পদ্মশ্রী গ্রহণের পর বন্যাদির সঙ্গে ঢাকায় প্রথম দুপুরে— আমীরুল ইসলাম

সংবাদে যখন দেখলাম রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আমাদের প্রিয় বন্যাদি পদ্মশ্রী সম্মাননা গ্রহণ করছেন তখন তিনি খুবই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছ্বল। ঢাকায় বিমানবন্দরে ২৪ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় ল্যান্ডিং। বিমানবাহিনির সদস্যরা তাকে সংবর্ধনা দেবে। বন্যাদি বিমান থেকে নামার পরে প্রচণ্ড হুড়োহুড়ি। সবাই তাকে দেখতে চান। তাঁর সান্নিধ্য চায়। চ্যানেল আইতে সন্ধ্যা ৭ টার সংবাদে লাইভ দিলো চকোর মালিথা। দিদি সেখানে দুহাত তুলে বললেন, এই পুরস্কার আসলে আমরা সবাই মিলে পেয়েছি। স্মরণ করছি প্রয়াত বাবা—মাকে। প্রয়াত গুরু কনিকা বন্দোপাধ্যায়কে। আমার পরিবার, আমার বন্ধুবান্ধব, ছাত্রছাত্রী, ভক্তকুলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই পুরস্কার সবার উদ্দেশ্যে।
এত বিনয়ের সঙ্গে ভদ্রভাবে নিজেকে উপস্থাপন করলেন যা দেখে, সেসব কথা শুনে চোখে জল এসে গেল। বন্যাদি সংবর্ধনা পেয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হলেন প্রায় চারঘন্টা পরে। ক্লান্ত তিনি। কোনোমতে বাড়ি ফিরে ঘুম। সকালে উঠেই টেলিফোনে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ১১ টার দিকে বন্যাদিকে ফোন দিলাম।
আমীরুল কী অবস্থা? তোমার শরীর কেমন?
দিদি ভালো আছি। আপনার পুরস্কার গ্রহণে আমরা প্রচণ্ড খুশি। আমরাও এই পুরস্কারের অংশীদার।
নিশ্চয়ই। তোমরাই আমার ভালোবাসার মানুষ। তোমাদের সঙ্গে রাগ করি। অভিমান করি, ঝগড়া করি—আবার তোমাদের সঙ্গেই মিলেমিশে কাজ করি। দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াই। কত অনুষ্ঠান করি। তোমরাই তো পুরস্কারের অংশীদার।
দিদি বললেন, একটু পরই আমি চ্যানেল আইতে আসছি। তোমরা আছ তো?
দুপুরে হঠাৎ সাগর ভাই মানে ফরিদুর রেজা সাগর বললেন, চলো কন্টিনেন্টালে যাই। তোমার দিদি ওখানে আসবেন। ঝটপট বস—এর গাড়িতে চেপে ছুটলাম শাহবাগ। আমাদের আগেই দিদি এসে বসে আছেন। খাবারের অর্ডার দিয়ে নিচের রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। আমি আর বন্যাদি মুখোমুখি। বন্যাদির পাশে সাগর ভাই। পদ্মশ্রী গ্রহণের পর বন্যাদির সঙ্গে প্রথম মধ্যাহ্নভোজ।

বন্যাদির সঙ্গে আলাপ শুরু হলো।
ব্যাগ থেকে পদক বের করলেন
তিনি। আসল পদক এবং ছোট
আকারে রেপ্লিকা। ভারত জুড়ে
এই পদক দেখালে অনেক সুবিধা
পাওয়া যাবে। অনেক বড় সম্মান
আসলে। বন্যাদি বললেন, ৫২
জন এবার এই পদক পেয়েছেন।
গ্রাম থেকে আসা সাধারণ কৃষকের
গৃহবধূও এই পুরস্কার পেয়েছেন...

আলো আঁধারি রেস্টুরেন্ট। সাগর ভাই আর বন্যাদিকে দেখে হোটেল কর্তৃপক্ষের ছোটাছুটি শুরু হলো। বন্যাদি দেশ বিদেশের বিচিত্র মেন্যু সম্পর্কে বিশদ ধারণা রাখেন। কোন রান্নায় কি কি মশলাদি ব্যবহার করা হয়েছে তা তিনি খুব অনায়াসে বলতে পারেন। স্যুপ, সালাদ, পনির, আলুভাজা এসব শুরুতে। মেইন ডিশ ভেটকি মাছ। শেষে নানা ধরনের আইস্ক্রীম। কমলার জুস, লাচ্ছি আরও নানান পদ। খাবার প্রধান ব্যাপার নয়। বন্যাদির সঙ্গে আলাপ শুরু হলো। ব্যাগ থেকে পদক বের করলেন তিনি। আসল পদক এবং ছোট আকারে রেপ্লিকা। ভারত জুড়ে এই পদক দেখালে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। অনেক বড় সম্মান আসলে। বন্যাদি বললেন, ৫২ জন এবার এই পদক পেয়েছেন। গ্রাম থেকে আসা সাধারণ কৃষকের গৃহবধূও এই পুরস্কার পেয়েছেন। কেউ কাপড়ের কাজ করেন, কেউ ছবি আঁকেন। শত বছরের বৃদ্ধ চারণ কবি, পথে পথে গান করেন। কেউ খেলোয়াড়, কেউ কুমোর—এই পুরস্কার পেয়েছেন।
দিদি বললেন, শুধু মিটুন চক্রবর্তী আর ঊষা উত্থুপকে আমি চিনি। আর কেউ আমার পরিচিত নয়। প্রত্যেককে অনেক যত্ন সহকারে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পুরস্কার দিলেন। প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরকম টুকরো টুকরো কথা আড্ডা চলছে।
সাগর ভাই চুপচাপ। তিনি আড্ডায় আমাদের কথা শুনছেন মন দিয়ে। আর গল্প থেকে নানান প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। কত বিষয় আসছে এই আড্ডায়। দিদি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন। হোটেলের ওয়েটাররাও আমাদের আড্ডার অংশ হয়ে গেলেন। রবীন্দ্রনাথ, বাদশা আকবর, ভবিষ্যত পৃথিবী কোথায় যাবে, মোবাইল ফোন, চিকিৎসা ব্যবস্থা- নানা বিষয়। আড্ডা চলতে লাগল। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। যেন আগুন ঝরে পড়ছে আকাশ থেকে।
দিদি তখন বললেন, দিল্লিতে কিন্তু গরম ঢাকার চেয়ে কম বুঝলে?
আমাদের অফুরন্ত আড্ডা চলতে পারে আরও অনেক দূর। কিন্তু জীবন কোনো এক জায়গায় থেমে যায়। আমাদেরও থামতে হলো। কন্টিনেন্টালের গেটে ঝাঁঝালো রোদ। আমি সাগর ভাইয়ের সঙ্গে গাড়িতে উঠে বসলাম। সামনে বন্যাদির গাড়ি ছুটে চলল। বন্যাদি অনেক বড় শিল্পী।
আমাদের গর্ব। আমাদের আনন্দে তিনি শিশুর মতো হয়ে যান। মহান শিল্পী তিনি। বন্যাদি নরম মনের মানুষ। তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস। ভালোবাসার শক্তি। তাঁর সঙ্গে দেশে বিদেশে অনেক স্মৃতি। আমাদের সংস্কৃতি জগতের এক নক্ষত্র তিনি।

আমীরুল ইসলামফরিদুর রেজা সাগররেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
  • এক্সক্লুসিভ