নারী বলেই কী একথা মনে হল? জয়া আহসান

মায়ের স্তনে শিশুর মুখ এর চেয়ে স্বস্থিকর, আনন্দময় দৃশ্য বোধকরি পৃথিবীতে আর একটিও নাই। শিশু মায়ের দুধ পান করছে, তার মানে জীবনের শক্তি সঞ্চয় করছে শিশুটি। সে কারনেই দৃশ্যটি সুন্দর। অথচ নারীর খোলা স্তন মানেই অশ্লীল কিছু। কিন্তু ওই খোলা স্তনে শিশুর মুখ দেখলেই নারীর প্রতি অজান্তে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ¯্রােত বয়ে যায়। একবার একটি রেল স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। মালগাড়ির আড়ালে বসে এক মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেকেই। কিন্তু কেউই ওই মায়ের দিকে একবারও অশোভন দৃষ্টি দিল না। বরং শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসছে, যাচ্ছে সবাই। কিছুক্ষণ পর ওই মায়ের দিকেই অনেকের লোলুপ দৃষ্টি লক্ষ্য করলাম। এবার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না তিনি। অথচ তার বুক খোলা। খোলা বুকে খোলা স্তনের প্রতিই অনেকের লোলুপ দৃষ্টি। আমাদের শরীরের কত কিছুই তো খোলা থাকে। হাত, পা, নাক মুখ চোখ সবই তো খোলা থাকে। তাহলে বুক খোলা থাকলে ক্ষতি কী? পুরুষদের অনেকেই তো বুক খোলা রেখে খায় দায়, ঘুমায়, আড্ডা দেয়। বাজারঘাট পর্যন্ত করে। কিন্তু মেয়েদের বেলায় এটি অপরাধ। চরম অশ্লীলতা। বুক খোলা মেয়ে মানেই চরম বেয়াদব। সমাজ নষ্ট করার জন্য এরাই যথেষ্ট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগেও আনন্দ আলোয় প্রায় প্রতিদিন পাঠকের চিঠি আসে। এমনি এক চিঠির কথা উল্লেখ করতে চাই। নরসিংদী থেকে শিহাব আহমেদ নামে একজন তার চিঠিতে লিখেছেন, প্রিয় সম্পাদক, আনন্দ আলো একটি পারিবারিক বিনোদন পত্রিকা। সে কারণে এই পত্রিকার বিষয়বস্তু নির্বাচনে অনেক ভাবনা চিন্তা করা হয়। ইদানিং আমাদের সমাজে, পারিবারিক জীবনে এমন কিছু খোলামেলা ঘটনা ঘটছে তা আনন্দ আলোয় উঠে আসা জরুরি মনে করছি। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের প্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের একটি সিনেমার দৃশ্যের কথা বলতে চাই। এটি ভারতের কলকাতার সিনেমা। আমাদের জয়া আহসান একটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে সাহসী অভিনয় করেছেন। ওই ছবির একটি বিশেষ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দৃশ্যটি এরকম ‘জয়া আহসান তার সহকর্মী একজন পুরুষ অভিনেতার সাথে অভিনয় করছেন। দেখেই বোঝা যায় পুরুষ চরিত্রটি আলাভোলা টাইপের। ভালো-মন্দ কিছুই বোঝে না। নদীর ধারে খোলা জায়গায় দু’জন পুরুষ ও মহিলা খুনসটিতে ব্যস্ত। হঠাৎ মহিলাটি পুরুষটিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেন এবং পুরুষটির গোপনাঙ্গের ওপর বসে পড়লেন। পুরুষটি আকাশের দিকে মুখ করে মাটিতে শুয়ে আছে। মহিলাটি পুরুষটির গোপনাঙ্গের ওপর বসেই প্রথমে পুরুষের হাত বুকের দিকে টেনে নিয়ে বললেন, এটা কি জানিস? এটা বুনি (স্তন)… পরক্ষনেই পুরুষটির হাত নিজের গোপনাঙ্গের দিকে টেনে নিয়ে বললেন… এটা কি জানিস… পরের সংলাপ আর দৃশ্যের বর্ণনা দিতে সংকোচ বোধ করছি। প্রিয় সম্পাদক, আমার একটি প্রশ্ন আছে। সিনেমায় আমরা জীবনের কথা পাই। তাই বলে কী জীবনের সব কিছুই সিনেমায় তুলে ধরা উচিৎ? এই ব্যাপারে আনন্দ আলোর যে কোনো একটি সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন আশা করছি।’
প্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান অভিনীত কলকাতার ওই ছবিটি দেখেছি। সত্যিকার অর্থেই জয়া আহসান অনেক সাহসী অভিনয় করেছেন। ছবিটি দেখে আনন্দ আলোর পাঠকের মতো আমারও একই ধরনের প্রশ্ন মনের মাঝে উঁকি দিয়েছে? এতো খোলামেলা কথা আর দৃশ্য এভাবেই কি সিনেমায় আসা উচিৎ? একবার মনে হলো জয়ার সাথে এব্যাপারে কথা বললে কেমন হয়? সাথে সাথেই মনে হলো জয়ার সামনেই তো বসে আছি।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
উত্তর: এই তো ভালো আছি।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ক্রিকেট খেললেন…?
উত্তর: হ্যাঁ… ওটা ছিল ফান গেইম। হা: হা: হা:
প্রশ্ন: ইদানিং কলকাতাতেই ব্যস্ত থাকছেন?
উত্তর: হ্যা, ওখানে বেশ কাজে জড়িয়ে গেছি। তবে ঢাকাতেও সময় দিচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনাকে একটি বিশেষ প্রশ্ন করতে চাই…
উত্তর: বিশেষ প্রশ্ন? কঠিন নাকি? বলেন?
প্রশ্ন: কলকাতার একটি ছবিতে আপনি অনেক সাহসী অভিনয় করেছেন। নদীর ধারে একজন পুরুষ অভিনেতার সাথে…
উত্তর: ও… সেই ছবির কথা বলছেন? এই ছবি নিয়ে কি প্রশ্ন করবেন?
প্রশ্ন: ছবির একটি দৃশ্যে একটি মেয়ে একটি ছেলের হাত টেনে নিয়ে তার (মেয়েটির) বিভিন্ন গোপনাঙ্গ সম্পর্কে যে ভাবে বর্ণনা দিচ্ছিল তা কতটা শোভন বলে মনে হয়? সিনেমায় কী এভাবেই নারীর শরীর উঠে আসা উচিৎ?
উত্তর: কেন আপনার একথা মনে হলো? মেয়েটি নারী বলে?
প্রশ্ন: না মানে… শ্লীল, অশ্লীলতার একটা ব্যাপার আছে তো…
উত্তর: পুরুষের খোলা বুক দেখতে কী আপনার আপত্তি আছে?
প্রশ্ন: না, মানে…
উত্তর: তাহলে নারীর খোলা বুক দেখতে আপত্তি থাকে কেন?
প্রশ্ন: তবুও…
উত্তর: তবুও কী… একটা ছেলে দশটা মেয়ের সাথে বিছানায় গেলে তার পৌরুষ বাড়ে। তাহলে একটি মেয়ের তা করতে ক্ষতি কী…? আরও শুনবেন? বলব…
হঠাৎ মনে হলো আরে এতো কল্পনা। কল্পনায় জয়ার সাথে কথা বলছিলাম। ভাগ্যিস ব্যাপারটা কল্পনার ছিল….

  • শীর্ষ কাহিনি