আলো, বাতাস, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে জিয়াউল হক অন্যতম। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই পাঁচ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ইন্টার কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। ২০০৪ সালে নিজেই গড়ে তোলেন ‘আর্কিটেক্টস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। ডিজাইনের পাশাপাশি বেশকিছু প্রজেক্টের কনস্ট্রাকশনের কাজও করেছেন তিনি। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। খেলাধুলা ছিল তার পছন্দের বিষয়। ফুটবল ভালো খেলতেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক।
স্থাপত্য একদিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন শিল্প মাধ্যম অপর দিকে এর রয়েছে ব্যবহারিক উপযোগিতা। এই জন্য স্থাপত্যকে বলা হয় ব্যবহারিক শিল্প। বাংলাদেশে স্থাপত্য শিল্পের পথিকৃৎ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম প্রায়ই বলতেন বাংলাদেশের স্থাপত্য হবে আলো, হাওয়া এবং জননির্ভর। নদী মাতৃক এই দেশের স্থাপত্য তাই হতে হবে খোলামেলা এবং ষড়ঋতুকে বিবেচনায় রেখেই। কথাগুলো বললেন স্থপতি জিয়াউল হক। ছয় ভাই বোনের মধ্যে জিয়াউল চতুর্থ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চন্দ্রঘোনায়। জিয়াউলের বাবার নাম শামসুল হক। তিনি কর্ণফুলী পেপার মিলস-এর কর্মকর্তা ছিলেন। মা চেমন আরা বেগম একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের সাথে জড়িত ছিলেন। শিশু সংগঠন খেলাঘর করতেন। স্কুল জীবনে ফুটবল ভালো খেলতেন। ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন।
কর্ণফুলী পেপার মিলস হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮২ সালে। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। জিয়াউল হক ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৩ সালে। পাস করে বের হওয়ার কিছুদিন পর জিয়াউল পাঁচ সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ইন্টার কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। তারপর ১৯৯৭ সালে সিনিয়র স্থপতি ফারুক হোসেনের সঙ্গে ৫ বছর কাজ করেন। ২০০৪ সালে স্থপতি জিয়াউল হক নিজেই গড়ে তোলেন ‘আর্কিটেক্টস লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। ধানমন্ডিতে তিনি খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ারসহ মোট ২০জন কর্মী কাজ করছেন।
স্থপতি জিয়াউল হক বলেন, স্থাপত্য নক্সার ক্ষেত্রে আমি খেয়াল রাখি যাতে ভবনের যে কোনো জায়গা থেকে বাইরের সময়টা অনুভব করা যায়। ভবনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল যে কোনো ভালো স্থাপত্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। স্থাপত্যের ব্যবহারিক দিকটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রয়োজনে স্থাপনাটি নির্মিত হচ্ছে, ব্যবহারকারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে তা ব্যবহার করতে পারেন সেটা সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখতে হবে। কোনো জটিলতা নয় বরং সরল এবং জুতসই নির্মাণ কাঠামো আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। স্থাপত্যের ভাষা প্রকাশের ক্ষেত্রে আধুনিকতা আমার পছন্দ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে ঠিক রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের দিকে নজর দেন স্থাপতি জিয়াউল হক। এই স্থপতি তার নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।