Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্বাধীনতার ৫০-এ  চ্যানেল আই-এর ২৩

আদিত্য শাহীন

২০২১ সাল বাঙালির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশ পেরিয়ে এসেছি আমরা। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর বছর এটি। এই বছরেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্ণ হলো। এবার চ্যানেল আই পা রাখলো তেইশ বছরে।

কঠিন সময়ের গহ্বর থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসেছে পৃথিবী। করোনা রয়ে গেছে, কিন্তু মানুষ আতংকের ভেতরে নেই। মানুষ করোনাকে জয় করতে শিখছে। ঝুঁকি আছে, কিন্তু এই পৃথিবীকে সচল রাখাই মানুষের বড় কর্তব্য। করোনা সংক্রমণের চাপ কমেছে। সব অঙ্গনেই ফিরে আসছে স্বাভাবিক পরিবেশ। করোনাকঠিন সময়ে মানুষকে আত্মবিশ^াসী রাখতে, সচেতন করতে, সারাপৃথিবীর চিত্র সবসময় তুলে ধরতে গণমাধ্যমের ভুমিকা ছিল অনেক বড়। করোনাযুদ্ধে সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত কর্মী বাহিনী। অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হতে হয়েছে। অনেকে এই মহামারিতে গত হয়েছেন। চ্যানেল আই বরাবরই বিশ^াস করেছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহস যোগানো গণমাধ্যমের অনেক বড় দায়িত্ব। সেই জায়গাতে কাজ করে চলেছে গত ২২ বছর একই গতিতে। মানুষের প্রতি একই ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে। চ্যানেল আই প্রাঙ্গন। চেতনা চত্বর। রোদেলা সকালে ছাতিম জামরুলের অসাধারণ ছায়া। তেইশ বছরে পদার্পনের শুভ মুহূর্তে এবার দ্বিতীয়বারের মতো চ্যানেল আই বর্ণাঢ্য আয়োজন ও জনসমাবেশ পরিহার করছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার স্বার্থেই এড়িয়ে চলতে হচ্ছে কোলাহল। চ্যানেল আই তার জন্মদিনে বিশ্বব্যাপী বাঙালি দর্শকদের হৃদয়ে পৌছে দিতে চায় একই উচ্ছ্বাস। পৌছে দিতে চায় জন্মদিনের আনন্দ আয়োজন। তাই এবার ছাতিম তলায় বিশাল বর্ণাঢ্য আয়োজন না থাকলেও চ্যানেল আই এর পর্দাজুড়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সকল প্লাটফরমে সারা পৃথিবীর দর্শকদের সঙ্গে হবে ভালাবাসা বিনিময়।

টু দ্য পয়েন্ট

প্রচলিত টক শো নয়। সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট তথ্য খুঁড়ে বের করে আনার এক আয়োজন ‘টু দ্য পয়েন্ট’। সমকালীন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও জবাবদিহিতার অনুষ্ঠান হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ অনুষ্ঠানটি। চ্যানেল আই সংবাদের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খানের পরিকল্পনা ও রাজু আলীমের পরিচালনায় টু দ্য পয়েন্ট এক ভিন্ন মাত্রার টক শো হিসেবে দর্শকদের কাছে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।

চ্যানেল আই অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ তৎপরতা

২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই অনলাইন। বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সাংবাদিকতা এই সংবাদ পোর্টালটির মূল লক্ষ্য। ছয় বছরে প্রতিষ্ঠানটি টেক্সট জার্নালিজম ছাড়াও ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজমে বেশ দক্ষতার সাথে কাজ করছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে কাজ করছে সাংবাদিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নিউ মিডিয়া এবং পরিপূর্ণ প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে প্রত্যেক সাংবাদিককে। ইতোমধ্যে এই অনলাইন পোর্টালটি দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি।

একইসাথে এবার যাত্রা শুরু করেছে চ্যানেল আই ডিজিটাল। চ্যানেল আই এন্টারটেইনমেন্ট ৫৭ লাখ ওপর সাবস্ক্রাইবার, চ্যানেল আই নিউজের ইউটিউবে ২১ লাখ সাবস্ক্রাইবার। চ্যানেল আইয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৪৩ লাখ অনুসারি। সর্বোপরি টেক্সট এবং ভিডিও কনটেন্টের বিস্তৃত ব্যবহার পোর্টাল থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলোতে আপলোড হচ্ছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের এই সময়ে চ্যানেল আই অনলাইন তার কাজের বৈচিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দর্শক ও পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চ্যানেল আই শিগগিরই নিয়ে আসছে নিজস্ব ওটিটি প্লাটফরম।

তিনশ পয়ষট্টি সেকেণ্ড রাজনীতির নয় 

রাজনীতিবিদরা রাজনীতির বাইরে কথা বলছেন। জীবন নিয়ে কথা বলছেন। প্রেম নিয়ে কথা বলছেন। বাল্যস্মৃতি নিয়ে কথা বলছেন। মনের ভেতর লুকোনো কোনো সত্য তুলে ধরছেন। চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠানে সর্বশেষ সংযোজন তিন’শ পয়ষট্টি সেকেণ্ডের অনুষ্ঠানটি। টেলিভিশন সিনেমার পরিচিত মুখ শহিদুল আলম সাচ্চুর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

তিন’শ সেকেণ্ড 

নামের সঙ্গে মিলিয়ে ৩০০ সেকেণ্ড ব্যপ্তির একটি টক শো। পরিচালনা করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। চ্যানেল আই এর একুশ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে প্রতিদিনের অনুষ্ঠানটি। দেশের বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ৩০০ সেকেণ্ডের প্রশ্নোত্তরের ঝড় বয়ে যায় এ অনুষ্ঠানে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ইস্পাহানি বাংলাবিদ

বাংলা ভাষা নিয়ে বাংলা টেলিভিশনে মনোজ্ঞ ও অপরিহার্য একটি আয়োজন। শিশু কিশোরদের বাংলা ভাষা বিষয়ক জানাশোনা নিয়ে এই আয়োজন হলেও এর মধ্য দিয়ে বিশ^ময় ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষীদের মধ্যে নতুন এক জাগরণ তৈরি হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো সম্পন্ন হয়েছে ইস্পাহানি বাংলাবিদের মহোৎসব। চ্যানেল আই-এর ইতিবাচক কর্মপ্রয়াসের অন্যতম অংশ হিসেবে এই আয়োজনও প্রতিবছরই নতুন নতুন বিষয়বৈচিত্র নিয়ে আসছে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের চলচ্চিত্র 

oggatonamaইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড-এর প্রযোজনায় মুক্তিপ্রাপ্ত মোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা শতার্ধিক। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো বেশকিছু চলচ্চিত্র। সুস্থধারার ও বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও দর্শকপ্রিয়তায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এখন শুধু বাংলাদেশের দর্শকদেরই মন জয় করেনি, বিশ্ব চলচ্চিত্রেও অর্জন করেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছরই ইমপ্রেসের সিনেমা অস্কার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এ বছর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর চলচ্চিত্র নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘আলফা’ অস্কারের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ইমপ্রেস-এর চলচ্চিত্র ৪৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। এ পর্যন্ত ৭ বার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ১৭১ টি। যা বেসরকারি কোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. নির্মিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে। লন্ডন, ফ্রান্স ও জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র উৎসব। এছাড়া অ্যামিরাটস্ ও ওমান এয়ারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান বহরে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্সসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তি পেয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. এর চলচ্চিত্র। ব্রিটেনের চ্যানেল ফোরসহ বিভিন্ন টেলিভিশন এবং জাপানের বিভিন্ন টেলিভিশন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র সম্প্রচার করছে এবং তাদের চলচ্চিত্র আর্কাইভে সংরক্ষণ করেছে। দেশবিদেশে সাড়া জাগানোর পাশাপাশি দিনের পর দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড এর চলচ্চিত্র আর্কাইভ।

