Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চ্যানেল আই পচিশে উচ্ছ্বাস লাল সবুজে বিশ্বাস

রেজানুর রহমান

পচিশ বছর। খুব কী লম্বা সময়? দেশের একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য অনেক লম্বা সময় তো বটেই। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সম্ভাবনার ২৫ শে পা দিল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারী টেলিভিশন মাধ্যম সবার প্রিয় চ্যানেল আই। যার শ্লোগান হৃদয়ে বাংলাদেশ। প্রবাসেও বাংলাদেশ। চ্যানেল আই গত ২৪ বছরে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ক্ষেত্রে অনন্য স্বকীয়তা অর্জন করেছে। চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেখলে বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে চেনা যায়। আর তাই দেশে-বিদেশে চ্যানেল আই বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। দেশের এই একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেলকে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শক আমার চ্যানেল, আমাদের চ্যানেল মনে করে। গত ২৪ বছরে চ্যানেল আই এই শক্তিই অর্জন করেছে। বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার অনন্য ঠিকানা হয়ে উঠেছে। চ্যানেল আই মানেই বাংলাদেশ। চ্যানেলটির প্রতিদিনের প্রতিটি অনুষ্ঠান সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহকে গুরুত্ব দিয়ে দেশকে অর্থাৎ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে অনেক মায়া ও মমতার সঙ্গে তুলে ধরে। আর তাই চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেশপ্রেমিক সব মানুষের কাছে সমান গুরুত্ব পায়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, রাজনীতি, ব্যবসা বানিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, চলচ্চিত্র, তারুণ্য, সঙ্গীত, সংবাদ পরিবেশন, টক শো, সংবাদপত্রের অনুষ্ঠান, রান্না, রিয়েলিটি শো সহ দেশকে গর্বের সঙ্গে উচ্চকিত করার প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে চ্যানেল আই এর জমজমাট আয়োজন। আর তাই চ্যানেল আই মানেই গর্বিত বাংলাদেশ।
একজন প্রবাসী বাংলাদেশির মন্তব্য চ্যানেল আই এর লোগো এবং হৃদয়ে বাংলাদেশ, প্রবাসেও বাংলাদেশ শ্লোগানটিই আমার অনেক প্রিয়। চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেখলেই প্রবাসে থেকেও প্রিয় মাতৃভূমির স্পর্শ পাই। প্রতিদিন কর্মক্লান্ত সময় পার করে যখন ঘরে ফিরে চ্যানেল আই অন করি অথবা মোবাইল ফোনে চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করি তখন দেশকে কাছে পেয়ে সকল ক্লান্তি ভুলে যাই। সে কারণে প্রবাসে নিজেকে অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগানোর জন্য চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেখি।
দেশের মানুষের মন্তব্যÑ চ্যানেল আই শুধুমাত্র একটি টেলিভিশন চ্যানেল নয়, লাল সবুজের বাংলাদেশের অনন্য অনুপ্রেরণা। কারণ চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান দেখলেই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে প্রতি শ্রদ্ধা, মায়া ও মমতা বাড়ে। আহা! আমার দেশ, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অনেক ভালোবাসি তোমায়…
সময় চলে দারুণ চাঞ্চল্যে। চ্যানেল আই সময়ের স্রোতে যথার্থ পরিণত, কিন্তু শুরুর দিনগুলোর প্রত্যয় আর ভালো কিছু করার অদম্য আগ্রহ থেকে এক তিলও পিছিয়ে পড়েনি। এখনও ‘একটি স্বপ্ন, একটি শপথ, সেই থেকে পথচলা, সবার আগে দেশ বড়, সেই কথাটিই বলা’ সুরেলা এই চেতনাই চ্যানেল আই এর শক্তির মূল ভিত্তি। তাই সময়ের পরিবর্তনে গণমাধ্যম যখন বহুমাতৃক ও নাগরিক চিন্তাকে নিজের মতো করে প্রকাশ করার সমৃদ্ধ সুবিধার দিকে এগিয়েছে, তখনও চ্যানেল আই তার স্বাতন্ত্রের উজ্জল দ্বীপ্তি ছড়াচ্ছে। টেলিভিশন গণমাধ্যম পৃথিবীতে যে দায়বদ্ধতা ও জনসমষ্টির ইচ্ছে পুরণের তাগিদ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল, চ্যানেল আই সময়ের আবর্তন ও আধুনিকতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্যয়ের সেই জায়গাটিতেই রয়েছে। এর বাইরে সকল গণআকাঙ্খার সঙ্গেও থেকেছে পরম আন্তরিকতায়।
চ্যানেল আই বরাবরই বিশ্বাস করে, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহস যোগানো গণমাধ্যমের অনেক বড় দায়িত্ব। সেই জায়গাতেই কাজ করে চলেছে একই গতিতে। মানুষের প্রতি একই ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। চ্যানেল আই প্রাঙ্গন। চেতনা চত্বর। রোদেলা সকালে ছাতিম জামরুলের অসাধারণ ছায়া। নাগরিক প্রত্যাশার রুচিশীল সব জায়গাগুলো স্পর্শ করেও চ্যানেল আই শস্য শ্যামল সবুজ বাংলাদেশের অকৃত্রিম শোভাকেই লালন করে। তাই চ্যানেল আই প্রাঙ্গন হয়ে ওঠে দেশের প্রতিটি মানুষের আপনক্ষেত্র।
চ্যানেল আই তার জন্মদিনে বিশ্বব্যাপী বাঙালি দর্শকদের হৃদয়ে পৌছে দিতে চায় একই উচ্ছ্বাস। পৌছে দিতে চায় জন্মদিনের আনন্দ আয়োজন।

চ্যানেল আই সংবাদের বাইশ বছর

এবার তেইশ বছরে পদার্পণ করছে চ্যানেল আই সংবাদ। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর চ্যানেল আই’র তৃতীয় বর্ষে পদার্পণের শুভমুহূর্তে যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই সংবাদ। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বহু ঘটনা, সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন প্রতিকূল ও সংকটময় পরিস্থিতি এসেছে। সবক্ষেত্রেই সঠিক ও তাৎক্ষণিক তথ্যের জন্য দর্শকদের সবচেয়ে কাছাকাছি থেকেছে চ্যানেল আই। সবচেয়ে দ্রুত পূরণ করেছে দর্শকদের প্রতিমুহূর্তের তথ্যের ক্ষুধা। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন লাইভ সম্প্রচার এবং এ সংক্রান্ত পেশাদারিত্ব ও কারিগরী উৎকর্ষে চ্যানেল আই সংবাদ বস্তুনিষ্ঠতায় এক স্বতন্ত্র অবস্থান গড়েছে। সংবাদ পরিবেশনে চ্যানেল আই বরাবরই থেকেছে গণমুখি অবস্থানে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ সাধনে চ্যানেল আই রাজনৈতিক সংগঠন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশী হয়ে কাজ করেছে। দেশে জবাবদিহিতা, মত প্রকাশ ও গণতন্ত্র অনুশীলনের ক্ষেত্রে চ্যানেল আই এর চব্বিশ বছরের কর্মসাধনার এক বড় ধরণের যোগাযোগে রয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যানেল আই সংবাদ ও বিভিন্ন টক শোর অবদান অনস্বীকার্য। চ্যানেল আই-ই প্রথম মত বিরোধীতা ও চিন্তার অনৈক্যগুলো সামনাসামনি বসে আলোচনার পথ রচনা করে। একইভাবে চ্যানেল আই সংবাদ জনগণের আত্মবিশ্বাস ও গণতন্ত্র চর্চার পথকে সুগম করতে নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে।
চ্যানেল আই-ই দেশে প্রথম প্রতিদিনের সংবাদপত্রের খবর নিয়ে ‘সংবাদপত্রে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। প্রতিদিনের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত বারোটায় শুরু হয় আজকের সংবাদপত্র। এটি এখন বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য একটি অনুষ্ঠান। এই ভূমিকাগুলো আজ শুধু ইতিহাসের অংশই নয়, সকল গণমাধ্যমের জন্য দায়বদ্ধতা ও করনীয় ভূমিকার পথ প্রদর্শক।

চ্যানেল আই অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ তৎপরতা

২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই অনলাইন। বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সাংবাদিকতা এই সংবাদ পোর্টালটির মূল লক্ষ্য। নয় বছরে প্রতিষ্ঠানটি টেক্সট জার্নালিজম ছাড়াও ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজমে অসাধারণ দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে কাজ করছে সংবাদকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নিউ মিডিয়া এবং পরিপূর্ণ প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে প্রত্যেক সাংবাদিককে। ইতোমধ্যে এই অনলাইন পোর্টালটি দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসন্ধিৎসু বিপুল দর্শকের জন্য কাজ করছে চ্যানেল আই ডিজিটাল। চ্যানেল আই টিভির ইউটিউব চ্যানেলে লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার যুক্ত হয়েছেন। সর্বোপরি টেক্সট এবং ভিডিও কনটেন্টের বিস্তৃত ব্যবহার পোর্টাল থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলোতে আপলোড হচ্ছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের এই সময়ে চ্যানেল আই অনলাইন তার কাজের বৈচিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দর্শক ও পাঠকপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

টিভি ও চলচ্চিত্রের বন্ধন

চ্যানেল আই নিজে একটি টেলিভিশন মাধ্যম, তার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলছে বৃহৎ গণমাধ্যম চলচ্চিত্র। চ্যানেল আই এর মাতৃপ্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র নির্মান ক্ষেত্র। এ প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় মুক্তিপ্রাপ্ত মোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা দুইশ ছুঁই ছুঁই। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো বেশকিছু চলচ্চিত্র। সুস্থধারার ও বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও দর্শকপ্রিয়তায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এখন শুধু বাংলাদেশের দর্শকদেরই মন জয় করেনি, বিশ্ব চলচ্চিত্রেও অর্জন করেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছরই ইমপ্রেসের সিনেমা অস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত ইমপ্রেস-এর চলচ্চিত্র অর্ধশতাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। বিভিন্ন ক্যাটাগারিতে দুই শতাধিক জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। পুথিবীর দেশে দেশে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসে প্রদর্শিত হচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত হচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সিনেমা। দেশবিদেশে সাড়া জাগানোর পাশাপাশি দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড এর চলচ্চিত্র আর্কাইভ।

চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান টু দ্য পয়েন্ট

প্রচলিত টক শো নয়। সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট তথ্য খুঁড়ে বের করে আনার এক আয়োজন ‘টু দ্য পয়েন্ট’। সমকালীন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও জবাবদিহিতার অনুষ্ঠান হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ অনুষ্ঠানটি। চ্যানেল আই সংবাদের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খানের পরিকল্পনা ও রাজু আলীমের পরিচালনায় টু দ্য পয়েন্ট এক ভিন্ন মাত্রার টক শো হিসেবে দর্শকদের কাছে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সোমা ইসলাম।

তিন’শ সেকেন্ড এবং পনেরটি প্রশ্ন

নামের সঙ্গে মিলিয়ে ৩০০ সেকেন্ড ব্যপ্তির একটি টক শো। পরিচালনা করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। চ্যানেল আই এর একুশ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে প্রতিদিনের অনুষ্ঠানটি। দেশের বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ৩০০ সেকেণ্ডের প্রশ্নোত্তরের ঝড় বয়ে যায় এ অনুষ্ঠানে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ৩০০ সেকেন্ডের ধারাবাহিককতায় পনেরটি প্রশ্নের নতুন অনুষ্ঠান শুরু করেছেন জয়।

স্টাণ্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই এগ্রো এ্যাওয়ার্ড

দেশের কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে “স্টাণ্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো এ্যাওয়ার্ড” চালু রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে আজীবন সম্মানা এবং ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখা অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উঠে এসেছেন এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন : হৃদয়ে মাটি ও মানুষ

