আমি একটু বদমেজাজী!-আবিদা সুলতানা

মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: প্রথমে জানতে চাই গানে এলেন কীভাবে?
আবিদা সুলতানা: আমার গানে আসার গল্পটা অনেক বড়। আমাকে কেউ প্রশ্ন করলে আমি অবশ্যই বলি মায়ের পেটে থাকতেই গান গাই। এর পিছনে বড় ইতিহাস আছে। আমার গানে বাবা, মামা, খালা, নানি, চাচার অর্থাৎ আমার পরিবারের অবদান রয়েছে। আমার নানি বাড়িতে পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, বছরের প্রথম দিন সব সময় একটানা অনুষ্ঠান থাকত। আমার অনেক খালাতো ভাইবোন ছিল। সবাই নাচ, গান, নাটক, অভিনয়, আবৃত্তি সবকিছুই করতো। এই পরিবেশের অনুপ্রেরণায় গানে আসা। নাচটা যদিও আমার খুব পছন্দের ছিল। কিন্তু মা চাইতেন আমি গান করি। তাছাড়া আমাদের বাড়িটি ছিল সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে মোড়ানো। আমার বাবা গান গাইতেন এবং অভিনয় করতেন। বাসায় কোনো অনুষ্ঠান হলে বাবা মাকে দেখতাম একসঙ্গে গান গাইতে। না হলে কবিতা আবৃত্তি করতেন। ছোটবেলা থেকেই আমাদের রক্তের সঙ্গে মিলেমিশে আছে সাংস্কৃতিক নানা উপাদান। বাবা-মা, বোনদের প্রভাব আছে বলেই আমি আবিদা সুলতানা এ পর্যায়ে এসেছি। তাদের উৎসাহ না পেলে আমি মিউজিকে কখনোই আসতে পারতাম না।
আনন্দ আলো: আপনার শুরুটা হয়েছিল তো শিশু-শিল্পী হিসেবে…
আবিদা সুলতানা: ১৯৬৮ সালে আমি তখন রেডিও ও টেলিভিশনে ছোটদের অনুষ্ঠানে গান করতাম। রেডিওতে খেলাঘর করতাম। আর টেলিভিশনে ছোটদের অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।
আনন্দ আলো: বড় হয়ে গাইতে শুরু করেন কবে থেকে….
আবিদা সুলতানা: বড়দের অনুষ্ঠানে গাইতে শুরু করি ১৯৭৪ সালে। মূলত তখন থেকেই আমার সংগীত ক্যারিয়ার শুরু।
আনন্দ আলো: দেশের বাইরে গাওয়াটা কেমন এনজয় করেন?
আবিদা সুলতানা: গান গাইতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০টি দেশে গেছি। কয়েকটি দেশে একাধিকবার, কোথাও তারও বেশিবার যাওয়া হয়েছে। দেশের বাইরে গান করতে ভালো লাগে। এনজনয় করি। সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে আসে। অ্যাপায়ন করে। দেশের নানা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। আমি এমনিতেই ঘুরতে খুব পছন্দ করি। দেশের বাইরে যাওয়ার ফলে গানের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোও হয়ে যায়।
আনন্দ আলো: নিজের গাওয়া কোন গানটি আপনার সবচেয়ে বেশি প্রিয়?
আবিদা সুলতানা: ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’। এটা একটা আসামি কবিতা। সেটাকে বাংলা করা হয়েছে। কবিতাটি সামনে নিয়ে পড়তে ভালো লাগে। শুনতেও ভালো লাগে। গাইতেও ভালো লাগে। সব মিলিয়ে এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি গান। এই গানের সঙ্গে জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। গানটি লিখেছিলেন শিবদাস ব্যানার্জি।
আনন্দ আলো: আপনি গানেও আছেন, ফেসবুকেও আছেন…
আবিদা সুলতানা: এখনকার প্রযুক্তির সুবিধাটা নেই আর কি। খুব ভালো লাগে। বন্ধু বান্ধব আছে। কোথাও গেলে ছবি দেই। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তবে নিজের কাজের আপডেট দিতে বা জানাতে ভালো লাগে না। অনুষ্ঠান হয়ে গেলে হয়তো কখনো ছবি দেই। রিলাক্সে থাকার একটি মাধ্যম এটা। ফেসবুকে আমাদের ফ্যামিলির একটি গ্রæপ আছে। নামটা অনেক মজার। তবে বলা যাবে না। সেখানে বাচ্চা কাচ্চা সহ পরিবারের সবাই প্রচুর আড্ডা দেই, মজা করি। সেখান থেকে সবাই সবার দৈনন্দিন কাজের আপডেটটাও পেয়ে যাই।
আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোন গান গুলো এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?
আবিদা সুলতানা: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে ‘একটা দোলনা যদি’, ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’, ‘হারজিৎ চিরদিন থাকবেই’, ‘হৃদয়ের অচেনা দুটি নদী’, ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’, ‘মধুচন্দ্রীমার এই রাত’, ‘একি বাঁধনে বল’, ‘রঙিলা পাখিরে’, ‘আমি জ্যোতিষীর কাছে যাব’, ‘তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে’ ইত্যাদি।
আনন্দ আলো: আপনার চোখে প্রিয় সংগীত শিল্পী?
আবিদা সুলতানা: নীলুফার ইয়াসমিন, মান্না দে, মেহেদী হাসান, আবিদা পারভীন।
আনন্দ আলো: প্রিয় বাদ্যযন্ত্র….
আবিদা সুলতানা: পিকালো, চেলো।
আনন্দ আলো: প্রিয় সিনেমা…
আবিদা সুলতানা: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত ‘গেরিলা’। আর বিদেশের হচ্ছে আর্থ, টু ওমেন।
আনন্দ আলো: যাদের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে…
আবিদা সুলতানা: জেনিফার লরেন্স, শাবানা আজমী, হুমায়ূন ফরীদি, আনোয়ারা ও চঞ্চল চৌধুরী।

আনন্দ আলো: প্রিয় রং কোনটি?
আবিদা সুলতানা: আমার প্রিয় রং মেরুন, সবুজ।
আনন্দ আলো: পছন্দের ঋতু?
আবিদা সুলতানা: বর্ষা।
আনন্দ আলো: কোথায় ঘুরতে ভালো লাগে?
আবিদা সুলতানা: সমুদ্রের কাছে যেতে আমার খুব ভালো।
আনন্দ আলো: আপনার ভালো ও মন্দ দিক…
আবিদা সুলতানা: আমি মমতাময়ী একজন মানুষ। পরিবারের সবার খোঁজ খবর নেই। আর মন্দ দিক হচ্ছে আমি একটু বদ মেজাজি।
আনন্দ আলো: অবসরে যা করি…
আবিদা সুলতানা: অবসরে আমি খুব রান্না বান্না করি। বিভিন্ন রকম রান্না করতে ভালোবাসি। আমার বাসায় কোনো পার্টি থাকলে আমি চেষ্টা করি নিজেই রান্না করতে। বাসায় ছোট্ট একটা বারান্দা আছে। সেখানে বেশ কিছু গাছ আছে। অবসরে সে গুলোর পরিচর্যা করি। গান শুনি আর টিভির ভালো অনুষ্টান গুলো দেখার চেষ্টা করি।
আনন্দ আলো: আপনার প্রিয় খাবার…
আবিদা সুলতানা: মাছ, সালাদ ও আইসক্রীম।
আনন্দ আলো: কার হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে?
আবিদা সুলতানা: মা এবং ছোট বোন সালমার হাতের রান্না খেতে খুবই ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: আপনার কাছে পরিবার কী?
আবিদা সুলতানা: আমার কাছে পরিবার হচ্ছে জীবন। প্রতিদিন পানি না খেলে চলে না। ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে পরিবার।
আনন্দ আলো: আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন…
আবিদা সুলতানা: আমার স্বামী রফিকুল আলম একজন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী। সৎ মানুষ। আমাদের একমাত্র সন্তানের নাম ফারশিয়াদ আলম। সেও গানের সঙ্গে জড়িত আছে। টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করছে।

  • টি-২০ আড্ডা