নবী নেওয়াজ খান। বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন স্থপতি। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আধুনিক স্থাপত্যশিল্পে সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কিগ্রাউন্ড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বনামধন্য এই স্থপতি ইতোমধ্যেই বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার নকশা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছেন। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি শিক্ষকতা করছেন ব্রাক এ অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে। শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। বর্তমানে স্থপতি নবী নেওয়াজ খান বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট (আইএবি) এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
সংস্কৃতি এবং স্থানীয় সহজলভ্য উপাদান- এই বিষয় গুলোকে সন্নিবেশ করার পাশাপাশি সমসাময়িক বিশ্ব স্থাপত্যের আধুনিকতাকেও প্রতিনিধিত্ব করে”- কথা গুলো বললেন স্থপতি নবী নেওয়াজ খান। তাঁর গ্রামের বাড়ি নরসংদী জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তাঁর বাবা মরহুম এ, কে, ডি নেওয়াজ মোহাম্মদ খান একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা দিল আফরোজ খান গৃহিনী। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। উদয়ন বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৬ সালে তিনি বুয়েট থেকে ব্যাচেলর অব আর্কটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর রয়েছে ‘আর্কিগ্রাউন্ড’ নামের স্বনামধন্য একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের একজন অন্যতম কর্ণধার (চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এবিএসএস ফ্যাক্টরি, ম্যাগপাই নিটওয়্যার ফ্যাক্টরি, স্মার্ট নিট ফ্যাক্টরি, রয়েল ক্লাব ভবন, লক্ষ্মীপুরে আস-সালাম জামে মসজিদ, গাজীপুরে সিএ মসজিদ, সিএ নিটওয়্যার হেড অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, এসআইজি হেড অফিসের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, বারিধারায় এন জেড গ্রুপের আবাসিক ভবন, গুলশানে গিয়ার্স গ্রুপের আবাসিক ভবন, বাড্ডায় অবস্থিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সটি ক্যাম্পাস সহ বেশ কিছু ভবনের নকশা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন। এ ছাড়াও তিনি বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
স্থপতি নবী নেওয়াজ খানের নজর কাড়া নকশায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এক অনন্য স্থাপনা আস-সালাম জামে মসজিদ। এ মসজিদটি বাংলাদেশে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর অনন্য নজির। স্থাপনাটি লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় অবস্থিত। শুধু আধুনিক স্থাপত্য শৈলীই নয়, বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এ মসজিদে, যা বাংলাদেশে অন্য কোনো মসজিদে খুব একটা দেখা যায় না। আস-সালাম জামে মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোনো প্রথাগত জানালা নেই। শুধুমাত্র মসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রয়েছে দু’টি সাধারণ দরজা। দিনের বেলায় বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই মসজিদটি সব সময়ই প্রাকৃতিক আলোয় আলোকিত থাকে।
প্রায় ১০ হাজার ৮শ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদটি নির্মাণ করান স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। এই মসজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে ইবাদত করতে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে বসেই রোদ, বৃষ্টি এবং আলো ছায়ার খেলা উপভোগ করতে
স্থাপত্য শিক্ষার্থী ও তরুণ স্থপতিদেরকে উদ্দেশ্য করে স্থপতি নবী নেওয়াজ খান বলেন- আঁকাঝোঁকায় ভালো হবার পাশাপাশি চিন্তা ভাবনায় ও মননে সৃজনশীল হতে হবে, নান্দনিকতা বোধ থাকতে হবে এবং গতানুগতিকতার বাইরে চিন্তা করতে পারতে হবে। স্থাপত্য পেশায় সফলতার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের কোন বিকল্প নেই।
একজন স্থপতিকে সব সময় সমাজ, রাষ্ট্র ও তার চার পাশ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হয় এবং প্রতিনিয়তই নান্দনিক দিক, বিভিন্ন কারিগরি দিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে আপ টু ডেট রাখতে হয়। তিনি একাধারে যেমন স্থানিক তেমনি বৈশ্বিকও বটে।