বীমা বাজার সম্প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন

মোহাম্মদ কাউছার মুন্সী

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও কোম্পানী সচিব, স্ট্যার্ন্ডাড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সী। বর্তমানে তিনি স্ট্যার্ন্ডাড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এবং কোম্পানী সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বীমা সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় গত দুই দশক ধরে। বীমা পেশাজীবী হিসেবে যোগদান করেছেন দেশি ও বিদেশি বীমা বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা, ট্রেনিং এবং সেমিনার এ। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা ও সাফল্যের সাথে তিনি তার প্রতিষ্ঠান তথা দেশের বীমা সেক্টরে নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সাথে।
আনন্দ আলোঃ করোনার এই দুঃসময়ে ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের সামগ্রীক অবস্থা কেমন?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ সারাবিশ্বের মতো করোনায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। করোনার কারণে বীমা খাতের যে বিপর্যয়, সেটি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে আমি মনে করি। বীমা অর্থনীতির পুনর্গঠন হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মনে রাখতে হবে, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ক্ষনস্থায়ী সমস্যা নয়, অনেক বড় সংকটে আমরা। বীমার সাথে শিল্পখাত ও বানিজ্যের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে; তাই যতক্ষন না শিল্প, বানিজ্য ও আমদানী রপ্তানী স্বাভাবিক না হবে ততক্ষন আমরা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যেই থাকবো। এই সংকটকালে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ ছাড়া উপায় নেই।আমি মনে করি, বীমা উন্নয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ(আইডিআরএ) কর্তৃক আরো শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় কোম্পানী সমূহকে নিলে তার একটা ইতিবাচক প্রভাব বীমাতে পড়বে। আমাদের বীমার অর্থনীতির সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। আমরা অর্থনীতির চাকা যত দ্রুত সচল করতে পারব, ততই মঙ্গল।
আনন্দ আলোঃ আমাদের সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় বর্তমানে ইন্স্যুরেন্স সেক্টরের ভূমিকা নিয়ে কি বলবেন?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় গুলোকে মূলধনে রূপান্তর করণে বীমা কোম্পানি গুলো অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে। দেশের দীর্ঘ মেয়াদি অর্থসংস্থানের জোগানদাতা হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মূলধন গঠন ছাড়াও দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ব্যক্তিক ও পারিবারিক আর্থিক নিরাপত্তা বিধান, ব্যবসা-বাণিজ্যিক ও সর্বোপরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহায়ক সংস্থা হিসেবে বীমা খাতের কোনো বিকল্প নেই।আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে বীমা গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের মোট উৎপাদনে (জিডিপি) বীমার অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) গতিশীল নেতৃত্বে দেশের বীমা খাত অতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প বাস্তবায়িত হলে বীমা খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরো শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
আনন্দ আলোঃ আপনার মতে দেশের আর কোন কোন খাত বীমার আওতায় নিয়ে আসা যায়?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ বাংলাদেশের বীমা বাজার বাস্তবিক অর্থে অতটা সম্প্রসারিত নয়। মূলত বর্তমানে বাজারে যে সকল বীমা প্রোডাক্ট রয়েছে সেগুলোই আরও জনপ্রিয় ও যুগোপযোগী করে তোলা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি । তবে হ্যাঁ, সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিবীমা, স্বাস্থ্যবীমা, শিক্ষাবীমা এবং প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সরকারী ভাবে আগামীতে ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলোর বীমার আওতায় এনে এই শিল্পের চাহিদা ও সম্প্রসারন বৃদ্ধির চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র বীমা ধারণা আরো ফলদায়ক ও কার্যকর বীমা প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশে বিকশিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আনন্দ আলোঃ বীমা খাতে কি কি সংস্কার শক্তিশালী আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ সরকার জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪’ প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল: বাংলাদেশ ২০১৫-এ মানুষের নিরাপত্তা, বার্ধক্যকালীন ঝুঁকি, অক্ষমতা, সামাজিক অবহেলা, বেকারত্ব এবং মাতৃত্বকালীন ঝুঁকির ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে একটি সামাজিক বীমাব্যবস্থা প্রবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সরকারের এ সকল উদ্যোগ মূলত নানা সংস্কার প্রক্রিয়ারই অংশ। আমরা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুলো এক সাথে কাজ করলেই উত্তরোত্তর আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।
আনন্দ আলোঃ ইন্স্যুরেন্স রেগুলারিটি অথরিটি, সাধারন বীমা কর্পোরেশন, ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে এর বাইরে সরকারের কাছে আপনাদের আর কি কি প্রত্যাশা রয়েছে?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ সরকার বীমা খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিয়মিত ভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আমরা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও নানা সম্ভাবনা ও দেখতে পাচ্ছি। তারপরও আমরা আশাকরি বীমা উন্নয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একটি ইনট্রিগেটেড সফ্টওয়ার তৈরি করলে কোম্পানী হতে অপ-ব্যবস্থাপনা দূর হবে। পাশাপাশি কোম্পানী সমূহের জন্য অভিন্ন সার্ভিস রুল, বিদেশে পুন:বীমা বন্ধ করা, অভিন্ন ট্যারিফরুলস তৈরি করা এগুলোও কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবেন।
আনন্দ আলোঃ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি ও দিন দিন বড় হচ্ছে। আগামীর ইন্স্যুরেন্স কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন ?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ যেহেতু নানা ধরনের পজিটিভ সূচকে আমরা দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছি তাই আগামীর সকল ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের বীমা বাজার সম্প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন। বীমা প্রেনিট্রেশন ও ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে সামগ্রীক ঝুঁকি হ্রাস পাবে বলে আমি মনে করি। আগামীতে আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক মানের বীমা প্রোডাক্ট আসা প্রয়োজন। এছাড়াও বীমাশিল্পে আরও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি হলে, আমাদের অর্থনীতিতে বীমার অবদান বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবনী ও গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণকরা সম্ভব হবে।
আনন্দ আলোঃ সম্প্রতি দেশব্যাপি উদযাপিত হল জাতীয় বীমা দিবস। বীমা পেশাজীবী হিসেবে আপনার অনুপ্রেরণা কি?
মোহাম্মদ কাউছার মুন্সীঃ বীমা দেশের একটি সম্ভাবনাময় গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক খাত। দেশে বীমার সম্প্রসারণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে বীমার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি ও জনমনে বীমা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরির উদ্দেশ্যে সরকার ও কর্তৃপক্ষ কোম্পানীগুলো বীমামেলা, বীমা সম্পর্কিত সভা, সেমিনার, শোভাযাত্রা ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে। এ ধরনের আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানি, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, বীমা পেশাজীবীও গ্রাহক গনের পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়। গ্রাহক স্বার্থ ও বীমা শিল্পের বিকাশে এই ধরনের আয়োজনের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং বীমা পেশাজীবী হিসেবে আমি অনুপ্রানিত বোধকরি।

  • কর্পোরেট অর্থনীতি