শিল্পীরা যখন ডিরেক্টরকে ডিকটেড করে তখন তো অবস্থা এমন হবেই – মাসুদ সেজান, পরিচালক

নাটকে আমরা কী বলছি? কেন বলছি? কেন বলব? কেন বলবো না। নাটকটি সমাজে কী ইমপ্যাক্ট ফেলবে? এই বিষয় গুলো আজকাল মোটেই গুরুত্ব পাচ্ছে না। টেলিভিশন যারা চালান তারা মূলত জনা কয়েক তারকার নাম বলেন। অমুক তমুক তারকার শিডিউল নিয়ে আসো। তথাকথিত জনপ্রিয় তারকার সিডিউল নিতে পারলেই অনেকে ডিরেক্টরের মর্যাদা পাচ্ছেন! অদ্ভুত একটা সময় অতিবাহিত করছি আমরা। তারকার সিডিউল নিতে পারলেই সে ডিরেক্টর। আমি এমনও জানি, দেখেছি এবং শুনেছি একজন তারকার সিডিউল নেওয়ার জন্য কোনো কোনো ডিরেক্টর আক্ষরিক অর্থে তার পা ধরে বসে থাকেন। এবং কোনো না কোনো ভাবে তার (তারকার) সিডিউল নিতে পারলেই সে হয়ে যায় ডিরেক্টর। নাটক বানিয়ে হয়তো সে কোনো টাকা পায় না। তবুও সে খুশি। কারণ ডিরেক্টর হতে পেরেছে। একজন ডিরেক্টর হিসেবে আমি এজন্য বেশ লজ্জা পাই। এই যদি হয় অবস্থা আমাদের নাট্যশিল্পের তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? তথাকথিত জনপ্রিয় শিল্পী অর্থাৎ তারকাদের নীতি নৈতিকতা নিয়ে মাঝে মাঝে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। শিল্পীদের অনেকে টাকার প্রতি এতটাই মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন যে, কে কত টাকা দিচ্ছেন সেটা ভেবেই তারা সিডিউল দেন! কী একটা অদ্ভুত ব্যাপার। স্ক্রীপ্ট কী? গল্প কী? গল্পের মেসেজটা কী? সেটা অনেকেই দেখেন না। কে বেশী টাকা দিচ্ছে? কোন পরিচালককে আমি শিল্পী হিসেবে ডমিনেট করতে পারব সেটা ভেবেই তথাকথিত তারকারা সিডিউল দেন। আমি এমনও শুনেছি অনেক তারকা সেটে গিয়ে নির্ধারিত স্ক্রীপ্ট ফেলে দিয়ে একদম নিজের মতো করে অভিনয় করেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমাদের টিভি নাটকে এক ধরনের জুটি প্রথা শুরু হয়েছে। জুটি প্রথা আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো ন্যাককারজনক জুটি প্রথা আমি দেখিনি। কোনো না কোনো ভাবে একজনের সিডিউল মিললে সাথে সাথে ওই জুটির অন্যজনের সিডিউল পাওয়া কোনো সমস্যাই না। নায়কের সিডিউল নিলে নায়িকা পাওয়া যায়। নায়িকার সিডিউল নিলে নায়ক পাওয়া যায়। এ এক অদ্ভুত ক্যারিকেচার চলছে আমাদের টেলিভিশন নাটকে। নায়ক-নায়িকারা সেটে গিয়ে স্ক্রীপ্ট চেঞ্জ করেন অথবা চেঞ্চ করতে পরিচালককে বাধ্য করেন। নিজেদের মতো করে ডায়লগ বসাচ্ছেন। ডিরেক্টরের কাজ হলো মনিটরের সামনে বসে থাকা। অ্যাকশন আর কাট বলা।
আবার এমনও হচ্ছে অনেক পরিচালক নাটকের সেটে গিয়ে ক্যামেরাম্যানের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যান। ফলে ক্যামেরাম্যানই তখন ডিরেক্টর হয়ে যান। তাহলে ঘটনা কি দাড়াল? একজন আর্টিস্ট ডিরেক্টরকে ডিকটেড করে ক্যামেরাম্যানের প্রতি এই যে সে নির্ভরশীল হয়ে যায়। তাহলে তার কাজটা কী?
সাম্প্রতি সময়ে একটা নাটকের সংলাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেই আমাদের টিভি নাটক নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু এমন ঘটনা তো নতুন নয়। টিভি নাটকে যে যার মতো সংলাপ বলছে, যে যার মতো অভিনয় করছেন। আপত্তিকর সংলাপ দিচ্ছেন। সেটাই ‘টুথ’ ‘টুথ’ শব্দ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। টুথ টুথ শব্দ মানেই অশ্লীল কিছু। আর তাই কোনো নাটকে যদি টুথ টুথ শব্দ না থাকে তাহলে নাকি তার ‘ভিউ’ হয় না। মজার ব্যাপার হলো কিছু এজেন্সি এই ধরনের ব্যাকবোনলেস ডিরেক্টরকেই খুঁজে নিচ্ছে। তারাই কাজ পাচ্ছে। আমি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছি এধরনের সমঝোতায় আমি কাজ করবো না। প্রত্যাশা করেছিলাম আমার সাথে আরও অনেকে হয়তো যুক্ত হবেন। সেভাবে কেউ আসেননি…

  • এই মাত্র পাওয়া