Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চ্যানেল আই-এর জন্মদিন কোটি প্রাণে মিশে আমরা এখন ২০-এ

মোহাম্মদ তারেক
একটি লম্বা টেবিল। টেবিলের উপরে রাখা আছে একশ ফুটের একটি বিশাল কেক। তার পেছনে দাঁড়ানো এক কাতারে দল মত নির্বিশেষে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সমাজের সর্বস্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। কেউ কেউ রাজনীতির মাঠে হয়তো চিরশত্রæ, একে অপরকে সহ্যও করতে পারেন না। সভা-সমাবেশে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। অথচ টেবিলটির পেছনে তারাই হাতে হাত রেখে, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে যান বন্ধুর মতো, ভাই- বোনের মতো, প্রিয় স্বজনের মতো। দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল কামনায় পরস্পরের হাত ধরে পরম মমতায় চ্যানেল আই এর জন্মদিনে কেক কাটেন তারা। পরস্পরকে কেক খাইয়ে দেন। চ্যানেল আই-এর জন্মদিনে এসে জাতীয় নেতারা ভুলে যান ভেদাভেদ। প্রতিবছরই চ্যানেল আই-এর জন্মদিনে এমন অনিন্দ্য সুন্দর ঘটনা ঘটে।
এবারও চ্যানেল আই-এর ২০ তম জন্মদিনে অনিন্দ্য সুন্দর সেই ঘটনাই ঘটেছিল। ১লা অক্টোবর চ্যানেল আই-এর শুভ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন সরকার ও বিরোধী দলের শীষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, সমাজসেবী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃস্থানীয় গুণীজন। প্রতিবছরের মতো এবারও সকলে মিলে চ্যানেল আই-এর জন্মদিনের কেক কেটেছেন। সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ পরস্পরের মুখে কেক তুলে দিয়েছেন।
চ্যানেল আই-এর পর্দায় বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর দেশে দেশে অবস্থানরত কোটি কোটি বাংলা ভাষাভাষি মানুষ এই অনন্য সাধারণ দৃশ্য দেখে অভিভ‚ত হয়েছেন। উৎসব মুখর পরিবেশে ১ অক্টোবর মধ্যরাত ১২.০১ মিনিটে কেক কাটার মধ্য দিতে শুরু হয় ২০ বছরে পথ চলার প্রথম প্রহর। এবারের শ্লোগান ছিল ‘কোটি প্রাণে মিশে, আমরা এখন ২০ এ’। পথচলার ২০ বছরের প্রথম প্রহরে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে চেতনা চত্বরের ছাতিম তলায় কেক কাটার সময়টি ছিল অনাবিল আনন্দের। উৎসবেরও বটে।
বিশাল টেবিলে রাখা কেকের পেছনে দাঁড়িয়ে চ্যানেল আই পরিবারের সদস্যবৃন্দ সহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সরকারি ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এক সঙ্গে চ্যানেল আই এর জন্মদিন উপলক্ষে কেকটি কাটেন। তৃতীয় মাত্রা খ্যাত টিভি তারকা জিল্লুর রহমানের মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় জন্মদিনের প্রথম প্রহরে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়–য়া, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, মীর নাসির, সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম (বীর প্রতীক), অপু উকিল, কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রফেসর আব্দুল মান্নান, বদিউল আলম মজুমদার, উপাধক্ষ আব্দুল শহীদ, জাবেদ পাটোয়ারী, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল ওয়াব, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, মুকিত মজুমদার বাবু, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজা, রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফারজানা ব্রাউনিয়া সহ নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
১লা অক্টোবর সকালে ছিল আকাশে কড়া রোদ। গরমে হাসফাঁস অবস্থা। তাতে কী? চ্যানেল আই-এর জন্মদিন বলে কথা। চ্যানেল আই পৃথিবীতে বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল টিভি চ্যানেল। যার শ্লোগানÑ ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ।’ কাজেই হৃদয়ের টানেই সকালে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হাজির হতে থাকলেন দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। রাতে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে অনেককেই দেখা গেল ফুল হাতে এসেছেন চ্যানেল আই পরিবারকে আবারও শুভেচ্ছা জানাতে। ততক্ষণে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ সেজেছে নতুন সাজে। বিরাট মঞ্চ তৈরি। মঞ্চের সামনে বিশাল সাইজের লম্বা কেক অপেক্ষা করছে। সঙ্গে উড়ার অপেক্ষায় আছে লাল-সবুজ রঙের বেলুন।
চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রদান শাইখ সিরাজ, পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, মুকিত মজুমদার বাবু সহ চ্যানেল আই পরিবারের সদস্যবৃন্দের সঙ্গে মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আমজাদ হোসেন, আসমা আব্বাসী, সেলিনা আজাদ, লেখক ও চিন্তাবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ, কেরামত মাওলা, মো: খুরশীদ আলম, ফেরদৌস আরা, শফি মন্ডল সহ নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ।
Channel-i-1‘চ্যানেল আইয়ের আজ জন্মদিন আনন্দ ভরা সেই শুভদিন’ গানের সঙ্গে সকাল ১১.৩০ মিনিটে একঝাঁক লাল-সবুজ বেলুন উড়ানো হলো। তারপর সকলে চ্যানেল আই-এর জন্মদিনের কেক কেটে পরস্পরের মুখে তুলে দিলেন। সত্যি এ এক অনাবিল আনন্দময় দৃশ্য। চ্যানেল আই এর পক্ষেই এমন হৃদয় ছোঁয়া পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। জন্মদিনের কেক কাটার পর বিশাল মঞ্চে শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। ততক্ষণে গোটা চ্যানেল আই চত্বর যেন মিনি বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। প্রিয় চ্যানেল আই-এর ২০ তম জন্মদিনে দেশের বিভিন্ন অঙ্গণের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও উর্ধ্বতনগণ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজ, সম্পাদক ও দেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক সহ আরও অনেকে। সন্ধ্যায় শুভেচ্ছা জানাতে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দিনে হঠাৎ নজর কাড়লো কৃষিজীবী মানুষের একটি ছোটখাটো মিছিল। তাদের হাতে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি। চ্যানেল আই-এর হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের তারা একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই কৃষি পণ্য নিয়েই এসেছেন চ্যানেল আইকে শ্রদ্দা জানাতে। চ্যানেল আই-এর সরাসরি অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন কেউ কেউ। ততক্ষণে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ অতিথিদের ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভেতরে বাইরে কোথাও দাঁড়াবার জায়গাটুকুও নাই। অতিথিরা ফুল, কেক সহ অন্যান্য উপহার নিয়ে আসছেন, প্রিয়জন কাউকে কাছে পেয়েই আড্ডা জুড়ে দিচ্ছেন। মঞ্চে নাচ, গানের একের পর এক পর্ব চলছিল।
কেকা ফেরদৌসীর বাংলার থালার ডিম-খিচুড়ি অ্যাপায়ন চলছিল। দিনব্যাপী চলে উম্মুক্ত মঞ্চ থেকে সংগীত পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন আকরামুল ইসলাম, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস আরা, শফি মন্ডল, ফেরদৌস ওয়াহিদ, মো: খুরশীদ আলম, আগুন, শাহনাজ বেলী, ডলি সায়ন্তী, কোনাল, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ, বাংলা গানের শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ের শিল্পীরা।
বিকেলের দিকে মঞ্চে ওঠেন জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত শিল্পী ও দেশের র্শীষ স্থানীয় ব্যান্ড দল এলআরবির প্রতিষ্টাতা আইয়ুব বাচ্চু। ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’ গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল গিটারের ঝড়। গান-গিটারের মাঝে বলছিলেন চ্যানেল আই নিয়ে নানা কথা, নানা স্মৃতি আর জার্নির গল্প। এমনই একসময় বাচ্চু বলেন, ফরিদুর রেজা সাগরের কাছে এলে আমি বাবার আদর পাই। মঞ্চে ডাকেন ফরিদুর রেজা সাগরকে। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর তখন আগত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলেন। মঞ্চের পাশেই ছিলেন শাইখ সিরাজ। মঞ্চে উঠে এলেন তিনি। তাকে দেখে খুশি হলেন আইয়ুব বাচ্চু। শাইখ সিরাজ আইয়ুব বাচ্চুর কাছে দুটো প্রস্তাব রাখলেন। এক. চ্যানেল আইয়ের একটি নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা। দুই. কৃষকের জন্য একটা গান করা। আইয়ুব বাচ্চু কৌতুকের সুরে বললেন অভিনয় করতে পারি যদি তা ভিলেনের চরিত্রে হয় এবং নায়িকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এত দূরে পালাবো যে নায়ক খুঁজে পাবে না। আইয়ুব বাচ্চু শাইখ সিরাজকে কথা দিলেন কৃষকদের জন্য গান করবেন। আগামী কৃষকের ঈদ আনন্দে কৃষকদের নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর গান শোনা যাবে বলে ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যা ৭টায় আরেকটা কেক কাটা হবে। তার আগেই সরকারি ও বিরোধী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের সকল সেক্টরের নেতৃত্বদানকারী বিশিষ্ট জনের উপস্থিতিতে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ আবারও জমজমাট হয়ে উঠলো। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় শুরু হলো এ পর্বের কেক কাটা অনষ্ঠান। ততক্ষণে চ্যানেল আই-এর জন্মদিন উপলক্ষে বানানো বিশাল সাইজের আরেকটি কেকের সামনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে জননেতা তোফায়েল আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, আলী নেওয়াজ খৈয়ম, আশরাফ উদ্দিন নিজাম, ইকবাল হাসান মাহমুদ, আতাউর রহমান ঢালি, রায় রমেশ চন্দ্র, মোহাম্মদ নাসিম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট স ম রেজাউল করিম, তানভীর সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম অপু, সাদেক সিদ্দিকী, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, হাবিবুর রহমান হাবিব, মো: সিদ্দিকুর রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ড. মো: আব্দুল মজিদ, অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, আনওয়ারুল আলম চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, শামসুর রহমান শরীফ, বীরেন সিকদার, বিজিবির প্রতিষ্ঠাতা ডিজি (অব:) মাঈনুল ইসলাম, অজয় কর খোকন, ড. মো: গোলাম রহমান, গোলাম মোস্তফা, মশিউর রহমান রানা, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, শেখ শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহেদ, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এ কে ফাইয়াজুল হক, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফা ইসলাম পাপিয়া, ফখরুল ইমাম, সুলতান মনসুর, ফজরুর রহমান, লে. ক. এম এ লতিফ খান, আবুল হাসান চৌধুরী, আলমগীর কবির, নূর ইসলাম পাÐু প্রমুখ। কেক কাটার সাথেই আকাশ কাঁপিয়ে শুরু হয় বর্নিল আতশ বাজির কাঙ্খিত সেই মুহূর্ত। বাজি ফুটছে। আনন্দ ছড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরেÑ কোটি প্রাণে মিশে আমরা এখণ ২০-এ। কেক কাটা পর্বের কিছুক্ষণ পর চ্যানেল আইকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় আকাশে ফোটানো হয় বর্ণিল আতশবাজির ঝলকানির মধ্য দিয়ে কামনা করা হয় চ্যানেলটির ২০ বছরের যাত্রাটি যেন আরও মসৃণ ও আনন্দময় হয়।