Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ওরা ভাই-বোনের চেয়ে বেশি ভালো বন্ধু?

গানের জুটি হিসেবে ভাই-বোনকে খুব কমই দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রম রাজা বশীর ও হুমায়রা বশীর। দেশের কিংবদন্তী তুল্য সঙ্গীত শিল্পী বশীর আহমেদ এবং মীনা বশীরের আদরের সন্তান তারা। সঙ্গীতে বাবা-মায়ের দুর্দান্ত তারকা খ্যাতি দেখেছেন। বাবা-মা জুটি বেঁধে গান গাইতেন। দেশের গান, প্রেমের গান, আধুনিক সবই তাদের কণ্ঠে ঝড় তুলেছে। এখনও দূরে কোথাও গান-বাজলেও বশীর আহমেদ ও মীনা বশীরের গানকে সহজেই পৃথক করা যায়। গানের মঝেই জীবন পার করেছেন তারা। রাজা বশীর ও হুমায়রা বশীর দুই ভাই-বোন যখন একত্রে গান করেন তখন সত্যিকার অর্থে মীনা বশীর ও বশীর আহমেদকেই বেশী মনে পড়ে সবার। আজকের প্রজন্ম হয়তো বশীর আহমেদ ও মীনা বশীরকে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ততটা চিনে না। তাই রাজা ও হুমায়রার গান শুনে হয়তো ভাবে বাহ! ভালই গায় তো। রাজা এবং হুমায়রাও অনেক ভালো শিল্পী। বয়সে হুমায়রা বড়। রাজা ছোট। বাবা-মায়ের মতো সঙ্গীতের প্রতি অগাধ আস্থা ও শ্রদ্ধা দুই ভাইবোনের। জুটি বেধে বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া গান গুলোই পরিবেশন করেন তারা। তাদের গান শুনে অনেকেই বশীর আহমেদ ও মীনা বশীরের কথা মনে করিয়ে দেন। যোগ্য বাবা-মায়ের যোগ্য সন্তান তোমরা। শুভ কামনা তোমাদের জন্য। বাবা-মায়ের সঙ্গীত জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে দুই ভাই বোনের। বাবা-মায়ের স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন চালু করেছেন। প্রতি বছর এই ফাউন্ডেশন থেকে দেশবরেন্য শিল্পীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাজা সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সেখানে সঙ্গীত বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। হুমায়রা স্বামী সন্তান নিয়ে দিশেই থাকেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে কে দেশে কে বিদেশে সেটা এখন আর তেমন গুরুত্ব বহন করে না। মন চাইলেই দুই-ভাই বোন ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার সহ নানান মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেন।
সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন রাজা বশীর। এক সকালে চ্যানেল আই এর ‘সকালের গান’ অনুষ্ঠানে দুই ভাই বোন গান গাইলেন। অনুষ্ঠান শেষে আনন্দ আলোর মুখোমুখি হন তারা।
প্রশ্ন: আপনাদের গান শুনলেই মনে হয় বশীর আহমেদ ও মীনা বশীর স্বয়ং গাইছেন। বাবা-মায়ের গান সন্তানেরা যোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরছেন কীভাবে সম্ভব?
হুমায়রা: ছোটবেলা থেকেই আমরা দুই ভাইবোন গানের মাঝেই বড় হয়েছি। গান শিখেছি। বাবা-মায়ের গান যোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরতে পারছি এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না।
রাজা: হুমায়রা যা বলল আমি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেই বলছি বাবা-মায়ের জনপ্রিয়তার তুলনায় আমরা হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমাদের গান শুনে বয়সী মানুষেরা যখন এগিয়ে এসে প্রশংসা করে, মাথায় হাত ছুঁয়ে আশীর্বাদ করে তখন খুউব ভালো লাগে।
প্রশ্ন: আপনাদের ভাই-বোনের সম্পর্ক কেমন?
(প্রশ্ন শুনে দুই ভাই-বোন কে আগে বলবেন তার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিলেন। আমি আগে বলব, আমি আগে বলব… হুমায়রারই জয় হল)
হুমায়রা: আমরা তো শুধু ভাই-বোন না। বন্ধুও বটে। আমরা দু’জন খুউব ভালো বন্ধু। এক অর্থে আমি রাজা বশীরের মা-বাবা দুই জনেরই ভূমিকা পালন করি।
রাজা: হুমায়রা ঠিকই বলেছে। আমরা দুই ভাই বোন অনেক ভালো বন্ধুও বটে। আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকি, হুমায়রা ঢাকায় থাকে। মনেই হয় না আমরা দুই দেশে আছি। মন চাইলে ভিডিও কলে যোগাযোগ করি। গান নিয়েই আমাদের বেশী কথা হয়।
প্রশ্ন: গানের জুটি হিসেবে আপনারা ভাই-বোন ব্যাপক জনপ্রিয়। বাবা-মায়ের প্রেমের গান গুলো সাবলীল ভাবে পরিবেশন করেন কীভাবে?
রাজা: ওই যে বললাম আমরা দুই ভাই-বোন খুব ভালো বন্ধু। কাজেই গান গাওয়ার সময় দু’জন দু’জনকে সহ-শিল্পী হিসেবেই গুরুত্ব দেই।
হুমায়রা: গান আমাদের রক্তে মিশে গেছে। কাজেই গান করার সময় ভাই-বোনের সম্পর্ক গুরুত্ব পায় না। গানই গুরুত্ব পায়। যোগ্যতার সঙ্গে পরিবেশনের ব্যাপারটিই গুরুত্বপুর্ন হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
প্রশ্ন করতেই অভিন্ন সুরে উত্তর দিলেন দুই ভাই বোন। বাবা মায়ের গানের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। নিজেরাও শুদ্ধতার সঙ্গে আজীবন গান গাইতে চাই।
আনন্দ আলো পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা এই ‘মিষ্টি’ ভাইবোনকে। তাদের হাসি মাখা দৃঢ় প্রত্যয়ী মুখই বলে দেয় সঙ্গীতে অনেক সম্ভাবনার পথ তৈরি হয়ে আছে তাদের জন্য।