মোহাম্মদ তারেক ও তন্ময় মাহমুদ
যদি বলি হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন মানেই বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রেরও জন্মদিন তাহলে কী খুব বেশি বলা হবে? বোধকরি না। কারণ আমাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আজকে এই যে এতবড় অর্জন তার অনেকটাই হুমায়ূন আহমেদের কৃতিত্ব। একজন হুমায়ূন আহমেদই বদলে দিয়েছেন আমাদের বাংলা সাহিত্যের দৃশ্যপট। বিশেষ করে বাংলা উপন্যাসের বিকাশমান ধারায় হুমায়ূন আহমেদের অবদান অনেক বেশি। একসময় এই দেশের মানুষ বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে কলকাতার লেখকদেরকেই বেশি গুরুত্ব দিত। ঘরে ঘরে শোভা পেতো কলকাতার বাঙালি লেখকদের বই। বলা যায় একক প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি পাল্টে দিলেন আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। শুধু তাই নয় টেলিভিশন নাটকেও তিনি পরিবর্তন আনলেন। বিটিভিতে তার লেখা অসংখ্য ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি একক নাটকও এই পরিবর্তনের ধারায় গুরুত্ব ভূমিকা রাখলো। তখন ছিল বিটিভির একক রাজত্ব। বিটিভিতে একটি নাটক হিট হওয়া মানেই তার পরিচালক ও নাট্যকারের প্রতি বিপুল সংখ্যক দর্শকের আগ্রহী হয়ে ওঠা। আর তাই হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রতিও পাঠকের গভীর আগ্রহ দেখা দিল। একসময় চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করলেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘আগুনের পরশমণি’ তাঁর প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। দর্শক ফিরলো সিনেমা হলের দিকে। একসময় সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায়ই হুমায়ূন আহমেদের মেধার দ্যুতিতে উদ্ভাসিত হতে থাকলো। টিভি নাটক, উপন্যাস এবং চলচ্চিত্রে শুধুই একটি নাম হুমায়ূন আহমেদ। জনপ্রিয়তার মধ্যগগনে উঠে গেলেন তিনি। বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলায় তাঁর বই কেনার জন্য পাঠকের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেল। ভিড় ঠেকাতে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থাও করা হলো। টিভিতে তাঁর নাটক থাকলে রাজপথ অনেকটাই ফাকা হয়ে যেতো। আর হুমায়ূন আহমেদের নতুন ছবি মানেই দেশের সৃজনশীল প্রতিটি পরিবারেই আনন্দ উৎসবের ঢেউ খেলে যাওয়া।
বাংলা সাহিত্যের জাদুকর, নির্মাণের মহান কারিগর হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে নেই। মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। ১৩ নভেম্বর ছিল তার ৬৯তম জন্মদিন। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে ১০ নভেম্বর জাতীয় জাদুঘরে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ১১ নভেম্বর তৃতীয় বারের মতো প্রদান করা হয় এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশকরা প্রতিবছরের ন্যায় শুধুমাত্র হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ৭ দিন একক বইমেলা শুরু করেছে। ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ হলে হুমায়ূন আহমেদের মঞ্চ নাটক ‘নৃপতি’ মঞ্চস্থ হয়।
বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হুমায়ূন মেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়। এসিআই পিওর সল্ট নিবেদিত চ্যানেল আই হুমায়ূন মেলা-২০১৭ পাওয়ার্ড বাই এনআরবি বাজার ও বাংলাপ্রকাশ। হুমায়ূন আহমেদ-এর সুযোগ্য পুত্র বর্তমান সময়ের আলোচিত তরুণ লেখক, নাট্যকার, নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন-এর উপস্থিতি
হুমায়ূনের চায়ের কাপ!
এবার এই চায়ের কাপটির ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। সবাই জানেন চ্যানেল আই পরিবারের সম্মানীয় সদস্য ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি প্রায়শই চ্যানেল আই কার্যালয়ে আসতেন। চা খেতে খেতে আড্ডা দিতেন। নতুন নাটক অথবা সিনেমার পরিকল্পনা করতেন। চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের নির্দেশে হুমায়ূন আহমেদের জন্য একটি পৃথক চায়ের কাপ কেনা হলো। এরপর থেকে তিনি যখনই
মেলায় যাইরে!
