এইসব দিনরাত্রি-হুমায়ূন আহমেদ

থার্ড পিরিয়ডে প্রণব বাবুর কোনো ক্লাস নেই।

তিনি কমনরুমে এসে পত্রিকা খুঁজতে লাগলেন। একটি মাত্র পত্রিকা রাখা হয়। পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটি হেডমাস্টার সাহেবের ঘরে থাকে। আজ হেডমাস্টার সাহেব আসেননি। তার মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। ছেলের বড় ফুপা এসেছেন। সেই উপলক্ষে তিনি বড় সাইজের কৈ মাছের খোঁজে গিয়েছেন।

কাজেই কমনরুমের টেবিলে পত্রিকাটি পাওয়া গেল। ভাঁজ পর্যন্ত খোলা হয়নি। এরকম একটা কড়কড়ে নতুন পত্রিকা পড়ার আনন্দই অন্যরকম। প্রণব বাবু কোনার দিকে ইজি চেয়ারে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরই তার কপাল দিয়ে টপটপ করে ঘাম পড়তে লাগল। তিনি ভাঙা গলায় ডাকলেন, বশীর মিয়া! ও বশীর মিয়া!

বশীর মিয়া স্কুলের দপ্তরি। সেও হেডমাস্টার সাহেবের সঙ্গে কৈ মাছের খোঁজে গিয়েছে। কেউ এলো না। ফোর্থ পিরিয়ডে আজিজুদ্দীন সাহেব কমনরুমে পানি খেতে এসে দেখেন প্রণব বাবু মরার মতো পড়ে আছেন।

প্রণব বাবু, কী হয়েছে?

প্রণব বাবু বিড়বিড় করে কী যেন বললেন। তাঁর কথা জড়িয়ে গেল। আজিজুদ্দীন সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, শরীর খারাপ না-কি? এ্যাই প্রণব বাবু!

শরীর ঠিক আছে।

আজিজুদ্দীন সাহেব কপালে হাত রাখলেন। না কপাল ঠাণ্ডা। জ্বরজ্বারি কিছু নেই। প্রণব বাবু দুর্বল কণ্ঠে বললেন, পানি খাব। একটু পানি দেন।

মাথা ঘুরছে নাকি? এ্যাই প্রণব বাবু?

প্রণব বাবু ফিসফিস করে বললেন, লটারির রেজাল্ট দিয়েছে।

আজিজুদ্দীন সাহেবের ব্যাপারটা বুঝতে অনেক সময় লাগল। রেডক্রস লটারির দু’টাকা দামের টিকিট সবাইকে একটি করে কিনতে হয়েছে। হেডমাস্টার সাহেব পঞ্চাশটা টিকিট ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে এসেছিলেন। গম্ভীর গলায় বলেছেন, সবাইকে কিনতে হবে। দেশের কাজ। আমরা শিক্ষকরা যদি না করি কারা করবে? সবার জন্যে একটা এগজাম্পল সেট করতে হবে। পাঁচটা করে কিনবেন সবাই।

থার্ড মাস্টার জলিল সাহেব মুখ কালো করে বললেন, দু’মাস ধরে বেতন নাই, এর মধ্যে এইসব আবার কী ঝামেলা স্যার?

দেশের কাজের মধ্যে আবার ঝামেলার কী দেখলেন? পাঁচটা করে কিনবেন সবাই। আর স্টুডেন্টদের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটের ব্যবস্থা করবেন। দেশের কাজ।

পাঁচটা করে টিকিট কিনতে হলো সবাইকে। হেডমাস্টার সাহেব দেশের কাজের জন্য হঠাৎ করে এত ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার রহস্যও উদ্ধার হলো। প্রতি দশটি টিকিটে তার দু’টাকা করে লাভ থাকে।

সেই লটারির রেজাল্ট দেখে প্রণব বাবুর কপাল ঘামছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছেণ্ড তার অর্থ কী? আজিজুদ্দীন সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার ভাই, কিছু পেয়ে গেলেন নাকি? অ্যাঁ?

প্রণব বাবু জড়িয়ে জড়িয়ে বললেন, পেয়েছি।

আজিজুদ্দীন সাহেব স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। ক্লাস নাইনে তার ইংরেজি গদ্য পড়াবার কথা, তিনি আর সেখানে গেলেন না। প্রণব বাবুর পাশের চেয়ারে চুপচাপ বসে রইলেন। দুনিয়াতে কত অসম্ভব ব্যাপারই না ঘটে। প্রণব বাবু পরশু দিন তাঁর কাছে পঞ্চাশটা টাকা চেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, হাত একেবারে খালি। কোত্থেকে টাকা আসবে? গত মাসেও হাফ বেতন হয়েছে। আজিজুদ্দীন সাহেব ক্লান্ত স্বরে বললেন, এরকম ভ্যাবদার মতো বসে আছেন কেন? ফুর্তি-টুর্তি করেন।

কী ফুর্তি করব?

তাও ঠিক। লোকজন এরকম হঠাৎ লক্ষপতি হলে কী করে ফুর্তি করে কে জানে। রেজাল্টটা কোথায় দিয়েছে? দেখি পত্রিকাটা।

ক্লাস নাইনের ছেলেগুলো বড্ড গণ্ডগোল করছে। একজন  এসে কমনরুমে উঁকি দিয়ে দেখে গেল। আজিজুদ্দীন সাহেব ভ্রু কুঁচকে লটারির খবর দু’তিনবার পড়লেন। তার কাছে কোনো টিকিট নেই। তিনি সবগুলো নেজামের চায়ের স্টলে বিক্রি করে ফেলেছেন।

টিফিন পিরিয়ডে স্কুল ছুটি হয়ে গেল। মাস্টারদের কারো আর ক্লাস নেয়ার উৎসাহ রইল না। সবাই কমনরুমে শুকনো মুখে বসে রইলেন। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় ছেলেদের জন্য আনা টিফিন বেঁচে গেছে। লুচি আর বুন্দিয়া। অন্যসময় হলে টিফিনের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে উৎসাহী আলোচনা চলত, আজ আর কিছুই জমছে না। ক্লাস টেনের ছেলেগুলো কমনরুমের দরজার কাছে জটলা পাকাচ্ছিল। আজিজুদ্দীন সাহেব প্রচন্ড ধমক দিলেন, নাট্যশালা নাকি, অ্যাঁ? যা, বাড়ি যা। দু’দিন পরে পরীক্ষা কোনো হুঁশ নাই। গোরুর দল!

হেডমাস্টার সাহেব খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে এলেন। এবং খুব হৈচৈ শুরু করলেন।

স্কুল ছুটি দিয়েছে কে? স্কুল ছুটি দেয়ার মতো কী হয়েছে বলেন তো? একজন লটারিতে ক’টা টাকা পেয়েছে, আর ওম্নি স্কুল ছুটি? পেয়েছেনটা কী?

হেডমাস্টার সাহেবের কথায় কারো কোনো ভাবান্তর হলো না। অ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, কী ভ্যানরভ্যানর করছেন? কে গিয়ে এখন ক্লাস নেবে?

অসুবিধাটা কী? আমি তো এর মধ্যে অসুবিধার কিছু দেখলাম না।

তিন মাস বেতন নাই। এর মধ্যে একজন দু’লাখ টাকা পেলে মেজাজ ঠিক থাকে?

তিন মাস বেতন নাই কথাটা তো ঠিক বললেন না। হাফ বেতন হয়েছে গত মাসে। এসএসসি পরীক্ষার কালেকশন হলে বাকিটা পাবেন। ভালো কালেকশন হবে এইবার।

রশীদ মিয়া হেডমাস্টারের সঙ্গে ফিরে এসেছে। সে একটি বড় গামলায় তেল-মরিচ দিয়ে মুড়ি মাখছিল। দুপুরে এটাই স্যারদের টিফিন। কেরোসিন কুকারে চায়ের পানি ফুটছে। হডমাস্টার সাহেব বিরসমুখে বললেন, আজকেও মুড়ি? আজ একটা ভালো টিফিনের দরকার ছিল।

কেউ কোনো সাড়া দিল না। টিফিনপর্ব শেষ হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। টিচাররা সবাই বাড়ি চলে গেলেন। প্রণব বাবু নড়লেন না। হেডমাস্টার সাহেব একসময় বললেন, বাড়ি গিয়ে আমোদ ফুর্তি করেন। চুপচাপ বসে আছেন কী জন্যে?

ভালো লাগছে না স্যার।

ভালো লাগবে না কেন? আজকে তো আপনার  ভালো লাগারই দিন। হেডমাস্টার সাহেব শুকনো গলায় টেনে-টেনে হাসতে লাগলেন।

জোর-জবরদস্তি করে কিনিয়েছি বলেই পেলেন। মনে রাখবেন সেটা। হা-হা-হা। উপকারের কথা কারো মনে থাকে না,. এইটাই দুনিয়ার নিয়ম।

প্রণব বাবু বিড়বিড় করে কী যেন বললেন। পরিষ্কার বুঝা গেল না। হেডমাস্টার সাহেব শুকনো গলায় বললেন, যে টিকিটে পেয়েছেন সেটা আছে তো? অনেক সময় দেখা যায় টিকিটটাই মিসিং। তখন সবই গেল।

প্রণব বাবু মানিব্যাগ থেকে টিকিট বের করে হেডমাস্টার সাহেবের হাতে দিলেন। হেডমাস্টার সাহেব ভ্রু কুঞ্চিত করে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে রইলেন টিকিটের দিকে।

তার মেয়ের এই বিয়ের প্রস্তাবটাও হয়তো ভেঙে যাবে। ছেলের ফুপা বলেছে ছেলের নাকি মোটর সাইকেলের খুব সখ। অজপাড়াগাঁর পোস্টমাস্টারের ছেলে মোটর সাইকেল দিয়ে করবেটা কী? তেরো টাকার কৈ মাছ জলে গেছে বলাই বাহুল্য। হেডমাস্টার সাহেব ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলে বললেন, প্রণব বাবু, আপনি এইবার একটা মোটর সাইকেল কিনে ফেলে।

মটর সাইকেল দিয়ে আমি কী করব?

চড়বেন, চড়বেন। আপনাদের তো দিনকাল।

হেডমাস্টার সাহেব আবার টেনে-টেনে হাসতে লাগলেন।

প্রণব বাবু স্কুল থেকে বেরুলেন সন্ধ্যার পর। তাঁর ধারণা ছিল বাজারের ভেতর দিয়ে যাবার সময় অসংখ্যবার লটারির টাকা পাওয়ার খবর তাকে বলতে হবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। কেউ কি জানে না খবরটা? আশ্চর্য!

তাঁর ছেলে সুবল যেবার ময়মনসিংহে চুরি কেইসে গ্রেফতার হলো সেবার প্রণব বাবুকে অসংখ্যবার ব্যাপারটা বলতে হয়েছে।

ফল্‌স কেইস বোধহয়। কী বলেন প্রণব বাবু? হাজার হলেও আপনার ছেলে। ভদ্রলোকের সন্তান।

ফল্‌স কেইস না। চুরি সত্যি-সত্যি করেছে।

বলেন কী! ব্যাপারটা ঠিকমতো বলেন তো শুনি। বসেন না। এ্যাই, বাবুকে চা দে।

আজ প্রণব বাবু নীলগঞ্জ বাজারের প্রায় শেষপ্রান্তে চলে আসলেন। কেউ কিচ্ছু জিজ্ঞেস করল না। বাজার থেকে বেরুবার সময় করিম মিয়া চিকন গলায় ডাকল, বাবু, একটু শুনে যান তো।

কী ব্যাপার?

মোট দু’শ এগারো টাকা পাওনা। আমরা গরিব ব্যবসায়ী। এতটা টাকা আটকা পড়লে চলে?

দিয়ে দিব।

দিয়ে দিব সেইটা তো বাবু দু’তিন মাস ধরেই শুনতেছি। নিবারন সাহার কাছে এইরকম চারশ’ টাকা পাওনা। হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে চলে গেল ইন্ডিয়া।

আমি ইন্ডিয়া যাব না। ইন্ডিয়াতে আমার কেউ নাই।

প্রণব বাবুর খুব ইচ্ছা হলো লটারির কথাটা বলেন। কিন্তু বলতে পারলেন না।

প্রণব বাবু বাড়ি পৌঁছলেন রাত আটটার দিকে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। সাড়াশব্দ করার লোকও অবশ্যি নেই। চারদিকে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। তিনি হাতড়ে-হাতড়ে তালা খুললেন। হারিকেন জ্বালালেন। টেবিলের ওপর খাবার ঢাকা আছে। খান কতক রুটি, একটু ভাজি, এক বাটি তেঁতুলের টক। তার রান্না হয় জ্যাঠার বাড়িতে। রান্না হয়ে গেলে তালা খুলে খাবার রেখে যায়। সেই বাবদ জ্যাঠার হাতে যখন যা পারেন দেন।

প্রণব বাবু কেরোসিন কুকার জ্বালিয়ে রুটি গরম করতে বসলেন, তখনই হঠাৎ করে সুবল এসে উপস্থিত। সুবলের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেই হয়। গত ছ’মাসে একবার মাত্র এসেছিল দু’দিনের জন্যে। তিনি কোনো কথাবার্তা বলেননি। আজকে নিজে থেকেই কথা বললেন, আছিস কেমন সুবল?

আছি কোনো মতো। তুমি আছ কেমন বাবা?

খেয়ে এসেছিস নাকি?

হুঁ। মটন বিরিয়ানি খেয়েছি ইস্টিশনে। জানি তো এত রাত্রে খাওয়াদাওয়ার কোনো আয়োজন তোমার নাই। খাচ্ছ কী তুমি? রুটি নাকি?

হুঁ। খাবি একটা?

না।

প্রণব বাবু খেতে বসলেন। সুবল বাইরের বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। প্রণব বাবু লক্ষ করলেন, সুবলের গায়ে চকচকে একটা সার্ট থাকলেও তার পায়ের চামড়ার জুতোজোড়াতে তালি পড়েছে। যে মটরশপে মেকানিকের কাজ শিখত সেখানে পয়সাকড়ি বোধহয় কিছুই দেয় না।

তাঁর মনে পড়ল দু’মাস আগে আড়াইশ’ টাকা চেয়ে ভুল বানানে তিন পাতার একটা চিঠি লিখেছিল সুবল। তিনি জবাব দেননি। এবারো টাকার জন্যেই বোধহয় এসেছে।

বাবা, ঘরে চায়ের পাতা আছে?

আছে বোধহয়। দেখ তো হরলিক্সের বোতলটার মধ্যে।

সুবল চায়ের পানি চাপিয়ে মৃদুস্বরে বলল, তোমার কাছে তিনশ’ টাকা হবে বাবা? আমার খুবই দরকার।

প্রণব বাবু অনেকক্ষণ ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

বাবা, খুব ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেছি।

প্রণব বাবু কিছু বললেন না।

একটা ব্যবস্থা তোমাকে করতেই হবে বাবা।

প্রণব বাবুর ইচ্ছা হলো জিজ্ঞেস করেনণ্ড কী ঝামেলা? কিন্তু তিনি চুপ করে রইলেন। তাঁর যে মেয়ে কলকাতার শিবপুরে ছিল সেও কী একটা ঝামেলায় পড়েছিল। এক হাজার টাকা চেয়ে চিঠি লিখেছিল। ছোট্ট চিঠি, কিন্তু সেই ছোট্ট চিঠি পড়ে তিনি সারারাত ঘুমাতে পারেননি। মেয়েটি অনেক বয়স পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ঘুমাত। কী বিশ্রী ঘুম। পা দুিিট বুকের কাছে এনে মাথা বাঁকা করে। কত বকাঝকা কত কী। লাভ হয়নি কিছুই। অঞ্জুর সেই চিঠির জবাব তিনি দেননি। লজ্জাতেই দিতে পারেননি। দীর্ঘ একবছর সেই চিঠি পকেটে নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। ক্লাসে গিয়েছেন। পাটিগণিতের কঠিন কঠিন সব অংক জলের মতো বুঝিয়ে দিয়েছেন।

প্রণব বাবু বারান্দায় গিয়ে বসলেন। কী চমৎকার জ্যোৎস্না!

অন্ধকার হালকা হয়ে আসছে ক্রমে ক্রমে। লেবুফুলের ঘ্রাণ আসছে। গাছটাতে লেবু হয় না, শুধুই ফুল ফোটে। গাছগাছালির কোনো যত্ন নেই আর। কে যত্ন করবে? সুবল চায়ের কাপ নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল।

বাবা, খুব বড় একটা ঝামেলার মধ্যে পড়েছি।

সবাই বড় ঝামেলায় পড়ে। তিনিও মেয়েকে নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলেন। ছেলে পাওয়া যায় না। শেষটায় কেদারনাথ বাবু কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিলেন। বিয়েটা কেমন হয়েছিল কে জানে? বড় পছন্দ হয়েছিল পাগলিটার? আজ আর তা জানবার কোনো উপায় নেই। বাবাকে কি আর এইসব কথা কোনো মেয়ে লেখে? বাবাকে লিখতে হয় দারুণ সমস্যার সময়।

সুবল মৃদুস্বরে বলল, বাবা চা খাবে, চা দেই?

দে।

চিনি নাই। চিনি ছাড়া চা।

দে একটু।

সুবল তাকিয়ে দেখল তার বাবার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ব্যাপারটা কী? সে আড়চোখে তাকাতে লাগল।

তিনশ’ টাকা না পেলে বেইজ্জত হব।

সুবল কথাটা বলেই মাথা নিচু করে ফেলল। এবং লক্ষ করল তার নিজের চোখও ভিজে উঠছে। সে হঠাৎ বলে ফেলল, বড় কষ্ট বাবা।

কষ্ট! হ্যাঁ কষ্ট তো বটেই। প্রণব বাবু ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেললেন।

টাকাটার কি জোগাড় হবে?

প্রণব বাবু জবাব দিলেন না। চোখ মুছলেন। সুবল বাবার কাছে সরে এলো। প্রণব বাবু হঠাৎ কী মনে করে সুবলের একটি হাত চেপে ধরে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠলেন। সুবল বলল, কাঁদবে না বাবা। দেখি একটা ব্যবস্থা করব আমি নিজেই। কাঁদবে না।

মেয়েটারে বড় দেখতে ইচ্ছা হয় সুবল।

তিনি দু’লক্ষ টাকার একটি টিকিট পকেটে নিয়ে একজন নিঃশ্ব মানুষের মতো কাঁদতে লাগলেন। সুবল বাবাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। তিনশ’ টাকা তার সত্যি খুব প্রয়োজন ছিল। সুবলের ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু সে কাঁদল না। উদাস গলায় বলল, চিন্তার কিছু নাই বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রণব বাবু ধরা গলায় বললেন, কিছুই ঠিক হয় না রে। তার কথা সমর্থন করেই ঘরের ভিতর থেকে একটি তক্ষক ডেকে উঠল। চারদিকে মাছের চোখের মতো মরা জ্যোৎস্না।

  • গল্প
Comments (০)
Add Comment