স্থপতি এবং স্থাপত্য গড়ার কারিগর শফিক রাহমান

দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পেযারা দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শফিক রাহ্মান। ২০১২ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪ সালে তিনি সাসটেইনেবল ডিজাইন এর ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন অস্ট্রেলিয়ার দি ইউনিভার্সিটি অব সিডনী থেকে। দেশে এসে নিজে গড়ে তোলেন ‘ত্রিকোন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সিফার্ম। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমানে এই স্থপতি আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষক তার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইম হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
‘আমার পেছনের কাজের অভিজ্ঞতা গুলোকে কাজে লাগিয়ে আরো নিঁখুত, দৃষ্টিনন্দন ও মানুষের হৃদয়স্পর্শী স্থাপত্য চর্চা করতে চাই’Ñকথাগুলো বললেন স্থপতি শফিক রাহমান। তার গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলায়। কিন্তু জন্ম ও বেড়েওঠা রাজশাহীতে। শফিকের বাবার নাম মো: হামিদুল আলম তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ড. গুলনাহার বেগম। স্বনামধন্য একজন শিক্ষক। স্কুলে পড়াকালীন শফিকের ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা। কবিতা আবৃত্তি ছিল তার পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়ার। তিনি হয়েছেনও সফল একজন আর্কিটেক্ট। রাজশাহী থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০১২ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই শফিক যোগ দেন ‘দৃশ আর্কিটেক্টস’ নামের একটি ফার্মে। সেখানে দেড় বছর চাকরি করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করার সময় ‘ক্রোফোর্ড’ এবং ‘আইডিয়াস’ আর্কিটেক্টস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে স্থপতি হিসেবে কাজ করেন।
২০১৫ সালে শফিক রাহমান অস্ট্রেলিয়ার দি ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে সাসটেইনেবল ডিজাইন এর ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তারপর দেশে ফিরে এসে নিজে গড়ে তোলেন ‘ত্রিকোন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। পাশাপাশি শিক্ষকতা করছেন আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্য বিভাগে। বর্তমানে তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারি প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে তিনি।

ইতিমধ্যে তিনি পার্ক, ভ্যাকেশন হাউস, কমার্শিয়াল বিল্ডিং, ফার্ম হাউসসহ বেশকিছু ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনায় বেশকিছু আবাসিক ভবন প্রকল্প, বসুন্ধরায় নির্মাণাধীন আবাসিক প্রকল্প, রাজশাহীর সবুজ প্রাঙ্গন অন্যতম। স্থপতি শফিক রাহমান কিছু সরকারি প্রকল্পেও কাজ করেছেন। যেমনÑরাজশাহীতে ১৪ একরের একটি পার্কের ডিজাইন, নাটোরের উত্তরা গণভবনের ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, মুন্সিগঞ্জের ভ্যাকেশন হাউজ ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি কাজ করেছেন বেশকিছু ইন্টেরিয়র প্রজেক্ট, কমার্শিয়াল মিক্সড হাউজ বিল্ডিং ও ফার্ম হাউজ প্রকল্পের। বর্তমানে তিনি বেশকিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। শফিক রাহমান তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন।
স্থপতি শফিক রাহমান বলেন, আমি স্থাপত্যচর্চা করি ভালোলাগা ও স্থাপত্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে। কিছু মৌলিক উপকরণ যেমন, ফাংশন, জলবায়ু, সংস্কৃতি, পরিবেশ বান্ধব, এই বৈশিষ্ট্য গুলো প্রতিটি স্থাপত্যেরই মৌলিক বিষয়। কিন্তু এই উপকরণ গুলোর প্রকাশ মাধ্যম বা প্রকাশের ধরণ এক একজন স্থপতির ক্ষেত্রে একে রকম। আমি মনেকরি মৌলিক বৈশিষ্ট্য গুলোর বাইরেও স্থাপত্যের অন্যতম ভিত্তি হলো যে মানুষের জন্যে স্থাপত্য, সে মানুষের মনের সাথে স্থাপত্যের স্বম্পর্ক স্থাপন। তাই স্থাপত্যচর্চায় আমার প্রচেষ্টা থাকে এমন কিছু স্পেস তৈরি করার যা মানুষের হৃদয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। আর আত্মার সাথে স্থাপত্যের এই সম্পর্ক তৈরি করতে আমি আলো, বাতাস, ছায়া স্পেসের স্কেল, দৃশ্য মান সম্পর্ক, মেটেরিয়াল ও রং নিয়ে কাজ করি। সু² বিষয় গুলোকে ডিজাইন করি আমার স্থাপত্যে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি শফিক রাহ্মান। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাজে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলোÑশিক্ষার্থীদের ভালো স্থপতি হিসেবে গড়ে তোলা এবং তার পেছনের কাজের অভিজ্ঞতা গুলোকে কাজে লাগিয়ে আরও নিঁখুত, দৃষ্টি নন্দন ও মানুষের হৃদয়স্পর্শী স্থাপত্য চর্চা করতে চান। পাশাপাশি তার ইচ্ছা রয়েছে দুঃস্থ ও অবহেলিত মানুষের জন্য হিউমেনেটেরিয়ান আর্কিটেকচারে কাজ করার। এছাড়াও এই স্থপতির স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থাপত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি