রেজানুর রহমান
বারোর বাজনা কথাটা উঠে এলো হঠাৎ করেই। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মাঠে বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের বিশাল সাহিত্য কর্ম নিয়ে ১২ খন্ডে প্রকাশিত ১২টি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান চলছিল। তখনও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত হননি। আলোচক হিসেবে বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক শাহরিয়ার কবীর, বিশিষ্ট লেখক ইমদাদুল হক মিলন, বিশিষ্ট অভিনেতা নির্মাতা আফজাল হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত হয়েছেন।
আমাদের প্রিয় অভিনেতা, নির্মাতা আফজাল হোসেনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কুশল বিনিময় শেষে বললাম এই বৈশাখে আনন্দ আলো ১২ বছর পার করতে যাচ্ছে। আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া ১২টি ঘটনা অথবা স্মৃতি নিয়ে একটা লেখা চাই।
আফজাল হোসেন মৃদু হেসে প্রশ্ন ছুড়লেন- আনন্দ আলোর বারো বছর হয়ে গেল? বলো কি? বাজাও বারোর বাজনা…
কথাটা মনে ধরলো। যে কোনো বিষয়েরই একটা যুৎসই শিরোনাম দরকার। অনেকে বলে নামে কিইবা আসে যায়। কর্মই আসল। বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। তবুও নামের পেছনেই ছোটে সবাই। একজন কথাসাহিত্যিক হয়তো নতুন উপন্যাস লিখছেন। লেখা শেষ। যুতসই নাম খুঁজে পাচ্ছেন না। অস্থির হয়ে ওঠেন তখন। নতুন কবিতা লেখার পর শিরোনামই খুঁজতে থাকেন কবি। পরিবারে নতুন অতিথি এসেছে একটা নতুন নাম চাই। আশেপাশে কত নাম। একটাও পছন্দ নয়। নতুন নাম চাই। আনকমন। যেন লোকে বলে বাহ সুন্দর নাম তো! নামটা পেলেন কোথায়?
বছর শেষে নির্ধারিত অনুষ্ঠান হবে। ব্যানারে একটি শিরোনাম চাই। অনেক প্রতিষ্ঠানে একটি শিরোনামের জন্য একাধিক বৈঠকও হয়। জাতীয় কবিতা পরিষদ প্রতিবছর ফেব্রæয়ারির প্রথম দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে কবিতা উৎসবের আয়োজন করে। প্রত্যেক বছরের উৎসবের নতুন ¯েøাগান থাকে। আসলে ¯েøাগানটাও একটা শিরোনাম। অনেকে নির্ধারিত অনুষ্ঠানে গিয়ে দোটানায় পড়েন। কি বলবেন ভেবে পান না। আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা থাকলে আলোচনা করতে সুবিধা হয়।
আনন্দ আলো ১২ বছর পার করলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ১২ সংখ্যাটিকে নিয়ে কাজ করবো। সেজন্য যুতসই একটা শিরোনাম খোঁজা হচ্ছিল। আফজাল হোসেন কথাচ্ছলে নিমিষেই শিরোনামের খোঁজ দিলেন। বারোর বাজনা। শিরোনামটা মনে ধরলো। আনন্দ আলোর ১২ বছর অর্থাৎ এই যুগপূর্তি সংখ্যায় অনেকেই বারোর বাজনা বাজিয়েছেন। আনন্দ আলোর নিজের বারোর বাজনাটা কেমন? বাজাও… বাজাও বন্ধু বারোর বাজনা বাজাও…
কত ঘটনা। স্মৃতির পাতায় উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। এ বলে আমার কথা বলো ও বলে আমার কথা বলো… স্মৃতিরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছে। অনেক স্মৃতি বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেÑ এই যে আমি যেন বাদ না পড়ি। অনেক স্মৃতি, উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়তো বাদ পড়ে যাবে। অসংখ্য স্মৃতিময় ঘটনা থেকে বারোকে বেছে নেয়া বেশ মুশকিল। তবুও বলি…
আজ থেকে ১২ বছর আগে পহেলা বৈশাখের আনন্দ মুখর দিনে রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহাসিক বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ‘আনন্দ আলো’ নামে একটি নতুন পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। পৃথিবীর প্রথম বাংলা ডিজিটাল টিভি চ্যানেল, চ্যানেল আই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করায় শুধু প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ৬টি মহাদেশে একযোগে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলো বর্ণিল আলো ছড়িয়ে যায়। আমাদের ধারণা এই উপমহাদেশে কোনো পত্রিকার এমন অভিনব উদ্বোধন আর ঘটেনি। এক যোগে গোটা পৃথিবীতে আনন্দ আলোর বর্ণিল আলো ছড়ানোর এই শুভ উদ্যোগ নিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনন্দ আলোর সম্পাদকমÐলীর সভাপতি ফরিদুর রেজা সাগর। আনন্দ আলো পরিবারের প্রধান তিনি। অনেক সময় আনুষ্ঠানিকতারও প্রয়োজন হয়। সন্তানদেরও উচিত পরিবারে যারা নেতৃত্ব দেন তাদেরকে থ্যাংকস জানানো। বলা উচিত উই লাভ ইউ…। যুগ পূর্তির এই শুভক্ষণে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ফরিদুর রেজা সাগর, আবদুর রশিদ মজুমদার, জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, মুকিত মজুমদার বাবু, শাইখ সিরাজ, এনায়েত হোসেন সিরাজ, ইবনে হাসান খান সহ আনন্দ আলো পরিবারের সকল অভিভাবকদের প্রতি। ভালোবাসি, ভালোবাসি… ভালোবাসি…
আসলে এই ভালোবাসার আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই মূলত: আনন্দ আলোর জন্ম। আনন্দ আলো শুরু থেকেই পরিবার ও বন্ধুর কথা বলে আসছে। দুটি ক্ষেত্রেই ভালোবাসার বন্ধনটাই জরুরি। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির আলোয় ভালোবাসার স্বপ্নময় জগৎ গড়তে উদ্যোগী হই আমরা। সে কারণে নেতিবাচক কোনো দৃষ্টিভঙ্গি আনন্দ আলো মোটেই গুরুত্ব দেয়নি। গত ১২ বছরে ইতিবাচক খবরের পিছনেই ছুটেছে… এখনও ছুটছে…
আনন্দ আলো যখন বের হলো, ঝলমলে রঙিন একটি নতুন বিনোদন পত্রিকা হাতে পেয়েই দেশের অসংখ্য পাঠক খুশি হলো। প্রশংসার পর প্রশংসাÑ হ্যাঁ, অনেক দিন পর মনের মতো একটি পত্রিকা পেলাম। কিন্তু আমাদের বিনোদন জগতের অনেকেই একটু যেন সন্দিহান হয়ে উঠলেন। বিষয় বৈচিত্র্যে ঠাসা ঝলমলে এক দামি পত্রিকা শেষ পর্যন্ত টিকবে তো! কতজনই তো এলো, আবার চলেও গেল। বিশেষ করে বিনোদন সাংবাদিকতায় জড়িত কারও কারও সন্দেহের তীর বেশ তীক্ষè। রগরগে ছবি নাই, তারকার পরকীয়া নিয়ে গাল্পগল্প নাই, হাওয়া থেকে পাওয়া নাই, দেখে নিব জাতীয় কোনো প্রতিবেদন নাই। সবই তো পজিটিভ গল্প। এত এত ভালো কথা কেউ কি শুনতে চাইবে? নাহ! এই পত্রিকা টিকবে না। একটি জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক তো বলেই দিলেন বড় জোর ৬মাস। তারপর আনন্দ আলোর টিকিটিও দেখা যাবে না। ৬মাস, ৬বছর পেরিয়ে যুগ অতিক্রম করলো আনন্দ আলো। এটা সম্ভব হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আনন্দ আলো হাজার হাজার পাঠক বন্ধুর কল্যাণে। অবশ্য আনন্দ আলোয় যারা বিজ্ঞাপন দেন তাদের ভ‚মিকার কথাও বিশেষ ভাবে স্মরণযোগ্য।
গত বারো বছরে আনন্দ আলো অর্জন কি? দেশের শিক্ষা সংস্কৃতির ওপর কতটুকু আলো ফেলতে পেরেছে? এর উত্তর অবশ্য ভবিষ্যতে গবেষকরাই দিবেন। একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে বলতে পারি দেশের সংস্কৃতি জগতে সম্ভাবনার আলো ফেলতে পেরেছে আনন্দ আলো। শুরু থেকেই পত্রিকাটিতে বিদেশি সংস্কৃতি, বিদেশি তারকার ব্যাপারে কোনোই গুরুত্ব ছিল না। আনন্দ আলো হবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। আনন্দ আলো দেশের তারকার কথা বলবে। দেশের সংস্কৃতির জন্যই আলো ফেলবে। উদ্দেশ্যটা এমনই ছিল। চরম প্রতিক‚লতার মধ্যেও আনন্দ আলো এই লক্ষ্য থেকে মোটেই বিচ্যুত হয়নি। ১২ বছরের প্রতিটি সংখ্যায় দেশের তারকা, দেশের বিনোদন জগৎ, দেশের সিনেমা, দেশের সংগীত, নাটক, খেলাধুলার খবর, প্রতিবেদনই গুরুত্ব পেয়েছে। ঈদ উৎসব, বৈশাখী উৎসবসহ বিশেষ সংখ্যাগুলোতে অনেকেই পাশের দেশের তারকা লেখকদের ওপর ভরসা করেন। তাদের গল্প, কবিতা, উপন্যাস ছাপেন। পাশের দেশের অখ্যাত কোনো তারকারও বড় বড় খবর প্রকাশ হয় এদেশে অনেক পত্রিকায়। এই পরিস্থিতিতেও সর্বদা দেশের প্রতিই অনড় এবং অবিচল আস্থা রেখে চলেছে আনন্দ আলো। এজন্য অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলাও করতে হচ্ছে আনন্দ আলোকে। অনেকে বলছেন ফেসবুক, ইউটিউব সংস্কৃতির দোর্দÐ দাপটের এই যুগে আনন্দ আলোর সাংবাদিকতার নীতিমালায় বোধকরি একটা পরিবর্তন দরকার। শুধু দেশ নিয়ে থাকলে হবে না। বিদেশেও তাকাতে হবে।
আনন্দ আলো নিজেকে এভাবে বদলাবে কি না তারও একটা সিদ্ধান্ত জরুরি। এক্ষেত্রে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার ছোট্ট একটি বক্তব্য আছে। পৃথিবী এখন গেøাবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। আনন্দ আলো না বললেও অন্যরা সবাই যতটা না দেশের কথা বলে তার চেয়ে বেশি উচ্চকিত বিদেশের প্রতি। দেশের প্রায় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিদিন একপাতা বিনোদন প্রকাশ হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অনেক পত্রিকায় বিনোদন পাতার বড় অংশ জুড়ে থাকে বিদেশি তারকার খবর। বিশেষ করে কলকাতার অখ্যাত তারকার খবরও এই দেশের বড় বড় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়। অথচ আমাদের দেশের বড় বড় তারকা কলকাতায় গেলে ছোট খবরও হয় না। এই চর্চার ভবিষ্যৎ কি? আমাদের সিনেমার দুর্দিন চলছে। এক সময় আমরাই ছিলাম বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে মর্যাদাবান। এখন সেই মর্যাদা নাই। যৌথ প্রযোজনার নামে একটা অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে আমাদের সিনেমাকে। টিভি নাটক ছিল এক সময় দারুণ অহংকারের বিষয়। বর্তমানে সেই অহংকারও নেই বললে চলে। সংগীতও ডুবতে বসেছে। এমন দুর্দিনে দেশের পক্ষেই তো আমাদের আরও কার্যকর ভ‚মিকা রাখা জরুরি। অথচ পরিস্থিতি তা বলে না। পনের দিনের একটি বিনোদন পত্রিকা হিসেবে এক্ষেত্রে আনন্দ আলোর ভ‚মিকা কি হতে পারে সেটাই প্রশ্ন।
আনন্দ আলোর পুরনো ফাইল ঘাটছিলাম। একটি সংখ্যায় দেখলাম সুর স¤্রাজ্ঞী মমতাজকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। জয়মÐপে মমতাজের বাড়ি গিয়েছিল আনন্দ আলোর একটি টিম। মমতাজ তখনও আজকের মমতাজ হয়ে ওঠেননি। আনন্দ আলো তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আজ শিল্পী মমতাজের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা দেখে আমরা আনন্দ আলো পরিবার বেশ খুশি।
ফারজানা ব্রাউনিয়া বাংলাদেশে এখন একটি ব্যাপক পরিচিত নাম। কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে স্বর্ণকিশোরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কাজ করে চলেছেন তিনি। আনন্দ আলোর একটি সংখ্যায় এই ব্রাউনিয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। রাইজিং স্টার শিরোনামে এই প্রতিবেদনে আমরা ব্রাউনিয়াকে ঘিরে অনেক স্বপ্নের কথা বলেছিলাম। আজ বোধকরি বলতে পারি আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
তরুণদের ব্যাপারে সর্বদাই আন্তরিক ভূমিকা পালন করেছে আনন্দ আলো। ২০০৮ সালে আনন্দ আলোর একটি সংখ্যায় আমাদের টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের ৭ তুর্কি তরুণকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। মাসুদ সেজান, রেদওয়ান রনি, ইসতিয়াক আহমেদ রুমেল, মেজবাউর রহমান সুমন, মাসুদ হাসান উজ্জল, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, আহমেদ শাহাবুদ্দীন এর ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল অরুণ পথের তরুণ যাত্রী। আনন্দ আলোয় আমরা এই তরুণ তুর্কিদের নিয়ে ব্যাপক প্রত্যাশার কথা বলেছিলাম। আজ সেই প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। ৭ তরুণের সবাই এখন আমাদের মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
গত বারো বছরে অসংখ্য তারকার জীবনের গল্প বলেছি আমরা। শুধু অভিনয় জগতের তারকা নয়, অভিনয়ের বাইরেও যারা সমাজের জন্য কিছু না কিছু ভূমিকা রাখছেন তারাই আনন্দ আলোর বিবেচনায় বড় তারকা। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছিল ২০০৬ সালে আনন্দ আলোর একটি সংখ্যায়। শিরোনাম ছিল ‘সবার উপরে আছেন আমার মা’। মায়ের প্রতি তার এই শ্রদ্ধাবোধ আনন্দ আলো পরিবারকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে।
সাবেক বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী একজন বাঙালি। রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে আনন্দ আলোয় একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এসময় আনন্দ আলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। এই স্মৃতি মনে পড়লে মনে আনন্দ জাগে। বিশ্বাস ফিরে পাই আনন্দ আলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে।
২০০৬ সালে নায়করাজ রাজ্জাক ও তার প্রিয়তমা স্ত্রী ল²ীকে ঘিরে আনন্দ আলোয় একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। জীবনে প্রথম কোনো পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ল²ী। সেদিন নায়করাজ প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রশংসা করে বলেছিলেন যে কোনো সফল মানুষের জীবনে কারও না কারও আত্মত্যাগ থাকে। আমার জীবনে সেই ত্যাগী মানুষ হলো ল²ী। সংসারে সুখে থাকার জন্য পরিকল্পনা দরকার। আমাদের দুজনের পরিকল্পনা ছিল, সংসার নিয়ে, সন্তান নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে… তাই বোধকরি সফল হয়েছি।
২০০৫ সালের ১৬ জুন কবি মহাদেব সাহা আনন্দ আলোয় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সবাই মনের অজানাকে খুঁজে বেড়ায়। কথাটির গুরুত্ব অনেক। আমরা সবাই প্রতিদিন মনের অজানাকে খুঁজে বেড়াই। আনন্দ আলোর ক্ষেত্রেও তাই। শুরুর দিন থেকে আমরা নতুন কিছু খুঁজতে চেষ্টা করেছি। সম্ভাবনাময় অথচ নতুন কিছু খোঁজার সংগ্রামে আমরা ছিলাম অবিচল। কখনো যে হতাশ হইনি তা নয়। কিন্তু হতাশাকে গুরুত্ব দেইনি। প্রশ্ন উঠতে পারে আনন্দ আলো কি একটি সফল পত্রিকা? এর উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সহজ নয়। তবে এটুকু বলতে পারি সফলতার পথে হাঁটতে এতটুকু শৈথিল্য ছিল না আমাদের। একটা গল্প বলি। আনন্দ আলোয় এই গল্প এর আগেও ছাপা হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মেধাবী ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলো। এবার সে কলেজে ভর্তি হবে। গ্রামের এক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি খবরটা শুনে ভ্রæ কুচকে বললেন, ঐ ম্যাট্রিক পর্যন্ত শেষ। আর পারবে না। ছেলেটি কলেজে ভর্তি হলো। একদিন ইন্টারমিডিয়েটেও ভালো রেজাল্ট করলো। ধর্নাঢ্য ব্যক্তি এবার কৌতুকের ঢঙে বললেন, কলেজ পাস করছে এবার আর সামনে যাইতে পারবে না। বলাবাহুল্য ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেল। এবার সেই ব্যক্তি বলল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইতে পারছে…তবে পড়া শেষ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা অতো সোজা না।
একদিন ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিল। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করলো।
আনন্দ আলো কিছু সামাজিক কর্তব্যও পালন করে আসছে। কয়েকজন দুস্থ শিল্পী আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে নিয়মিত মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। প্রয়াত চিত্রনায়িকা কবিতা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
মাসের তৃতীয় শুক্রবার আনন্দ আলো নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা পরিচালনা করে। চ্যানেল আই-এর ছাদ বারান্দায় এই আড্ডায় দেশের কবি, লেখকরা উপস্থিত থাকেন।
গত ১০ বছর ধরে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলায় বইমেলা প্রতিদিন নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে আসছে আনন্দ আলো। বইমেলার ইতিহাসে এটি একটি নতুন সংযোজন। পত্রিকাটিকে ঘিরে প্রতিবছরই প্রদান করা হচ্ছে সিটি ব্যাংক এনএ’র সৌজন্যে সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার। গত ১০ বছরে দেশের নবীন প্রবীণ ৭০ জনেরও বেশি কবি, সাহিত্যিক এই পুরস্কার পেয়েছেন। বিগত দুই বছর ধরে এসিআই-এর সৌজন্যে চালু হয়েছে এসিআই ফানকেক আনন্দ আলো শিশু সাহিত্য পুরস্কার নামে আরো একটি সাহিত্য পুরস্কার।
পত্রিকার ঈদ সংখ্যা প্রকাশের প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়েছে আনন্দ আলো। একব্যাগ আনন্দ একব্যাগ আলো শিরোনামের ঈদ সংখ্যা ও জন্মদিন সংখ্যায় মূল পত্রিকার সঙ্গে থাকে নানা বিষয়ের ওপর প্রকাশিত একাধিক ছোট ছোট পত্রিকা। সম্ভবত এই উপমহাদেশে এত বর্ণাঢ্য আয়োজনে পত্রিকা প্রকাশের এই ধারণা আনন্দ আলোরই প্রথম।
আনন্দ আলোয় ‘সম্পাদকের লেখা’ শিরোনামে একটি বিভাগ চালু ছিল। পাঠকের বেশ পছন্দের বিভাগ। সোবহান সাহেব নামে একটি চরিত্র এই লেখায় গভীরভাবে বিচরণ করতেন। ‘সম্পাদকের লেখা’ আনন্দ আলোয় এখন প্রকাশ হয় না। সম্পাদক হিসেবে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত দেয়া প্রয়োজন। সোবহান সাহেব চরিত্রটি আসলে আমার বাবার চরিত্র। তিনি বেঁচে থাকতে আমি এই চরিত্রটি সৃষ্টি করি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর কেন যেন আর চরিত্রটিকে নিয়ে এগুতে পারলাম না। একাধিকবার চেষ্টা করেছি নতুনভাবে চরিত্রটিকে দাঁড় করাতে পারিনি। এই অক্ষমতার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা চাই। চেষ্টায় আছি ভবিষ্যতে সোবহান সাহেবকে নিয়ে সামনে আরেকবার এগিয়ে যাবার।
এগিয়ে যাওয়া মানে কী? কিছু অর্জন করা এইতো? ফেসবুক, ইন্টারনেট, ইউটিউব-এর আধুনিক এই সময়ে ছাপা অক্ষরের পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকার সৃষ্টি হয়েছে। বাঘা বাঘা দৈনিক পত্রিকা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। সেখানে ১৫ দিনের আনন্দ আলোর ভবিষ্যৎ কি? কঠিন প্রশ্ন। কিন্তু সহজ উত্তরও আছে। সহজ উত্তর হলোÑ পাঠকের ভালোবাসা। পাঠককে সঙ্গে রাখতে পারলেই সামনে এগুনো সম্ভব।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য আপনাদের পরামর্শ জরুরি। নারায়ণগঞ্জে আনন্দ আলোর একজন একনিষ্ঠ পাঠক আছেন। আনন্দ আলোর, জন্মলগ্ন থেকে সে আনন্দ আলো পড়ে। ১২ বছরের সবকটি সংখ্যা তার সংগ্রহে আছে। বারো বছর আগে সে ছিল কিশোর। এখন টগবগে তরুণ। এইতো সেদিন আনন্দ আলোয় এসে হৈচৈ ফেলে দিল। আনন্দ আলোর জন্মদিন পহেলা বৈশাখে সে কিছু একটা করতে চায়। তার উচ্ছ¡াস আর আনন্দ দেখে অভিভূত আমরা সবাই। সবার চোখে আনন্দাশ্রæ। প্রিয় পাঠক, এভাবেই আপনাদেরকে পাশে চাই।
শেষে আনন্দ আলোর আরেকজন প্রিয় সুহৃদ, প্রিয় বন্ধুর কথা বলি। তিনি হলেন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম। আনন্দ আলোর যাত্রা পথে তিনি বিরামহীন পরামর্শ সাহস ও সহযোগিতা করে চলেছেন। অনেক কৃতজ্ঞতা তার প্রতি।
ভালো থাকবেন সবাই। আনন্দ আলোর জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিন।