বিটিভির জন্মদিনে চ্যানেল আই চত্বরে বসেছিল মিলন মেলা!

জন্মদিন বাংলাদেশ টেলিভিশন অর্থাৎ বিটিভির। অথচ সেটা পালন করে চ্যানেল আই। বছরের পর বছর ধরে এই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে আসছে বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল টেলিভিশন মাধ্যম চ্যানেল আই। দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে একটা চমৎকার মিল আছে। বিটিভি বাংলা ভাষার প্রথম টিভি চ্যানেল আর চ্যানেল আই বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল টিভি চ্যানেল। তবে ইতিহাসের আয়নায় বিটিভি এগিয়ে আছে সবার আগে। করণ বিটিভি ছিল বলেই এই দেশে এখন ৪০টিরও বেশি টিভি চ্যানেল কার্যকর ভ‚মিকা পালন করছে। প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে নেতৃত্ব পর্যয়ে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অনেকেই এক সময় বিটিভিতে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিলেন। এক অর্থে বলা যায় বিটিভি ছিল একদা যৌথ পরিবারের মতো। পরিবার বড় হতে থাকে। সেখান থেকে তৈরি হয় ছেলের বাড়ি, মেয়ের বাড়ি। শেকড় কিন্তু একটাইÑ বিটিভি। সে কারণেই প্রতি বছর বিটিভির জন্মদিন পালন করে চ্যানেল আই।
এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২৫ ডিসেম্বর বিটিভির ৫৫ তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে চ্যানেল আই চত্বরে বিটিভির নবীণ-প্রবীণ কর্মকর্তা ও কর্মীদের এক মিলন মেলা বসেছিল। এজন্য চ্যানেল আই-এর ব্যাপক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘গানে গানে সকাল শুরু’কে সাজানো হয়েছিল উৎসব আমেজে। চ্যানেল আই-এর চেতনা চত্বরে উম্মুক্ত মঞ্চে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের ভেলায় উঠে বসেছিলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শীতার্ত আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে বিটিভির বর্তমান ও অতীত সময়ের কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ একে একে তেজগাঁওস্থ চ্যানেল আই চত্বরে আসতে থাকেন। সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই অতিথিদের ভীড়ে অনুষ্ঠান স্থলে আনন্দ ও উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বহু বছর পর একে অপরকে দেখার আনন্দে অনেকের চোখে আনন্দাশ্রæও দেখা যায়। মঞ্চে সুর তোলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। দর্শক সারীতে তখন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অপূর্ব আমেজ ছড়িয়ে যায়। শীতের চিতই আর ভাপা পিঠা খেতে খেতে বন্যার সুরের ভেলায় চড়ে বসেন সবাই। গানের পাশাপাশি চলতে থাকে স্মৃতিচারণÑ কেমন ছিলাম আমরা? কি করে শত থেকে সহ¯্র হলাম? কি করে আমাদের টেলিভিশন পরিবারটা আজ এতো বড় হলো? সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি… অতিথিরা একে একে এভাবেই স্মৃতির ঝাপি খুলে ধরছিলেন। বহু বছর পর প্রিয় সহকর্মীকে কাছে পেয়ে কেউ কেউ পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে যখন কুশল বিনিময় করছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো তারা বর্তমান বয়সের কথা বোধকরি ভুলেই গেছেন! আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে যেন থামতেই চাচ্ছিলেন না। কত কথা কত স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব। সকলের মুখেই ছিল চ্যানেল আই-এর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা। প্রতি বছর বিটিভির জন্মদিন পালন করে চ্যানেল আইÑ দেশের টেলিভিশন সংস্কৃতির মূল শেকড়কে শ্রদ্ধা করার এ এক অনন্যা দৃষ্টান্ত। এজন্য চ্যানেল আই-এর প্রতি কৃতজ্ঞ সকলে।
চ্যানেল আই-এর গানে গানে সকাল শুরু অনুষ্ঠানটি মূলত এক ঘণ্টার। অর্থাৎ সকাল ৭টার খবরের পর শুরু হয়ে মাঝখানে ৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে চলে প্রায় সকাল ৯টা পর্যন্ত। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানটি এক নাগাড়ে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। চ্যানেল আই-এর পাশাপাশি বিটিভিও অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। ফলে সেদিন টিভি পর্দায় বাংলাদেশের সকালটি গোটা বিশ্বে অনন্য এক উৎসব আমেজে ধরা দেয়। টেলিভিশন জগতের বিশিষ্ট জনদেরকে একই আঙিনায় এক সাথে দেখে দেশ-বিদেশের অসংখ্য টেলিভিশন দর্শক আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। অনুষ্ঠান চলার সময় চ্যানেল আইতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শক ফোন করেন। তাদের ভালো লাগার কথা জানান।
অনুষ্ঠানের শেষে যখন সকলে স্মৃতিময় আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না তখন রেজওয়না চৌধুরী বন্যার সাথে সমবেত কণ্ঠে গান গাইতে মঞ্চে আসেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, দিনাত জাহান মুন্নী সহ আরও অনেক শিল্পী। ‘ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটিতে সুর তোলেন সকলে। এই গানের মাধ্যমে দেশ মাতৃকার প্রতি অনন্য এক আবেগ ছড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে।
অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই-এর পক্ষে পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু, জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন বক্তব্য রাখেন। অতিথিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তথ্যসচিব আব্দুল মালেক, বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, সৈয়দ হাসান ইমাম, আজাদ রহমান, কেরামত মাওলা, কামরুন্নেসা হাসান, মহিউদ্দিন ফারুক, আলী ইমাম, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাইফুল আলম, নাসির আহমেদ, শাহিদা আরবী, খায়রুল আলম, কে এস ফিরোজ, গাজী আব্দুল হাকিম, রেজাউল করিম, মনোজ সেনগুপ্ত, লায়লা হক, ঝুনা চৌধুরী সহ অনেকে। অনুষ্ঠান প্রযোজনায় ছিলেন আমীরুল ইসলাম। উপস্থাপনায় ছিলেন দিলরুবা সাথী।
উল্লেখ্য, বিটিভির জন্মদিন পালন উপলক্ষে চ্যানেল আই-এর এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি এবার সকলের আরও বেশি মনোযোগ কেড়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় সকলেই অভিন্ন সুরে একটি কথাই বার বার বলেছেন যা হলোÑ বিটিভি হলো আমাদের পৈত্রিক বসতভিটা। ওখানেই আমরা বড় হয়েছি। তারপর যার যার বাড়ি হয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই বসতভিটার কথা ভুলে গিয়েছি। এক্ষেত্রে চ্যানেল আই ব্যতিক্রম। শেকড়ের কথা ভোলে না। জয়তু চ্যানেল আই।

  • এক্সক্লুসিভ