মিতুর স্থাপত্য ভুবন

সুলতানা হক মিতু একজন উদীয়মান মেধাবী স্থপতি। মিতু নামেই তিনি বন্ধু মহলে পরিচিত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৮ সালে বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘প্রফাইল লিমিটেড-এ। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর-এর অধীনে ‘সিস্টেম আর্কিটেক্টস’ নামের একটি ফার্মে যোগ দেন। সেখানে ৩ বছর চাকরি করেন। ২০১১ সালে তিনি দুই সহকর্মী স্থপতি ফেরদৌস হাওলাদার ও ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুর রহমান লিটনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘স্থাপতিক নির্মাণ’ নামের একটি স্থাপত্য ফার্ম। এ যাবৎ তার প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছে। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। এবার শাহ্‌ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্থাপত্যের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য নিরলস স্থাপত্য চর্চা করে যেতে চাই। কথাগুলো বললেন প্রতিভাবান স্থপতি সুলতানা হক মিতু। ইট, কাঠ, বালু ও কংক্রিটের মাঝেই তিনি খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই প্রতিটি স্থাপনায় থাকে সবুজের ছোঁয়া। ঘর-বাড়ি প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজসহ প্রকৃতিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সেঝ স্থপতি সুলতানা হক মিতু। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। জন্ম  ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। সুলতানার বাবার নাম মৃত: মো: শামসুল হক। মায়ের নাম জাহানআরা বেগম। তিনি রূপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। স্কুলে পড়াকালীন সুলতানার ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচণ্ড নেশা। বই পড়া ছিল পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। যেখানেই ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই তাকে দেখা যেত। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এমনকি জাতিসংঘ থেকেও পুরস্কার পেয়েছেন ছবি আঁকার জন্য। ছোটবেলা থেকেই সুলতানা হকের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। স্থপতি হওয়ার পেছনে মায়ের অদম্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা তার কাজে সাহস জুগিয়েছে সব সময়। সুলতানা হক মোহাম্মদপুর গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। এ সময়ে তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি রাসেল, সাথী, নাজলি ও জেবিন। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন স্থপতি ড. সাব্বির আহমেদ ও প্যাট্রিক ডি রোজারিও। স্থপতি সুলতানা হক ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৮ সালে। বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘প্রফাইল লিমিটেড’ নামের একটি ফার্মে। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের অধীনে ‘সিস্টেম আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিন বছর চাকরি করেন। ২০১১ সালে তিনি দুই সহকর্মী স্থপতি ফেরদৌস হাওলাদার ও ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুর রহমান লিটনকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘স্থাপতিক নির্মাণ’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম।

তাদের প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ স্থপতিসহ মোট ৮ জন কর্মী কাজ করছেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, অফিস কমপ্লেক্স, লেব, কমার্শিয়াল টাওয়ার, অ্যাপার্টমেন্টসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মি: টি এইচ ফরহাদ আবাসিক ভবন, উত্তরার শাহরিয়ার জামির অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের কর্ডিয়াল ডিজাইন লিমিটেডের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির ইন্টেরিয়র ডিজাইন, গুলশান উদয় টাওয়ারের ক্রাউন সিমেন্টের অফিস, সাভারের কালিয়াকৈরে মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের ল্যাবরেটরী এবং অফিস, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কাজী এগ্রোর চেয়ারম্যান কাজী সাঈদের একক বাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের ফ্যাক্টরি অফিসের ইন্টেরিয়র, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কর্ডিয়াল চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেনের আবাসিক ভবন, সাভার কালিয়াকৈর মাইক্রো ফাইবার গ্রুপের অফিস এবং ল্যাব ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অ্যাসুরেন্স ডেভলপমেন্ট ইন্টেরিয়র প্রজেক্ট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মি: মতিউর রহমানের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মি: শফি আহমেদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংসহ অসংখ্য অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করছেন প্রতিষ্ঠানটি। সুলতানা হক মিতু তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ২০০৮ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্বামীর নাম জাকির হোসেন মারুফ। তিনি একজন আইটি প্রফেশনাল। এ দম্পতি এক সনৱানের জনক-জননী। আড়াই বছরের ছেলের নাম আরশান যাফির নীলিম।

স্থপতি সুলতানা হক মিতু বলেন, প্রতিটি প্রজেক্টের পেছনে কিছু স্বপ্ন থাকে, কিছু গল্প থাকে। আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার সৃজনশীলতার প্রয়োগে সহজ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণভাবে সেই স্বপ্নটা পূর্ণতা লাভ করুক। ক্লায়েন্টের চাহিদাকে বাংলাদেশের আবহাওয়া, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি সকল স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনে। এই স্থপতি তার প্রতিটি কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান স্থপতি সুলতানা হক মিতু।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি
Comments (০)
Add Comment