শোবিজের কোথায় নেই চ্যানেল আই-এর তারকারা! নাচে-গানে-অভিনয় থেকে শুরু করে শোবিজের প্রায় প্রত্যেকটি শাখায় রয়েছে দাপটের সঙ্গে তাদের পদচারণা। শুরুতেই যদি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার কথা বলি তাহলে বলতেই হয় আজকের যে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি সেখানে এই লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকেই এসেছেন অনেক অনেক সুপারস্টার। যারা বর্তমানে শোবিজে বেশ যোগ্যতার সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছেন। এমনিভাবে ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল হান্ট, ফেয়ার এন্ড লাভলী দ্যা আলটিমেট ম্যান, চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে দিয়ে আমাদের শোবিজ পেয়েছে অনেক তারকা। শুধু কী তাই! গানের জগতেও রয়েছে চ্যানেল আই-এর শিল্পী তৈরির অগ্রযাত্রা। চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের মাধ্যমে দেশের সংগীত অঙ্গন পেয়েছে বেশকিছু নামিদামি কণ্ঠশিল্পী। এছাড়াও চ্যানেল আই-এর রয়েছে শিক্ষামূলক কিছু প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান। যার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাঙ্গনেও চ্যানেল আই-এর তারকা তৈরির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এফএলপি, স্পিলিং বি ও বাংলাবিদসহ বেশকিছু শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে দেশের নানান জায়গায় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল
মিডিয়া জুড়ে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার
২০০৫ সাল থেকে শুরু হয় শোবিজ মিডিয়ার সবচেয়ে আলোচিত এবং জমকালো প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন শুধু অনেকগুলো নতুন মুখ-ই পায়নি, পেয়েছে যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী আগামীর তারকাও। নিজেদের যোগ্যতার অবদান রাখছে সৌন্দর্য, মেধায় এবং অভিনয়ে। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় মোট আটবার। যেখান থেকে দেশের শোবিজ পাচ্ছে একঝাঁক মেধাবী সুন্দরী।
২০০৫ সালে এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে পা রাখেন শানারেই দেবী শানু। সে বছর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই শানু অভিনয় জগতে রেখে চলেছেন সফলতার স্বাক্ষর। বর্তমানে শানু ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এখনো শানু শোবিজ মিডিয়ায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। এই আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হয়েছেন যথাক্রমে নাবিলা হাসান ও পিংকি। দুজনেই শোবিজে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন।
ঐ বছর মমর সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হন যথাক্রমে বিন্দু ও বাঁধন। মম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই অভিনয় করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন তৌকির আহমেদ। ছবিতে লাক্সের ঐ আসরের বিন্দু ও মুনমুনও অভিনয় করেন। মম তার ক্যারিয়ারের প্রথম চলচ্চিত্রেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ বিন্দু ও বাঁধনও টিভি মিডিয়ার উজ্জ্বল মুখ। দুজনে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। বাঁধনকে নিয়মিত টিভি নাটকে দেখা গেলেও বিন্দু ঘর-সংসার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। ঐ আসরের আরেক আলোচিত মুখ রুমানা মালিক মুনমুন টিভি নাটকে অভিনয় এবং উপস্থাপনা করে জয় করে নিয়েছেন দর্শক হৃদয়। এই আসরের আরেক আলোচিত মুখ অপর্ণা ঘোষও টিভি মিডিয়া এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। অপর্ণা ঘোষ বেশকিছু ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের বেশ প্রশংসা লাভ করেছেন।
২০০৮ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হয় চৈতী। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘মধুমতি’তে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন চৈতী। বেশকিছু ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। ঐ আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ যথাক্রমে সৈয়দা উম্মে তাজ্জি ও রেবেকা সুলতানা দীপা। এরমধ্যে তাজ্জি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে নিয়মিত বসবাস করেন। বছরে দু’একবার দেশে এসে কিছু নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করতে তাকে দেখা যায়। আসরের টপ পাঁচ-এ থাকা আরাবীও বেশকিছু ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে অভিনয় করছেন।
২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হন মেহজাবীন চৌধুরী। বাংলালিংকসহ বেশকিছু পণ্যের মডেল হয়ে মেহজাবীন খুব অল্প সময়ের মধ্যে দর্শকদের নজরে চলে আসেন। আর বেশকিছু দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন তিনি। লাক্সের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে বেশ আলোচিত হন এই গø্যামার কন্যা। বর্তমানে শোবিজের অন্যতম আলোচিত মুখ মেহজাবীন। ঐ আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ যথাক্রমে মৌমিতা খান ঈশানা ও সাদিকা পারভীন স্বর্ণা। দুজনেই টিভি নাটকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। এই আসরের শীর্ষ পাঁচ-এ থাকা অর্ষা ও উর্মিলাও অভিনয়ের উজ্জ্বল দুই নাম। অর্ষা বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজের গল্প অবলম্বনে আফজাল হোসেন নির্মিত নাটকগুলোতে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আর উর্মিলাও বর্তমানে টিভি নাটকের একজন ব্যস্ততম অভিনেত্রী।
