Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নান্দনিক স্থাপত্য কর্মের প্রতিই ঝোঁক বেশি সালমার

সালমা পারভীন খান। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘ডায়গ্রাম আর্কিটেক্টস নামের একটি ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ৫ বছর চাকরি করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি যোগ দেন ‘সাইফ উল হক স্থপতি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ২০১২ সালে তিনি বুয়েট থেকে আরবান প্লানিং-এর উপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

পাঁচ ভাই, দুই বোনের মধ্যে মেঝ স্থপতি সালমা পারভীন খান। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম, দবির উদ্দিন খান। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ফিরোজা আক্তার গৃহিণী। স্কুলে পড়াকালীন সালমার খেলাধুলার প্রতি প্রচÐ নেশা ছিল। ব্যাডমিন্টন ভালো খেলতেন। ছবি আঁকাআঁকি, সাইকেল চালানো ছিল তার পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকাআঁকির ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আর্কিটেকচার বিষয় সম্পর্কে জানা হয় তার। ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। সালমা পারভীন খান তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮২ সালে। ১৯৮৪ সালে হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে।
স্থপতি সালমা পারভীন খান ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯২ সালে। বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন স্থপতি জালাল আহমেদ ও সাইফ উল হকের অধীনে ‘ডায়গ্রাম আর্কিটেক্টাস’ নামের একটি ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পাঁচ বছর চাকরি করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি যোগ দেন ‘সাইফ উল হক স্থপতি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১২ সালে স্থপতি সালমা পারভীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে আবরান প্লানিং-এর উপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা হোস্টেল, লাইব্রেরি, রিসোর্চ সেন্টার, শিক্ষা প্রকল্প, পোশাক কারখানা, ব্যাংক, অফিস বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের SHah-Cement-1গোবিন্দ গুণালঙ্কার ছাত্রাবাস। দুই পর্যায়ে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় এ প্রকল্পটি। প্রকল্পের স্থানটির বিদ্যমান বৈশিষ্ট্য চাহিদার যোগান দেয়া এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে একটি ছাত্রাবাসের রূপ দেয়া হয় এটিতে। কীভাবে এক সঙ্গে অনেক ছাত্রাবাস করবে এবং কি হবে সেই বাসস্থানের রূপ এই ভাবনাগুলোকে নিয়ে রচিত হয় তার এই কর্মটি। তার আরেক উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে আছে সাভারের ‘আর্কেডিয়া শিক্ষা প্রকল্প’ তার এই প্রকল্পটি একটি বহুমাত্রিক উপযোগী কাঠামো। এটি সকালে শিশুদের স্কুল, অপরাহ্নে মহিলাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং সাপ্তাহিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রসেস-এর লাইব্রেরি এবং রিসোর্চ সেন্টার, বগুড়ায় মহাস্থানগড়ে ফরাসি প্রত্মতত্ত¡বিদদের ক্যাম্প হাউজ, কাকরাইল ও ধানমন্ডিতে এ এল জেড গ্রীণ লেইজ ব্যাংকের ইন্টেরিয়র, বনানীর অ্যানিসকো অফিসের ইন্টেরিয়র, ঢাকায় বাঘা ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের ব্রিটিশ এইড গেস্ট হাউসের রিনোভিশনের কাজ, ঝালকাঠির তালুকদার রেসিডেন্স বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।
সালমা খান তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। বর্তমানে তিনি আরবান প্লানিংয়ের উপর কাজ করছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্বামীর নাম সাইফ উল হক। তিনিও আর্কিটেক্ট। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। স্থপতি সালমা খান বলেন, আমি মনে করি স্থপতির কাজের কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত নয়। বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশ করা উচিত। স্থাপত্যে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন থাকা জরুরি। যেমনÑ পরিবেশ, জলবায়ু, ভৌগোলিক অবস্থান, আরামদায়কতা, মেটেরিয়ালের প্রাপ্ততা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতিব্যবস্থা। আমার বিশ্বাস কার্যকারিতা এবং নান্দনিক ভাবে স্থাপত্যকে প্রকাশের জন্য ডিজাইন প্রসেস চলাকালে প্রচুর সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে ঠিক রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের দিকে নজর দেন স্থপতি সালমা পারভীন খান। এই স্থপতি তার নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সালমা খান বলেন, একজন স্থপতি এবং পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। যাতে করে আরও অর্থবহ বাড়ি এবং স্থাপনা তৈরি করা যায়। শহরে পরিবর্তন দেখতে চাই, যেখানে বাচ্চাদের প্রচুর খেলার জায়গা থাকবে, মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ফুটপাথ ব্যবহার করতে পারবে, প্রচুর সবুজের সমারোহ থাকবে। মোটকথা একটা পরিকল্পিত শহর দেখতে চাই। স্থাপত্য শুধু একটি প্লট, একটি বাড়ি তৈরি নয়, এর চারপাশটাও সুন্দর এবং নান্দনিক হওয়া দরকার।