Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছাপার অক্ষরের আবেদন কী কমে যাচ্ছে!

সৈয়দ ইকবাল: করুণা করে হলেও চিঠি দিও/ খামে ভরে তুলে দিও/ আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ ভুল বানানেও লিখো প্রিয়ো/ বেশি হলে কেটে ফেলো তাও/ এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও/ তোমার শাড়ির মতো/ অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি…’ কবির এ আকুলতা আজ বোধকরি কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।  আসলে এটাই বাস্তবতা।  এ সময়টাই যে কবিতা লিখে চিঠি পাঠানোর নয়, সময়টা এখন রিমোট কন্ট্রোল, ইন্টারনেট, এসএমএস,  ই-মেইল, ভাইবার, টেঙ্গু কিংবা ক্লিকের সময়, কর্পোরেট ব্যস্ততার সময়।  গতির সাথে পাল­া দিয়ে ছুটেচলা।  হাইটেক গে­াবাল ভিলেজে এখন আর চিঠিতে মন ভরছে না।  অবশ্য চিঠি লেখার সময়ই বা কোথায়? মুঠোফোন, ইন্টারনেট, চ্যাট, ই-মেইল, এসএমএস এবং ফেসবুকের গতির ধাক্কায় চিঠি এখন আর লেখা হয় না।  চিঠি সময়সাপেক্ষ বলে এ যুগে আর খাপ খাইছে না।  যে কারণে ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম’ গানগুলোও যেন তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলছে।  এখন শুধুমাত্র অফিসিয়াল চিঠি ছাড়া আর চিঠি লেখা হয় না।  একসময় বাবার কাছে টাকা চেয়ে পুত্রের চিঠির যে আবেদন ছিলো, তা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়ের কাছে অজানাই থেকে যাচ্ছে।  পুত্রের কাছে মায়ের একটা চিঠি কিংবা মায়ের কাছে পুত্রের একটা চিঠির কী আবেদন তা বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির আলোয় বেড়ে ওঠা একটি ছেলে বা মেয়ের অনুভূতিতে কখনোই স্পর্শ করবে না।  প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা যখন অভ্যস্ত ছিলাম না তখন চিঠিই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবüত হতো, এই চিঠিই কখনও বিনোদনের খোড়াক যোগাত, কখনও ব্যথাতুর üদয়ে কান্না ঝরাতো, কখনও উৎফুল­ করত, কখনও করত আবেগে আপ­ুত কী যে সেই অদ্ভুত টান কালি ও কাগজে লেখা চিঠিতে।  কিছু কিছু চিঠি বারবার খুলে পড়ে আবার ভাঁজ করে রাখতে রাখতে ভাঁজের অংশগুলোই ছিঁড়ে যেত।  বিশেষ করে প্রেমের চিঠি, চিঠি পাওয়ার আকুলতা কিংবা চিঠি পড়ার আনন্দ সব কিছুই যেন আজ ম­ান।

ইন্টারনেটের এ যুগে চিঠির প্রচলন অনেক কমে গেলেও তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি।  অনেক অফিসিয়াল চিঠি এখনও প্রতিদিন ডাক বিভাগের মাধ্যমেই আসে।  তবে প্রযুক্তির ছোঁয়া ডাক বিভাগেও লেগেছে।  প্রচলিত মানি অর্ডার সেবার পাশাপাশি দেশের সব জেলা সদরের প্রধান ডাকঘরসহ গুর“ত্বপূর্ণ সাব পোস্ট অফিস এমনকি উপজেলা পর্যায়ের অনেক ডাকঘরে চালু হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএনএস)।  ফেসবুক টুইটার কিংবা মেইলে চিঠি বা তথ্যের আদান-প্রদান যত দ্র“ত হোক না কেন চিঠির সেই আবেগময়তা যেন আজও ভুলবার নয়।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে নিত্য নুতন সব প্রযুক্তি।  আজ পকেটে পকেটে মোবাইলফোন।  নিমিষেই প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে যায় üদয়ের কথা।  চিঠি লিখে আবার তার জবাবের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকা সেই সময়টুকুও আজ হারিয়ে গেছে।  আজ থেকে ঠিক বিশ বছর আগের দৃশ্যটা কেমন ছিলো।  একটা সময় ছিল একটি চিঠি লিখে তার জবাব পাবার জন্য তীর্থের কাকের মত অপে¶া করতে হয়েছে প্রিয় মানুষকে।  চাতক পাখির মত পথের পানে চেয়ে থাকতে হয়েছে।  কখন আসবে সেই চিঠি! আহারে আমার খোকা-খুকু কেমন আছে এটি জানতে বাবা মারা চিঠি লিখে তার সন্তানদের কাছ থেকে উত্তর পাবার আশায় ডাকপিয়নের আওয়াজের অপে¶ায় বসে থাকত।  কখন ডাক পিয়ন জোরে দরাজ কণ্ঠে বলবে চিঠি এসেছে চিঠি, বাড়িতে কে আছেন? প্রিয় মানুষের চিঠি হাতে পেয়ে খুশিতে একেবারে আটখানা।  আজ নিজের স্ট্যাটাস বাড়ানোর জন্য, যোগাযোগের জন্য কিংবা বন্ধু খোঁজার জন্য কত না প্রযুক্তি।  আজ পত্র মিতালি গাইড এর মাধ্যমে বন্ধু খোঁজার দরকার নেই।  মার্ক জুকারবার্গ হয়তো বিষয়টি বুঝতে পেরেই ফেসবুক বানিয়েছেন।  তারপরও একসময় মার্জিন টানা কাগজে বলপেন কিংবা রেডলিপ কলম দিয়ে লেখা একটি চিঠির আনন্দই ছিলো অন্যরকম।