২০১০ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারের মুকুট অর্জন করেন মাহবুবা ইসলাম রাখী। রাখী অল্প কিছু নাটকে অভিনয় করেই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। বর্তমানে রাখী পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। এই আসরের অপর দুই প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ যথাক্রমে মৌসুমী হামিদ ও নিশা। দুজনই টিভি মিডিয়ার পরিচিত মুখ। মৌসুমী হামিদ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে অভিনয় করছেন। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে ‘বø্যাকমইল’, ‘হাডসনের বন্দুক’ ও ‘জালালের গল্প’সহ বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন। অন্যদিকে নিশাও অভিনয় করছেন বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে।
২০১০ সালের আসরের শীর্ষ পাঁচ-এ থাকা মার্শিয়াত ও টয়াও মিডিয়ার আলোচিত দুটি নাম। মার্শিয়াত বেশকিছু নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছেন। অন্যদিকে টয়া গ্রামীণফোনসহ বেশকিছু পণ্যের মডেল হয়ে আলোচিত হয়েছেন।
প্রতিযোগিতার ৭ম আসরের চ্যাম্পিয়ন সামিয়া সাঈদ। ধারাবাহিক ও খÐ নাটকে অভিনয় করছেন সমানতালে। আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ যথাক্রমে প্রসূণ আজাদ ও সামিহা হোসেন খান দুজনেই কাজ করছেন শোবিজে। প্রসূণ টিভি নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। আসরের শীর্ষ পাঁচ-এ থাকা সোমাও ব্যস্ত রয়েছেন টিভি নাটকে অভিনয় নিয়ে।
আসরের ৮ম আসর অর্থাৎ ২০১৪ সালে বিজয়ী হন নাদিয়া আফরিন মীম। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর থেকে টিভি নাটকে ব্যস্ততম একজন অভিনয়শিল্পী হয়ে যান তিনি। বর্তমানে ধারাবাহিক নাটক ও খÐ নাটকে অভিনয় করছেন নিয়মিত। অন্যদিকে এই আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হন যথাক্রমে নাজিফা তুষি ও নীলাঞ্জনা নীলা। নাজিফা তুষি ‘আইসক্রীম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। নিয়মিত মডেলিং ও অভিনয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। অন্যদিকে নীলাঞ্জনা নীলা বিজ্ঞাপন এবং নাটকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
ভিট চ্যানেল আই টপ মডেলের তারকারা
২০১২ সালে প্রতিযোগিতা দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রথম হয় চট্টগ্রামের মেয়ে নওশীন। আর প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হন আজমেরী আশা ও তানিয়া বৃষ্টি। আশা ও তানিয়া দাপুটের সঙ্গে শোবিজে কাজ করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন, নাটক-সিনেমায় রয়েছে তাদের উপস্থিতি।
প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। মিথিলা এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেয়। বর্তমানে মিথিলা বিজ্ঞাপন-নাটক- টেলিফিল্মে কাজ করছেন সমানতালে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতার প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হন লামিয়া ও মুন। এরমধ্যে মুন চলচ্চিত্রসহ নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন নিয়মিত। মুন অভিনীত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি ‘গহীন বালুচর’ মুক্তি পাবে খুব শিগগিরই।
চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে
সেরা নাচিয়ের দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। যেখানে বিজয়ী হন ঈভানা। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই ঈভানা শোবিজ মিডিয়ার ব্যস্ততম একজন শিল্পী হয়ে উঠেন। আর সেই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন যথাক্রমে ঈভান ও মিমো। এরাও কাজ করে যাচ্ছেন ভালোভাবে।
প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় হৃদি। সে প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন নিয়মিত। আর এই আসরে প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ হন যথাক্রমে সিনথিয়া ও উম্মে হাবিবাও অভিনয় এবং নাচ নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
হ্যান্ডসাম দ্যা আলটিমেট ম্যান
প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে বিজয়ী হন আজাদ আদর। সে বর্তমানে নাটক-টেলিফিল্ম এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। আর সর্বশেষ এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন বাঁধন। যে কিনা বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন নাটক-টেলিফিল্ম এবং বিজ্ঞাপনে। আসরের প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপ পূষণ ও তন্ময়ও কাজ করছেন মিডিয়ায়।