Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বাঘের গর্জনে দিশেহারা টিম অস্ট্রেলিয়া

মামুনুর রহমান

প্রথম টি/২০ তে হারের পর বোঝাই যাচ্ছিল অজিরা আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামবে। তবে মিরপুরের উইকেটের সাথে কোন ভাবেই বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেনি আজও। আগের ম্যাচে টিম অস্ট্রেলিয়ার ১০৮ রান। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১২২। নিজের মাঠে বাংলাদেশ যে কত কঠিন প্রতিপক্ষ, আবারও ক্ষতবিক্ষত হয়ে বুঝল অস্ট্রেলিয়া। টানা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অজিদের নাকাল করে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।

এবার অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেট আর ৮ বল হাতে রেখে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তাতে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিক দল এগিয়ে গেছে ২-০তে।
মিরপুরের পিচ ব্যাটসম্যানদের বেশ ভোগাচ্ছে। ১২২ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ধুঁকছে টাইগাররা। অসি বোলারদের তোপে ৫৯ রানের মধ্যে খুইয়ে বসেছে ৪ উইকেট। ৬৩ বলে দরকার আরও ৬৩ রান।

ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ দল। দলীয় ৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় টাইগাররা। সৌম্য সরকার আরও একবার সাজঘরে ফেরেন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে। আগের ম্যাচে করেছিলেন ২, এবার শূন্য রানেই সাজঘরের পথ ধরেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মিচেল স্টার্কের উইকেটের মধ্যে থাকা ডেলিভারি ক্রস খেলতে গিয়েছিলেন, লাইন মিস করে হন বোল্ড।

এরপর নাইম শেখও ১৩ বলে ৯ রান করে জশ হ্যাজলেউডের বলে বোল্ড হয়ে গেলে ২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাকিব আল হাসান আর মাহেদি হাসান মিলে প্রতিরোধ গড়ে অনেকটা এগিয়ে দেন দলকে। মাহেদি অবশ্য বেশ কয়েকবার ক্যাচ তুলে দিয়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। সাকিবের সঙ্গে জুটি হতে থাকে তার। অবশেষে জুটিটি ভাঙেন অ্যান্ড্রু টাই। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন সাকিব। পরের ডেলিভারিতেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে বোল্ড করে দেন অসি পেসার। কঠিন পিচে ১৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে সাকিব করেন ২৬ রান। পরের ওভারেই মাহমুদউল্লাহ ফিরে যান দুর্ভাগ্যজনক আউটে। অ্যাশটন অ্যাগারের টার্ন করা ওয়াইড ডেলিভারি ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন টাইগার দলপতি ০ রানে।

এর আগে দারুণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ-শরিফুলদের তোপে ৭ উইকেটে ১২১ রানেই থেমে যায় অসিদের ইনিংস। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হার। দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংই বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বেশ দেখেশুনে শুরু করেন তাদের দুই ওপেনার অ্যালেক্স কারে আর গ্লেন ফিলিপে।

আজও স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। মাহেদি হাসানকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান তুলতে পারে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ওভারেই নাসুম আহমেদের ওপর চড়াও হন কারে, জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান। তবে পরের ওভারে এসে এই ওপেনারকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন মাহেদি।

ওভারের তৃতীয় বলে ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে কারে ১১ বলে ১১ রান করে ক্যাচ তুলে দেন মিড অফে, নাসুম লুফে নেন সহজ ক্যাচ। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম ওভারেই জাদু দেখান মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারের অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারিতে বোকা বনে যান অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার গ্লেন ফিলিপে।

অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের ঘটনা। ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডার হজম করলেও এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান ফিজ। দ্বিতীয় আর তৃতীয় বলে দেন ডট। চতুর্থ বলেই অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারি। ফিলিপে (১৪ বলে ১০) ছাড়বেন কি খেলবেন, বুঝতে বুঝতেই পেছন দিক দিয়ে উম্মুক্ত হওয়া লেগ স্ট্যাম্প উড়ে যায় মোস্তাফিজের কাটারে।

৩১ রানে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া এরপর দেখেশুনে খেলার কৌশল নেয়। তৃতীয় উইকেটে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়েন ময়েচেস হেনড্রিসক আর মিচেল মার্শ। তাদের ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছেন সাকিব আল হাসান। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবকে সুইপ খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন হেনড্রিকস। ২৫ বলে করেন ৩০ রান।

মার্শ আরও একবার ধরে খেলার চেষ্টা করেন। তবে ভুল করে বসেন শরিফুল ইসলামের বেরিয়ে যাওয়া এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে। ৪২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করা এই ব্যাটসম্যান ক্যাচ আউট হন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের। একশর আগে দলীয় ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ১৮তম ওভারে এসে অস্ট্রেলিয়ার দুঃখ আরও বাড়ান মোস্তাফিজ। টানা দুই বলে তুলে নেন দুই উইকেট। অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ৭ বলে ৪ রান করে লেগ স্ট্যাম্প খালি করে শট খেলতে গিয়েছিলেন, মোস্তাফিজের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে স্ট্যাম্প ওপরে যায়। পরের বলে অ্যাশটন অ্যাগারও হন বিভ্রান্ত। তার গ্লাভসে লেগে বল উঠে যায় ওপরে। উইকেটরক্ষক সোহান সেই ক্যাচ নিতে ভুল করেননি। হ্যাটট্রিক ডেলিভারিটি ওয়াইড দেন মোস্তাফিজ। ফলে সুযোগ ছিল পরের বলে। এবার মিচেল স্টার্কেরও এজড হলেও একটুর জন্য ক্যাচ আউট হননি। শেষ পর্যন্ত ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়া আর পুঁজিটা বড় করতে পারেনি। থেমেছে ৭ উইকেটে ১২১ রানের ছোট সংগ্রহ গড়েই।বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। সমান ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট শরিফুলের।

পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই খেলায় অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দাপুটে জয় পেয়েছে টাইগাররা। টানা দুই জয়ে সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টিম টাইগারদের এই দুর্দান্ত জয়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে আগামী শুক্রবার সিরিজ নিশ্চিত করার হাতছানি সামনে।