চিঠির মতোই বইও কী পাঠকের কাছ থেকে হারিয়ে যেতে চলেছে।  একসময় প্রিন্টেড বইয়ের চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও এখন বেশিরভাগ পাঠকই ই-বুক কিংবা পিডিএফ ফরম্যাটের বই পড়ছেন।  এজন্য নির্দিষ্ট কিছু ই-বুকের ওয়েবসাইটে গিয়ে বইয়ের নাম লিখলেই পাওয়া যাচ্ছে প্রিয় লেখকের জনপ্রিয় সব বই।  আর তাই তো দিন দিনই প্রিন্টেড বইয়ের বিক্রি কমার সাথে সাথে অনলাইনে বই পড়ার পাঠক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবুও বইয়ের সঙ্গে হোক বন্ধুত্ব

IMG_5168সমী¶ায় দেখা গেছে, একবিংশ শতাব্দীর স্যাটেলাইট যুগে ছেলেমেয়েরা টিভি দেখা ও আড্ডা দেয়ার প্রতি যতটুকু উৎসাহী, বই পড়ার প্রতি ততটা নয়।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে সময় পার করে দিচ্ছে।  আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে।  কিন্তু একটা বই হাতে নিলে ১০ মিনিট স্হির থাকতে পারছে না।  আশপাশে তাকালে সেটাই দেখি।  তবে আগামীতে একটা সুখী, সমৃদ্ধ এবং শি¶িত জাতি পেতে আজকের তর“ণ প্রজন্মের হাতে বই তুলে দেয়ার বিকল্প নেই।  একথা সবাই মনে করেন পরিবারই হল মানুষের জীবনে প্রথম এবং গুর“ত্বপূর্ণ স্কুল।  নৈতিক-সামাজিক যত ধরনের গুণাবলি আছে সবকিছুর শি¶াই হতে হবে পরিবার থেকে।  ছোটবেলা থেকেই সন্তানের হাতে তুলে দিতে হবে বই।  একটি সৃষ্টিশীল বই সন্তানের মনোজগতকে প্রভাবিত করবে।  আলোড়িত করবে ভেতরের জগতকে প্রচÊভাবে।  বয়স অনুযায়ী বইগুলো সন্তানের হাতে নিয়মিত তুলে দিতে হবে।  খেলাধুলা, পারিবারিক বিনোদনের পাশাপাশি মনের বিকাশের জন্য বইয়ের বিকল্প নেই।  ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের ভালো মননশীল বইয়ের প্রতি উৎসাহী করে তোলা উচিত।  বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পাঠাগার এবং পাঠচক্র বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।  পাঠাগারকে শুধু শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।  বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে পাঠচক্র।  পাঠচক্রগুলো স্কুল-কলেজ, সংগঠন বা মহল­াভিত্তিক হতে পারে।  পাঠচক্রের মাধ্যমে বইপড়া এবং বই নিয়ে আলোচনা দুটিই হয় বলে বেশ কাজে দেয়।

মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে।  দুর্ভাগ্যের বিষয় দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে।  মানুষ এখন বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি, সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই অবসর কাটায়।  অথচ আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।

সোশ্যাল সাইটের নানা বিষয়

02_2একটা সময় ছিল যখন মানুষ তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে সাত-পাঁচ ভাবত।  এমন অনেক ঘটনাও ঘটেছে একবার দেখাতেই প্রেম হয়েছে কিন্তু তা কখনই প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।  মনের ভালোবাসা মনের মধ্যেই চাপা পড়ে যায়।  এখনকার ছেলে মেয়েরা এ¶েত্রে অনেক এগিয়ে।  একটুও সময় নেয় না মনের কথা বলতে।  ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়।  দ্র“ত একসেপ্ট না হয় রিফিউস।  আর এই প্রেমে ব্যর্থ হওয়া এখনকার প্রজন্ম যেন গায়েই মাখে না।  ভাবখানা এমন এটা কোনো ব্যাপারই না, মজার বিষয় হলো এখন প্রেম শুর“ হয় ফেসবুক দিয়ো আবার ভাঙ্গেও ফেসবুকের কারণে।  এমন ঘটনাও ঘটছে যে, প্রেমিক-প্রেমিকার কখনও সামনাসামনি দেখাও হয়নি।  শুধুমাত্র ফেসবুকে ছবি দেখে পরিচয় আবার বনিবনা না হওয়ায় ফেসবুকেই সম্পর্ক শেষ।  বন্ধুত্ব কিংবা ঝগড়াঝাটি হয় ফেসবুকের স্ট্যটাসে অথবা ছবি পোস্টকে কেন্দ্র করে।  উত্তর-প্রতিউত্তর কিংবা প্রতিবাদ সবই হচ্ছে সোশ্যাল সাইটকে ঘিরে।

দিন যতই যাচ্ছে মানুষ তত বেশি কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ছে।  এর মাঝেও কিছু কিছু বিষয়ের ¶েত্রে যেন মানুষ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।  তেমনি কিছু ঘটনার স্বা¶ী সোশ্যাল মিডিয়া।  ছোট্ট দু’লাইনের একটি চিঠি ফেসবুকে পোস্ট করে মিসরের এক কিশোরী আজ বিশ্বখ্যাত।  কায়রোতে সরকার পতন আন্দোলনে যখন তুঙ্গে তখন এক কিশোরী তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমি চললাম তাহরির স্কয়ারের দিকে। ’ ছোট্ট এ লাইনটি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল সোশ্যাল মিডিয়াতো বটেই পুরো বিশ্বে।  দু-এক লাইনের এ চিঠিগুলো আকারে ছোট হলেও তার প্রভাব অনেক বেশি।  আর সবই হচ্ছে বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে।

প্রসঙ্গ প্রিন্ট মিডিয়া!

Reading-News-Paper-Cartoonঅনলাইন নিউজ পোর্টালের দৌরাত্মে সারাবিশ্বেই প্রিন্ট মিডিয়ার সাকর্ুলেশন কমছে।  বিশ্বের নামিদামি পত্রিকাগুলোর সার্কুলেশন কমে যাওয়া, মালিকানা পরিবর্তন হওয়া সহ গত কয়েক বছর ধরেই প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ে নানান খবর পাওয়া যাচ্ছে।  তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া সবসময়ই থাকবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।  তবে পত্রিকার বিক্রি কমায় হতাশ মালিকরা।  সম্প্রতি বাংলাদেশের পত্রিকার জগতেও কারো কারো প্রচারসংখ্যা কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।  এ অবস্হায় অনলাইন পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকরা বলতে শুর“ করেছেন, প্রিন্ট মিডিয়ার দিন শেষ।  এখন শুধু অনলাইন পত্রিকা থাকবে।  কিন্তু তাদের জন্য একটি অপ্রিয় ঘটনা হলো অনলাইন হয়ে যাওয়া বিখ্যাত সাময়িকী নিউজউইক আবার প্রিন্ট মাধ্যমে ফিরে এসে ভালো করেছে।  অনলাইন মিডিয়ার প্রসার যেকোনো দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রমাণ এবং নাগরিকদের আধুনিক চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন।  তবে অনলাইন পত্রিকার জগৎও আরো বিস্তৃত হলেও টিকে থাকবে প্রিন্ট মিডিয়া- এমনটিই ভাবছেন কেউ কেউ।  একথা সত্যি যে, অনলাইন মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, অনেকেই তা মনে করছেন।  কারণ এখন মোবাইল টেলিফোন সেটে তাৎ¶ণিকভাবে সদ্য খবরটি জানা সম্ভব।  ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নোটবুক, স্মার্টফোন ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস এখন অনেকেরই নাগালের মধ্যে।  ফলে পরদিনের ছাপা পত্রিকার জন্য অপে¶া করার প্রয়োজন নেই।  এমনকি টেলিভিশনের গুর“ত্বও কমে গেছে অনেকের কাছে।  সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বেড়েছে।  গ্রামাঞ্চলেও ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।  অনেকে ব্যবহার করার সুযোগ না পেলেও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।  প্রিন্ট মিডিয়াকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশে একশোরও বেশি অনলাইন দৈনিক পোর্টাল রয়েছে।  পাঠক হয়তো ব্রাউজ করে পাঁচটি বা ১০টির মতো।  আবার পেশাগত দ¶তা রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটির।  এই হিসাবে তাদের পাঠকসংখ্যা কত? কোনো বিশ্বাসযোগ্য জরিপ হয়নি এ বিষয়ে।  ধারণা থেকে বলা যায় এই ১০০টিরও অধিক পোর্টাল পত্রিকার পাঠক ৫০ হাজার থেকে এক লাখ।  এর একটা বড় সংখ্যা কিন্তু প্রবাসীরা।

হারিয়েও যাবে এটা বলা যাবে না

ASAD-CH-(29)কবি আসাদ চৌধুরী

সাহিত্যের মূল রসদটা হচ্ছে হাতে নিয়ে একটি বই পড়া।  নতুন একটি গল্প কিংবা নতুন একটি উপন্যাস পড়ার মধ্যে সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে যে আনন্দ রয়েছে সেটা বোধকরি আর কোথাও পাওয়া যাবে না।  তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাহিত্যপ্রেমী পাওয়া খুবই মুশকিল।  তারা স্যোশাল মিডিয়ায় সময় বেশি কাটায়।  সাহিত্য পড়ার অভ্যাস কিংবা সময় তাদের মধ্যে নেই।  তারা যদি ইন্টারনেটেও বই পড়ে থাকে তাহলেও আমাদের আগামীর সমাজটা অন্যরকম হয়তো হবে।  কিন্তু দু:খের বিষয় আমরা সেটা কতোটুকু করতে পারছি তা বলা মুশকিল।  প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদাটা এখন যেমন আছে তেমন হয়তো সামনের দিনগুলোতে থাকবে না।  তবে হারিয়েও যাবে এটা বলা যাবে না।  একসময় স্যাটেলাইট টিভির সংখ্যা বাড়ার সময় বলা হয়েছিল পত্রিকার উপর প্রভাব পড়বে।  কিন্তু আসলে কি প্রভাব পড়েছিল? বোধকরি না।  বরং, পত্রিকা আরো আধুনিক হয়েছে।  চিঠি যেমন একসময় ছিলো এখন নেই বললেই চলে।  তাই বলে মানুষ কী বর্তমানে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে? হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, মানুষের যোগাযোগ অনেকটা শর্টকার্ট হয়েছে।  এতে করে মানুষের সম্পর্কের মধ্যে আবেগ কমে গেছে।  এখন কথা হচ্ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার তো আমাদের করতেই হবে, সময়ের সঙ্গে আমাদেরও চলতে হবে।  তবে আমাদের পারিবারিক- সামাজিক সম্পর্কগুলোর দিকেও ল¶্য রাখতে হবে।  আমরা কী বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি কিনা সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হবে।

এটাই প্রমাণ করে ছাপা বইয়ের আবেদন বেশী

nasrin-jahan-copyনাসরীন জাহান, কথাসাহিত্যক

একটি বই হাতে নিয়ে পড়ার যে আনন্দ কিংবা নতুন একটি বইয়ের যে ঘ্রাণ সেটা কখনোই অনলাইনে পড়ে পাওয়া যাবে না।  তবে এটা সত্যি যে, এখন মানুষ অনলাইনে পড়ার প্রতিই বেশি ব্যস্ত।  কিন্তু প্রতিবছর বইমেলায় হাজার হাজার পাঠকের উপস্হিতিই বলে দেয় ছাপা বইয়ের কি পরিমাণ আবেদন।  আরেকটা কথা এখানে না উলে­খ করলেই নয় তাহলো গত কয়েক বছর ধরেই ল¶্য করছি বইমেলায় বিভিন্ন ব­াগারদের লেখা বই প্রকাশিত হয়ে থাকে।  তাদের বিভিন্ন সময়ে লেখাগুলো একসাথ করে একটি বই প্রকাশ করে থাকেন।  এখন কথা হচ্ছে- অনলাইনেই যদি একটি লেখার প্রকাশ হওয়ার পর পরিপূর্ণতা পেয়ে যেতো তাহলে সেটা আবার প্রিন্টেড ভার্সনে কেন? তারমানে ছাপার বইয়ের আবেদন আছে।  আমি আমার অনেক বন্ধুকেই দেখেছি একটি বই অনলাইনে পড়ার পর সেটা কালেকশনে রাখার জন্য সেটা নানানভাবে সংগ্রহ করে থাকে।  তারমানে প্রিন্টেড বইয়ের আবেদন আছে।  আমার বিশ্বাস এই আবেদনটা থাকবে।  আমরা যতোই অনলাইন কিংবা প্রযুক্তি নির্ভর হই না কেন- ছাপার অ¶রে প্রকাশিত বই পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

সকালের চায়ের কাপে একটি পত্রিকার জায়গা কেউ নিতে পারবে না

ABUAL-HAYATআবুল হায়াত, নাট্যজন

সময়ের সঙ্গে পাল­া দিয়েই আমাদের চলতে হবে।  সময়টা এখন প্রযুক্তির এবং ইন্টারনেটের।  পুরো পৃথিবীর দূরত্ব কমে গেছে প্রযুক্তির কল্যাণে।  বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদেরও প্রযুক্তি নির্ভর হতে হবে।  এখন আমাদের ল¶্য রাখতে হবে- প্রযুক্তির ভালো দিকের চাইতে আমরা খারাপটা নিয়ে বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি কিনা।  এখন ফেসবুকের কথাই যদি বলি সারাবিশ্বে ফেসবুক দিয়ে অনেক জনকল্যাণমুখী কাজ করা হয়।  কিন্তু আমাদের এখানে দেখলাম শুধু স্ট্যাটাস দেয়া এবং ছবি আপলোড করাই হচ্ছে ফেসবুকের কাজ।  অথচ, সামাজিক যোগাযোগ সাইট যে কতো শক্তিশালি ভূমিকা পালন করতে পারে তা বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র দেখলেই বোঝা যায়।  তাই         প্রযুক্তিটা ব্যবহারের আগে এর ইতিবাচক ব্যবহার জানতে হবে।  আমাদের দেশে এখনো ইউটিউব থেকে টাকা ইনকামের বিষয়ে খুব বেশি মানুষ কিছু জানে না।  অথচ, বিশ্বের অনেকই ইউটিউব থেকে হাজার হাজার ডলার ড়আয় করছেন।  প্রিন্ট মিডিয়া থেকে এখন অনলাইন মিডিয়া শক্তিশালি এটা সত্যি।  তবে আমাদের দেশের প্রে াপটে সব মানুষ তো আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন না।  তাদেরও তো সংবাদ-তথ্য এসব দরকার আছে।  তাদের জন্য তো প্রিন্ট মিডিয়াই ভরসা।  তবে সকালবেলা চা খেতে খেতে নতুন পত্রিকা পড়ার যে আবেদন এটা বোধহয় অন্যকিছু দিয়ে কোনোভাবেই পূরণ হবে না।  সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে এটা ঠিক।  তবে ইতিবাচক দিকে যেনো প্রযুক্তির ব্যবহারটা হয় এটাই আমাদের কাম্য।

আমাগীতে বইয়ের পাঠক আরও বাড়বে

imdadul-Haq-copyইমদাদুল হক মিলন

ইমদাদুল হক মিলন: যারা বইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন আমি তাদের সাথে একমত নেই।  একসময় যখন ভিসিআর-এর আবির্ভাব ঘটলো তখন অনেকে বলা শুর“ করলো এবার সিনেমা শেষ হয়ে যাবে।  কিন্তু সিনেমা শেষ হয়নি।  বরং ভিসিআর হারিয়ে গেছে।  এখন বলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের প্রভাবে বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।  এটাও ভুল ধারনা।  আমি মনে করি আগামীতে বইয়ের পাঠক আরো বাড়বে।  কারন ছাপার অ¶রের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমবে না।  বরং বাড়বে।  কম্পিউটার অথবা মোবাইলে কিছু পড়া আর বইয়ের পাতায় পড়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য।  এ¶েত্রে অবশ্য সময়কে গুর“ত্ব দিয়ে কবি লেখদেরকেও আরও আধুনিক হতে হবে।