আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা ছিল, আস্থা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে

শাখাওয়াত হোসেন মামুন

ন্যাচারাল রাইস ব্রান অয়েল কোঃ লিঃ-এর চেয়ারম্যান ও ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রভাতী ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিঃ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন মামুন, ন্যাচারাল রাইস ব্রান অয়েল কোঃ লিঃ-এর চেয়ারম্যান ও ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রভাতী ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিঃ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (ডিবিসিসিআই)’র মহাসচিব। এছাড়াও নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য তিনি বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী ও ব্যবসায়ী মহলে সমধিক পরিচিত। সাম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির আলোকে দেশের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সাথৈ।
আনন্দ আলোঃ আপনি মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বীমা সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করলেও নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আপনার শুরুটা কিভাবে?
শাখাওয়াত হোসেন মামুন। আমি মূলত-ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান। সকলেই জানেন ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগ্রুপ। ব্যবসায় আমি আমাদের পরিবারের থার্ড জেনারেশন। কৃষি, খাদ্য, তৈল, প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট, আইটি ও বীমা ব্যবসায় আমরা প্রায় চার দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি।
আনন্দ আলোঃ আপনার প্রতিষ্ঠিত ন্যাচারাল রাইস ব্রান অয়েল কোঃলিঃ নিয়ে কিছু বলবেন?
শাখাওয়াত হোসেন মামুনঃ রাইস ব্রান অয়েল অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি ভোজ্য তৈল। এটি জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইউরোপের একটি জনপ্রিয় ভোজ্য তৈল। কিন্তু বাংলাদেশে এটি তেমন জনপ্রিয় নয়। আমাদের স্থাপিত রাইস ব্রান ফেক্টরী হতে সুপার রিফাইন তৈল বাজার জাত করি। এটি আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত ভোজ্য তৈল যা ধানের কুড়া হতে উৎপাদন করা হয়। আমরা বিশ্বে চতুর্থ ধান উৎপাদনকারী দেশ, এবং এই তৈল উৎপাদনে আমাদের দেশের বাইরে থেকে কোন কাঁচামাল আমদানী করতে হয় না। আমরা ভোজ্য তৈল হিসাবে আমাদের দেশে উৎপাদিত এই স্বাস্থ্যকর ভোজ্য তৈলটি ব্যবহারে যথেষ্ঠ সচেতন থাকা সত্বেও আমদানী করা নিম্নমানের ভোজ্য তৈল ব্যবহার করে যাচ্ছি। আর আমাদের স্বাস্থ্যকর পন্যটি রপ্তানী হয়ে চলে যাচ্ছে উন্নত দেশে। যেহেতু দেশে তেমন চাহিদা নেই তাই আমাদের উৎপাদিত তেলের একটা বড় অংশ আমরা রপ্তানী করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি সত্যিই শান্তি ও স্বস্থি পেতাম যদি আমাদের উৎপাদিত এক কেজি তেলও রপ্তানি করতে না হতো!
আনন্দ আলোঃ প্যাকেটজাত পন্য নিয়ে আপনার আরও একটি নতুন উদ্যোগ দেশ প্যাসিফিক ফুড নিয়ে কিছু বলুন?
শাখাওয়াত হোসেন মামুনঃ প্যাকেট জাত পন্যে মূলত বাজার সয়লাব হয়ে আছে। কিন্তু আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভোক্তাদের আস্থার অভাব দেখতে পেয়েছি। যেমন- পন্যটি কতটা ন্যাচারাল, এর মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কিনা, উৎপাদন পদ্ধতি বা প্রসেস স্বাস্থ্যসম্মত কি না এমন নানা প্রশ্ন ভোক্তাদের মনে উদয় হয়। আমি ঠিক ঐ জায়গাটায় কাজ করতে চেয়েছি। অতি অল্প সময়ে ঐতিহ্যবাহী ভাইয়া গ্রুপের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড সমূহ- “দেশ, ডুরিয়া, আমার ও এ্যাভরি টাইম” এর পণ্য বাজারে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে । কুকিজ ও টোস্ট নিয়ে আমাদের নতুন ব্র্যান্ড ডুরিয়া। ডাল ও মটর ভাজা নিয়ে আমার আটা, ময়দা, সূজি, চাল, ডাল, তেল, হলুদ, মরিচ ও মসলা নিয়ে দেশ প্যাসিফিক এর পন্য সমূহ এক এক করে বাজারে আসছে।
অত্যাধুনিক মেশিনে প্রস্তুতকৃত প্রিমিয়াম কুকিজ বিস্কিটের মূল্য সাধারন বিস্কিট থেকে একটু বেশী। তা সত্বেও গ্রাহক পর্যায়ে যে সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত। তাছাড়া আমাদের মটর, ডাল ভাজা ও কেক এর ক্ষেত্রে ভোক্তাদের ভালবাসা ও আস্থায় আমরা মুগ্ধ।
ভাইয়া গ্রুপের উপর বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে- এটি আমাদের বিশ্বাস। ইনশাআল্লাহ, আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো বেশ কিছু উন্নতমানের খাদ্যপন্য আমরা উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি। আমাদের সাথে আপনারা আছেন এবং থাকবেন, এই কামনা করছি।
আনন্দ আলোঃ নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকেন কোন অনুপ্রেরনায়?
শাখাওয়াত হোসেন মামুনঃ ব্যবসায়িক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন বা ক্লাব- সবই একে অপরের সাথে যোগাযোগের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমাজে একা কখনোই লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব। সমাজে একা যেমন চলা যায় না তেমনি সমাজে সবাইকে নিয়ে চলার আনন্দটাই আলাদা। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা সমাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আর এই দায়িত্ববোধ থেকেই ছুটে চলি সমাজের সাধারন থেকে গণ্যমান্য সকল মানুষের কাছে।
আনন্দ আলোঃ নিজের সন্তুষ্টি আর সফলতা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শাখাওয়াত হোসেন মামুনঃ আমি মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি এবং সব সময় সৎ থেকে ইতিবাচক কিছু করার চিন্তা করি, এটাই আমার নিজের আত্মসন্তুষ্টি বা সফলতা যাই বলুন না কেন।
আনন্দ আলোঃ বৈশ্বিক দুর্যোগ কোভিড-১৯ এর সময়কালে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মানুষ একটা কঠিন সময় পার করছে, জীবন ও জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সবার। কি বলবেন?
শাখাওয়াত হোসেন মামুনঃ এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যেন মানবিক হই আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি- তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করে দেন, যাতে করে ভালো থাকতে পারে গোটা পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার মঙ্গল করুক।

  • কর্পোরেট অর্থনীতি