chad-krishiবিশ্বব্যাপী দর্শকদের মাঝে চ্যানেল আই এর বিশেষ পরিচিতি গণমানুষের গণমাধ্যম হিসেবে। বিশেষ করে গ্রাম ও কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মূলধারায় কাজ করার ক্ষেত্রে এই চ্যানেলটির ভূমিকা সর্বত্র অগ্রগণ্য। শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় নিয়মিত অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষ দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছে অপরিসীম ভূমিকা। দেশের কৃষি ও গ্রামীন উন্নয়নে নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে এ অনুষ্ঠানটি এখন এক নিয়ামক শক্তির মতো কাজ করছে। পথচলার ১৯ বছর পার করেছে এ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন বহুসংখ্যক সফল কৃষক ও খামারি। কৃষক তথা গ্রামীণ জনগোষ্ঠি ও সরকারের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটি সেতুবন্ধন। প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটের আগে তৃণমূল কৃষকদের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনা
‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ এ অনুষ্ঠানের এক জাতীয় পদক্ষেপ। চ্যানেল আই-এর তুমুল দর্শকপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে শাইখ সিরাজের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় প্রতি বছরের ঈদ আয়োজন ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেশের কৃতি ও সফল কৃষকদেরকে চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কাকে ভূষিত করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। দেশে কৃষি ও কৃষকের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষেত্রে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এক ইন্সটিটিউশনের মতো কাজ করছে। সরকারযন্ত্র তথা বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনসহ বহির্বিশ্বের অগণন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ বাংলাদেশের কৃষি পরিস্থিতির এক দর্পন হিসেবে গণ্য হচ্ছে। টেলিভিশনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের সকল ক্ষেত্রে এ অনুষ্ঠানটির রয়েছে সরব পথচলা। প্রতিদিন সারাবিশ্বের কোটি দর্শক চোখ রাখছেন শাইখ সিরাজের এই অনুষ্ঠানে।

রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিকাশ ‘তৃতীয় মাত্রা’

Titiyo-Matraচ্যানেল আই-ই দেশে প্রথম গণমাধ্যমে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা চর্চার উদ্যোগ হিসেবে শুরু করে টক শো তৃতীয় মাত্রা। এটিই দেশের প্রথম অনুষ্ঠান যা পরস্পরবিরোধী দুটি রাজনৈতিক দলের নেতার মুখোমুখি সংলাপের আয়োজন। যা খ্যাতি পায় মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানটি শুধু গণমানুষেরই চোখ খুলে দেয়নি, দেশের সকল গণমাধ্যমেও অনুসৃত হয়েছে এই তৎপরতা।

পরিবেশ ॥ প্রকৃতি ও জীবন

চ্যানেল আই এর ব্যাপক সমাদৃত কয়েকটি অনুষ্ঠানের একটি হচ্ছে প্রকৃতি ও জীবন। মুকিত মজুমদার বাবু উপস্থাপিত ও পরিচালিত বাংলাদেশের জীববৈচিত্র নিয়ে প্রথম ধারাবাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রকৃতি ও জীবন। বাংলাদেশকে বলা হয় প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের এক সম্ভার। প্রকৃতি ও পরিবেশের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র এবং সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে এ অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের নিয়মিত অনুষ্ঠান হিসেবে এটি প্রথম উদ্যোগ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন প্রকৃতি সুরক্ষায় দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরিবেশ বিষয়ক টেলিভিশন অনুষ্ঠান হিসেবে প্রকৃতি ও জীবন পেয়েছে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার জাতীয় পরিবেশ পদকসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকেও প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য দেশের বহুসংখ্যক বিশিষ্ট মানুষকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্লাটফরম। এই ফাউণ্ডেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রকৃতি সংরক্ষন বিষয়ক পত্র-পত্রিকা ও গন্থ প্রকাশিত হয়। ’প্রকৃতিবার্তা’ দেশের আগ্রহী প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে দারুণ সমাদৃত একটি ,ম্যাগাজিন।
প্রকৃতি ও জীবন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও প্রকৃতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্বে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এর বাইরেও রয়েছে দেশের মানুষকে প্রকৃতি বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নানান কর্মতৎপরতা। রয়েছে ধারাবাহিক নাটক, প্রকৃতি বিষয়ক সংগীত পরিচালনার উদ্যোগ। এ বছর জুন মাস থেকে প্রকৃতি ও জীবন ফাউণ্ডেনের পক্ষ থেকেই যাত্রা শুরু করেছে আরো একটি উদ্যোগ প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব।

গান দিয়ে শুরু : সঙ্গীতের শুদ্ধধারা ও উৎকর্ষ

দিনের শুরু মানেই চ্যানেল আই-এর গানের আয়োজন। গান দিয়ে শুরু’ নামের সরাসরি অনুষ্ঠানটি বিপুল জনপ্রিয়। দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশ নেন সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে। ২০১২ সালের ২৯ মে যাত্রা শুরু করে এই অনুষ্ঠানটি। বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা চ্যানেল আই দর্শকদের জন্য সকালের এই আয়োজন ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে থাকে।

বাঙালির রেসিপি ও কেকা ফেরদৌসীর রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান

এদেশে টেলিভিশনে প্রতিদিন রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান চালু করে চ্যানেল আই। রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসীর পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় রান্নাবিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরেও ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন ইভেন্ট। দেশী বিদেশী বৈচিত্র্যময় খাদ্য-সামগ্রী ও পাক প্রণালী নিয়ে কেকা ফেরদৌসীর নিয়মিত রান্নাবান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দেশ বিদেশের রান্না’। প্রতিবছর ইফতারি আয়োজন নিয়ে কেকা ফেরদৌসী’র মনোহর ইফতারি অনুষ্ঠান ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নতুন নতুন খাদ্য ও রেসিপির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছেন দর্শক।

ছোটকাকু ও ছোটকাকু ক্লাব

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের রচনা ও আফজাল হোসেন এর পরিচালনায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনধর্মী সাহিত্য ও টেলিভিশন কার্যক্রম ‘ছোটকাকু’ সাড়া জাগিয়েছে দেশব্যাপী। ছোটকাকু একটি রহস্য নাটকের চরিত্র। বিশেষ করে দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে অল্পদিনেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এই ছোটকাকু। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোটকাকু ফ্যান ক্লাব।

অমর একুশে বইমেলা সরাসরি

বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে গুরুত্বর্পূ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে চ্যানেল আই-এর গভীর যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। গত দেড় দশক ধরে চ্যানেল আই মাসব্যাপী বইমেলা সরাসরি সম্প্রচার করছে। শুধু তা-ই নয়, এই বইমেলাকে প্রাণবন্তও অর্থবহ করে তুলতে প্রতিদিন প্রতিটি সংবাদ বুলেটিনে বইমেলাভিত্তিক একাধিক রিপোর্ট, বই ও মেলা নিয়ে বিভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়া চ্যানেল আই এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলো মাসব্যাপী বইমেলাকে ঘিরে প্রতিদিন বইমেলা নামে একটি নিয়মিত বুলেটিন প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া বইমেলায় প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ বই নিয়ে রয়েছে আনন্দ আলোর একাধিক সাহিত্য পুরস্কার।

বাঙালি ঐতিহ্য ও মেলা

পরিবর্তিত সময়ে আবহমান বাংলার অনেক ঐতিহ্যই যখন হারাতে বসেছে তখন চ্যানেল আই নিজস্ব প্রাঙ্গণে বাঙালি জীবনের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মেলার আয়োজন করে আসছে। বৈশাখী মেলা, রবীন্দ্র মেলা, নজরুল মেলা, পৌষ মেলা, বিজয় মেলা, বাংলা বর্ষবরণ এগুলোর অন্যতম।

তারকার সঙ্গে দর্শকদের সরাসরি আলাপন : তারকাকথন

চ্যানেল আই এর প্রতিদিনের সরাসরি অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘তারকাকথন’। বিভিন্ন মাধ্যমের খ্যাতিমান তারকাদের সঙ্গে সরাসরি ফোন আলাপে অংশ নিতে পারেন এই অনুষ্ঠানে। দেশের খ্যাতিমান তারকাদের জন্মদিনে বিশেষ শুভেচ্ছা জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে এনে। উল্লেখ্য, যে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ও গুণী ব্যক্তিত্বদের জন্মদিনে বিশেষ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও সংবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা প্রচার করার ক্ষেত্রে চ্যানেল আই-তে পথচলার শুরু থেকেই একটি রেওয়াজ চালু রয়েছে।

সংবাদপত্রে বাংলাদেশ

যা কিছু প্রথম তার সাথে চ্যানেল আই এর সম্পর্ক বেশ নিবীড়। দেশের টেলিভিশন মাধ্যমে চ্যানেল আই-ই প্রথম কিছু নান্দনিক ধারার অনুষ্ঠান শুরু করে। পরবর্তিতে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল তা অনুসরণ, অনুকরণ করে। ‘সংবাদপত্রে বাংলাদেশ’ চ্যানেল আই এর উল্লেখযোগ্য একটি অনুষ্ঠান। রাত ১২টা ৫ মিনিট ও পরের দিন সকাল ৯.৩০টায় সংবাদপত্র বিষয়ক দুটি অনুষ্ঠান প্রচার করে চ্যানেল আই। রাতের অনুষ্ঠানটি মতিউর রহমান চৌধুরী, সকালের অনুষ্ঠানটি রেজানুর রহমান উপস্থাপনা করেন। ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজের তত্বাবধানে অনুষ্ঠান দুটি প্রযোজনার দায়িত্ব পালন করেন কাজল ঘোষ।

চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড

দেশে শুদ্ধ সঙ্গীতের বিকাশে সিটিসেলকে সঙ্গে নিয়ে চ্যানেল আই শুরু করে চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড প্রদান কার্যক্রম। স্বগৌরবে চলছে এই উদ্যোগ। এবারের অ্যাওয়ার্ড প্রদানের আয়োজন প্রায় শেষ।

ইস্পাহানী সেরা বাংলাবিদ

শিক্ষার্থীদের মাঝে শুদ্ধ ভাবে ভাষা চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে চ্যানেল আই শুরু করে ইস্পাহানী সেরা বাংলাবিদ কার্যক্রম। সম্প্রতি এর পঞ্চম আসর শেষ হয়েছে। ভাষা চর্চার এই রিয়েলিটি শোটি দেশে বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠেছে।

আইস্ক্রীনের যাত্রা শুরু

সময়ের প্রয়োজনে চ্যানেল আই এর তত্বাবধানে শুরু হয়েছে ওটিটি প্লাটফরম আইস্ক্রীনের শুভযাত্রা। মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ওটিটি প্লাটফরমে আইস্ক্রীন ব্যাপক আলোচিত হয়ে উঠেছে। আই স্ক্রীনের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ।

চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলকে আরও বেশী গুরুত্বপুর্ন করে তুলেছে। সময়ের প্রয়োজনে চ্যানেল আই প্রবর্তণ করেছে ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। আইসিটি ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় অতিসম্প্রতি তৃতীয়বারের মতো এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে।

চ্যানেল আই-এর দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান

চ্যানেল আই-এর অনুষ্ঠান ভান্ডার সবসময়ের জন্যই পূর্ণ। গত তেইশ বছর অবিরাম পথচলায় প্রচারিত হয়েছে অগণিত নতুন নতুন অনুষ্ঠান। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে রমজান মাসের নিয়মিত ও তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান কাফেলা, সপ্তাহের আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ফোন ইন লাইভ অনুষ্ঠান গ্রামীণ ফোন টেলিসময়, নিয়মিতভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দুটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। একটি আপনার সুস্বাস্থ্য ও অন্যটি সরাসরি অনুষ্ঠান টেলি প্রেসক্রিপশন, আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় বিনোদন বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘সাময়িকী’, নিয়মিত খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্পোর্টস টাইম, নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান কামরুজ্জামান সোহেলের পরিচালনায় ‘সত্যের সন্ধানে’সহ দর্শকদের সরাসরি অংশগ্রহণমূলক বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। দেশের যেকোন জরুরি অবস্থায় চ্যানেল আই তাৎক্ষণিক দর্শক চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ আয়োজন করে থাকে।
১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাড়িতে ছোট পরিসরে চ্যানেল আই এর শুভযাত্রা শুরু হয়েছিল। দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শকের অকৃত্রিম ভালোবাসায় আজ চ্যানেল আই শ্রদ্ধা বিশ্বাস ও আস্থার বিশ্বস্থ ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। আগামী দিনে চ্যানেল আই এই বিশ্বাসটাই জাগ্রত রাখুক। এই শুভ কামনা সবার।