দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেট জয়ী হওয়ার পর ক্রিকেট দুনিয়ায় ব্রেকিং নিউজ ছিল- বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে নিশ্চিত ভাবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে যোগ্যতা অর্জন বাংলাদেশের জন্য কী খুব সহজ ছিল? বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করার পরই চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখন বলা হয় আর একটি বাধা পেরুলেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলবে। আর সেই বাধা ছিল আরেক পরাশক্তি ভারত। যে দেশের রয়েছে দু’টি বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব। তাই বাংলাদেশের কাছে ভারত বধ হবে অতটা সহজ মনে হয়নি কারো। ২০১৪ সাল সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে ভারত তিনটি ওয়ানডে খেলতে এসেছিল বাংলাদেশে। সেই সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশ হয়। ফেলে আসা দুঃসহ স্মৃতি মনে করেই হয়তো অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন ভারত বধ অতটা সহজ হবে না। তার মধ্যে ভারতের এই দলটি ছিল পূর্নশক্তির। আর তাই পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার পরও বাংলাদেশ যে সত্যিকারেই বদলে গেছে সেটা কয়জনই বা আস্থার মধ্যে নিতে পেরেছিল। কারণ এর আগে বাংলাদেশ হঠাৎ কোন খেলায় জিতলেও পরের খেলায় ফিরে যেত পুরনো হেরে যাওয়া চেহারায়। কিন্তু এবার যেন টাইগারদের অন্য চেহারা। বলতে গেলে অবিশ্বাস্য ভাবে তরুণ ক্রিকেটার মুস্তাফিজের ক্রিকেটীয় কাটার ভেলকিতে প্রথম দুই ম্যাচেই ভারতের সঙ্গে জয়ী হয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। তখন টিভি স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ দেখানো হচ্ছিলোÐ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল আইসিসি র্যাংকিং-এর ৮ নম্বর দল হিশেবে। কিন্তু এই খবরের একদিন পরই সেই হতাশ করা সংবাদ সবাইকে বিব্রত ও নিরাশ করে। সংবাদটি হলো চ্যাম্পিয়ন ট্রফ্রি খেলায় যোগ্যতা অর্জনের জন্য জিম্বাবুইকে নিয়ে পাকিস্তান ও ওয়েস্টইন্ডিজ একটি ত্রিদেশীয় টুনামেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছে আগস্টে। তখনও অর্থাৎ জুলাইয়ে পাকিস্তান-শ্রীলংকার ৫টি ওয়ানডে খেলা বাকী। র্যাংকিং-এর ৯ নম্বরে থাকা পাকিস্তানের ভয় ছিল যদি তারা শ্রীলংকার সঙ্গে সিরিজ হারে তবে শেষ ভরসা হবে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট। এই পরিস্থিতিতে অবস্থা দাঁড়ায় এরকমÐ চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলতে হলে বাংলাদেশের কম পক্ষে একটি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ী হতে হবে। এ এক কঠিন সমীকরণ। এই সমীকরণের সময় বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিল ৮, ওয়েস্টইন্ডিজের ৭ এবং পাকিস্তানের ৯। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সব টিম ১ থেকে ৮ এর মধ্যে অবস্থান ধরে রাখতে পারবে সেই ৮টি টিমই খেলবে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। তাই যত প্রতিদ্বন্দিতা দেখা দেয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে। তরুণদের নিয়ে গড়া পাকিস্তান ক্রিকেট দল শ্রীলংকার সাথে ২-১ ব্যবধানে জয়ী হওয়ার পর তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশে আসে বিশ্বের ১নম্বর টেস্ট ও ৪ নম্বর ওয়ানডে ক্রিকেট দল দক্ষিন আফ্রিকা। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তান ও ভারতকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী একটি ক্রিকেট দল। কিন্তু দু’টি টি২০ ও প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দক্ষিন আফ্রিকার কাছে যেন পাত্তাই পেলনা বাংলাদেশ। হঠাৎ ক্রিকেটারদের এমন বাজে পারফরমেন্সে হতাশ দেশের প্রতিটি মানুষ। সবার মুখে একই প্রশ্নÐ তাহলে কী বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলতে পারবে না? সামনেই ঈদ। এমন খুশির সময়ে কী সুখবর পাবেনা দেশের মানুষ? ওদিকে পাকিস্তান দু’টি ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলংকাকে পরাজিত করে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আর একটি ম্যাচ জিতলেই তারা টিকিট পেয়ে যাবে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। টান টান এমন উত্তেজনার সমীকরণে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে পরাজিত করে দক্ষিন আফ্রিকাকে। তৃতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে হারিয়ে নিশ্চিত করে সিরিজ জয়। প্রায় একই সময়ে শ্রীলংকার সঙ্গে ৫-২ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে পাকিস্তান। তখন বাংলাদেশের ওয়ানডে র্যাংকিং ৭ এবং পয়েন্ট ৯৬, অন্যদিকে পাকিস্তানের র্যাংকিং ৮ এবং তাদের পয়েন্ট ৯০। ওয়েস্ট ইন্ডিজের র্যাংকিং ৯ তাদের পয়েন্ট সংখ্যা ৮৮। এই সমীকরণে বাংলাদেশ এখন নিশ্চিত ভাবে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ঘোষনা করে তারা জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ত্রিদেশীয় টুনামেন্টে অংশ নেবে না।
চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে বাংলাদেশ আর নেই কোনো সংশয়
- ক্রীড়া বিনোদন