চ্যানেল আই সংবাদের একুশ বছর

এবার একুশ বছরে পদার্পণ করছে চ্যানেল আই সংবাদ। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর চ্যানেল আই’র তৃতীয় বর্ষে পদার্পণের শুভমুহূর্তে যাত্রা শুরু করে চ্যানেল আই সংবাদ। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বহু ঘটনা, সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন প্রতিকূল ও সংকটময় পরিস্থিতি এসেছে। সবক্ষেত্রেই সঠিক ও তাৎক্ষণিক তথ্যের জন্য দর্শকদের সবচেয়ে কাছাকাছি থেকেছে চ্যানেল আই। সবচেয়ে দ্রুত পূরণ করেছে দর্শকদের প্রতিমুহূর্তের তথ্যের ক্ষুধা। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন লাইভ সম্প্রচার এবং এ সংক্রান্ত পেশাদারিত্ব ও কারিগরী উৎকর্ষে চ্যানেল আই সংবাদ বস্তুনিষ্ঠতায় এক স্বতন্ত্র অবস্থান গড়েছে। সংবাদ পরিবেশনে চ্যানেল আই বরাবরই থেকেছে গণমুখি অবস্থানে।

চ্যানেল আই-ই দেশে প্রথম প্রতিদিনের সংবাদপত্রের খবর নিয়ে ‘সংবাদপত্রে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে। প্রতিদিনের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত বারোটায় শুরু হয় গ্রামীণ ফোন আজকের সংবাদপত্র। এটি এখন বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য একটি অনুষ্ঠান।

স্টাণ্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই এগ্রো এ্যাওয়ার্ড 

দেশের কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে “স্টাণ্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো এ্যাওয়ার্ড” চালু রয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে আজীবন সম্মানা এবং ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখা অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উঠে এসেছেন এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন : হৃদয়ে মাটি ও মানুষ

বিশ^ব্যাপী দর্শকদের মাঝে চ্যানেল আই এর বিশেষ পরিচিতি গণমানুষের গণমাধ্যম হিসেবে। বিশেষ করে গ্রাম ও কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মূলধারায় কাজ করার ক্ষেত্রে এই চ্যানেলটির ভূমিকা সর্বত্র অগ্রগণ্য। শাইখ সিরাজের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় নিয়মিত অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষ দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছে অপরিসীম ভূমিকা। দেশের কৃষি ও গ্রামীন উন্নয়নে নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্রে এ অনুষ্ঠানটি এখন এক নিয়ামক শক্তির মতো কাজ করছে। পথচলার সতের বছর পার করেছে এ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন বহুসংখ্যক সফল কৃষক ও খামারি। কৃষক তথা গ্রামীণ জনগোষ্ঠি ও সরকারের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটি সেতুবন্ধন। প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটের আগে তৃণমূল কৃষকদের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনা

‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ এ অনুষ্ঠানে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। চ্যানেল আই-এর তুমুল দর্শকপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে শাইখ সিরাজের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় প্রতি বছরের ঈদ আয়োজন ‘কৃষকের ঈদ আনন্দ’। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেশের কৃতি ও সফল কৃষকদেরকে চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কাকে ভূষিত করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। দেশে কৃষি ও কৃষকের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার ক্ষেত্রে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এক ইন্সটিটিউশনের মতো কাজ করছে। সরকারযন্ত্র তথা বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনসহ বহির্বিশে^র অগণন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ বাংলাদেশের কৃষি পরিস্থিতির এক দর্পন হিসেবে গণ্য হচ্ছে। টেলিভিশনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের সকল ক্ষেত্রে এ অনুষ্ঠানটির রয়েছে সরব পথচলা। প্রতিদিন সারাবিশে^র কোটি দর্শক চোখ রাখছেন শাইখ সিরাজের এই অনুষ্ঠানে।

Titiyo-Matraরাজনীতি ও গণতন্ত্র বিকাশ ‘তৃতীয় মাত্রা’

চ্যানেল আই-ই দেশে প্রথম গণমাধ্যমে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা চর্চার উদ্যোগ হিসেবে শুরু করে টক শো তৃতীয় মাত্রা। এটিই দেশের প্রথম অনুষ্ঠান যা পরস্পরবিরোধী দুটি রাজনৈতিক দলের নেতার মুখোমুখি সংলাপের আয়োজন। যা খ্যাতি পায় মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় অনুষ্ঠানটি শুধু গণমানুষেরই চোখ খুলে দেয়নি, দেশের সকল গণমাধ্যমেও অনুসৃত হয়েছে এই তৎপরতা।

পরিবেশ ॥ প্রকৃতি ও জীবন 

চ্যানেল আই এর ব্যাপক সমাদৃত কয়েকটি অনুষ্ঠানের একটি হচ্ছে প্রকৃতি ও জীবন। মুকিত মজুমদার বাবু উপস্থাপিত ও পরিচালিত বাংলাদেশের জীববৈচিত্র নিয়ে প্রথম ধারাবাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রকৃতি ও জীবন। বাংলাদেশকে বলা হয় প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের এক সম্ভার। প্রকৃতি ও পরিবেশের অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র এবং সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে এ অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের নিয়মিত অনুষ্ঠান হিসেবে এটি প্রথম উদ্যোগ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন প্রকৃতি সুরক্ষায় দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরিবেশ বিষয়ক টেলিভিশন অনুষ্ঠান হিসেবে প্রকৃতি ও জীবন পেয়েছে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার জাতীয় পরিবেশ পদকসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

গান দিয়ে শুরু : সঙ্গীতের শুদ্ধধারা ও উৎকর্ষ 

দিনের শুরু মানেই চ্যানেল আই-এর গানের আয়োজন। গান দিয়ে শুরু’ নামের সরাসরি অনুষ্ঠানটি বিপুল জনপ্রিয়। দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশ নেন সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে। ২০১২ সালের ২৯ মে যাত্রা শুরু করে এই অনুষ্ঠানটি। বিশ^ময় ছড়িয়ে থাকা চ্যানেল আই দর্শকদের জন্য সকালের এই আয়োজন ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে থাকে।

বাঙালির রেসিপি ও কেকা ফেরদৌসীর রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান

এদেশে টেলিভিশনে প্রতিদিন রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান চালু করে চ্যানেল আই। রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসীর পরিকল্পনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় রান্নাবিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরেও ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন ইভেন্ট। দেশী বিদেশী বৈচিত্র্যময় খাদ্য-সামগ্রী ও পাক প্রণালী নিয়ে কেকা ফেরদৌসীর নিয়মিত রান্নাবান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দেশ বিদেশের রান্না’। প্রতিবছর ইফতারি আয়োজন নিয়ে কেকা ফেরদৌসী’র মনোহর ইফতারি অনুষ্ঠান ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নতুন নতুন খাদ্য ও রেসিপির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছেন দর্শক।

ভাগ্যলক্ষী এসএমই বাংলাদেশ

দেশের বেকার তরুণদের কর্মমুখি করতে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের উজ্জীবিত করতে চ্যানেল আইয়ের অনন্য আয়োজন ভাগ্যলক্ষ্যী এসএমই বাংলাদেশ অনুষ্ঠান। অপু মাহফুজের উপস্থাপনা পরিচালনা ও গ্রন্থনায় নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই পথচলার ছয় বছর পার করেছে।

ছোটকাকু ও ছোটকাকু ক্লাব

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের রচনা ও আফজাল হোসেন এর পরিচালনায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনধর্মী সাহিত্য ও টেলিভিশন কার্যক্রম ‘ছোটকাকু’ সাড়া জাগিয়েছে দেশব্যাপী। ছোটকাকু একটি রহস্য নাটকের চরিত্র। বিশেষ করে দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে অল্পদিনেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এই ছোটকাকু। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোটকাকু ফ্যান ক্লাব।

অমর একুশে বইমেলা সরাসরি

বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সবচেয়ে গুরুত্বর্পূ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে চ্যানেল আই-এর গভীর যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। গত দেড় দশক ধরে চ্যানেল আই মাসব্যাপী বইমেলা সরাসরি সম্প্রচার করছে। শুধু তা-ই নয়, এই বইমেলাকে প্রাণবন্তও অর্থবহ করে তুলতে প্রতিদিন প্রতিটি সংবাদ বুলেটিনে বইমেলাভিত্তিক একাধিক রিপোর্ট, বই ও মেলা নিয়ে বিভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়া চ্যানেল আই এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিনোদন পাক্ষিক আনন্দ আলো মাসব্যাপী বইমেলাকে ঘিরে প্রতিদিন বইমেলা নামে একটি নিয়মিত বুলেটিন প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া বইমেলায় প্রকাশিত বই নিয়ে সিটি গ্রুপ ও আনন্দ আলো যৌথভাবে প্রদান করে সাহিত্য পুরস্কার।

বাঙালি ঐতিহ্য ও মেলা

পরিবর্তিত সময়ে আবহমান বাংলার অনেক ঐতিহ্যই যখন হারাতে বসেছে তখন চ্যানেল আই নিজস্ব প্রাঙ্গণে বাঙালি জীবনের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মেলার আয়োজন করে আসছে। বৈশাখী মেলা, রবীন্দ্র মেলা, নজরুল মেলা, পৌষ মেলা, বিজয় মেলা, বাংলা বর্ষবরণ এগুলোর অন্যতম। আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চুর পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে দিনে দিনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এসব মেলা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চ্যানেল আই

প্রকৃতি মেলা। প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র রক্ষার তাগিদ থেকেই

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। এছাড়া প্রতিবছর দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশে আবদুর রহমানের পরিচালনায় দিনব্যাপী চলচ্চিত্র মেলা এবং সারাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বর্ণাঢ্য জীবন ও সংস্কৃতিকে বিশ্বময় তুলে ধরার জন্য আয়োজন করা হয় ‘আদিবাসী মেলা’। বর্ষা উৎসব, শরৎ উৎসব, শীত উৎসব, বসন্ত উৎসব এর আয়োজন সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে সারাবিশ্বের বাঙালি দর্শক এতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলা ও জসমাগম থেকে বিরত রয়েছে চ্যানেল আই।

তারকার সঙ্গে দর্শকদের সরাসরি আলাপন : তারকাকথন

চ্যানেল আই এর প্রতিদিনের সরাসরি অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘তারকাকথন’। বিভিন্ন মাধ্যমের খ্যাতিমান তারকাদের সঙ্গে সরাসরি ফোন আলাপে অংশ নিতে পারেন এই অনুষ্ঠানে। দেশের খ্যাতিমান তারকাদের জন্মদিনে বিশেষ শুভেচ্ছা জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে এনে। উল্লেখ্য, যে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ও গুণী ব্যক্তিত্বদের জন্মদিনে বিশেষ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও সংবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা প্রচার করার ক্ষেত্রে চ্যানেল আই-তে পথচলার শুরু থেকেই একটি রেওয়াজ চালু রয়েছে।

চ্যানেল আই-এর দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান

চ্যানেল আই-এর অনুষ্ঠান ভান্ডার সবসময়ের জন্যই পূর্ণ। গত একুশ বছর অবিরাম পথচলায় প্রচারিত হয়েছে অগণিত নতুন নতুন অনুষ্ঠান। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে রমজান মাসের নিয়মিত ও তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান কাফেলা, সপ্তাহের আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ফোন ইন লাইভ অনুষ্ঠান গ্রামীণ ফোন টেলিসময়, নিয়মিতভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক দুটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। একটি আপনার সুস্বাস্থ্য ও অন্যটি সরাসরি অনুষ্ঠান টেলি প্রেসক্রিপশন, আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় বিনোদন বিষয়ক নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘সাময়িকী’, নিয়মিত খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্পোর্টস টাইম, নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান কামরুজ্জামান সোহেলের পরিচালনায় ‘সত্যের সন্ধানে’সহ দর্শকদের সরাসরি অংশগ্রহণমূলক বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। দেশের যেকোন জরুরি অবস্থায় চ্যানেল আই তাৎক্ষণিক দর্শক চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ আয়োজন করে থাকে।

সবাইকে শুভেচ্ছা 

একে একে বাইশ বছর পেরিয়ে এসেছে চ্যানেল আই। এটি বহু মানুষের শ্রম, নিষ্ঠা, স্বপ্ন আর তৎপরতার যোগফল। যারা সবসময়ই শক্তি ও সাহস যুগিয়ে চলেছেন চ্যানেল আইকে, তার যুগপোযাগী প্রতিটি উদ্যোগকে। যে দায়বদ্ধতা নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা, সেখান থেকে এক চুলও সরেননি চ্যানেল আই। যাদের প্রতিদিনের চিন্তা-শ্রম ও নিষ্ঠায় সূচনা হয় একেকটি নতুন অধ্যায়ের, নতুন ধারার। তেইশ বছরে পদার্পণের শুভলগ্নে চ্যানেল আই সকল দর্শক, কর্মকুশলী, বিজ্ঞাপনদাতা, কেবল অপারেটরসহ সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়।