সুবর্ণা হক: মনে হচ্ছিল বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছি। সামনে বিশাল সাইজের টেলিভিশন। সেখানে একটার পর একটা ঈদ অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছেÑ নাটক, টেলিফিল্ম, পূর্ণদের্ঘ্য সিনেমা। দর্শক সারীতে পাশাপাশি বসা বিশিষ্ট অভিনেতা আবুল হায়াত, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, তারিক আনাম খান, চিত্র নায়িকা অপু বিশ্বাস, চিত্রনায়ক শাহরিয়ার শুভ, সু অভিনেন্ত্রী বিদ্যা সিনহা মিম, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ এক ঝাঁক তারকা। তাদের সঙ্গে আছেন নাট্যকার নির্মাতা ও বিজ্ঞাপন এজেন্সির কর্মকর্তারাও। একটি হোটেলের বলরুমে চ্যানেল আই-এর ঈদ অনুষ্ঠানের গালা প্রেজেন্টেশনের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবেশ অনেকটা ড্রয়িংরুমের মতোই। সামনে বিশাল সাইজের একটা টেলিভিশন। পিছনে চেয়ারে বসেছেন অতিথিরা। নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্মসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রমো দেখানো হচ্ছে একটার পর একটা। নাটক সিনেমার প্রমো দেখেই সবার মনে হলো এবার চ্যানেল আই-এর ঈদ অনুষ্ঠান বেশ জমবে। এক পর্যায়ে যখন ঘোষণা করা হলো এবার চ্যানেল আইতে ঈদের নাটক, সিনেমা প্রচারের সময় বিজ্ঞাপনের উপস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় কম থাকবে তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই আনন্দে হাততালি দিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ না থাকলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চলবে কি করে? খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিবছরের মতো এবছরও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দুই শতাধিক নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা, গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের বাহারী অনুষ্ঠান প্রচার হবে। এজন্য কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। বিজ্ঞাপন না থাকলে চ্যানেলগুলো এই অর্থ তুলবে কীভাবে?
এই সময় জ্ঞানটাই হলো আসল। বললেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাহরিয়ার শুভ। তার মন্তব্যÑ আমাদের ব্যস্ত জীবনে ঘড়ির কাঁটা ধরে চলতে হয়। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখার ব্যাপারটাও সময় ও পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। ঈদের কথাই যদি বলি, আমি পত্রপত্রিকা পড়ে টিভি চ্যানেলে প্রমো দেখে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান দেখার জন্য পরিকল্পনা সাজাই। এমনও হয় ছোট্ট কাগজে সময় ও তারিখ লিখে রাখি। যত ব্যস্ততাই থাকুক সময় বের করে নির্ধারিত অনুষ্ঠানটি দেখার চেষ্টা করি। এমনও হয়েছে প্রমোতে উল্লেখ করা সময় অনুযায়ী নির্ধারিত কোনো নাটক বা টেলিফিল্ম দেখার জন্য বসে আছি। অথচ নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হচ্ছে না। তখন ধৈর্য ধরে রাখতে পারি না।
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত বললেনÑ দ্যাখো রিয়েলেটিকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। রিয়েলেটিটা কি? রিয়েলিটি হলো বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়া কোনো টেলিভিশন চ্যানেল সারভাইভ করা মুশকিল। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সেলফ সেন্সর দরকার। একঘণ্টার একটি নাটকে ঠিক কতটুকু বিজ্ঞাপন প্রচার করলে দর্শক বিরক্ত হবে না। সে ব্যাপারে একটি মনস্তাত্বিক সিদ্ধান্ত দরকার। পাশের দেশের টেলিভিশন চ্যানেলের উদাহরণ টানতেই হচ্ছে। ওরা কি করে? অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে কখনই নির্ধারিত সময়কে অতিক্রম করে না। ৫টা ২০ মিনিট মানেই ৫টা ২০মিনিট। একটি নাটক হয়তো শুরু হলো। নাটক চলছে। মাঝখানে সীমিত সময়ের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলো। দর্শক কিন্তু জানে এখন বিজ্ঞাপন প্রচার হবে। একসময় নাটকটি শেষ হলো সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি নাটক বা অনুষ্ঠান ঢুকে গেল টিভি পর্দায়। কাজেই দর্শকের কিন্তু নড়ার সুযোগ নাই। একটি অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই আরেকটি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। কাজেই এই অনুষ্ঠান দেখার ক্ষেত্রেও মানসিক একটা তাড়না দেখা দেয়। কারও হয়তো বাইরে জরুরি কাজ ছিল। অথচ টিভির অনুষ্ঠান দেখতে বসে কাজের কথা ভুলেই গেছেন।
হ্যাঁ, এই কথাটিই জরুরি। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে দেশের প্রতিটি প্রচার মাধ্যমে বিশেষ করে রেডিও ও টিভি চ্যানেল মন পছন্দের নানামুখি অনুষ্ঠান প্রচারের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। কারও আছে ৫দিন, কারও ৭দিনব্যাপি ঈদ অনুষ্ঠান প্রচার হবে। অনেক নাটক, অনেক সিনেমা… এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় টিভি চ্যানেলের বাইরে তো আমাদের দৃষ্টি থাকার কথা নয়।
আনন্দ আলোর মাধ্যমে দেশের সকল টিভি দর্শকের কাছে আমাদের একটা আরজি আছে। এই ঈদে আসুন না সকলে মিলে একটা কাজ করি। পরিবারের সবাই এক সঙ্গে থাকি, এক সঙ্গে সময় কাটাই। দেশের টেলিভিশন দেখি, দেশের গান, দেশের সিনেমাকেই প্রমোট করি। ও হ্যাঁ, ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে আনন্দ আলোর মতো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার ঝলমলে ঈদ সংখ্যাও। কাজেই প্রিয় পাঠক, প্রিয় বন্ধু এই ঈদে সঙ্গে থাকুক প্রিয় পত্রিকার ঝলমলে ঈদ সংখ্যা, ডাইনিং টেবিলে থাকুক প্রিয় খাবার, ড্রয়িং রুমে চলুক দেশেরই কোনো টিভি চ্যানেল। সিনেমা হলে গিয়ে সবাই ভিড় করে দেশের সিনেমা দেখি। আসুন না দেশকে ভালোবেসে এবার একটু বদলে যাই।
প্রিয় পাঠক, পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা নিন। ঈদ মোবারক।