Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসেন জিয়াউল

আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্যশিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে জিয়াউল শরিফ অন্যতম। ২০০৩ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘ভূ-মাত্রা কনসালটেন্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতি জিয়াউল শরিফ। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্যশিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন জিয়াউল শরিফ। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে তিনি সব সময় সৃষ্টিশীল চিন্তা করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেঝ স্থপতি জিয়াউল শরীফ। গ্রামের বাড়ি মাগুড়া জেলায়। জন্ম নানা বাড়ি রাজশাহীতে। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম এম এম শহীদুল্লাহ। তিনি অ্যাডভোকেট ছিলেন। মা মৃত: মিসেস শিরিন শহিদ। স্কুল জীবন থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঘাসফুল খেলাঘর আসার করতেন। অভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন। তবে মিউজিকের ওপর ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। ঘাসফুল খেলাঘর আসরের ছেলে-মেয়েদেরকে গান শিখাতেন তিনি। বুয়েটে পড়াকালীন কালচারাল প্রোগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রায়ের বাজার হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯১ সালে। ১৯৯৩ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন কিছু দিন পার্ট টাইম কাজ করেন বশিরুল হক এন্ড অ্যাসোসিয়েট এবং ইন্ডিজেনাস আর্কিটেক্টস এ। ২০০৩ সালে জিয়াউল শরিফ ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি প্রজেক্ট

জিয়াউল শরিফ

পার্টনার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর তিনি খ্যাতিমান স্থপতি উত্তম সাহার তত্ত্ববধানে ‘নন্দন আর্কিটেক্টস-এ যোগ দেন। সেখানে তিনি উত্তম সাহার সঙ্গে র‌্যাংগস নিকেতন সহ বেশ কিছু বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করেন। ২০০৬ সালে তিনি ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট এ স্থপতি হিসেবে যোগ দেন ফাইভ স্টার হোটেল ওয়েস্টিন ঢাকায়। প্রজেক্টের কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৮ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘ভূ-মাত্রা কনসালটেন্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতি জিয়াউল শরিফ।
ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা হোটেল, হসপিটাল, কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, মাদ্রাসা ও এতিমখানা সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে-
রাজশাহীতে প্রথম চার তারকা মানের আবাসিক হোটেল গ্র্যান্ড রিভার ভিউ, নিকুঞ্জ-২ এ হোটেল গ্র্যাস টোয়ান্টি ওয়ান, কক্সবাজার কলাতলী সী বীচ এরিয়ায় হোটেল গ্র্যাস কক্স স্মার্ট, কুমিল্লার কান্দির পাড়ে সিটি গার্ডেন, আফতাব নগরে জি ব্লকে বসত ভিটা রেসিডেন্স বিল্ডিং, ইউনাইটেড সিটির মাদানীর ১০০ ফিটে পারভীন’স রেসিডেন্টস বিল্ডিং, গাজীপুর কালিকৈর এর ফুলবাড়িয়ায় কম্পাস ফাউন্ডেশনের হাফিজিয়া ফাউন্ডেশনের মার্দাসা এবং এতিমখানা, বিজয়নগরে নাভানা গ্রুপের নাভানা স্কাই ওয়ার্ডস ভবনের ইন্টেরিয়র, বারিধারায় মি: ফাহিম’স রেসিডেন্স বিল্ডিং এর ইন্টেরিয়র, গেন্ডারিয়ায় সিটি গ্রুপের আসগর আলী হসপিটাল এর ইন্টেরিয়র, গুলশান-২ এ সিক্স সিজন্স হোটেল এর ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। ২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মিসেস মোহাসিনা আজাদ। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা।
স্থপতি জিয়াউল শরিফ বলেন, রাজশাহীতে প্রথম চার তারকা মানের একটি আবাসিক হোটেল গ্র্যান্ড রিভার ভিউ। ইতিহাস থেকে জানা যায় রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অনেক উন্নত ছিল। ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের নিদর্শন এ অঞ্চলে অনেক রয়েছে। যার মধ্যে পুঠিয়ার রাজবাড়ী, নাটোরের রানীর প্রাসাদ, ছোট সোনা মসজিদ, কুসম্বা মসজিদ উল্লেখযোগ্য। রাজশাহী শহরের বুকে অবস্থিত বরেন্দ্র জাদুঘর ও রাজশাহী কলেজ ভবন স্থাপত্যের সুনিপুন সৌন্দর্য ধারণ করে এখনো দাড়িয়ে আছে অনন্য উদাহরণ হয়ে। যার গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমি ঐ সব ঐতিহাসিক স্থাপত্য থেকে কিছু আর্কিটেকচারাল মটিফ এনে, বর্তমান সময়কে মাথায় রেখে নতুন ভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ও ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ঐ সব মটিফ গুলো এই বিল্ডিংটাতে সংযুক্ত করে একটি উত্তরাধুনিক স্থাপত্য নকশা করেছি। যার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাওয়া অতীত গৌরব নতুন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। যাতে নতুন প্রজন্ম অতীত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। সব ধরনের হীনমন্যতা পিছু ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি সঞ্চার করতে পারে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি জিয়াউল শরিফ। পাশা-পাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন।