গায়ক বাপ্পাকে আরও বেশি চর্চা করতে হবে-বাপ্পা মজুমদার

মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: এত কিছু থাকতে আপনি গানে এলেন কেন?
বাপ্পা মজুমদার: আমি ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। সংগীতের মধ্যেই আমার বেড়ে ওঠা। তার মধ্যেই দিয়ে আমার বাবা-মা আস্তে আস্তে আমাকে গানের দিকে মনোযোগী করতে চেষ্টা করলেন এবং ধরে ধরে গান শেখালেন। এভাবে গানে আসা।
আনন্দ আলো: আপনার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব ওস্তাদ বারীণ মজুমদার এবং মা ইলা মজুমদার একজন সংগীতজ্ঞ এবং লেখিকা ছিলেন। তাই পরিবার থেকেই কী গানের প্রতি ঝোঁক শুরু?
বাপ্পা মজুমদার: নিশ্চয়ই। যেহেতু একটি সংগীত পরিবারে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। স্বাভাবিকভাবে চাই বা না চাই সংগীত তো রক্তের মধ্যে ঢুকেই যায়।
আনন্দ আলো: বাবা-মা ছাড়া আর কোনো ওস্তাদের কাছে গান শিখেছেন?
বাপ্পা মজুমদার: ওই অর্থে গানের ব্যাপারে বাবা-মা ছাড়া আমার আর কোনো ওস্তাদের প্রয়োজন হয়নি। তবে গিটার শিখেছি আমার বড় ভাই পার্থ মজুমদারের কাছে। কিছুদিন শ্রদ্ধেয় নিলয়দার কাছেও শিখেছি। মাঝখানে আমি কিন্তু তবলাও বাজাতাম। তবলায় ওস্তাদ ছিলেন কামরুজ্জামান মনি। তার কাছে আমি তবলার তালিম নিয়েছি।
আনন্দ আলো: গানে না এলে কী হওয়ার ইচ্ছা ছিল?
বাপ্পা মজুমদার: ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়ার। যেহেতু জেনিটিক্যালি সংগীতটা রক্তের ভেতরে ছিল। সংগীতটাই আমাকে বেশি টেনেছে।
আনন্দ আলো: আপনার পরী কেমন আছে?
বাপ্পা মজুমদার: আমার তো কোনো পরী নেই, আছে গানের পরী।
আনন্দ আলো: আজও কী তার মন খারাপ?
বাপ্পা মজুমদার: না, তাকে মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া এনে দিয়েছি। এখন সে হাওয়ায় ভাসছে।
আনন্দ আলো: যারই মন খারাপ থাকে তাকেই কী আপনি বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া এনে দেন?
বাপ্পা মজুমদার: সবার জন্য দেই না। তবে চুপে চুপে আপনার জন্য এনে দিতে পারি। তবে একশর্তে কাউকে বলা যাবে না।
আনন্দ আলো: আজও কী ধুলো পড়া চিঠিটা আছে?
বাপ্পা মজুমদার: না, চিঠিটা খোলা ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছি কবিতার শিরোনামে। কতটুকু দূরে যাবে জানি না।
আনন্দ আলো: আপনি আবারও দলছুট নিয়ে ছুটছেন…
বাপ্পা মজুমদার: দলছুট আমার গানের দল। আজকে আমি যা হয়েছি, তার পুরোটাই দলছুটের কারণে। এই ব্যান্ড আমার অস্তিত্ব। এটা কোনো ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই অস্তিত্বকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা থেকে এই দল নিয়ে আমি আবার নতুন করে ছুটছি।
আনন্দ আলো: তাহলে বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস দলটির কী হবে?
বাপ্পা মজুমদার: আমার সঙ্গে এ দলটিও থাকবে। দলছুটের বাইরে যখন কোনো শিল্পীর সঙ্গে গাইতে হয় তখন বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামেই করব।
আনন্দ আলো: আপনি নাকি বায়ান্ন তাস নিয়ে আরজেগিরি করছেন?
বাপ্পা মজুমদার: হ্যাঁ। এবিসি রেডিও ৮৯.২-এ আরজে হিসেবে প্রতি মঙ্গলবার রাত নয়টায় হাজির হচ্ছি আমার অনুষ্ঠান ‘বাপ্পার বায়ান্নতাস’-এ। এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয় হলো, গান নিয়ে আমার যত ব্যক্তিগত ভাবনা আছে, তা সবার সঙ্গে শেয়ার করা। আমি যেহেতু গানের মানুষ, সেদিক থেকে আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি শ্রোতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের জায়গাটা শক্ত করছি। ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন আইডিয়া নিয়ে কথা বলছি। সবকিছুই সংগীতকে কেন্দ্র করে হচ্ছে।
আনন্দ আলো: হঠাৎ করে আরজেগিরি হওয়ার কারণ কী?
বাপ্পা মজুমদার: রেডিও, টিভি কিংবা পত্রিকা যে কোনো মাধ্যমেই সৃষ্টিশীল কাজের মানদÐ নির্ধারণে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করে। এখনও আমাদের দেশে রেডিওর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কারণ আমাদের রোজকার জীবনের বড় একটা অংশ কাটছে রাস্তায়, যানজটে। তাই টিভি দেখার চেয়ে রেডিও শোনা হচ্ছে বেশি। ব্যক্তিগত ভাবে আমার এখন মনে হচ্ছে সাংস্কৃতিক বোধের জায়গা থেকে আমরা অনেকখানি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমরা এত বেশি বহুমাত্রিক সংস্কৃতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি যে আমরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ভিত নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছি। রেডিওতে অনুষ্ঠান করার এটাও আমার একটা কারণ বলতে পারেন।
আনন্দ আলো: গায়ক হিসেবে কম্পোজার বাপ্পা আর কম্পোজার হিসেবে গায়ক বাপ্পার সমালোচনা করুন?
বাপ্পা মজুমদার: কম্পোজার হিসেবে বলব, গায়ক বাপ্পাকে আরও অনেক বেশি চর্চা করতে হবে। আর গায়ক হিসেবে বলব, কম্পোজার বাপ্পার আরও অনেক বেশি গান শোনা দরকার।
আনন্দ আলো: শিল্পী হিসেবে আপনার কোনো অতৃপ্তি?
বাপ্পা মজুমদার: অনেক অতৃপ্তি। তার মধ্যে একটা নিজেকে যতখানি পরিণত করা দরকার ততটা করতে পারিনি।
আনন্দ আলো: বাংলাদেশে আপনার প্রিয় শিল্পীর তালিকায় কে কে আছেন?
বাপ্পা মজুমদার: সুবীর নন্দী, সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী প্রমুখ। হাবিবের গান আমার ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটি?
বাপ্পা মজুমদার: অনেক গুলো প্রিয় গান আছে। তার মধ্যে প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীর লেখা এবং সুর করা ‘আমার সন্তান’ গানটি আমার খুব পছন্দের।
আনন্দ আলো: অবসরে যা করি…
বাপ্পা মজুমদার: অবসর তেমন একটা পাই না। কাজ করতে করতে যখন একটু ক্লান্ত লাগে তখণ কম্পিউটারে বসে গেমস খেলি, গান শুনি।
আনন্দ আলো: আগে তো খেলনা হেলিকপ্টার ওড়াতেন, এখন?
বাপ্পা মজুমদার: আরে ওটাতো বহুদিনের পুরনো অভ্যাস। ওটা ছাড়া তো মনে হয় বাঁচতেই পারব না। আমার কালেকশনে অনেক হেলিকপ্টার আছে। হেলিকপ্টারের সঙ্গে আমার চিন্তারাও যেন ডানা মেলে।
আনন্দ আলো: আপনার এমন তিনটি ইচ্ছার কথা জানতে চাই যা এখনও পূরণ হয়নি?
বাপ্পা মজুমদার: ওরে বাপরে এতো কঠিন প্রশ্ন। আমার কোনো ইচ্ছে পূরণ হয়নি এমন না। যেটি ইচ্ছে করেছি সেটিই করেছি।
আনন্দ আলো: নতুন সংসার জীবন কেমন যাচ্ছে?
বাপ্পা মজুমদার: আমার স্ত্রী তানিয়া হোসাইন। নতুন জীবন শুরুর মুহূর্তে ভক্ত-শুভাকাক্সক্ষী, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছে দোয়া চাই। সবাই এতদিন যেভাবে আমাদের ভালোবাসা আর দোয়া দিয়েছেন, আগামীদিন গুলোতেও তা অব্যাহত রাখবেন আশাকরি।

  • টি-২০ আড্ডা