এখন আমি ট্যুরিজম নিয়েই কাজ করছি!

শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাহ্ মেরিন গ্রæপ

আনন্দ আলো: আপনি তরুণ ব্যবসায়ী। বিলেত থেকে ফিরে এসে আপনি ট্যুরিজম ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন-জানতে চাই আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: আমি ২০১০ এ বাংলাদেশে ফেরত এসেছি ইংল্যান্ড থেকে বেসিক্যালি প্রাইভেট সেক্টরে মেরিন এডুকেশনকে ফ্ল্যারিশ করার জন্যে। এর পরে বিজনেস ডাইভার্সিফিকেশন করার জন্যে রিসোর্ট ব্যবসায় এসেছি আমি। আমাদের নদীমাতৃক দেশ। ট্যুরিজম বলতে আমরা সাধারণত সাগর আর পাহাড়কে বুঝি। এর থেকে একটু ভিন্নতা এনে ঢাকার কাছাকাছি হেমায়েতপুরে একটি ফাইভ ষ্টার মানের রিসোর্ট গড়ে উঠছে। প্রি ওপেনিং কাজ চলছে। মানুষ জন ইতিমধ্যেই সেখানে যাচ্ছেন। বেসিক্যালি এখন আমি ট্যুরিজম নিয়েই কাজ করছি।
আনন্দ আলো: মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কেন আপনি ট্যুরিজম এই সেক্টরে এলেন?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: আমি বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে গিয়েছি। ১০০ টিরও বেশি সিটির কৃষ্টি, কালচার, লোকালয় দেখেছি। ট্রাভেল করতে করতেই এই সেক্টরের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়েছে। এর সাথে আরেকটা ব্যাপার হলো- আমরা যেখানে রিসোর্ট গড়ে তুলছি তার বিপরীতে আছে ট্যানারি। সেখানে সবাই ফরেনাররা আসছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বিদেশীদের থেকে যে সার্ভিস আমি পেয়েছি বা যে সার্ভিস তারা এক্সপেক্ট করে আমি মনে করি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব অনুভব করছি তাদেরকে কিছু দেওয়ার।সার্ভিস লেভেলটা উন্নত মানের করার বোধ থেকেই আমি এই রিসোর্ট গড়ে তুলছি। ঢাকায় এতো যান্ত্রিক জীবন হয়ে গেছে যে, অনেকে ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারেন না। কক্সবাজার যেতে হলে দুই তিনদিনের ছুটি নিতে হয় বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন বা অন্যান্য যারা ষ্টেশন লিভ করতে পারেন না। তাই ঢাকার এতো কাছে আপনি মাত্র ৪৫ মিনিটে শাহ্ মেরিন রিসোর্ট এ চলে আসতে পারবেন। নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য গ্রাম বাংলা দেখতে পারবেন। অনেকে ঢাকায় থাকেন কিন্তু তাদের গ্রামে বাড়ী নেই। গ্রামে যেতে পারেন না। এই জিনিসগুলো তাদের কাছে পৌছে দিতে আমার এই উদ্যোগ।
আনন্দ আলো: শাহ্ মেরিন গ্রæপের পরিকল্পনা কি? আগামী ৫ বছর পরে নিজেদেরকে কোথায় দেখতে চান?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: ৫ বছর পরে আমরা একটা রিনাউন মেরিন একাডেমি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যেতে চাই। শাহ মেরিন রিসোর্টটাকে বেষ্ট পজিশনে নিয়ে যেতে চাই। এর পাশাপাশি আমি ক্রুজ শীপের উপরে তিন বছর কাজ করেছিলাম।
আনন্দ আলো: আস্তে আস্তে বাংলাদেশে কিন্তু ক্রুজ শীপ পপুলার হচ্ছে?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: আমি বলছি ক্রুজ শীপ অর্থাৎ সমুদ্রগামী জাহাজের কথা। সরকার আমাদের পার্টনার হয়ে এটার অনুমোদন দিয়েছে। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে ওই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু রিসোর্টটা কমপ্লিট করার পরে আমি ওই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবো।
আনন্দ আলো: নতুন কিছু করতে গেলেই তো চ্যালেঞ্জ থাকে? আপনারা এই ক্ষেত্রে কি চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়েছেন?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: নতুন কিছু করতে গেলেই তো চড়াই উতরাই, হার্ডেল এই সব খুবই স্বাভাবিক। নতুন কিছুকে লোকে সহজভাবে নিতে চায় না যে- আইন কানুন বা এটি কিভাবে করলে হয়? ব্যাকফলটা কি হবে? এই জন্যে প্রচুর সময় নষ্ট হয় নতুন শিল্প স্থাপনে। আমিও তার ব্যতিক্রম না।
আনন্দ আলো: রিসোর্ট এর ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কঠিন ব্যাপার? তাছাড়া এতো বড় ইনভেষ্টমেন্ট তো সহজ না?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: হ্যাঁ অবশ্যই। কিন্তু ব্যাংক আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। ট্রাষ্ট ব্যাংক ফাইন্যান্স করেছে। সরকারও সহযোগিতা করছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার রোড- যেখানে কোন রোড এগজিষ্ট করতো না। খুব অল্প সময়ে মাত্র দুই বছরে এই রাস্তা করে দিয়েছে।
আনন্দ আলো: পাকা সড়ক?
শাহ্ মমিনুল ইসলাম চৌধুরী: ৫০ পারসেন্ট পাকা সড়ক হয়ে গেছে এবং বাকী ৫০ পারসেন্ট ডাবল ইটের সোলিং যা ত্রান মন্ত্রণালয় থেকে করে দিয়েছে। সহযোগিতা এসেছে কিন্তু ওই যে বললেন, নতুন কিছু করতে- আমাদের ওই রাস্তাটা ছিল না তাই ওটা করতে হয়েছে। হার্ডেল কিন্তু আছে? নতুন উদ্যোক্তা যারা তাদেরকে বলতে চাই- লেগে থাকতে হবে। বাংলাদেশে যেটা নরম্যালি হয় বিদেশ থেকে আমার মত অনেকেই আসেন। তিন মাস ছয় মাস নয় মাস চেষ্টা করে ব্যুরোক্রেটিক প্রসিডিউর বলেন আর বিভিন্ন হার্ডেল বলেন এগুলো দেখে হতাশ হয়ে তারা ফিরে চলে যান। কিন্তু আমি বলবো- না, লেগে থাকলে একদিন দুইদিন তিনদিন পরে সফলতা আসবেই। কষ্ট হবে কিন্তু এটাকে আমি বার্থ লেবার পেইন হিসেবে বলবো- এন্টারপ্রেনারশীপ। প্রচন্ড কষ্টের ব্যাপার। আমরা সবাই সাকসেস ষ্টোরী দেখি- মিষ্টার এক্স সাকসেস, মিষ্টার ওয়াই সাকসেস। বাট সাকসেসের পেছনে যে কতোফেলিউর ষ্টোরি আছে এটা কেউ জানতেও চায় না শুনতেও চায় না। কিন্তু এগুলোর উপরে বই লেখা উচিত।

  • কর্পোরেট অর্থনীতি