকীরের নির্মাণে আমরা একটি ইতিহাস ভিত্তিক ছবি দেখলাম। এটা দেশের সিনেমার জন্য একটি ভালো সংবাদ।
বিশিষ্ট অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার বললেন, তৌকীর আহমেদ যখন কিছু লেখেন বা নির্মাণ করেন তখন সেটা দায়িত্বের সাথেই করেন। তিনি শুধু বিনোদন হিসেবে চলচ্চিত্রকে দেখেন না। তার আগের ছবি গুলোও সেই স্বাক্ষর রেখেছে একই ভাবে ফাগুন হাওয়ায়তেও একই প্রেরণা খুঁজে পেয়েছি। নতুন প্রজন্মের উচিৎ ছবিটি দেখা।
অভিনেত্রী বন্যা মির্জা বললেন, তৌকীর আহমেদ তার প্রতিটি ছবিতেই তার মতো করে একটি রাজনৈতিক দর্শন স্থাপন করতে চান এবং দর্শকের সামনে তা তুলে ধরতেও চান। এই কারণেই তৌকীর আহমেদের ছবির আমি একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি কতটা ভালো নির্মাতা সেটা আমার বলা সাজে না। কিন্তু এই কথাটি আমি বার বার বলতে চাই যা আমি তৌকীর ভাইকেও বলেছি, দর্শকদেরও বলেছি… জরুরি কথাটি হলো ছবিতে নিজের মতো করে, নিজের দর্শন তুলে ধরার ক্ষেত্রে তৌকীর আহমেদ অনবদ্য।
অভিনেতা শাহেদ আহমেদ বললেন, ফাগুন হাওয়ায় ছবিটি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। ছবির কলাকুশলীরা সকলে অনেক ভালো করেছেন। মনে প্রাণে চাই ছবিটি সবাই হলে গিয়ে দেখুক।
অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বললেন, ছবি দেখতে বসে চোখটা ফেরাতে পারিনি। অসাধারন একটা ফিল্ম দেখলাম অনেকদিন পর। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব তৌকীর আহমেদকে। ধন্যবাদ জানাব চ্যানেল আইকেও। ফাগুন হাওয়ায় ছবিটি তরুণদেরকে দেখার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মুন্নী সাহা বললেন, খুব ভালো একটা গল্প, ভালো একটা বুনন, খুব ভালো নির্মাণের একটা ফিল্ম। ছবিটি দেখার পর দারুন একটা অনুভ‚তি নিয়ে ফেরৎ যাচ্ছি। ছবির গান অসাধারন। ইতিহাসের প্রয়োজনে দারুন একটি ছবি বানিয়েছেন তৌকীর আহমেদ। তাকে অনেক, অনেক অভিনন্দন! সংবাদকর্মী ও অভিনেত্রী ফারহানা নিশো বলেন, কখনও কখনও এমন হয়, ভালো কিছু দেখলেই আনন্দে কথা হারিয়ে যায়। ভাষা খুঁজে পাই না। ফাগুন হাওয়ায় দেখার পর আমার হয়েছে সেই অবস্থা। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এক কথায় ফাগুন হাওয়ায় ছবি হিসেবে অসাধারন। শুধু তৌকীর আহমেদকে নয় পুরো টীমকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই।
বিশিষ্ট অভিনেতা তারিক আনাম খান বললেন, সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে যে, সময়টাকে ধরে বিশ্বস্ততার সাথে কাজটি করেছেন তৌকীর আহমেদ। ইতিহাস ভিত্তিক ছবি বানাতে গেলে অনেক সময় প্রামান্যচিত্র থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। কিন্তু তৌকীর আহমেদ তার এই ছবিতে বিশ্বস্ততার সাথেই ইতিহাসের সত্য গল্প বলেছেন। আমাদেরকে সীমিত সাধ্যের মধ্যেই কাজ করতে হয়। সেই তুলনায় বলা যায় অসাধ্য সাধন করেছেন তৌকীর আহমেদ। দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষের উচিৎ ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে ছবিটি দেখা।
অভিনেতা সাজু খাদেম বললেন, ফাগুন হাওয়ায় ছবিতে অভিনয় করতে পারাটা সত্যিই আমার কাছে অনেক আনন্দের। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে গেলাম। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কাল নিয়ে এভাবে আগে ছবি বানান হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সবার উচিৎ ছবিটি দেখা। দর্শকদের উদ্দেশে সাজু খাদেম বলেন, ভালো সিনেমা দেখার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদের গুণী পরিচালকেরা প্রতিনিয়তই ভালো সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন কিন্তু সেই স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আপনাদেরকেই।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ বলছিলাম মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কাল নিয়ে নির্মিত ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত তৌকীর আহমেদের ছবি ফাগুন হাওয়ায় এর কথা। সত্যিকার অর্থে ভাষা আন্দোলনের সময়কালকে উপজীব্য করে একটি ভালো ছবি বানিয়েছেন বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক তৌকীর আহমেদ। একথা বোধকরি সকলেই মানবেন তৌকীর আহমেদের ছবির একটি স্পষ্ট ভাষা ইতিমধ্যেই তৈরী হয়েছে। তার প্রতিটি ছবিতে একটি করে বক্তব্য স্পষ্ট হয়। যা দর্শককে ভাবায়। ফলে তার প্রতিটি ছবিই দর্শকের মনের ভেতর দারুন ভাবে সাড়া ফেলেছে। তাঁর সর্বশেষ ছবি ফাগুন হাওয়া ছবি দেখে মনে হলো মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্যানভাসে অনেক মমতা দিয়ে একটি ছবি এঁকেছেন তিনি। ছবিটির দিকে তাকালেই মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কালের ইতিহাস সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। কিন্তু ইতিহাসের ছবি আঁকা কি এতই সহজ? বিশেষ করে মহান ভাষা আন্দোলনের সময়কালকে উপজীব্য করে ইতিহাসের ছবি আঁকা তো আর দুরুহ। আজ থেকে ৬৭ বছর আগে আমাদের দেশে মহান ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। কাজেই সেই সময়ের পথঘাট, বাসাবাড়ি, মানুষের আচার আচরণ, বিশেষ করে প্রকৃতিও তো আজকের মতো এমন ছিল না। তাহলে ক্যামেরার ফ্রেমে ছবিটা আঁকবো কি করে? কোথায় পাব ৫২ সালের গ্রাম ও শহর? সত্যি এ এক দুরুহ কাজ। কিন্তু তৌকীর আহমেদ সেই দুরুহ কাজটিই পরম মমতায়, বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করেছেন। তাঁর সর্বশেষ ছবি ফাগুন হাওয়ায় দেখলেই দর্শক প্রথম যে অনুভ‚তিটা পাবেন তাহলে ক্যামেরার ফ্রেমে প্রিয় দেশের ছবি। পারিবারিক অ্যালবামে আমরা যেমন পুরনো ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হই তেমনই আবেগ ছুঁয়ে যাবে সবার মাঝে। প্রিয়দেশ, জন্মভ‚মি অতীতকালে এমনই ছিল। আহ! কী অপরূপ! ফাগুন হাওয়ায় ছবিতে পরম নিষ্ঠার সাথে ৫২ সালের গ্রাম বাংলা ও মফস্বল শহরের চিত্র তুলে ধরেছেন তৌকীর আহমেদ। তার এই ছবিতে একটি মেঠো পথের চিত্র আছে। দুইজন তরুণ সাইকেল চালিয়ে ছুটে আসছে সামনের দিকে। ৬৭ বছর আগের গ্রাম বাংলার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে এই একটি দৃশ্যই বোধকরি যথেষ্ট। কিন্তু তৌকীর তার ছবির প্রতিটি দৃশ্যেই ১৯৫২ সালের সময়টাকে পরম যতেœর সাথে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি পাত্র-পাত্রীর চরিত্র চিত্রনেও কোন ছাড় দেননি। সেই সময়কালের পোশাক, চুলের কাটিং, মাথার সিথি কাটা থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছুতেই আছে ১৯৫২ সালের উত্তাল ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণা। আর তাই সকলের উচিৎ ছবিটি হলে গিয়ে দেখা এমনটাই বলেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা!
তৃতীয় সপ্তাহের মতো দেশের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলছে ফাগুন হাওয়ায়। তথ্যটি জানিয়ে গুণী চিত্র পরিচালক তৌকীর আহমেদ বললেন, তৃতীয় সপ্তাহে এসে পড়লো ফাগুন হাওয়া। এটি আশার কথা। যদিও হল সংখ্যা খুব যে বেশি তা নয়। দেশের সিনেপ্লেক্স গুলিতে এবং কিছু ভালো সিনেমা হলে সিনেমাটি চলছে। সবচেয়ে বড় কথা দর্শক ছবিটি পছন্দ করছেন। আমি সব সময় আশা নিয়েই ছবি বানাই। দর্শকের জন্যই ছবি নির্মাণ করি। আমাদের ছাত্র সমাজ ও শিক্ষিত শ্রেণী হলে গিয়ে সিনেমা দেখা শুরু করেছেন। এটা বেশ আশার কথা। ভালো ছবি পেতে হলে হলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে এবং দর্শকের মাঝে চলচ্চিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। তাহলেই বোধকরি বাংলাদেশের সিনেমা আবার জেগে উঠবে।

  • এক্সক্লুসিভ