সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সৈয়দ ইকবাল: খুবই চিনিত্মত মনে হচ্ছে প্রভাকে। নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে এই চেয়ারে বসছেন তো আবার উঠে দাঁড়াচ্ছেন। হাতের মুঠোফোনটির বাটন চাপতেও দেখা গেলো কয়েকবার। কতক্ষণ মোবাইলে চোখ রাখা আবার কতক্ষণ রেস্টুরেন্টের প্রবেশমুখে তাকানো। অধীর আগ্রহে কারো জন্য অপেক্ষা করছেন। তার এমন আচরণে রেস্টুরেন্টের অন্য মানুষদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই তো সকলেই তার দিকে তাকিয়ে আছেন। খানিকবাদে সেখানে উপস্থিত হলেন হাসিন। তাকে দেখে প্রভার চোখে মুখে কিছুটা স্বসিত্মর চিহৃ ফুটে ওঠে। দু’জনে মুখোমুখি বসেন। কথা বলা শুরু করে। ঠিক এমন সময় একটি ‘কাট’ শব্দ শোনা যায়। স্বাভাবিক হলেন প্রভা আর হাসিন। বোঝা গেলো এতক্ষণ শুটিং চলছিল। ভিড় করা লোকজন চলে যায়। পরিচালক ইয়ামিন জুয়েল দৃশ্যটি আবার প্রভা ও হাসিনকে বুঝিয়ে দিলেন। আবার শুরু হলোশুটিং। কয়েকটি টেকের পর শর্টটি ওকে হলো। এবার ইনডোর শুটিং হবে। তাই পুরো শুটিং ইউনিট ইস্কাটনের রেস্টুরেন্টটি ছেড়ে রওয়ানা দিলো হাতিরঝিলের পাশেই থাকা প্রিয়াংকা শুটিং স্পটে। যাওয়ার পথেই নাটকটি নিয়ে কথা হয় পরিচালক ইয়ামিন জুয়েলের সঙ্গে। নাটকটির গল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি একটি খন্ড নাটক। নাম ‘রাত এখনও বাকি’। একজন লোকের স্ত্রী দু’জন। বর্তমান স্ত্রী এবং সাবেক স্ত্রী। দুই স্ত্রীর দুই ধরনের ক্রাইসিস নিয়ে নাটকটির গল্প এগুতে থাকে। ইতোমধ্যে শুটিং ইউনিট প্রিয়াংকা শুটিং স্পটে পৌঁছে গেছে। বাড়ির ভেতরে দোতলায় একটি কামরা প্রসত্মুত করা হচ্ছিল শুটিং-এর জন্য। এরইমধ্যে নাটকটিতে প্রভা আর হাসিনের স্বামীর চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন সেই অভিনেতা পাভেল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি বললেন, ‘নাটকটির গল্পটা একটু অন্যরকম। আমি মঞ্চ এবং টিভি নাটকে দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করলেও এমন চরিত্রে কাজ করা হয়নি। নাটকটার গল্পে একটা সুন্দর ম্যাসেজ রয়েছে।’
দোতলার সেই কামরা তৈরি হলো দৃশ্য নেয়ার জন্য। ক্যামেরা-ক্রু-পরিচালক এবং আর্টিস্ট সবাই প্রস্তুত। হাসিন রুমে বসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মুখ দেখছিলেস। এমন সময় রুমে প্রবেশ করেন পাভেল ইসলাম। কেউ কারো সাথে কথা বলেন না। দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বোঝা যাচ্ছিল। এক টেকেই দৃশ্যটি ওকে হয়। এরপর নেয়া হয় দু’জনের ক্লোজ শট। পরের শট নেয়ার জন্য ইউনিটের প্রসত্মুতি চলছিল। এই ফাঁকে কথা হয় ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল তথা এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হাসিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফরহাদের (পাভেল) দুই স্ত্রী। জেরিন (প্রভা) সাবেক, সূতপা (হাসিন) বর্তমান। প্রায় পাঁচ বছর আগে জেরিন ছেড়ে গিয়েছিল ফরহাদকে। দীর্ঘ সময় পর জেরিনের মনে হলো, এক রাতের জন্য হলেও ফরহাদকে তার চাই। না হলে সে বাঁচবে না। ফরহাদ আর সুতপা যদি এই প্রসত্মাবে রাজি না হয়, তাহলে আত্মহত্যা করে ফাঁসিয়ে দিবে ওদের। কী করবে এখন সুতপা? নিজের স্বামীকে এক রাতের জন্য জেরিনের কাছে পাঠাবে? ফরহাদও কী রাজি হবে এই প্রসত্মাবে?-এমন গল্পে নিয়েই নাটকটি নির্মিত হয়েছে। খুব ইন্টারেস্টিং গল্প। সূতপা চরিত্রটিতে অভিনয় করতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে।’
বাড়ির নিচে আরেকটি দৃশ্য নেয়া হবে। প্রভা আর হাসিন থাকবে সেই দৃশ্যে। বাড়ির ছাদ থেকে আগে একটা টপ শট নেয়া হলো। এরপর আবার ইউনিট নামলো বাড়ির নিচে। ক্যামেরার সামনে প্রভা আর হাসিন। হাসিনকে বেশ চিনিত্মত দেখা যাচ্ছে। ওদিকে প্রভার চোখে-মুখে ষড়যন্ত্রমূলক হাসি। কিন্তু সেটা আবার হাসিন দেখতে পায় না। দৃশ্যটি সেভাবেই নেয়া হচ্ছিল। দু’জনের কথাবার্তা শেষ হলো। দৃশ্যটির ক্লোজ শট নেয়া হলো। এরপরই কথা হলো প্রভার সঙ্গে। ‘গতানুগতিক নাটকের চাইতে গল্পটা একটু ভিন্ন। কাজটা চ্যালেঞ্জিংও বটে। শুধু তাই নয় আমাদের সমাজে এমন সম্পর্ক বেশ দেখি। কিন্তু এমন গল্প নিয়ে যে নাটক হতে পারে তা হয়তো কেউ ভাবেননি। দুই স্ত্রী আর এক স্বামীকে নিয়ে গল্পটা শোনার পর আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে বললেন প্রভা।
রাত বাড়তে লাগলো। তিনটি দৃশ্য নেয়া বাকি রয়েছে বলে জানালেন পরিচালক। পরিচালকের মুখের এমন কথা শুনে অভিনেত্রী প্রভা বলে উঠলেন, ‘তিনটি দৃশ্য থাকুক কিংবা আরো বেশি থাকুক সেটা তো সমস্যা না। নাটকের নামই যখন ‘রাত এখনও বাকি’…। তারমানে আমাদের শুটিং-এর রাতও বাকি। তাই সারারাত শুটিং চলবে। নাটকের নামের সঙ্গে শুটিংয়ের বাসত্মবতা থাকলো।’ হাসির ছলে বলা প্রভার এই কথা পুরো ইউনিট গ্রহণও করলো। সবাই একবাক্যে বললেন, ‘ঠিক আছে। সারারাত শুটিং চলবে।’ পুরো ইউনিটের মধ্যে আনন্দ দেখা গেলো বেশ। সারাদিনের শুটিংয়ের ক্লানিত্ম কারো চোখে মুখেই নেই। এর প্রধান কারন ছিলো গুছিয়ে কাজ করা। এমনটিই বললেন পরিচালক ইয়ামিন জুয়েল। তিনি বলেন, ‘আমি বেশি প্রেসার নিয়ে কাজটা করিনি। চেষ্টা করেছি সবকিছু আগে থেকেই গুছিয়ে নিতে। শট ডিভিশন করে একদম প্লান অনুযায়ী শুটিং করেছি। এমনকি আমি কোথায় কোথায় শট নেবো সেটাও আগে থেকে সিলেক্ট করে রেখেছিলাম। আর আমি আর্টিস্টদের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছি। তাই কাজটা করে বেশ আনন্দ পেয়েছি। পুরো ইউনিটকে চেষ্টা করেছি যতোটা সম্ভব কম প্রেসার দিতে।’ সেদিন শুটিং শেষ হতে সারারাত লাগেনি। ঘন্টা দুয়েক পরেই শুটিং শেষ হয়। তবে ‘আনন্দ আলো’ টিম শুটিং শেষ হওয়ার আগেই তাদের গনত্মব্যে রওয়ানা দেয়।