ভালোবাসা এমনই হয়। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর নতুন ছবি নিমার্ণ করেছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী, কোরিওগ্রাফার, নির্মাতা তানিয়া আহমেদ। এটি তানিয়া আহমেদের প্রথম ছবি। ছবির শতকরা ৮৫ ভাগ শুটিং হয়েছে লন্ডনে। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিশিষ্ট অভিনেতা তারেক আনাম খান, বিদ্যা সিনহা মিম, ইরফান সাজ্জাদ, মীর সাব্বির, মিশু সাব্বির সহ লন্ডনের কয়েকজন স্থানীয় অভিনেতা। ২৭ জানুয়ারি ঢাকা সহ সারাদশে ছবিটি মুক্তি পাবে। এই ছবির মিডিয়া পার্টনার চ্যানেল আই, ক্যাম্পেইন পার্টনার হাভাস মিডিয়া, প্রিন্টিং পার্টনার আনন্দ আলো ও সাপ্তাহিক। উল্লেখ্য, এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ১০৫ তম ছবি। ছবিটির পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।
রেজানুর রহমান: এই গল্পের অনেক ডালপালা। ভালোবাসার গল্প তো! ডালপালা থাকাই স্বাভাবিক। ডালপালা অর্থাৎ চড়াই উৎরাই না থাকলে ভালোবাসা ঠিক জমে না। তো, গল্পটা কীভাবে শুরু করা যায়? শুরুটা সহজ ভাবে হলেই বোধকরি বোঝার ব্যাপারটাও সহজ হবে। কিন্তু কথায় আছে ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’। তবুও চেষ্টা করতে দোষ কী?
গল্পটা চ্যানেল আইকে ঘিরে। প্রায় প্রতিটি ঈদে বিদেশে শুটিং করা বিশেষ টেলিফিল্ম চ্যানেল আইতে প্রচার হয়। এক ঈদে অভিনেত্রী, নির্মাতা তানিয়া আহমেদ ঈদের একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করবেন বলে প্রসৱাবনা নিয়ে গিয়েছিলেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের কাছে। তখনই ঘটলো আনন্দময় এক প্রেরণাদায়ী ঘটনা। প্রসৱাবনায় টেলিফিল্মটির শুটিং বিদেশে করা হবে বলে উল্লেখ আছে। ফরিদুর রেজা সাগর প্রস্তাবনার কাগজটিতে একবার মাত্র চোখ বুলিয়ে ‘টেলিফিল্ম’-এর জায়গায় ‘টেলি’ শব্দটি কেটে দিয়ে তানিয়াকে বললেন- যাও ফিল্ম বানাও…
তানিয়া মোটেও এতটা আশা করেন নি। যদিও তানিয়ার আজকের অবস্থানের পিছনে চ্যানেল আই এর অনেক অবদান আছে। সে কথা গর্ব ভরে স্বীকার করেনও তিনি। তাই বলে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। চাইলাম টেলিফিল্ম। সেটা হয় গেল ফিল্ম। মনের গহীনে তানিয়া এই স্বপ্নটা পুষে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। সেটা নাটক নির্মাণ করতে এসেই শুরু হয়। বড় পর্দায় ছবি বানানোর স্বপ্ন। সেটা এভাবে সত্যি হবে। ছবি বানানোর স্বপ্ন এত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নিবে তা যেন কল্পনারও বাইরে ছিল।
ফরিদুর রেজা সাগরের দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন তানিয়া। যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেনা। এইমাত্র যা ঘটছে তা কি সত্যি! বুঝতে পেরে ফরিদুর রেজা সাগর আবারও একই কথা বললেন। টেলিফিল্ম না। এবার ফিল্ম বানাও। আমরা তোমার সঙ্গে আছি।
ভালোবাসার মধুর গল্পটা সেদিন এভাবেই শুরু হয়েছিল। ছবি বানানোর স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। অভিভূত তানিয়া আহমেদ তার টীমের সদস্যদের নিয়ে বসলেন। ছবি বানানোতো চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার। ছবির শুটিং হবে বিদেশে অর্থাৎ লন্ডনে। সে জন্য প্রস্তুতিটা আরও জোরদার হওয়া উচিত। হ্যাঁ, জোরদার প্রস্তুতিই শুরু হয়ে গেল। নাওয়া খাওয়া ভুলে ছবি নির্মানের নানান কাজে তানিয়ার ব্যস্ততা বেড়ে গেল। নিজেকে প্রায়শই প্রশ্ন করতেন তানিয়া- এই যে তুমি সিনেমা বানাচ্ছ, তুমি কি প্রস্তুত? তোমার সিনেমাটি কিন্তু মানুষ আগ্রহ ভরে হলে দেখতে আসবে। কাজেই যা করবে মন দিয়ে করবে।
সময়ের প্রয়োজনে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণ ধারায় যুক্ত হন তানিয়া আহমেদ। নাটক, টেলিফিল্ম নির্মাণ করে ব্যাপক আলোচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্র নির্মাণ ধারায় যুক্ত হয়েছেন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর ১০৫তম চলচ্চিত্রের পরিচালক তিনি।
শীতের এক সকালে আনন্দ আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন তানিয়া আহমেদ। সেই পরিচিত হাসি ভরা মুখে কথার জাদুতে আনন্দ ছড়িয়ে দিলেন আনন্দ আলোয়। জীবনে প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সিনেমা মুক্তির আগে কত যে কাজ। সিনেমার প্রমো তৈরি করা, পোস্টার ভাবনা, প্রচার প্রস্তুতি, সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটিকে সরব করে তোলার নানান আইডিয়া তার মাথায়।
মুখে হাসি ছড়িয়েই ছবি নির্মাণের প্রেরণাদায়ী সেই গল্পটা বললেন তানিয়া আহমেদ।
আসলে চ্যানেল আইকে আমি আমার পরিবারের অংশ মনে করি। জীবনে যা কিছু পেয়েছি তার পিছনে চ্যানেল আই-এর অনেক অবদান। ছবি নির্মাণের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সেটা যে এত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ নিবে তা কখনই ভাবিনি। এজন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, বিশেষ করে আমার অভিভাবক ফরিদুর রেজা সাগর, ইবনে হাসান খান-এর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ। আমার সকল কাজেই তাদের অণুপ্রেরণা থাকে। সাগর ভাইয়ের কাছে আমি একটি টেলিফিল্ম বানানোর প্রসৱাব করেছিলাম। তিনি ‘টেলি’ শব্দটি কেটে দিয়ে বললেন- যাও ফিল্ম বানাও। এই যে অনুপ্রেরণা আজকাল ক’জন দেয়?
আমাদের ছবির নাম ‘ভালোবাসা এমনই হয়’। ছবির নামের সঙ্গে অনেক ঘটনার মিল রয়েছে। শুরুতে ফরিদুর রেজা সাগরের কথা বললাম। সত্যি তো একেই বলে ভালোবাসা। আসলে ভালোবাসা এমনই হয়!
আমাদের ছবির ৮৫ ভাগ শুটিং হয়েছে লন্ডনে। শীতার্ত আবহাওয়ায় লন্ডনের বিভিন্ন লোকেশনে ছবির শুটিং হয়েছে। শীতে জবুথবু অবস্থা। তবুও ছবির শিল্পীরা ছিলেন দারুণ আন্তরিক। একটা ঘটনার কথা বলি। আমাদের ছবির অন্যতম অভিনেতা তারেক আনাম খান। বড়ই উদার মনের মানুষ। একটি দৃশ্যে অনেকক্ষণ পানিতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে তাকে। আমরা যারা বাইরে শুটিং করছি তাদেরই শীতে কাহিল অবস্থা। অথচ তারেক ভাই কি নির্বিকার মানুষ। শীতে কাতর তিনি অথচ একটি বারও তাড়াহুড়া করছেন না। বরং কাজটা যাতে ভালো করে করা যায় সে ব্যাপারেই সাহস দিচ্ছিলেন।
আমি প্রায়শই অভিযোগ শুনি বিদেশে কাজ করতে গেলে শিল্পীদের নিয়ে নানান সমস্যা হয়। অথচ আমাদের টিমে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং শিল্পীরা তাদের অভিনয়ের বাইরে নানা কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের ছবির অন্যতম অভিনেতা মিশু সাব্বিরের কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাই। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি সে আমাকে ডিরেকটরিয়াল নানা কাজে সহযোগিতা করেছে।