এ যেন সেই গানের ভাষার মতোই আনন্দ মুখর পরিবেশ। হুমায়ূন মেলায় শুধু ঢাকা শহর নয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হুমায়ূন ভক্তরা এসেছিলেন। মূল মঞ্চে গানের পাশাপাশি মেলার বিভিন্ন স্টলের সামনে শ্রোতা ও ক্রেতার ভীড় ছিল দেখার মতো। এন আর বি বাজার, বাংলা প্রকাশ, টুংকেল বেবি ডায়াপার, পানসুপারি, আনন্দ আলো, ইমপ্রেস অডিওভিশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের পন্য নিয়ে হাজির হয়েছিল মেলায়। ছিল মুড়ি মুড়কি ও বাতাসার দোকানও। শহুরে পরিবেশে গ্রামীণমেলার আদলেই সেজেছিল হুমায়ূন মেলা। মেলায় রণ পা সহ দুজন তরুণ রঙিন সাজে এসেছিল। তাদের ব্যাপারে বিপুল আগ্রহ ছিল দর্শনার্থিদের।
হুমায়ূনের সাহিত্যকর্মকে আরও এগিয়ে নিতে চাই
ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলা প্রকাশ
বাংলা প্রকাশের মাধ্যমে আমরা নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের একাধিক বই প্রকাশের সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা আমাদের জন্য এক আনন্দময় স্মৃতি। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্মকে পাঠকের কাছে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমরা বদ্ধপরিকর। সেজন্য চ্যানেল আই আয়োজিত হুমায়ূন মেলার অংশ নিয়েছি। এই সুযোগটি করে দেবার জন্য চ্যানেল আই কতৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ। প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।
বাবা চাইতেন আমি যেন আমার মতো কাজ করি!
নুহাশ হুমায়ূন
হুমায়ূনের সকল বইয়ে ৩০% ছাড়
এম ই চৌধুরী শামীম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনআরবি বাজার
আমাদের প্রিয় মানুষ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে সবাইকে অভিনন্দন। আপনারা জানেন যে চ্যানেল আই নিয়মিতভাবে আমাদের দেশের যে সমস্ত সম্মানিত মানুষরা আছেন, গুণী মানুষরা আছেন তাদেরকে নানানভাবে সম্মান দেয়ার চেষ্টা করে। এটিও সে রকমই একটি আয়োজন। এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমরা গৌরববোধ করছি। এনআরবি বাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছুর প্রয়োজন হয় তার সবকিছু মিলে সারা পৃথিবীর একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সকল বই ৩০% ছাড় দিয়ে ২২০টি আউটলেটে বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে তাঁর বই কিনলেই আমরা হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। ঢাকা শহরে আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি করছি। অর্থাৎ আপনি যদি টেলিফোনে বা অনলাইনে অর্ডার করেন তাহলে আপনাদের বাড়িতে সেই বই পৌঁছে দেয়া হবে।
হিমু আর মিসির আলীই হুমায়ূন সাহিত্য নয়
ইমদাদুল হক মিলন, কথাসাহিত্যিক
হুমায়ূন আহমেদ আমাদের আত্মার আত্মীয়
ফরিদুর রেজা সাগর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই
এত বড় লেখক আর আসবে কিনা জানিনা
সৈয়দ আলমগীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসি আই সল্ট লিমিটেড
শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ। আমি মনেকরি হুমায়ূন আহমেদের মতো লোক মারা যেতে পারে না। তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। শুভ জন্মদিনে তাঁর জন্য অশেষ অশেষ দোয়া। বাংলাদেশের সাহিত্যে এত বড় একজন লেখক আর কোনো দিন আসবে কিনা জানি না। চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ জানাই হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি জাগ্রত রাখার জন্য। এসি আই এবং এসি আই সল্ট লিমিটেড এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করছে। সবাইকে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা।