এ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে স্থপতি নাসরিন আক্তার অন্যতম। ২০০৫ সালে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘এন জেড’ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে তিনি ফাইনান্সে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এবার শাহ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে এই স্বনামধন্য স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্থাপত্যের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য নিরলস স্থাপত্য চর্চা করে যেতে চাই। কথাগুলো বললেন স্বনামধন্য স্থপতি নাসরিন আক্তার।
তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। নাসরিনের বাবার নাম মরহুম মোঃ বশির আহমেদ। মা শাহানা আক্তার গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ছোটবেলায় নাসরিনের ছবি আঁকা আঁকার প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। বাবা-মা চাইতেন তাদের মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু তিনি হয়েছেন সফল একজন আর্কিটেক্ট। ক্রিয়েটিভ কোনো কিছু করার উদ্দেশ্য আর্কিটেক্ট হওয়া তার। মতিঝিল সরকারি গার্লস স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে।
নাসরিন আক্তার ব্যাচেলর অব আকিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন ২০০৫ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর তিনি যোগদেন ইনটেক নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি চার বছর কাজ করেন। ২০০৬ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘এন জেড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ নামের একটি ফার্ম। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে তিনি ফাইন্যান্সে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাংগস রিয়েল এস্টেট-এ দুই বছর কাজ করার পর ব্রাহে এন্ড বেসটেক্ট লিমিটেড এ বেশ কিছু ডেনিশ আর্কিটেকচার প্র্যাকটিস করেন। এছাড়াও তিনি নাভানা রিয়েল এস্টেট, অ্যাসুরেন্স সহ নামকরা ডেভেলপার কোম্পানিতে কাজ করেছেন।
ইতিমধ্যে এই স্থপতি দেশের নামকরা একাডেমী ভবন, মসজিদ, হসপিটাল, হোস্টেল, অফিস বিল্ডিং ডুপলেক্স বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টোরিয়র করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- রংপুরে রুরাল ডেভেলপমেন্ট একাডেমী, স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জেনারেল হোস্টেল, কুমিল্লায় ১০ তলা ড্রিম পার্ক আবাসিক ভবন, চট্টগ্রামে ওয়াসার হেড অফিস, বাড্ডায় ভিস্তা আবাসিক ভবন, বারিধারায় পাপড়ি আবাসিক ভবন, উত্তরায় জামে
স্থপতি নাসরিন আক্তার বলেন আমার কাছে নতুন প্রজেক্ট মানেই নতুন চ্যালেঞ্জ। যতটা সহজতর সাবলীলভাবে মানুষকে একটা ব্যবহার যোগ্য সুন্দর, নান্দনিক ও সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য। আমার কাজ আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। কাজেই আমি স্বস্তি ও শান্তি পাই।
আমি প্রতিনিয়ত শিখছি। প্রতিটি প্রজেক্ট আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে যায়। নতুন মানুষ, তার পছন্দ, তার আবেগ, আমি তার সেই আবেগটাকে বোঝার চেষ্টা করি। মেয়েদের জন্য স্থাপত্য চর্চা খুব সহজ নয়। অনেক
স্থাপত্য চর্চা শুধু কিছু সমাধান আর চাহিদা নয়। এতে আরো অনেক কিছু যুক্ত থাকে। যেমন এর সাথে যে স্থাপনাটি তৈরি হচ্ছে সেটা ঐ এলাকা, দেশ সর্বোপরি পৃথিবীর বুকে কী প্রভাব ফেলবে সবই চিন্তা করতে হয়। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে এ দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন স্থপতি নাসরিন আক্তার। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন তিনি। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান।