এবার আরও উজ্জ্বল!

রাজু আলীম: এক সঙ্গে বেজে উঠলো ৩০টি হারমোনিয়াম। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে হারানো দিনের সুর বাজলো। এরপরই সেগুন বাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমির বিশাল আঙিনায় উদ্বোধন করা হলো ৪র্থ আর্ট সামিটএর। সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৯দিন ব্যাপি এই বৈচিত্রপূর্ণ শিল্পকলা প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘শিল্পকলাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা আমাদের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব। সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের কর্ণধার নাদিয়া ও রাজিব সামদানি ঢাকা আর্ট সামিটকে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রত্যাশা করি বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্পকর্মের এ প্রদর্শনী উপভোগের মধ্যদিয়ে আমাদের আগামী ৯টি দিন অনেক আনন্দের সঙ্গে কাটবে।

অর্থমন্ত্রীর কথাই সত্যে পরিণত হয়েছিল। শিল্পকলা একাডেমিতে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবারের আর্ট সামিট সত্যিকার অর্থে শুধু দেশে নয় বিদেশেও চমক সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ জন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, কিউরেটর, শিল্প সমালোচক, শিল্প সংগ্রাহক ও গুণী স্থপতি তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে এবারের আর্ট সামিটে অংশ নেন। সামদানি আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী মাকসুদুল করিমের নকশায় এবার ছিল এডুকেশন প্যাভিলিয়ন।

বেঙ্গল গ্যালারি, গ্যালারি কসমস, গ্যালারি কায়া, গ্যালারি চিত্রকসহ দেশের ১১টি গ্যালারি অংশ নেয় এবারের সামিটে। এশিয়ার নিরীক্ষাপ্রবণ শিল্পীদের পাশাপাশি বাংলাদেশের ১৩ জন শিল্পীর কাজও প্রদর্শন করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন অসিত মিত্র, অতীশ সাহা, ফারজানা আহমেদ উর্মি, গাজী নাফিস আহমেদ, পলাশ ভট্টাচার্য, রফিকুল শুভ, রাসেল চৌধুরী, রূপম রায়, সালমা আবেদিন পৃথ্বী, শামসুল আলম হেলাল, শিমুল সাহা, সুমন আহমেদ ও জিহান করিম। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে নির্বাচিতদের সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। দেশ-বিদেশের ১৭ জন শিল্পীর ১৭টি একক শিল্পকর্মও প্রদর্শন করা হয়।

এবারের আর্ট সামিটে যুক্ত হয়েছিল স্থাপত্যশিল্প। তাই দর্শনার্থীরা দেখতে পেয়েছেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, সাইফ উল হক, জালাল আহামাদ, নাহাস আহমেদ খলিল, রাজিউল হাসান, উত্তম কুমার সাহা, রফিক আজম, এহসান খান, মোস্তফা খালিদ পলাশ, এনামুল করিম নির্ঝর, কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, মেরিনা তাবাসসুম, সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো প্রখ্যাত স্থপতির স্থাপত্য শিল্প। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ও প্রতিশ্রæতিশীল শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়েও ছিল বিশেষ আয়োজন। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব দক্ষিণ এশীয় শিল্পের ধারা নিয়ে সাজানো হয় ‘রিওয়াইন্ড’ বিভাগ। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে সাজানো হয় বিভাগটি। এখানে প্রদর্শন করা হয় বাংলাদেশের তিন পথিকৃত শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ, এসএম সুলতান ও রশীদ চৌধুরীর শিল্পকর্ম। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, সেন্টার পম্পিদৌ ফ্রান্স, রকফেলার ফাউন্ডেশন, নরওয়েজিয়ান মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, সুইস আর্টস কাউন্সিলসহ বিশ্বের ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ছিল এ সামিটে। আন্তর্জাতিক জাদুঘর ও গ্যালারি টেট মডার্ন, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট নিউইয়র্ক, সলোমন আর গুগ্যেনহাইম, রুবিন মিউজিয়ামের অংশগ্রহণও ছিল বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

  • ইভেন্ট