আমি ছিলাম তবলা বাদক!-শুভ্র দেব

মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: গানে এলেন কীভাবে?
শুভ্র দেব: আমি খুব ছোটবেলা থেকেই তবলা বাজাতাম। আমার বড় বোনের গানের সাথে আমি তবলা বাজাতাম। নতুন কুড়িতেও ছিলাম। সেখানেও তবলাই বাজাতাম এবং তবলাতে আমি প্রথম হয়েছিলাম। এরপর আমার গান শুনে আমাকে বদলি করা হয়। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে আমি সিলেটের একটা ব্যান্ডের ভোকালিষ্ট ছিলাম। সেটার নামছিল সমস্বর। এই তো এভাবেই গানের জগতে আসা।
আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে গানটি?
শুভ্র দেব: ১৯৮৪ সালের ঘটনা। তখন আমার বয়স ১৭ বছর। মাহফুজুর রহমানের লেখা ‘আমি হ্যামিলনের সেই বাশিওয়ালা’ গানটি সুর করার পর তাহের ভাই আমাকে ফোন করে বললেন, শুভ্র তুমি আমার বাসায় এসো। ফোন পেয়ে আমি ছুটে গেলাম তার বাসায়। উনি গানটি নিয়ে আমার সাথে বসলেন। আমি গানটি শিখলাম। তারপর ফেরদৌস ওয়াহিদ ভাইয়ের স্টুডিওতে গানটি রেকডিং করা হয়। পরে ‘আমি হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা’ গানটি রিয়াজউদ্দিন বাদশার প্রযোজনায়, তুষারের উপস্থাপনায় বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শুভাচ্ছাতে প্রচার করা হয়। এই গানটি ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
আনন্দ আলো: দেশের টিভি দেখেন?
শুভ্র দেব: দেখব না কেন? আমাদের এত গুলো টিভি চ্যানেল। অবশ্যই দেশের টিভি চ্যানেল দেখি। আমাদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো দেখি। সংবাদ দেখি, নাটক দেখি, খেলাধূলা দেখি। ভালো কিছু হলে ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: জীবনের প্রথম অ্যালবাম…
শুভ্র দেব: ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল আমার প্রথম একক অ্যালবাম ‘হ্যামিলনের সেই বাঁশি ওয়ালা’। জীবনের প্রথম সলো অ্যালবাম আমি খুবই এক্সসাইটেড ছিলাম।
আনন্দ আলো: গান গেয়ে প্রথম পুরস্কার…
শুভ্র দেব: মজার ব্যাপার হলো জীবনে প্রথম জাতীয় পুরস্কার পাই তবলা বাজিয়ে। নতুন কুড়ির মাধ্যমে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় আমি তবলা বাজানোতে প্রথম হয়েছিলাম।
আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোন গানটি এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?
শুভ্র দেব: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে সবুজের রঙে রঙিন আকাশ, ধুলো হয়ে আমি বাতাসে মিশে যেতে চাইনা, আমি হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা, কৃষ্ণচ‚ড়ায় ছাঁয়ায় ছাঁয়ায়, আমি মানুষ চিনেছি তোমায় চিনতে পারিনি, যে বাঁশি ভেঙ্গে গেছে, কোনো এক সন্ধ্যায়, এ আমার শেষ চিঠি, মরণ যদি হয় তোমার প্রেমের আঘাতে, সবারই তো মা আছে, নীল চাঁদোয়া, এমন আমার পাথর তো নয়, প্রিয়জন, গানগুলো মাঝে মাঝে হৃদয়ে নাড়া দেয়।
আনন্দ আলো: গান আগে না ভিডিও…
শুভ্র দেব: ভিডিওর আগে অডিওকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও এখন অডিও ভালো না হলেও ভিডিও দিয়ে সেটা পার পাওয়ার চেষ্টা করেন অনেকেই। এটাকে সমর্থন করিনা। গানের অডিও আগে। বাদ বাকি সব পরে।
আনন্দ আলো: জীবনের প্রথম বিজ্ঞাপন…
শুভ্র দেব: ১৯৮৪ সালে সাউথ ইষ্ট এশিয়াতে একটা জরিপ হয়েছিল। সেই জরিপে বোম্বে থেকে আমির খান প্রথম হন, বাংলাদেশ থেকে আমি এবং পাকিস্তান থেকে আওয়াজ ব্যান্ডের হারুন প্রথম হন। এক এক দেশের জনপ্রিয়তার অবস্থান নির্ণয়ের জন্য এই জরিপ চালানো হয়। পরে আমরাই পেপসির বিজ্ঞাপন করেছিলাম।
আনন্দ আলো: একসময় আপনি ভালো ক্রিকেটারও ছিলেন?
শুভ্র দেব: চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সিলেটের প্রথম বিভাগে ক্রিকেট দলে আমি সুযোগ পাই। আমি ছিলাম ওপেনিং ব্যাটসম্যান। খেলতে গিয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম ম্যাচেই বোলিংয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলাম এবং ওই ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলাম ৩৬ রান দিয়ে।
আনন্দ আলো: ক্রিকেটএ প্রথম থিম সং…
শুভ্র দেব: ১৯৯৮ সালের মিনি ওয়ার্ল্ড কাপের থিম সং আমার করা ছিল। তখন বাংলাদেশ কিন্তু এভাবে খেলত না। বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন। আর সে সময় বাংলাদেশে এত বেশি খেলা হতো না। প্রথম বাংলাদেশে মিনি বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয় এবং আমি থিম সং করার সুযোগ পাই। এটা আমার জন্য একটা বিশাল অর্জন ছিল। ইএসপিএন এবং স্টার স্পোর্টস এই গানটা দেখায় এবং ফাইনাল ম্যাচ সাইথ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্টইন্ডিজের শেষ বলটা যখন হবে তখন আমার গাওয়া থিম সং লাইভ প্রচার করা হয়েছে এবং ১৬৮টি দেশে এই গান দেখানো হয়। এটা আমার কাছে একটা বড় অর্জন।
আনন্দ আলো: মাইকেল জ্যাকসনের সাথে দেখা করার অভিজ্ঞতা…
শুভ্র দেব: ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ওয়ার্কস মিউজিয়ামে প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়েছিল। সত্যি বলতে তার সঙ্গে আমি যেভাবে মিশতে পেরেছি হলিউডের অনেক তারকাও হয়তো পারেনি। তার হাতের লেখা এখনও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। আমার জীবনের প্রথম অটোগ্রাফ নেই মাইকেল জ্যাকসনের কাছ থেকে।
আনন্দ আলো: যে সময়টা ফ্রেমে বন্দি রাখার মতো।
শুভ্র দেব: আমার পুত্র সন্তান শ্রেয়ানের যখন জন্ম হয় তখন আমি ছেলেকে প্রথম কোলে নেই। ওই সময়কার যে আনন্দ পেয়েছিলাম সে আনন্দ আমি আর কখনোই পাইনি।
আনন্দ আলো: কেউ যদি চায় যে আমার ছেলেটাও শুভ্র দেবের মতো গান শিখুক। তাহলে আপনার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবে?
শুভ্র দেব: আমি তো গায়ক, টিচার না। শেখানোর মতো আমি সময় দিতে পারব না। গায়ক আর গানের টিচার আসলে আলাদা।
আনন্দ আলো: কোন ধরনের গান শুনতে ভালো লাগে?
শুভ্র দেব: আধুনিক ও পুরোনো দিনের গান শুনতে ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: আপনার প্রিয় শিল্পী?
শুভ্র দেব: নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী।
আনন্দ আলো: প্রিয় বাদ্যযন্ত্র?
শুভ্র দেব: তবলা।
আনন্দ আলো: অবসরে যা করি…
শুভ্র দেব: অবসরে মাছ ধরি, গান শুনি আর ক্রিকেট খেলা দেখি।
আনন্দ আলো: ঘুরতে ভালো লাগে কোথায়?
শুভ্র দেব: ইন্দোনেশিয়ার বালি ও যুক্তরাষ্ট্রে।
আনন্দ আলো: কোন পোষাক পরতে ভালো লাগে?
শুভ্র দেব: পাঞ্জাবী-পায়জামা। তবে কনসার্টে বেøজার পড়তে ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: কার হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে!
শুভ্র দেব: আগে মায়ের হাতের রান্না। এখন আমার স্ত্রীর হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে।

  • টি-২০ আড্ডা