এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার!

এবার পেলেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন

হঠাৎ যেন আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না বিশিষ্ট নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর। কয়েক সেকেন্ড নিজেকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। আবেগ রুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, হুমায়ূন যে আমার কাছে কী ছিল তা আপনাদের বোঝাতে পারব না। ওর সাথে আমার যেমন বন্ধুত্ব ছিল তেমনি ছিল মান-অভিমান। আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। এখনও ভাবতে পারি না, হুমায়ূন আমাদের মাঝে নেই…
এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা প্রদানকালে আসাদুজ্জামান নূর কথাগুলো বলেছেন। বাংলা একাডেমিতে কবি শামসুর রহম ান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট
কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, এক্সিমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক পরিচালক ড. হায়দার আলী, বিশিষ্ট কণ্ঠ শিল্পী, অভিনেত্রী, নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন, অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য দেশ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। নবীণ শাখায় এই পুরস্কার পান সাদাত হোসাইন।
অনুষ্ঠানে রাবেয়া খাতুনের উদ্দেশে সংসাবচন পাঠন করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আবুল হাসান। সাদাত হোসেনের উদ্দেশে কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের সংশাবচন পাঠ করেন। বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও তার দলের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর দুটি নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন অন্যদিনের নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল্লাহ নাসের।

এখনও ভাবতে পারি না হুমায়ূন নেই-রাবেয়া খাতুন

সাহিত্যকর্মের জন্য জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের নামে প্রবর্তিত এই পুরস্কারটির মর্যাদা আমার কাছে অন্যরকম। আমি এখনও ভাবতে পারি না হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝে নেই। কখনও কখনও একটা প্রশ্ন মাথায় আসে। পৃথিবীতে কত মানুষই তো বেঁচে আছে। সেখানে হুমায়ূন বেঁচে থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো?
শারিরীক অসুস্থতার কারণে রাবেয়া খাতুন সাধারনত ঘরের বাইরে তেমন একটা বের হন না। তবে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন। শারিরীক অসুস্থতা সত্বেও সিড়ি টপকে মঞ্চে উঠেছেন।
রাবেয়া খাতুনের উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : মধুমতী (১৯৬৩), মন এক শ্বেত কপোতী (১৯৬৫), অনন্ত অšে¦ষা (১৯৬৭), সাহেব বাজার (১৯৬৯), রাজারবাগ শালিমারবাগ (১৯৬৯), ফেরারী সূর্য; বায়ান্ন গলির এক গলি (১৯৮৪), মোহর আলী (১৯৮৫), নীল নিশীথ; বাগানের নাম মালনিছড়া (১৯৯৫), ই ভরা বাদর মাহ ভাদর (১৯৯৫)।
বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলোÑ একুশে পদক ১৯৯৩, স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১০।

আমার জন্য দোয়া করবেন-সাদাত হোসাইন

সাদাত হোসাই তার লেখালেখি শুরুর কাহিনী তুলে ধরে বলেন, অনেক প্রতিক‚লতার মধ্যে থেকেই আমি লেখালেখির পথে পা বাড়িয়েছি। এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়ে মনে হল লেখক হিসেবে একটা দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হলো। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে করে এই পুরস্কারের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি
উল্লেখ্য, ভাষাচিত্র থেকে প্রকাশিত ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ গ্রন্থের জন্য সাদাত হোসাইন এই পুরস্কার অর্জন করেন।

  • ইভেন্ট