মশিউরের স্থাপত্য ভাবনা

দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্যশিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন স্থপতি মশিউর রহমান খান। ২০০৪ সালে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর আগাখান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর ‘আরবানা’ ফার্মে স্থপতি হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে খুলনা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেডিএ) তে যোগ দেন। ২০১০ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্পেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করে অনেকের নজর কেড়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির আজীবন সদস্য। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
প্রতিটি প্রজেক্টের পেছনে কিছু স্বপ্ন থাকে। কিছু গল্প থাকে। আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার সৃজনশীলতার প্রয়োগে সহজ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণভাবে সেই স্বপ্নটা পূর্নতা লাভ করুক। ক্লায়েন্টের চাহিদাকে বাংলাদেশের আবহাওয়া, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জসাপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি সকল স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনে।
সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্থাপত্যের দূরুত্ব কমিয়ে আনার জন্য নিরলস স্থাপত্যচর্চা করে যেতে চাই।
কথা গুলো বললেন, স্থপতি মশিউর রহমান খান। তার গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও-এ। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। মশিউরের বাবার নাম হাবিবুল হক খান। মা রেহানা বেগম। তারা দুজনই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মশিউর। ছোটবেলা থেকেই স্থাপত্যের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ২০০৪ সালে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করার পর পরই যোগ দেন খ্যাতিমান স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর ‘আরবানা’ প্রতিষ্ঠানে। সেখানে বিশ্বখ্যাত এই স্থপতির কাছ থেকে স্থাপত্যের নানা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এ যোগ দেন সহকারি স্থপতি হিসেবে। সেখানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পাঁচ বছর কাজ করেন। এরমধ্যে ২০১০ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতকত্তোর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্পেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মশিউর রহমান খান

ইতোমধ্যে মশিউর রহমান দেশের নামকরা মসজিদ, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, অফিস কমপ্লেক্স, বাংলো, স্কুল, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে বাংলাদেশের প্রথম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পি.এইচ.পি অটোমোবাইলস, নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডি.এন.ডি লেক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, সিরাজগঞ্জে পৌর ভবন, নারায়নগঞ্জ শিমুলিয়া মালুম বাড়ি জামে মসজিদ, জামালপুরের ইসলামপুরে খাঁন বাড়ি মসজিদ, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে প্রেসপার্ক হাউজিং প্রজেক্ট, ঢাকা মাওয়া মহাসড়ক সংলগ্নে ইস্টার্ন ভিলেজ, ল্যান্ড ডেভেল্পমেন্ট প্রজেক্ট, চট্টগ্রামে পশ্চিম মাতার বাড়িতে ১৫ তলা বিশিষ্ট পি.এস.ডি এল হাবিব টাওয়ার, ঢাকায় আইনজীবী সমিতি ভবন, আজিমপুরে দায়রা কমপ্লেক্স ও শঙ্খচিল অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট, তেজগাঁও মনিপুরী পাড়ায় পিমে সিস্টারস স্কুল, জামালপুরে জেলা পলিষদ ডাক বাংলো, রাঙ্গামাটিতে বাংলো বাড়ি, ফরিদপুরের ভাংগায় বাংলো বাড়ি, চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লায় ডি কে সি দে গ্রেন কেসটেল, আফতাব নগরে মোজাম্মেল কটেজ, যশোরে গাড়ি খানা রোডে আলাউদ্দিন টাওয়ার সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।
তিনি টেকসই স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনের ওপর নজর দেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম খোসনুর উমাইরা। এই দম্পতি এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী। মেয়ের নাম মুরসালাত।
স্থপতি মশিউর রহমান খান বলেন, প্রতিট নকশার ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স মেইনটেন্ট করে থাকি। আমার ডিজাইনে প্রতিটি কাঠামো অংশে রেফারেন্স ব্যবহৃত হয়। স্থাপত্য এমন একটি আর্ট যেখানে মানুষের মনের চাহিদা গুলোকে নির্মাণ সামগ্রীর মাধ্যমে সাজানো হয়ে থাকে। আঞ্চলিকতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আলো, বাতাস সঞ্চালনের ব্যবস্থা রেখে ভবনের অভ্যন্তরীন-পরিসর সাজাতে হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানুষের মনের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভৌগলিক অবস্থান অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে স্থাপত্য চর্চা করতে হবে। মানুষের মনের চাহিদাকে নান্দনিক ভাবে উপস্থাপনের জন্য স্থাপত্যিক ধারা অনুসরন করা হয়ে থাকে। স্থাপত্য হতে হবে গণমানুষের কল্যানে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি মশিউর রহমান খান। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি মশিউর রহমান বলেন, স্থপতির সেবাকে আরও অধিকতর জনগনের মধ্যে পৌছে দেয়া, যাতে করে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ উপকৃত হন এবং তাদের জন্য আমরা সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি