সুবর্ণা হক
ভদ্র মহিলা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললেন। কষ্টের নয় আনন্দের কান্না। পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সামনে একজন বয়স্ক মহিলা কাঁদছেন। এ দৃশ্য দেখে সবাই যেন একটু থমকে গেলেন। ভদ্র মহিলা কাঁদতে কাঁদতেই তার বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করলেন এভাবেÑ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এত বড় মঞ্চে প্রথম পুরস্কার পাব। বলতে পারেন এটাই প্রথম আমার প্রকাশ্যে মঞ্চে আসা। আমি একজন সাধারণ গৃহিণী। সংসার সামলাতেই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকি। বাইরে আসতে, কিছু একটা করতে ইচ্ছে যে হতো না তা কিন্তু নয়। কিন্তু ঐ যে বললাম স্বামী-সংসার সামলাতে গিয়ে পারিনি। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় ভর্তা প্রতিযোগিতার খবর পড়লাম। প্রতিদিন খাবারের পাতে কত পদেরই না ভর্তা থাকে। সেই ভরসায় মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার বাইরে বের হবো। প্রতিযোগিতায় নামবো।
বলতে বলতে আবারও অঝোরে কাঁদতে থাকলেন খালেদা খানম তুলি। এ সি আই পিওর সরিষার তেল আনন্দ আলো জাতীয় ভর্তা প্রতিযোগিতায় সারাদেশে প্রথম হয়েছেন তিনি। বেলে মাছ দিয়ে মাশরুমের ভর্তা বানিয়েছিলেন তিনি।
২৮ এপ্রিল চ্যানেল আই ভবনে প্রতিযোগিতার গালা রাউন্ডে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন যথাক্রমেÑ শামসুন নাহার সাথী ও সৈয়দ রাহাত হোসেন। সাথী বানিয়েছিলেন টাকি মাছের ভর্তা। আর রাহাত বানিয়েছিলেন চিংড়ি ও কুমড়ো বিচির মাখা ভর্তা। আনন্দমুখর পরিবেশে গালা রাউন্ডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, এ সি আই কনজ্যুমার ব্র্যান্ড-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, বিচারকদের পক্ষে দেশের বিশিষ্ট রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী, বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, এ সি আই ফুডস লি. এর বিজনেস ডিরেক্টর ফারিয়া ইয়াসমিন, আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান বক্তৃতা করেন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী তনিমা রায় অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন মৌসুমী বড়–য়া।
যাত্রা শুরুর গল্প
প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে কয়েকশ প্রতিযোগী ফেসবুক এবং ডাকযোগে চিঠি মারফত আবেদন করে। নানা প্রক্রিয়া শেষে ৬২ জনকে চ্যানেল আই-এর ছাদ বারান্দায় বাছাই পর্বে আহŸান জানান হয়।
বাছাই পর্বেই জমলো মেলা
অবশেষে এলো সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্ত!
বিচারকরা বিচারকার্য শেষ করার পর বললেন সবই ঠিক আছে। তবে ভর্তার ক্ষেত্রে ফিউশনটা একটু বেশি হয়ে গেছে।
ভর্তার যতো নাম!
কি পেলেন বিজয়ীরা?
আনন্দ আলোয় ঈদ বোনাস
আনন্দ আলোর ঈদ সংখ্যা ‘এক ব্যাগ আনন্দ এক ব্যাগ আলো’র বর্ণাঢ্য আয়োজনে থাকবে এ সি আই পিওর সরিষার তেল আনন্দ আলো ভর্তা প্রতিযোগিতায় গালা রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত ১২ জনের রেসিপি নিয়ে এক্সক্লুসিভ বুকলেট। এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সেরা ৫০ রাঁধুনীর এক্সক্লুসিভ ভর্তার রেসিপি নিয়ে আগামী বছর একুশে বইমেলা উপলক্ষে রান্নার একটি বই প্রকাশের পরিকল্পনাও রয়েছে।
কথাটা অনেকবার ভেবেছি
-আফজাল হোসেন
নাট্যব্যক্তিত্ব
ভর্তা প্রতিযোগিতার মতো একটি কর্মকাÐে বিচারক হিসেবে আমি কেন জড়িত হবো একথা অনেকবার ভেবেছি। কারণ এই প্রতিযোগিতা তো আর অন্য দশটা প্রতিযোগিতার মতো নয়। খাবার নিয়ে প্রতিযোগিতা। তাও আবার খাবারের নাম ভর্তা। পরে ভেবে দেখলাম আমাদের দেশে প্রতিটি পরিবারে প্রতিবেলায় খাবারের আয়োজনে ভর্তাইতো বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিদিন প্রত্যেক বেলা আমাদের খাবারের টেবিলে কোনো না কোনো ভর্তা থাকেই। কাজেই প্রিয় এই খাবারটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিরা এসেছেন। তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সত্যি এ এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতাটি অব্যাহত থাকুক। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
সবার জন্য শুভ কামনা
-ফরিদুর রেজা সাগর
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চ্যানেল আই
ভর্তা নিয়ে প্রতিযোগিতার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। কারণ আমাদের দেশে প্রতিটি পরিবারে প্রতিবেলার খাবারের তালিকায় ভর্তাই গুরুত্ব পায় বেশি। কাজেই ভর্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এমন একটি প্রতিযোগিতা হতেই পারে। এ সি আই কর্তৃপক্ষ উদ্যোগটির সঙ্গে আনন্দ আলোকে যুক্ত করেছেন এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ সি আই কর্তৃপক্ষ চাইলে আগামীতে প্রতিযোগিতাটিকে আরো বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে চ্যানেল আই সম্ভাব্য সবরকমের সহযোগিতা প্রদান করবে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগীর জন্য রইলো অনেক শুভ কামনা।
ফিউশন যেন ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে না দেয়
Ñকেকা ফেরদৌসী
রন্ধন বিশেষজ্ঞ
ভর্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। প্রায় সারাটা জীবনই আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে গেলাম। আর তাই খাবার নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন দেখলে আমি খুব খুশি হই। এ সি আই ও আনন্দ আলোর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে ভর্তা প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গালা রাউন্ডে বিচার করার সময় একটা বিষয়ের অভাব বোধ করেছি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী অনেক ভর্তা আছে। সেগুলো আরো বেশি ফোকাস হলে ভালো হতো। অনেকে ভর্তাকে ফিউশনে রূপ দিয়েছেন। এটা দোষের কিছু নয়। তবে ফিউশন করতে গিয়ে আমরা যেন ঐতিহ্যকে ভুলে না যাই। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
আমার একটি প্রস্তাব আছে
-আমীরুল ইসলাম
শিশুসাহিত্যিক
ভর্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় এ সি আই ও আনন্দ আলো কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন। প্রতিযোগিতায় বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে অনেকটাই হিমমিশ খেতে হয়েছে। কারণ প্রতিযোগীদের প্রত্যেকের বানানো ভর্তাই ছিল সেরা। স্বাদের ক্ষেত্রে একটু ‘উনিশ বিশ’ ছিল এই আরকি। আমার একটি প্রস্তাব আছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া সেরা ভর্তা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের বই প্রকাশ করা যেতে পারে। এ সি আই সাহস দিলে আনন্দ আলোর পক্ষে এটি করা সম্ভব। বইটি ইংরেজি, বাংলা দুই ভাষাতেই হতে পারে। সঙ্গে থাকবে ভর্তার রেসিপি ও রন্ধন শিল্পীর ছবি। প্রতিযোগিতাটি যেন অব্যাহত থাকে এই কামনা করছি।
ভবিষ্যতে আরো আলো ছড়াক এই প্রত্যাশা
-সৈয়দ আলমগীর
নির্বাহী পরিচালক, এ সি আই কনজ্যুমার ব্র্যান্ড
শুক্রবার ছুটির। দুপুরে আমার বাসায় খাবারের তালিকায় দুই প্রকারের ভর্তা ছিল। ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়ার পর দেখলাম অন্য তারকারীর প্রতি আর তেমন আগ্রহ পাচ্ছি না। আমার ধারণা ভর্তা আমাদের খাদ্য তালিকায় সবার কাছেই এভাবেই গুরুত্ব পায়। সে কারণে ভর্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। আনন্দ আলোকে ধন্যবাদ সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন করার জন্য। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ চ্যানেল আইকেও প্রয়োজনীয় সকল সাপোর্ট দেয়ার জন্য। সম্মানিত বিচারকদের প্রতি রইলো অনেক কৃতজ্ঞতা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভর্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতাটি ভবিষ্যতে আরো বেশি আলো ছড়াবে। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
অভিনন্দন কৃতজ্ঞতা
-ফারিয়া ইয়াসমিন
বিজনেস ডিরেক্টর, এ সি আই ফুডস লি.
আমরা প্রতিবেলায় ভাতের সঙ্গে কোনো না কোনো ভর্তা খাই। আর তাই ভর্তা ছাড়া খাবার টেবিলের সৌন্দর্য পরিপূর্ণ হয় না। আমাদের প্রতিবেলার আহারে তৃপ্তিও আসে না। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা আনন্দ আলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভর্তা প্রতিযোগিতার এই আয়োজন করেছি। সারাদেশ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছি। রন্ধন শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাধারণ অনেক গৃহিণীও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তাদের সবার আগ্রহ ও উদ্দীপনা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আনন্দ আলো পরিবারকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে অনেক কৃতজ্ঞতা চ্যানেল আই-এর প্রতিও। বিচারকার্যে যারা জড়িত ছিলেন বিশেষ করে নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেন, রন্ধনবিদ কেকা ফেরদৌসী ও শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের প্রতি রইলো অনেক কৃতজ্ঞতা। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগটিকে আরো বড় করতে চাই। সবার জন্য রইলো অনেক শুভ কামনা।