পরিচিত অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে তানিয়া আমাদের দেশে ছবির বাজার ভালো না। তুমি একটি নতুন ছবি বানিয়েছো। তোমার ছবিটি কেন দর্শক দেখবে? আমি তখন তাদের বলি- ‘আমাদের দেশে ছবির বাজার ভালো নয়’ এই কথার সঙ্গে আমি একমত নই। ছবির বাজার ঠিকই আছে। আমরা আসলে সময়কে বিবেচনায় নিয়ে দর্শকের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী ভালো ছবি বানাতে পারছি না। একটি ছবিতে প্রথমে চাই ভালো গল্প। আমাদের ছবিতে ভালোবাসার একটি মিষ্টি গল্প আছে। তারপর আসে পাত্র-পাত্রীদের অভিনয় প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রেও দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি আমাদের ছবির প্রতিটি পাত্র-পাত্রী ভালো অভিনয় করেছেন। এরপর আসে লোকেশন। আমাদের ছবিতে লন্ডনের অনেক মনোরম জায়গা দেখতে পারেন দর্শক। তাছাড়া ছবিতে ক্যামেরার কাজও অনেক ভালো হয়েছে। ছবির গানগুলো চমৎকার। দর্শক ছবিটি দেখে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।
তানিয়া আহমেদের প্রতিটি কথায় যেন সাফল্যের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল। তার ছবির নাম- ভালোবাসা এমনই হয়। তিনি যেন ভালোবাসার কথাই শুনাচ্ছিলেন বারবার। তার ছবির শিল্পীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্পই বলছিলেন তিনি। কখনও তারিক আনাম খানকে নিয়ে, কখনও মীম আর ইরফান সাজ্জাদকে নিয়ে। আবার কখনও মীর সাব্বির ও মিশু সাব্বিরকে নিয়ে। আবার কখনও ছবির ক্যামেরা ম্যানকে নিয়ে। ছবির সঙ্গীত পরিচালক এস আই টুটুলের কথাও বলছিলেন বারবার। বলছিলেন- ওরা সকলে আমার জানের জান। কলিজার টুকরা। ছবিটি মুক্তি পেলে দেখবেন ওরা কতটা ভালো করেছেন।
যে ছবিতে আছে এত এত ভালোবাসার গল্প তা দেখার জন্য যেন তর সইছে না।
প্রিয় পাঠক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত তানিয়া আহমেদের প্রথম ছবি ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ সারাদেশে মুক্তি পাবে ২৭ জানুয়ারি ২০১৭। কাজেই সময় থাকতেই সিদ্ধান্ত নিন ছবিটি কবে দেখবেন। ও হ্যাঁ পরিবারের সবাই যেন সঙ্গে তাঁকে। আপনাদের প্রিয় তানিয়া আহমেদ ছবিটি কেমন বানিয়েছেন তা দেখার জন্যও তো হলে যাবেন নিশ্চয়ই? পরিচালক তানিয়া আহমেদের জন্য আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে অনেক শুভ কামনা।
প্রিয় দর্শক ছবিটি দেখুন!
-তারেক আনাম খান, অভিনেতা
আবেগে কেঁদে ফেললেন মিশু সাব্বির
ছবিটির জন্য অনেক কষ্ট করেছি
-ইরফান সাজ্জাদ, অভিনেতা
আমি উদগ্রীব হয়ে আছি ছবিটির জন্য
-বিদ্যা সিনহা মিম, অভিনেত্রী
ভালোবাসা এমনই হয় ছবিটির জন্য আমরা অনেক কষ্ট করেছি। লন্ডনে কঠিন শীতের মধ্যে শুটিং করতে হয়েছে। ছবির গল্পটি বেশ চমৎকার। ছবিটির ব্যাপারে আমি খুব এক্সসাইটেড। সে জন্য তানিয়া আপুকে মাঝে মাঝেই ফোন করে বলতাম- আপু আমাদের ছবি কবে মুক্তি পাবে! অবশেষে ২৭ জানুয়ারি ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। আমি খুউব উদগ্রীব হয়ে আছি ছবিটি দেখার জন্য। সবাই ছবিটি দেখবেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করবেন।