নির্বাচন আসে, নির্বাচন চলেও যায়। নেতা-নেত্রীরা নির্বাচিত হন। কাজের কাজ কিছুটা হয়, আবার কিছুই হয় না। শেষ পর্যন্ত আলোচনায়ও থাকে না কিছুই। কিন্তু এবারের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের মতো এত আলোচনা-সমালোচনা বোধকরি অতীতে আর হয়নি। এবারই প্রথম শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। একজন পরাজিত সভাপতি পদপ্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরায় ভোট গণনার পর তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এক্ষেত্রে সভাপতি পদে বিজয়ী প্রার্থীর কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পুনরায় ভোট গণনায় সদস্যপদে একজন পরাজিত প্রার্থী নতুন করে বিজয়ী হয়েছেন। ফলে ইতিপূর্বে সদস্যপদে বিজয়ী একজন প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ভোট গণনার সময় রাত দুপুরে ভোট গণনা কেন্দ্রে এসেছিলেন সমিতির সাবেক সভাপতি সুপারস্টার শাকিব খান। অভিযোগ উঠেছে তিনি নাকি মদ্যপ ছিলেন। তাকে অনেকটা জোর করেই ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় শাকিবের ওপর একদল বহিরাগত হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। শাকিব খান স্বয়ং এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচন পরবর্তী পরিবেশ খুব একটা সুখকর নয়। যদিও নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে আব্রাও দাবি করেছে নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। ক্যালকুলেটরে ভোটের ফলাফল যোগ করার সময় কিছু ত্রæটি হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষমা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে হ্যাঁ নির্বাচন পরবর্তী পরিবেশ যাই হোক না কেন এবারের নির্বাচনে চিত্র নায়কদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি জনপ্রিয় চিত্র নায়িকাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। চিত্রনায়িকা রোজিনা, অঞ্জনা, মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমা, নাসরিন ও জেসমিন নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিলেন। তারা জয়ীও হয়েছেন। সংখ্যার হিসেবে শিল্পী সমিতির ২১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদের ৭ জন সদস্য নারী। অর্থাৎ সভায় এক তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার বিধান থাকলে পুরুষ সদস্য ছাড়াই নারী সদস্যরা ইচ্ছে করলেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো দেশের জনপ্রিয় নারী অভিনেত্রীদের প্রায় সকলেই এবার শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে এসেছেন। আরো চমকপ্রদ তথ্য হলো নির্বাচনে বিজয়ী ৭ নারীর মধ্যে দুজন পারিবারিক সূত্রে বোন। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও পপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। দুজনই খুলনার মেয়ে। সম্পর্কে দু’জন চাচাত বোন। এবার দুই বোনকে দেখা যাবে বাস্তবে নেত্রীর ভ‚মিকায়।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মিশা সওদাগর আর সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তারা ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ২৫৯ ও ২৭৯। তাদের নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী সভাপতি পদে ওমর সানী ১৫৩ ভোট পেয়েছেন আর অমিত হাসান পেয়েছেন ১৪৫।
নির্বাচিত হওয়ার পর আজ শনিবার সকালে এফডিসিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের বাইরে অনুভূতি ব্যক্ত করেন নতুন সভাপতি মিশা সওদাগর। তিনি বলেন, ‘আগের কমিটি কোনো কাজ করেনি। প্রচুর জঞ্জাল জমা হয়েছে। আমরা তা পরিষ্কার করব। চলচ্চিত্র শিল্পীরা বারবার অবহেলার শিকার হয়েছেন। আমরা এই অবহেলা থেকে তাদের মুক্ত করব। দুস্থ শিল্পীদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠন করব। বিদেশি চলচ্চিত্র আমাদের চলচ্চিত্রকে ক্রমেই গ্রাস করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব। দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে যা যা প্রয়োজন, আমরা তার সবই করব।’
আর সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীরা যাতে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করব।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন নেতৃত্ব
কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হলেন অঞ্জনা (৩২২), আলিরাজ (৩০৩), জেসমিন (৩২৩), নাসরিন (২৬৮), পপি (৩০২), পূর্ণিমা (২৮২), ফেরদৌস (২৬১), মৌসুমী (৩৪৯), রোজিনা (৩৪৪), সুশান্ত (৩৪২) ও সাইমন সাদিক (৩৬১)।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর
আজ শনিবার সকালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর। তিনি জানান, এই কমিটি আগামী ২ বছর দায়িত্ব পালন করবে। এবার ২১টি পদের বিপরীতে ৫৭ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। মোট ভোটার ছিলেন ৬২৪ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫৫৮ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়।
এবার নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছে। প্যানেল তিনটি হলো ওমর সানী-অমিত হাসান, মিশা সওদাগর-জায়েদ খান এবং ড্যানি সিডাক-ইলিয়াস কোবরা। এর মধ্যে ওমর সানী, অমিত হাসান প্যানেল থেকে জয়লাভ করেছেন সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ পদে কমল আর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে জেসমিন, ফেরদৌস, মৌসুমী ও সুশান্ত। ড্যানি সিডাক-ইলিয়াস কোবরা প্যানেল থেকে শুধু কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে জয়লাভ করেছেন নাসরিন। বাকি সবকটি পদেই জয়লাভ করেছেন মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল থেকে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। এবার ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।