Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চল যাই সেন্টমার্টিনে!

মনে হবে সমুদ্রের নীল আর আকাশের নীল যেন পরস্পরের হাত ধরে হেঁটে চলেছে। নীল, নীল পরিবেশ সর্বত্র। বিশেষ করে রাতে জোছনার আলোয় এই নীলেরা যেন অপূর্ব এক শান্তিময় পরিবেশের সৃষ্টি করে। বলা হয় সমুদ্র বিশাল। মন ভালো করতে চাইলে চলে যাও সমুদ্রের কাছে। আরও স্পষ্ট করে বলি, মন ভালো করতে চাইলে, আনন্দ পেতে চাইলে বলে যাও সেন্টমার্টিন দ্বীপে।
সেন্টমার্টিন ভ্রমনের আদ্যোপান্ত : এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আয়তন ১৭ বর্গ কিলোমিটার। টেকনাফ থেকে ট্রলারে লঞ্চে কিংবা জাহাজে যেতে লাগে দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা। এর জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। নারিকেল, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ধান এই দ্বীপের প্রধান কৃষিজাত পণ্য। আর অধিবাসীদের প্রায় সবারই পেশা মৎস্য শিকার। তবে ইদানীং পর্যটন শিল্পের বিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ নিতান্ত সহজ-সরল, তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। স্বল্প খরচে পর্যটকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যে কোনও স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে কক্সবাজারে। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কিছু গাড়ি। বাসে ভাড়া লাগবে এসি ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা এবং নন-এসি ৬০০-৯০০ টাকা। কক্সবাজার তো গেলেন তারপর বাসে ৩০-৫০ টাকা, ট্যাক্সিতে ৪০-৬০ টাকা অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে টেকনাফ যেতে ভাড়া লাগবে ৫০০-১০০০ টাকা (৮-১০ সিট)। প্রতিদিন সকাল থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে চলাচল করে এসব গাড়ি। শীত মওসুমে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে সি-ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং নাফসি হাজাজ। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলারও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে। পছন্দসই বাহনে যেতে পারেন। তবে নিরাপদ জলযান হিসেবে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও নাফসি জাহাজই নির্ভরযোগ্য। এসব জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে প্রতিদিনই বিকাল ৩টায় এসব জাহাজ সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।

saint-martin
সম্পর্কিত

অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি ছেঁড়াদ্বীপ : ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখন্ড নেই। সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘ছেঁড়াদিয়’ বা ‘সিরাদিয়া’ বলা হয়ে থাকে।
প্রবাল দ্বীপে ইউনিয়ন সেন্ট মার্টিন্স থেকে ছেঁড়া দ্বীপ প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দক্ষিণের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর। দ্বীপের প্রায় অর্ধেকই জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায়। এই এলাকাটি সরকারের ঘোষিত একটি ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা’। এরকম এলাকায় ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানায় জমি কেনা, এমনকি কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ আইনত নিষিদ্ধ। ছেঁড়া দ্বীপ মূল দ্বীপ থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। প্রবাহ বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ঢোকার পথে একমাত্র ব্রিজের কাছ থেকে ছোট বোটে চড়েই যেতে হয় ছেঁড়া দ্বীপে। ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয় পর্যটকদের। কেননা সাগরে পূর্ণ জোয়ার না থাকলে সেখানে বোটে চড়া কষ্টকর হয়ে যায়। বঙ্গোপসাগরের নীল জল আগত পর্যটকদের সহজেই আকর্ষণ করে। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে প্রবাল পাথরের ওপর। মুহুর্তেই ঢেউ এসে পরিষ্কার করে দিচ্ছে দ্বীপের বিচ। চিকচিক বালুর ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপভোগ করা যায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের খেলা।
সেন্টমার্টিনসহ ছেঁড়া দ্বীপের চারপাশেই রয়েছে কেয়া গাছের বিস্তরণ। কেয়া গাছের শিকড় একটি আরেকটিকে বন্ধুর মতো জড়িয়ে ধরে আছে। গাছ গুলো এভাবেই ঝঢ় জলোচ্ছাসে কিছুটা হলেও দ্বীপবাসীকে রক্ষা করে। তাই দ্বীপবাসীর জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও ভ‚মিকা পালন করছে কেয়া গাছ।

কোথায় খাবেন
যারা স্বল্প সময়ের জন্য সেন্টমার্টিনে যেতে চান অর্থাৎ সন্ধ্যার আগে ফিরতে চান তাদের অবশ্যই ৩টার আগে ফিরতি জাহাজ ধরতে হবে। ছোট এই দ্বীপ এলাকা ঘুরে দেখতে ২/৩ ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। তবে প্রধান দ্বীপ ও ছেড়া দ্বীপে যারা যেতে চান তাদের হাতে বেশ খানিকটা সময় থাকা উচিত। এখানে পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল ও রেঁস্তোরা। কেয়ারি মারজান রেস্তোঁরা, বিচ পয়েন্ট, ফোন: ০১৮৮৮১০৮০৬, ০১৮৬৫২৮১১০। হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ- ০১৮৯০৮৪২০৩। এছাড়া আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোঁরা, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
যেখানে থাকবেন
সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। কটেজে প্রতিরাতে কমপক্ষে ৫০০ জন পর্যটক থাকতে পারেন। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। ভাড়া পড়বে ৫০০-১০০০ টাকা, শীত মৌসুমে চাপ বেশি বিধায় ইচ্ছামতো ভাড়া নেন মালিকরা। এবার জেনে নিন কয়েকটি হোটেল-মোটেলের নাম।
সীমানা পেরিয়ে: ১০টি রুমের প্রতি রুমে ৪ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। ভাড়া রুম প্রতি ৮০০-১২০০ টাকা, তাঁবুতে ৪ জন করে ৫০০ টাকা। খাবার খরচ জনপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা।
প্রিন্স হেভেন: রুম সংখ্যা ১৮টি, ডাবল রুমের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। একসঙ্গে ৪ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সিঙ্গেল রুমে থাকার ব্যবস্থা দু’জনের ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৯৩০৮০৫৮।
বø মেরিন রিসোর্ট: ৩৪টি অতিথি রুমসহ ১৮টি ডাবল বেডরুম। ট্রিপল রেডরুম ১৩, ৬ জনের বেডরুম ৫টি এবং কটেজ ২টি। ভাড়া ডাবল ১৫০০ টাকা, ট্রিপল ২০০০ টাকা, ৬ বেড ২৫০০ টাকা, ৫ বেডের কটেজ ৩৫০০ টাকা।
সমুদ্র বিলাস (হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি): ৪ রুমের এই বাড়িতে প্রতি রুমের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা।
আরও আছে বিচ ক্যাম্প, হোটেল সাগর পাড় এবং রিয়াদ গেস্ট হাউজ, হোটেল স্বপ্ন প্রবাল, শ্রাবণ বিলাস, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মেরিন পার্ক। এছাড়া পর্যটন মৌসুমে প্রায় প্রতি বাড়িতে আবাসিক সুবিধা পাওয়া যায়। সরাসরি এসব বাড়িতে গিয়ে আলাপ করে থাকা যায়।
আরও আছে বিচ ক্যাম্প, ০১৮৮০৪১৮৯৯; হোটেল সাগর পাড় ০১৮৭০০৬৬৬৪ এবং রিয়াদ গেস্ট হাউজ ০১৮৯০৮৪২০৩। আছে হোটেল স্বপ্ন প্রবাল, শ্রাবণ বিলাস, সরকারী ব্যবস্থাপনায় মেরিন পার্ক। পর্যটন মৌসুমে প্রায় প্রতি বাড়িতে আবাসিক সুবিধা পাওয়া যায়। সরাসরি এসব বাড়িতে গিয়ে আলাপ করে থাকা যায়। সেন্টমার্টিনে চিন্তামুক্ত ট্যুর করতে সাহায্য করার জন্য রয়েছে একাধিক ট্যুর কোম্পানি। যাদের যোগাযোগ নম্বর : ০১৭১২২৯৬৬২, ০১৭১-৭৩৬৫৭৮৫, ০১৮৯৬৩৩২৪৮, ০১১২১২৫৫৭।